লাচ্ছা সিমাইয়ের স্বাদ(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-০২.০৫.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালোই আছি। কমিউনিটিতে সব রকম পোস্ট করলেও, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে কোনরকম কুকিং পোস্ট করি না। সেটা ভালো লাগে না বলে একদমই নয়। বলতে পারেন রান্না আমার একরকম প্রাণ বলা যায়। রান্না করতে আমি ভীষণ ভালোবাসি।কিন্তু অনেক রকম রেস্ট্রিকশন বাড়িতে থাকায় এবং সময়ের অভাবে রান্না এখন আর সেভাবে করে ওঠা হয় না। আর যখন করিওবা অনেক সময়ড় এমন হয় ছবি তোলার কথা মনে থাকে না।
আজ অনেকদিন পর একটা সুইট ডিশ দিয়ে শুরু করছি। কারণ যে কোন শুভ সূচনায় আমরা মনে করি মিষ্টি জিনিস দিয়ে করা ভালো। আমাদের ছোটবেলা থেকেই অনেক রকম খাবার নিয়ে ফ্যান্টাসি থাকে। অন্তত যারা পেটুক তাদের তো বটেই। সেরকম আমারও ঠিক ছোটবেলা বলবো না, তবে বুড়োবেলায় বলা যায় তখন হঠাৎ করে হলদিরামের লাচ্ছা সেমাই দেখে খুব খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু কোনদিনও সাহস করে কিনতে পারিনি।বানাতে পারব কিনা সেই ভয়ে।গত রবিবার মায়ের সাথে মার্কেটে গেছিলাম টুকটাক কিছু ঘরের জিনিস কেনাকাটা করতে। সেদিনই হঠাৎ করেই কি মাথায় ভূত চাপলো, কিনে বসলাম হলদিরামের লাচ্ছা সেমাই। ভাবলাম বাড়ি গিয়ে যা করার করব। যেভাবে নিজের মনে হবে সেভাবে করবো। খারাপ হবে অথবা ভালো হবে, এর বেশি তো আর কিছু হবে না।
আজ যেহেতু আমার উইক অফ তাই সব সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি হলাম। আসলে এটা বানাতে যা যা দরকার সবই আমার ঘরের ছিল। তাই বিশেষ কিছু ঘটা করে কিনতে হয়নি।কেনার মধ্যে শুধু সেমাইটাই কিনতে হয়েছে। আসুন আপনাদের সঙ্গে সমস্ত উপকরণ ও পর্যায়গুলো ভাগ করেনি।
🍁উপকরণ🍁
🌼দুধ
🌼চিনি
🌼ড্রাইফ্রুটস(কাজু,পেস্তা,কিসমিস,নকল চেরী)
🌼ঘী
🌼কেওড়া জল
🌼কেশর
🍁পদ্ধতি🍁
প্রথম ধাপ
ড্রাই ফ্রুটগুলো কুঁচো করে কেটে একটা বাটিতে নিলাম। আর যেহেতু গার্নিশিং এর জন্য শুধু নকল করমচা গুলো ব্যবহার করব, সেই কারণে সেটা আলাদা বাটিতে নিলাম।
দ্বিতীয় ধাপ
এবার একটা পাত্রে এক চামচ ঘি গরম করে,তার মধ্যে ড্রাই ফ্রুটস গুলো ভেজে নিলাম। যে কোন ডেজার্টে ড্রাই ফ্রুটসগুলো ভেজে দিলে তা আরও সুস্বাদু হয়।
তৃতীয় ধাপ
এবার একটা পাত্রে যেটুকু পরিমান লাচ্ছা আমি ব্যবহার করব সেই লাচ্ছাটুকু বার করে নিলাম। আমি এখানে দুটো রাউন্ড লাচ্ছা ব্যবহার করেছি। আর সেই অনুপাতেই সমস্ত জিনিসগুলো দিয়েছি।
চতুর্থ ধাপ
যে পাত্রে ড্রাই ফ্রুটস ভেজেছিলাম, তাতে যেটুকু ঘি ছিল তার মধ্যে লাচ্ছা গুলোকে আর একটু নাড়িয়ে চালিয়ে উল্টাপাল্টা নিলাম।যদিও লাচ্ছা গুলো ভাজাই থাকে, তবুও আলাদা একটা সুন্দর ঘি এর গন্ধ বেরোবে তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন।
পঞ্চম ধাপ
একটা পাত্রে এক কেজির অল্প কম দুধ নিয়ে নিলাম এবং ভালোভাবে দুধ টাকে জ্বাল দিলাম।
ষষ্ঠ ধাপ
দুধ জ্বাল দিতে দিতে যখন হালকা ঘন হবে, তখন তার মধ্যে পরিমাণ মতো চিনি দিয়েদেব। আমি যে চিনির পরিমাণটা দেখালাম তার পুরোটা আমার দিতে হয়নি খানিকটা বাকি ছিল। আপনারা স্বাদ মত চিনি ব্যাবহার করবেন।
সপ্তম ধাপ
চিনিটা সম্পূর্ণভাবে গলে গেলে,তাতে অল্প করে কেশর ছিটিয়ে দিলাম রং এবং গন্ধ সুন্দর বেরোবে বলে।
অষ্টম ধাপ
এরপরে কেশরটা সম্পূর্ণ মিশে গেলে তার মধ্যে ড্রাই ফ্রুটসগুলো দিয়ে দিলাম এবং একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে নিলাম।
নবম ধাপ
গ্যাসটা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলাম এবং ভেজে রাখা লাচ্ছা সেমাইটা দুধের মধ্যে ঢেলে দিলাম। এখানে মনে রাখতে হবে দুধে সেমাই দেওয়ার সময় গ্যাস কোনভাবেই অন রাখলে চলবে না। যদিও এই পদ্ধতি কেবল লাচ্ছা সেমাই এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
