শরোর অন্তিম আইবুড়োভাত(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-২৮.০১.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালোই আছি। ধীরে ধীরে এবার নিজের কাছে ফেরার পালা। তাই গত দুদিন পোস্ট করতে না পারলেও আজ চলে এলাম একটা পোস্ট নিয়ে। পোস্টটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিয়ে। যে অলরেডি বিবাহিত বৌদিতে পরিণত হয়েছে।😄
আসলে আমরা যেসব বন্ধু-বান্ধবদের বিয়ে হয়ে যায় তাদের ছেলে হলে, বিবাহিত দাদা এবং মেয়ে হলে,বিবাহিত বৌদি বলে মজা করি। একরকম বলতে পারেন খুনসুটি করি। শর্মিষ্ঠাও তাই। আজ সেই কারণেই পোস্টটা করছি। এটা শর্মিষ্ঠার শেষ আইবুড়ো ভাত খাওয়া তার মায়ের ঘরে।আসলে বাঙালি হিন্দু মতে মেয়েরা বিয়ে ঠিক হলে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবার ঘরে আইবুড়ো ভাত খায়। আর শেষ আইবুড়ো ভাতটা খাওয়ানো হয় মায়ের তরফ থেকে ঠিক বিয়ের আগের দিন। ও মোট আট নটা এই বুড়ো ভাত খেয়েছে। অবশেষে ২৬ শে জানুয়ারি ওর মা শেষ আইবুড়োভাত খাওয়ালেন। কারণ ওর বিয়ে ছিল ২৭শে জানুয়ারি।
২৬শে জানুয়ারি হলুদ কোটা হয়েছে, ধানকোটাও হয়েছে। আমরা সব বন্ধু বান্ধব ১১.৩০টায় গিয়েছিলাম।ছেলেদের সংখ্যা যদিও কম। বেশিরভাগই মেয়ে বান্ধবী ছিল। সবাই শাড়ি পড়েছিল। কিন্তু আমি পরের দিন অর্থাৎ বিয়ের দিন দুবেলায় শাড়ি পরবো বলে আইবুড়ো ভাতের দিন স্কার্ট পরেছিলাম। ওদের বাড়ি যাই সকাল বেলা সরস্বতী হোক পুজো হওয়ার পরে। গিয়ে দেখি শর্মিষ্ঠা বসে আছে। রেগে বোম হয়ে আছে। আসলে যার বাবা নেই তার মনে হয় কেউ নেই। বিশেষ করে এই ধরনের বড় কাজগুলো নামানোর সময় একটা ছেলে মানুষ না হলে কতটা যে বঞ্চিত মনে হয় নিজেকে সেটা যার হয় সেই বোঝে।
শর্মিষ্ঠার বাবা মারা গেছেন আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে ক্যান্সারে। তারপরে সবকিছুই ও এবং ওর মা। এত বড় কাজ কিভাবে নামাবে সেই নিয়ে ওরা ভীষণ চিন্তায় ছিল। কিন্তু কথায় আছে,ভগবান যার সাথে আছে, তার কোন কিছুই আটকায় না।এর পরে আপনাদের সাথে ওর বিয়ে, গায়ে হলুদ সব পোস্টেই হয়তো ভাগ করে নেব। আমরা যাওয়ার পরে শম্পা ওকে শাড়ি পরিয়ে তৈরি করে দিল। একটা কমলা রঙের ঢাকাই জামদানী শাড়ি পরেছিল। যেহেতু ও গায়ের রংটা ফর্সা তাই বেশ ভালো লাগছিল ওকে শাড়িটাতে।
ওর খাবারে ছিল পাঁচ রকম ভাজা, ভাত, মাছের মাথা, মাছের ঝোল, চাটনি, মিষ্টি, পায়েস এইসব।ওকে কাকিমা আশীর্বাদ করলো এবং ওর বাড়ির আর যারা ছিল বড়রা তারা ওকে আশীর্বাদ করলো। ও যখন টেনশনে ছিল, আমি শুধু ওকে বললাম, "দেখ এত দূর সবটাই দুজনে মিলে করেছিস। তাই ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখ। বাকিটাও তোদের ভালোভাবে হয়ে যাবে। কোন কিছুতেই আটকাবে না। আর আমি চাই এ কাজটায় আর কারো যেনো প্রয়োজন না পড়ে।তোরা দুজন অর্থাৎ তুই আর কাকিমা মিলেই সুন্দর করে নামা। যাতে যারা তোদের ভালো চায় না, তারা দেখুক, যে তুইও পারিস। একটা মেয়ে হয়ে নিজের বিয়ের কাজটা নিজেই নামাতে।"
যাই হোক ওর কাকা, কাকিমা যথেষ্টই কাজ করেছে ওর বিয়েতে। কারণ ওর কাকা ওর বাবাকে কথা দিয়েছিল শর্মিষ্ঠার বিয়ের কাজ কাকা করবেন। ওর বিয়ের সমস্ত কিছু পরে আপনাদের সঙ্গে কোনদিনও ভাগ করে নেব।
