শ্যামনগর কালীবাড়িতে পুজো দিলাম (১০% @shy-fox এর জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
তারিখ-২১.০১.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমিও ভালই আছি। আজ আমি আপনাদের সামনে আমার একটি মন্দিরে ভ্রমণ তথা পূজো দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছি।২০২২ টা আমার জীবনে খুবই খারাপ গিয়েছিল। তা আমি বিভিন্ন পোস্টে এর আগে অনেকবার বলেছি। তারপরে ২০২৩ যেন এই বছর কিছু ভালো হবে সেই আশায় পৌষ মাসে শ্যামনগরে কালী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলাম। শ্যামনগর কালী মন্দির খুবই জাগ্রত এবং কথায় আছে মা যখন গঙ্গা পার করছিলেন তখন এই শ্যামনগরে ই অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই এই মন্দির।পৌষ মাস জুড়ে এই মন্দিরে ভীষণ ভিড় হয় আর সকলেই মুলো দিয়ে, ডালা দিয়ে মায়ের পুজো করে।যদিও গর্ভগৃহের ভেতরে ছবি তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মা মোটামুটি সোনায় মোড়া থাকেন।ধীরে ধীরে সময়টা পজিটিভ আসছিল দেখে ভাবলাম মাকে পুজো করেই সময়টা শুরু করি।

b2505137-2664-4026-9a64-51236118667c.jfif

এই ভেবেই আমি, শর্মিষ্ঠা এবং কাবেরী তিনজনে মিলে শ্যামনগরে চলে গেলাম মায়ের পুজো দিতে। সকাল দশটা পনেরো ট্রেন ধরেছিলাম। আমাদের কাঁচরাপাড়া স্টেশন থেকে শ্যামনগর যেতে আধ ঘন্টার মত সময় লাগে। ট্রেনে শ্যামনগরের নেমেই হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ মন্দিরটি। আর মন্দিরের পূজা ঘিরে সম্পূর্ণ পৌষ মাস ধরে বিশাল মেলা বসে। প্রত্যেকে ত্রিশ টাকার করে ডালা কিনলাম আর তাতে অবশ্যই মুলো ছিল। কারণ মুলো ছাড়া মায়ের পুজো হয় না। প্রায় এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাইনে দাঁড়ানো ছিলাম। যদিও লম্বা লাইন তবে সিকিউরিটি ভালো থাকায় অসুবিধা হচ্ছিলো না। আর লাইন দাঁড়াচ্ছে না এগিয়ে চলেছে।

3815ca7f-f2a6-40fc-96ea-62616b1e12f4.jfif

ধীরে ধীরে যখন মন্দিরের ভিতরে পৌঁছলাম, পুজোর ডালাও দিলাম, তারপরেই দেখি গর্ভ গৃহে আমার পরিচিত এক দাদা রয়েছে। কিন্তু ভিড়ের জন্য তাকে আর ডাকতে পারিনি।পরে যদিও দাদা একটু রাগ করেছিলেন যে কেন ডাকেনি। কিন্তু ডাকার মত পরিস্থিতি ছিল না।
কারণ মন্দিরের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাউকে ডাকা বা ফোন করা কিছুই সুযোগ ছিল না। তারপর সেখানেই বেঁধে গেল এক ঝামেলা। শর্মিষ্ঠা ওই ভিড়ের মধ্যেও মা কে ষষ্টাঙ্গ প্রণাম করছিল। এতে করেই একজন মহিলা সিকিউরিটি এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। "এখানে এভাবে শোয়া যাবে না ম্যাডাম।"

bcc60079-7271-4e53-bc85-18ffd3374701.jfif

আমি তখন বললাম,"আচ্ছা ঠিক আছে।ও তো এক সাইড হয়ে প্রণাম করছে। উঠে যাবে।"কিন্তু তাতে ওনার ব্যবহার ভালো হলো না।বারংবার উনি বাজে ব্যবহার করতে লাগলেন আমাদের সাথে। উনার সাথে আরো জুটে গেল দু তিনজন পুরোহিত। তারাও ভীষণ বাজে ব্যবহার করলেন। শর্মিষ্ঠা রেগে গিয়ে বলে উঠল,"আর কোনদিনও আমি এই মন্দিরে আসবো না।"
আমি শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম। মানুষের দোষের শাস্তি মা কেন পাবে ?ওই কথাটা বলার পরে ও খানিকটা থমকে গিয়েছিল। হয়তো এটাই ভাবছিল যে, "মুখ দিয়ে এটা কি কথা বললাম?"