দশম ধাপ
এবার সেমাই এর মধ্যে হাফ ছিপির মত কেওড়া জল দিয়ে দিলাম এবং ঢেকে দিলাম ১০ মিনিটের জন্য।
একাদশ ধাপ
দশ মিনিট পরে ঢাকনা সরিয়ে বাটিতে সাজিয়ে নিলাম এবং উপর থেকে কেটে রাখা নকল চেরিগুলো ছিটিয়ে দিলাম। তৈরী হয়ে গেলো লাচ্ছা সিমাইয়ের পায়েস।
এবার আপনি চাইলে এটা নরমাল টেম্পারেচারে এনেও খেতে পারেন অথবা নরমাল টেম্পারেচারে এলে তাকে ফ্রিজে কয়েক ঘন্টার জন্য রেখে ঠান্ডা করে এই গরমের দিনে ডেজার্ট হিসেবে উপভোগ করতে পারেন। দুটোই আপনার উপরে।
আমি যেমন ফ্রিজে বসিয়ে রেখেছি। সন্ধ্যেবেলা ছাত্র-ছাত্রী এলে তাদের দেবো এবং আমিও খাব। তাদের খেয়ে কেমন লাগলো সেটাও জানাবো
।
আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো জানাবেন। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সকলের খেয়াল রাখুন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।













কে বলেছে আপনি সেমাই বানাতে পারেন নি, আমি তো দেখছি বেশ ভালই বানিয়েছেন। মনে হচ্ছে বেশ ভালই খেতে হয়েছে।
ছাত্র ছাত্রীরা খেয়ে বলল বেশ ভালো হয়েছে বৌদি।
মাঝে মাঝে বাসায় লাচ্চা রান্না করে খাওয়া হয়। লাচ্ছা খেতে আমার বেশ ভালই লাগে। কিন্তু লাচ্ছা রান্না করার পর কেওড়া জল দেওয়া হয় না। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আজকে জানলাম। আপনি তো বেশ ভালোই লাচ্চা রান্না করেছেন।
কেওড়া জল দেওয়ায় বিষয়টা বেশ শাহী লাগছিলো।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনি তো লাচ্ছা সেমাইয়ের মজাদার রেসিপি তৈরি করে ফেলেছেন। আমার তো দেখেই খেতে ইচ্ছে করছে। আপনার রেসিপি দেখে এই মাত্র আমার ওয়াইফকে বললাম সেমাই রান্না করে নিয়ে আসতে 😂। যদিও আমি ঝাল জিনিস খেতে বেশি পছন্দ করি, তবে মাঝেমধ্যে মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেতে খুব ভালো লাগে। যাইহোক রেসিপিটা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ দাদা। আমিও ঝাল বেশী প্রেফার করি। তবে মাঝে মাঝে মিষ্টির ক্রেভিং হয়।
দিদি আপনার লাচ্ছা সেমাইয়ের রেসিপি দেখে এখন এত রাতে আমারও খুব খেতে ইচ্ছে করছে। আপনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে। ঠিক বলেছেন আমরা যেকোনো শুভ কাজের আগে মিষ্টি মুখ করি। এর মধ্যে নারিকেল দিলে স্বাদ মনে হয় আরও দ্বিগুণ বেড়ে যেতো। আমি আবার নারিকেল দিয়ে সেমাই খেতে খুবই পছন্দ করি। ধন্যবাদ দিদি মজাদার রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
ভালো জিনিস শিখলাম। পরের বার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ দিদি।
লাচ্ছা সেমাই খেতে আমার অনেক ভালো লাগে আমার পছন্দের একটি সেমাই রান্না করছেন আপনি। আপনি অনেকগুলো উপকরণ দিয়েছেন এবং দুধ বেশ ভালোই পরিমাণের দিয়েছেন আপনার রান্নার পদ্ধতি অনেক ভালো লেগেছে। আপনারা রান্না করা সেমাইর ডেকোরেশন দেখে আমার খেতে ইচ্ছে করতেছে আপু।
ধন্যবাদ দিদি। কলকাতা আসুন। খাওয়াবো।
আজ আপনি আমাদের মাঝে লাচ্চা সেমাই রান্না করে দেখিয়েছেন বিভিন্ন প্রকার উপাদানের সমন্বয়ে। যেখানে লক্ষ্য করে দেখলাম আপনি তালিকা বদ্ধ ভাবে উপাদানগুলো সাজিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আর এই সমস্ত উপাদান দিয়ে লাচ্চা সেমাই রান্না করলে খেতে বেশ দারুন লাগে।
ধন্যবাদ দাদা।
লাচ্ছা সেমাই রান্না খেতে আমারও অনেক ভালো লাগে। বাড়িতে যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলেই এই ধরনের লাচ্ছা সেমাই রান্না করতে দেখি। এই ধরনের লাচ্ছা সেমাই এর সাথে দই আর মিষ্টি থাকলে তো আরো বেশি ভালো লেগে যায়।
একদমই ঠিক বলেছেন দাদা।