ক্যামেরাবন্দী সৌন্দর্য্য (১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-১৯.০৫.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে খুব ভালো আছেন।আমিও বেশ ভালো আছি। বেশ ৫-৬ দিন ধরে রোজই বিকেল হলেই কালবৈশাখী ধেয়ে আসে। গরমে দাবদাহে সারাদিন ধরে প্রাণটা হাসফাঁস করলেও, বিকেল হলেই রোজ প্রায় ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়,বৃষ্টি আর সাথে অনেকটা ঠান্ডা হাওয়া। ঠিক রবি ঠাকুরের, "আজিবাদ ঝরঝর মুখর বাদর দিনে..." সময়ের মতো পরিস্থিতি। যদিও এখনো বর্ষা আসেনি, বেশ খানিকটা দেরিও আছে। সবে জৈষ্ঠ মাস শুরু হলো। তবুও সারাদিনের গরমের হাঁসফাঁস বৃষ্টির এই শীতল স্নেহের ছোঁয়া, সাথে ঠান্ডা হাওয়া শরীর ও প্রাণ দুটোই জুড়িয়ে দেয়।
তবে ঝড় বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে যায় এটা একটা অসুবিধার ব্যাপার। তাছাড়া বিশেষ কোনো অসুবিধা হয় না।রোজ বিকেলে এই ঝড় বৃষ্টির কারণে কোথাও বেরোনোর প্ল্যান হলেও সেটা প্রায় ভেস্তে যায়,তা আমি আগের পোস্টেই বলেছি। কিন্তু তাতে দমে গেলে চলবে না।আজকে বেরিয়েছিলাম বিকেল বেলা শম্পাদের পাড়ায়। ও বলছিল ওদের পাড়ায় একটা বাড়িতে বেশকিছু ভ্যারাইটি কাঠগোলাপ ফুলের গাছ আছে। আর সে গাছগুলো এখন ফুলে ভরে থাকছে।তার উপরে বৃষ্টির ছিটে পড়ায় তার সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। এই শুনে আর নিজের লোভ সামলাতে পারলাম না। চলে গেলাম কিছু ফটোগ্রাফি করতে ওর সাথে। আসলে সারাদিন ঘরে থেকে এক বেলা না বেরোতে পারলে মোটেই ভালো লাগেনা। আর এর ফলে মানুষ দিনকে দিন মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।আর আমার সেটা হওয়ার কোনো রকম ইচ্ছে নেই। অন্ততঃ এই বয়সে তো নয়ই। সেই কারণে জোর করে হলেও একটু বেরিয়ে পরি।
অনেকেই জিজ্ঞেস করে যে আমার কোন ঋতু পছন্দের?সত্যি বলতে আমার পছন্দের ঋতু অবশ্যই শীতকাল।কিন্তু তারপরেই যদি কোন ঋতুর কথা মনে পড়ে তাহলে বর্ষাকাল, যদি অবশ্যই ঘরে থেকে উপভোগ করি, বাইরে কোথাও যাওয়ার না থাকে। তবে ঠিক হয়তো এই কারণেই এই কালবৈশাখী সময়টাও মনের উপর ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এই যে কালো মেঘের আকাশ,অনেকটা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,সাথে প্রবল হাওয়া সবমিলিয়ে প্রকৃতিকে একটু হলেও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেয়। আর তার সাথে প্রাণ ফিরে পায় এই ধরার বুকে মুর্ছে পড়া প্রাণীগুলো। একটু হলেও সতেজতা ফিরে আসে তাদের মধ্যে।
আজকে তাই আপনাদের সামনে ঘন কালো মেঘে ঘেরা আকাশ আর কিছু কাঠ গোলাপের ছবি নিয়ে আসলাম। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।
প্রথম আলোকচিত্র
এই ছবিটা যে দেখছেন এটা একটা গোধূলি পর্বের ছবি।সূর্যাস্তের পরে আকাশে ঘন মেঘ ভরে গিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময়ই অস্তগামী সূর্যের আলোয় আকাশটা খা খা করছিল। তাই দিগন্ত রেখা বরাবর একটা সোনালী আভা আর তার থেকে যত উপরে ওঠা যায় দেখতে পাচ্ছেন আকাশটা কালচে নীল হয়ে আছে। অর্থাৎ সেজেগুজে তৈরি হচ্ছে বর্ষণের জন্য।
দ্বিতীয় আলোকচিত্র
এই যে গোলাপ ফুলগুলো দেখছেন, খানিকটা দুমড়ে গেছে, সেটা কিন্তু বৃষ্টিরই প্রভাব আর বয়সের ভারে। অর্থাৎ বলতে পারেন গোলাপগুলো একটু বয়স্ক। অর্থাৎ বেশ কিছুদিন হলো ফুটেছে, এবার ঝরে পড়বে।
এই গোলাপগুলো দেখে ঠিক মনে হচ্ছে সেই মানুষগুলোর কথা, যে মানুষগুলো কিছুকাল আগেও আমাদের সাথে ছিল। আমাদের দাদু, ঠাকুমা বা আরো অনেক আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু,বান্ধব যারা কালের নিয়মে কেউ সময়ের আগেই বা সময়ের সাথে ঝরে পড়েছে।কথাটা কঠিন হলেও বাস্তব।