3826fb69-05d7-465a-9239-37d06462920e.jfif

যাইহোক আমি ওকে সান্ত্বনা দিলাম।আর ওই মন্দিরের পুরোহিত কে বলে এলাম, "আপনাদের এই ব্যবহারের জন্যই দুদিন পরে কেউ আসবে না।শ্যামনগরের মানুষের ব্যবহার এত খারাপ ভাবিই নি। তাহলে হয়তো মাকে দূর থেকেই প্রণাম করতাম।" যদিও তাতে তাদের কিছু ভ্রুক্ষেপ নেই।ভেবেছিলাম দাদাকে ডাকবো জোরে চিৎকার করে। তারপর ভাবলাম ধর্মীয় স্থানে সিন ক্রিয়েট করা ঠিক হবে না। তাই আর কিছু বলিনি। মন্দির থেকে বেরিয়ে পূজো দিয়ে একটু মেলায় ঘুরলাম। সেরকম কিছুই কিনি নি। কারণ মেলার দোকানের লোক গুলোরও ব্যবহারও ভালো না। তিনটে কাপ কিনেছিলাম। আমার প্রিয় মানুষের জন্য একটা আর মাসির ছেলে মেয়ের জন্য দুটো।

367253e5-bd2a-4fc8-a12c-1e7dd99590a1.jfif

এরপর কৃষ্ণ মন্দিরে গেলাম। যদিও দূর থেকে প্রণাম করেছি। আর শিব মন্দিরে গিয়ে শিবের মাথায় জল ঢেলেছি। তারপরে খাব ভাবলাম। খাবারের দোকানে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন। কিন্তু কিছু ছবি তুলতে ভুললামা না। লম্বা লম্বা মিষ্টি।বড় ঢাকাই পরোটা!
আমার একটু প্রয়োজনে ব্যারাকপুর যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণে অটো ধরে সোজা ব্যারাকপুরেই চলে গেলাম। ব্যারাকপুরে গিয়ে হনুমান মন্দিরে পুরোহিতের সাথে কথা বলে, জিজ্ঞেস করলাম, "ওখানে যে যে ঘর ভীটেহীন মানুষগুলোকে খাওয়া-দাওয়া করানো হয়, তাদের সংখ্যাটা কত?

4dc6bacb-ceea-4d16-94ac-fe229c494ea7.jfif

সব জেনে ব্যারাকপুরের একটি নিরামিষ দোকান থেকে কচুরি আর তরকারি খেলাম। সাথে শর্মিষ্ঠা শ্যামনগরের ওই মিষ্টির দোকান থেকে লম্বা মিষ্টি কিনেছিল। সেই মিষ্টি খেলাম তিনজনে ভাগ করে। খাওয়ার পরে এবার ট্রেন ধরার পালা। একটা জলের বোতল কিনে তিনজনে মিলে ট্রেনে উঠে পড়লাম।তারপরে আর কি? দুপুরের মধ্যে সোজা বাড়ি।

00c2e34e-3bc5-41f5-8a23-f2cb2f9fc46b.jfif

আজ এখানে শেষ করছি। আমার আজকের পোস্ট টি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।সকলে ভালো থাকবেন।
স্থানশ্যামনগর, কালীবাড়ি
তারিখ০৭.০১.২০২৩
ডিভাইসরেডমি নোট ১০ প্রো ম্যাক্স

🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

পরিচিতি

250c6bf5-0fab-4e98-b28b-2299d4f6bc0f.jfif

আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।

Facebook
Instagram
YouTube

330c68fa-d267-405f-8d9e-8f34533fedc4.jfif

Vote @bangla.witness as a witness

d3bda13e-40b1-47f0-ae6e-12bd9e3cafa7.jfif

OR

Set @rme as your proxy

79210fdd-a2bc-44f9-b76d-6aa43122ce75.jfif

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHasrbANgiURdsJZbqzojRuxTqrn8BwVMhvjW2bszpJVcHcPW7rxPZLtrPVi9FWSiNoAnyKt4P3qfRidjbh5nr88gtri9qE2ohuC3tavoQ5nX9ihXXuBCWz.jfif

Sort:  
 2 years ago 

সত্যি বলতে কি পুজো বিষয়ে এতটা অভিজ্ঞতা আমার ছিল না তবে আমি আজকে আপনার পোস্ট করার মধ্য দিয়ে যে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেলাম তা সত্যি অতুলনীয়। আপনাদের ধর্মের অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম। পুজো দেওয়া শেষে ব্যারাকপুরের একটি দোকান থেকে নিরামিষ কিনে খাওয়া দাওয়া করে কাজ সম্পন্ন করেছেন। সত্যি খুবই ভালো লাগার একটা মুহূর্ত তুলে ধরেছেন।

 2 years ago 

আপু ত্রিশ টাকার করে ডালা কিনে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে তারপর পূজা দিলেন। আর পূজা শেষে লম্বা লম্বা মিষ্টি খেলেন। ভালই সময় উপভোগ করেছেন। ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60071.31
ETH 2409.83
USDT 1.00
SBD 2.43