রাজবাড়ীতে গিয়ে ভূত দেখার গল্প//পর্ব-২
হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।
ছোটবেলার স্মৃতি পাতায় হাজারো রকমের গল্প জমা হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে কতনা আনন্দময় মুহূর্ত উপভোগ করেছি।অনেক ছোট ছোট চুরির গল্প আমার জীবনে রয়েছে। আর বন্ধুদের সাথে গাছের ফল চুরি করার গল্প যেন সবার জীবনেই ঘটে থাকে। আসলে ছোটবেলা কমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় আমাদের প্রত্যেকের জীবনে। যেগুলোর সাথে শৈশবের সেই দিনগুলো প্রায় সবারই মিলে যায়। আমারও তেমনি হয়েছে। আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে লিচু চুরি করেছিলাম। আর এই লিচু চুরি করেছিলাম মেম্বারের বাড়িতে। সেই স্মৃতিময় গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতেছিলাম। আজকে সেই গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে এসেছি। আশা করছি শৈশবের এই স্মৃতিময় গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।
লিচু চুরি করে যখন আমরা রাজবাড়ীর মধ্যে পালালাম। তখন মনের ভিতর অনেক ভয় ছিল, কারণ অনেক পুরনো রাজবাড়ি আর এই রাজবাড়িতে দিনের বেলায় কেউ প্রবেশ করে না কারণ এখানে নাকি অনেক ভয়ে রয়েছে। কুকুর বিড়ালের বসবাস এখানে। খুবই অন্ধকার কোন লাইটিং এর ব্যবস্থা নেই। আমরা ভয়ে ভয়ে জীবন বাঁচাতে তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে পড়লাম।এই রাজবাড়ির ভিতরে দিনের বেলায় কখনো প্রবেশ করা হয়নি। যার কারণে রাজবাড়ির অলিগলি সম্পর্কে কোন ধারণাই আমাদের ছিল না। তারপরে ভয় ঢুকে পড়লাম। দেখতে পেলাম একটি সিঁড়ি আর এই সিঁড়ির পাশেই একটি রুম ছিল। সেই রুমের ভিতরে ভাঙ্গাচড়ার টেবিলে এবং ইট ভাঙ্গা ছিল। ইটের পাশে আমরা বসে থাকলাম। এখানে দেখতে পেলাম অনেক মাকড়সার জাল, এগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে চুপ করে সেখানে বসে পড়লাম এবং দূর থেকে কিরকম যেন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।
আসলে রাতের বেলায় কোন এক নিরিবিলি জায়গা গেলেই এমনিতে ঝিঝিঁ পোকার ডাক এবং অন্যান্য প্রকার ডাকের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এই শব্দগুলো শুনতে পেয়ে যেন আমরা অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। পাঁচ বন্ধু এক জায়গায় হয়ে সবার হাত শক্ত করে ধরেছিলাম এবং একজন আরেকজনকে সাহস দিচ্ছিলাম। এমন সময় দেখতে পেলাম ধাপাস করে কি জানি পরলো, সেটা দেখেই যেন চমকে উঠলাম আমার বন্ধু সুজন বলল আরে ভয় পাস না, ওটা বিড়াল ছিল. লাফ দিয়ে চলে গেল দেখলাম।বললাম এত রাতে এই রাজবাড়ি ভিতরে বিড়াল কিভাবে আসলো। তখন মানিক বলল যে আরে এটা পুরনো রাজবাড়ি এখানে কুকুর বিড়াল বসবাস করে, ভয় পাসনা, মাঝেমধ্যে কিন্তু শিয়ালও ডাকবে আর এখানেও রয়েছে। হঠাৎ করে আমাদের আক্রমণ করতে পারে। কোন কথা বলিস না, শিয়ালের কথা শুনেই যেন বুকের ভিতর একটা শব্দ হলো। সেটা ছিলো ভয়ের শব্দ।
তারপরে আর একটা ঘটনা আমি বেশি ভয় পায়।সেটা হলো আমার ওপরেই একটি টিকটিকি এসে পড়ল। টিকটিকিটা পড়ার সাথে সাথে আমি লাফ দিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিলাম। বললাম যে যা হয় হোক, এখানে আর থাকবো না। আমি এখানে থাকলে মরে যাব। যদি মেম্বার আমাদের ধরে তাও ধরুক, এখানে আর থাকবো না চল চলে যায়।তারপরে সেখান থেকে যখন বাইরে আসতে নিলাম, আর বাইরের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ রাজবাড়ীর অলি গুলির ভিতর দিয়ে কোথায় দিয়ে কোথায় প্রবেশ করেছি নিজেরাও বুঝতে পারছি না। আমাদের কাছে ছোট একটি লাইট ছিল, এই লাইট দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে আর একটা রাজবাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করলাম। সেখানে দেখতে পেলাম বিশাল বড় একটি পুকুর। আসলে রাজবাড়ির ভিতরেই পুকুর ছিল, এই পুকুরে হিন্দুরা তাদের মূর্তিগুলোর পূর্জা করতে।আমি বললাম যে কিভাবে বের হব তাড়াতাড়ি বুদ্ধি বের কর।
মানিকের কথা মতই রাজবাড়ী থেকে বাইরে বের হতে আরো সামনে প্রবেশ করলাম। সামনে একটি দরজার মতো গেট ছিল। সেই গেট দেখতে পেয়ে আমরা আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম। আসলে সেই পুকুরের পানির মধ্যে কি যেন একটা শব্দ হলো। ওরে বাবা তখন যে ভয় পেয়েছিলাম মনে হচ্ছিল আত্মা এখনই বের হয়ে যাবে। রনি বলল যে এখানে মাছ চাষ করা হয় হয়তো। তাই মাছের শব্দ ছিলো,কিন্তু এখানে তো কেউ প্রবেশ করে না কে মাছ চাষ করবে। সজুন বললো আমরা হয়তো জানি না,কিন্তু এখানে কেউ মাছ চাষ করে হয়তো। তারপরে আমরা আস্তে আস্তে একটি চাপা গুলির ভিতর দিয়ে বের হতে লাগলাম। এমন সময় আমি বের হয়েছি সুজন ও বের হয়েছে এবং মানিক বের হতে গিয়ে ওর জামা লোহার সাথে আঁটকে যায়।আর মানিক বলে উঠলো কে যানি আমার জামা টেনে ধরেছে, মানিক চিৎকার করে উঠল যে আমাকে ভূত টেনে ধরেছে রে ভাই। আমি মরে গেলাম। তোরা আমাকে বাঁচা। আমিও খুব ভয় পেয়েছি এবং পেছনে দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম ওর জামা একটা লোহার সাথে লেগে গেছে।তাই আসতে পারছে না।
ভাই আপনারা দেখি চুরি করতে গিয়ে মহাবিপদে পড়েছিলেন। আসলে এরকম রাজবাড়ীর ভিতরে থাকা খুবই ভয়ানক। তারপরেও যখন আপনার বন্ধুর গেঞ্জি লোহার সাথে আটকে গিয়েছিল তখন তো সে হয়তো ভয়ে শেষ। আপনাদের অবশ্যই ভয়ের জন্য পানি পড়া খেতে হয়েছে।