তৃতীয় আলোকচিত্র
এই ফুলটির আমি নাম জানিনা। আপনারা কেউ জানেন কিনা অবশ্যই জানাবেন। খানিকটা কাঠগোলাপ এর মতনই পাতা। তবে ফুলটা একটু আলাদা ধরনের।এত সুন্দর হলুদ রঙের ফুল আমি এর আগে কখনো দেখিনি। এই প্রথম আমি ফুলটা দেখলাম। আর বিশেষ করে সবুজ পাতার উপরে যে আলোটা পড়েছে ফলে সবুজ পাতার রং হালকা লাগছে। তাই ফুলের সাথে পাতায় কম্বিনেশনটা অসাধারণ হয়ে উঠেছে।
চতুর্থ আলোকচিত্র
এইবার সূর্য দিগন্ত রেখার অনেক নিচে চলে গেলেও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। তাই আলোর আভা রয়েছে। কিন্তু আকাশ এবার সাদা কালো নীল মিশিয়ে মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে ঝরে পড়বে বলে। এই ভেঙে পড়া আকাশের ভয়ে তখন শম্পাদের পাশের বাড়ির বৌদিদের ব্যালকনি থেকে এই ছবিটা তুলেছিলাম। একটু অপেক্ষা করছিলাম কখন প্রকৃতি মা তার রূপ নিয়ে প্রকট হবে। ঝড়ের ঠিক আগে যে থমথমে পরিবেশটা থাকে এটা ঠিক সেই পরিবেশটা।
পঞ্চম আলোকচিত্র
এই কাঠগোলাপটার ভ্যারাইটি টা দেখুন কি সুন্দর গোলাপী এবং সাদা মেশানো। এই কাঠগোলাপটা আমার সবচেয়ে পছন্দের। সাদা এবং হলুদটা খুবই কমন। কিন্তু এটায় বেশ আলাদা ধরনের সৌন্দর্য্য আছে ।এই কাঠ গোলাপ নিয়ে আমার ছোটবেলার বেশ কিছু স্মৃতি আছে। এক জেঠুর কোয়ার্টারে কাঠগোলাপ গাছ ছিল।সে কাঠগোলাপ নিয়ে কানের পেছনে গুজে নিতাম।আর ভাব এমন যেন কোন সিনেমার নায়িকা।
ষষ্ঠ আলোকচিত্র
এটা টগর ফুলেরই একটি ভ্যারাইটি। তবে ছোট টগরের থেকে এই টগরটা আরো বেশি অ্যাট্রাক্টিভ হয়। কারণ বেশ বড় হয়। আর এইভাবে থোকায় থোকায় হয় বলে পুরো গাছটা জুড়েই দেখতে অসাধারণ লাগে।আপনাদের ওখানে এই টগরের প্রজাতি টা দেখা যায় কিনা অবশ্যই জানাবেন। আরেকটা আছে ছোট টগর। যেটাকে আমরা সাদাফুলও বলি। সেটা পুজোতে ব্যবহার করা হয়। এই টগরটা সহজে পাওয়া যায় না বলে পুজোয় ব্যবহার করা যায় না।
সপ্তম আলোকচিত্র
এটা কাছের থেকে আকাশটা আরেকটু দেখালাম। এবার মোটামুটি পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যেই প্রবল হওয়ার সাথে প্রচন্ড ধুলো নিয়ে ধেয়ে এসেছিল প্রবল ঝড় বৃষ্টি। প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো এই ঝড় বৃষ্টি ছিল। যদিও আমরা ওই বৌদির ব্যালকনিতে বসেই প্রচন্ড হাওয়া খেয়েছি, আর এ প্রকৃতি উপভোগ করেছি।সত্যি বলতে এই সুযোগ সহজে পাওয়া যায় না। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই দরজা জানলা আমরা বন্ধ করে দি,যাতে ধুলো না ঢোকে। কিন্তু বৌদির সেসব মাথাব্যথায় ছিল না।আরামসে ব্যালকনিতে বসে আমি, শম্পা, বৌদি বেশ বৃষ্টির আর হাওয়ার মজা নিয়েছি।
অষ্টম আলোকচিত্র
এটা হল একটু গাঢ় গোলাপি এবং লালচে আভার মিশ্রিত কাঠগোলাপ। কিছুদিন আগেই কমিউনিটিতে পূজা বোনের প্রোফাইলে ঠিক এই কাঠ গোলাপটার ছবি আমি দেখেছিলাম। তখন ওকে বলেছিলাম যে আমি কাঠ গোলাপটা আগে দেখিনি। সত্যিই কাঠগোলাপটি সৌন্দর্য্য বাকিগুলোর থেকে অনেকটাই আলাদা। বেশ লাল এবং গোলাপি মিলিয়ে একটা কালচে আভা ধরেছে ফুলটি।
নবম আলকচিত্র
এইবার কাঠগোলাপ গাছের সামনে গেলাম আর কিছু ফুল হাতে নিয়ে অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি তুলবো না তা তো হয় না। তাই একটা সাদা আর একটা গোলাপী কাঠগোলাপ নিয়ে একটা ছবি তুললাম। বেশ কিছু তুলেছিলাম, তার মধ্যে এটা বেশ পছন্দ হয়েছে। তাই এটাই কমিউনিটিতে দিলাম। কাছে থেকে এই ফুলগুলো বেশ খানিকটা ভেলভেটের মতো লাগে। আর একটা এত মিষ্টি কিন্তু হালকা গন্ধ মন মাতিয়ে দেয়।