ও যখন খেতে বসল তখন আমরাও খেতে বসলাম। আমাদের খাবারের ছিল ভাত, ঘন করে ভেজ মুগ ডাল, ঝুরঝুরে আলু ভাজা কারি পাতা দিয়ে, কাতলা মাছের ঝোল, চাটনি, পাঁপড় এবং রসগোল্লা।বেশ ভালো লেগেছিল খেয়ে। কারণ প্রত্যেকটা রান্না ভীষণ সুস্বাদু হয়েছিল। আমরা যখন খেয়ে উঠলাম তখন প্রায় পৌনে তিনটে বাজে। খেয়ে ওঠার পরে কিছুক্ষণ শর্মিষ্ঠার সাথে কথা বলে,আমরা বাড়ি চলে এলাম। কারণ বাড়ি ফিরে আবার পরের দিন কি পরবো না পরবো সমস্তটা তৈরি করার ব্যাপার ছিল।
আজ এখানে শেষ করছি।আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
আপনার মজাটা তো ভালই লাগলো আপু বন্ধুদের বিবাহিত দাদা ও বান্ধবীদের বিবাহিত বৌদি বলেন সত্যি হাসি লাগলো শুনে। আর এতদিন জেনে এসেছি আইবুড়ো ভাত একবারই খায় কিন্তু এত বার যে খাওয়া যায় আজকে আপনার থেকে জানলাম । আপনাদের এই জিনিসটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। ঠিকই বলেছেন বাবা পাশে থাকলে অনেকটাই শক্তি পাওয়া যায়। আর আপনার বান্ধবীর শর্মিষ্ঠা ফর্সা হওয়ার কারণে আসলেই কমলা রঙের শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। ঝুরঝুরে আলুর ছবিটা দেননি কেন শুনেই তো আমার খেতে ইচ্ছা করছে।
হ্যাঁ 😄 ওকে বিবাহিত বৌদি বললেই রেগে যাচ্ছে। আগে আই বুড়ো ভাত একদিনই মা খাওয়াতো। আজকাল আত্মীয়স্বজনরাও খাওয়ায়। ☺
এমনিতে আমি অনেকবার শুনেছিলাম আইবুড়ো ভাত শুধুমাত্র একদিন খাওয়া হয় কিন্তু এতদিন খাওয়া হয় এটা মনে হয় আমার জানা ছিল না। আপনি ঠিকই বলেছেন বাবা পাশে থাকলে অনেকটাই সত্যি পাওয়া যায়। যেহেতু শর্মিষ্ঠার বাবা মারা গিয়েছিল তাই তার কাকা তার বাবাকে কথা দিয়েছিল উনি শর্মিষ্ঠার বিয়ের পুরো দায়িত্ব নিবেন। খুবই ভালোভাবে তাহলে মুহূর্তে পার করেছেন সবাই মিলে। এরকম মুহূর্ত গুলো পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে আমার কাছে
মায়ের ঘরে মা খাওয়ায় একদিন। আগেকার সময়ে একদিনই খাওয়ানো হত। কিন্তু এখন আত্মীয় স্বজনরাও খাওয়ায়। ধন্যবাদ।
বাবা না থাকলে আসলে এই সিচুয়েশন গুলো হ্যান্ডেল করা খুবই কষ্টকর। বাড়ির আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব যদি সিরিয়াস না হয় তাহলে বিয়ে নামানোটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। আমার বান্ধবী তো বিয়ের সময় আইবুড়ো ভাত কম করে হলেও দশ জায়গায় খেয়েছিল। হা হা হা
অনেকে ২০ টা আইবুড়োও খেয়েছে আমার পরিচিত। সত্যি বলতে ভালো আত্মীয় স্বজন খুব কম পাওয়া যায়।
শর্মিষ্ঠার বিয়ের দায়িত্ব নেওয়ার কথাটা জেনে বেশ ভালো লাগলো। আসলে আপনাদের এই ধর্ম এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আমি তেমন একটা বেশি অবগত নই যার জন্য আপনার এই পোস্ট আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে এই যে আমি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে পারলাম আপনাদের ধর্ম এবং ন্যায় নীতি সম্পর্কে। অনেক কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছেন এই পোস্টের মধ্য দিয়ে। আশা করি এভাবে আরো অনেক বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করবেন।
ধন্যবাদ ভাই।