দশম আলোকচিত্র
বেশ কিছু আলাদা প্রজাতির কাঠগোলাপ পেয়ে যেটা সব সময় পাওয়া যায় তাকে ভুলে গেলে তো চলবে না।তাই হলুদ কাঠগোলাপ হাতে নিয়ে আরো কিছু ছবি তুললাম।
যত যাই বলো, যেটা সব সময় পাওয়া যায় তার কদর আমাদের দেওয়া উচিত। কারণ যেটা ঋতুকালীন সেটা একসময় থাকে আবার চলে যায়।কিন্তু যা সব সময় থেকে যায় তার মর্যাদা একদমই আলাদা। তাই অন্যান্য রঙের প্রজাতির কাঠগোলাপ যতটা ভালো লাগে তা সত্যি প্রকাশ করার মতো নয়, তবে হলুদটাও তার স্বমহিমায় বিরাজমান।
| ডিভাইস | রেড মি নোট ১০ প্রো ম্যাক্স |
|---|---|
| তারিখ | ১৮.০৫.২০২৩ |
| স্থান | কল্যাণী,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত🇮🇳 |
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। আমার তোলা ছবিগুলো কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন ।সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।











Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাহ্ দিদি আপনি বেশ কিছু ফুলের এবং প্রকৃতির ফটোগ্রাফি দিয়ে আজকের ফটোগ্রাফি পোস্টটি সাজিয়েছেন। আমার কাছে প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ দিদি দারুন দারুন কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ বৌদি
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে আপনার মোবাইলের ক্যামেরাবন্দি করে বেশ কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। এত সুন্দর ভাবে ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ ভাই।
সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। আসলে কোথায় গেলে যেন ফটোগ্রাফি করা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। আর আজকে আপনার ক্যামেরাবন্দিতে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য গুলো বন্দি করেছে, দেখে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ভাই।
অনেক সুন্দর সুন্দর আলোকচিত্র আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন প্রত্যেকটা নক্ষত্র আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে সেই সাথে আপনার অনুভূতিগুলো অসাধারণ ছিল।।
বিশেষ করে গোধূলি বিকেল কাঠগোলাপ এবং বয়সের বারে নিয়ে পড়া গোলাপ ফুল গুলো সব থেকে বেশি ভালো লাগলো।।।
ধন্যবাদ দাদা।
"ক্যামেরাবন্দি সৌন্দর্য"একদম ঠিক বলেছেন আপু, আপনি খুবই চমৎকারভাবে সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগছে। একসাথে অনেকগুলো রঙের কাঠগোলাপ ফুল দেখতে পেয়ে ভালোলাগাটা অনেক বেড়ে গেল। আপু,প্রতিটি ফটোগ্রাফি খুবই দক্ষতার সাথে ক্যাপচার করেছেন, এবং তা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ দাদা ভাই।
ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও আপনি দেখছি আমাদের জন্য বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। শেয়ার করেছেন আপনার ভালো লাগা কিছু মূহুর্ত কে ক্যামেরা বন্দী করে। ঝড়েরর আকাশের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে সমস্ত কিছু কে তছনছ করে দিয়ে যাবে সহজেই।
ধন্যবাদ দিদি।
এই অসময়ের বৃষ্টির কারণে আমারও প্রত্যেকদিন বিকেলবেলার প্ল্যান ক্যান্সেল করতে হচ্ছে। মোটকথা বলা যায় যে এক সপ্তাহ ধরে বিকেলবেলা ঘর থেকে বেরোতে পারছি না।
ফটোগুলো নিয়ে আসলে তেমন কিছু বলার নেই, কারণ এত সুন্দর ফটোগ্রাফি আমি সত্যি কথা বলতে অনেকদিন পর দেখলাম। বিশেষ করে ফ্রেমের ভেতর দেওয়ার কারণে ফটোগুলো দেখতে আরো অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
বৃষু রোজ জ্বালাচ্ছে। আজও।