আমিনার জীবনের গল্প দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম

আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর সকল ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন? নিশ্চয় মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি।

আমেনার জীবনের গল্প দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব

woman-65675_1280.jpg

source

আসলে আমেনা যখন তার সেজ ছেলের সাথে আমেরিকা গিয়েছিল সে ভালোই ছিল। তবে আমেনা যতই ভালো থাকুক না কেন সে আমেরিকায় থাকতে চায় না। আসলে এমন আটকা জায়গায় তার ভালো লাগে না। তাই আমেনা দেশে আসার জন্য অস্হির হয়ে পড়ল।প্রায় এক বছর পরে আমেনা দেশে ফিরে আসল।প্রথমে আমেনা কয়েক দিন বেশ ভালোই ছিল। আসলে আমেনার সব ছেলে মেয়ে বাইরে থাকে শুধু তার বড় ছেলে বাদে। তবে বড় ছেলে তেমন কিছু করে না তার অন্য ভাইয়েরা টাকা পয়সা দেয় বসে বসে বউ বাচ্চা নিয়ে চলে।আবার আমেনার যা কিছু আছে সব তার বড় ছেলেকে দিয়ে দিয়েছে।

যাইহোক আমেনার বয়স হয়েছে তাই আগের মতো নিজের কাজ করতে পারে না। বিশেষ করে নিজের কাপড় ধুয়া মেলা কোন কিছু করতে পারে না। তবে আমেনার বড় ছেলের বউ কখনো ফিরে তাকায় না যে আমেনা কি করছে।আমেনার তারপর নিজের বিছনা ও আনুষঙ্গিক কাজকর্ম অন্য কিছুই করতে পারেনা। একদিন আমিনার মেজ ছেলে আসলো বাড়িতে। সে এসে দেখে আমিনার রুমে ঢুকার মত অবস্থা নেই । তাই আসলে বয়স হয়েছে তাড়াতাড়ি বাথরুমে যেতে গেলে অনেক সময় প্রসাব পড়ে যায়।তবে তার বড় ছেলে ও ছেলের বউ কখনো তার রুমে ঢুকে পরিষ্কার করে না। মেজ ছেলে মায়ের এরকম অবস্থা দেখে বললো একজন লোক রাখতে।টাকা পয়সা যা লাগে আমি দিবো মায়ের সেবা করবে শুধু । আসলে বর্তমান যুগে লোক পাওয়া কঠিন ব্যাপার। যাইহোক ছেলে যাবার সময় মায়ের জন্য একজন লোক ঠিক করে রেখে গেল । লোকটা দুমাস কাজ করার পরে তার বড় ভাইয়ের বউ তার সব কাজ করায় তাই লোকটা আর কাজ করবে না।

তারপর আমেনা এখন ঝাল কোন তরকারি খেতে পারে না।তার জন্য একটু আলাদা তরকারি রান্না করে দিতে বললে তারা দেবে না । আমেনা বড় ছেলে বলে তোমার জন্য আলাদা রান্নার সময় নাই এগুলো পারলে খাবে না পারলে নাই। মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করে এ কথা শুনে আমেনার দুঃখের শেষ ছিল না। তারপর বাড়িতে বিল্ডিং করে দিল আমেনার আমেরিকা থাকার ছেলেরা।আসলে মায়ের জন্য ভিতরে বাথরুম- যা কিছু লাগে সব কিছু করে দিল। আসলে সবকিছু দিলেই কি মায়ের দিক দিয়ে যত্ন করতে হবে সেটা কে করবে। আমেনার বড় ছেলে আমেনার সকল টাকা পয়সা সব কিছু খাবে কিন্তু আমেনার দিকে ফিরে তাকাবে না। আসলে আমেনাকে তার ছেলেরা বাইরে নিয়ে যাবে সে যাবে না।আমেনার টাকা পয়সা কোন অভাব নেই তবে আমেনার মতো কষ্টে কেউ নেই।

একদিন আমেনা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ল হঠাৎ করেই। আসকে আমেনা একটা ভাজা মাছ খেয়েছিল দেখে আমেনার বড় ছেলে অনেক রাগ করেছিল। সেই দিন আমেনা অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমেনার অসুস্থতার কথা শুনে আমেনা সেজেছেলে আমেরিকা থেকে আসলো দেশে।আসলে আমেনা বয়সের থেকে জোগালের অভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমেনাকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো।কিন্তু আমেনার বিদয়ের ঘন্টা ভেজে গেল। হাসপাতালে আমেনা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।আসলে আমেনা তার বাচ্চাদের জন্য যে কষ্ট না করেছে তার প্রতিদান ছেলেরা এভাবে দিল। আসলে আমরা সবাই ভুলে যায় যে আমার বাবা কিভাবে আমাকে মানুষ করেছে।তাই বৃদ্ধ বয়সে আমাদের সবারই বাবা মাকে দেখা উচিত। আসলে অনেক সময় টাকা পয়সা সব থাকলেও একটু ভালোবাসা ও ভালো ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। যাইহোক আমেনার টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও আমেনা শেষ বয়সে অনেক কষ্ট করে মারা গেল।সত্যি বলতে টাকা পয়সা বা লোকজন দুটির প্রয়োজন। আশাকরি আমার গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

প্রয়োজনীয়তথ্য.
ফটোগ্রাফার@parul19
ডিভাইসredmi note 12
লোকেসনফরিদ পুর

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আবার দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে অন্য কোন লেখা নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

HFcFmHBiAeR2oP8xXotf9GhVZ2UVLfizAkm26SLD9Ksq63dTYvrrycGbUPAEdikxGD2cqVMH8heE8DJW36AaZjZ4fD6Yt6w5ks6jyrVJqR...SPKhpaGF3R77N6UCcw6tHuYvyw7YjLACEvtraNkFm1AbXaoof2ZWppk6CphcwuiCL9iHDNMmYZX8Bq4y4gXniUDWXhBKVWevHte3V4qsJQhXhen8d6ttKVvadL.png

আমি পারুল। আমার ইউজার নেম@parul19। আমার মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি।আমি ফরিদ পুর জেলায় বসবাস করি।আমার দুটি মেয়ে আছে। আমি বাংলাই লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। আমি নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করতে ও ঘুরতে পছন্দ করি।এই অপরুপ বাংলার বুকে জন্ম নিয়ে নিজেকে ধন্যবাদ মনে করি।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjde1F6oRaKDis6eFNTqaET8soo8NYdtJXnEayXsg3Fx95TFkgLt1et4cn3GmnVY...ntgU63DpkYkb8a3HFVcmr9kVKAUK7GZN8yEenN3RPoyt3RkugeSBeesWqLh65DeovRdHCzQgvqVNscRmK7JWHUg3a1MT1UCEnDHbAXHQJwY5ncdm8YmiPkmd4R.gif

52k6mffrchQhs3Ssm9CLhkXcA8J5RhCbAhzzMtY9rBYwuor5owTWfK3hsfRcZnYb7wrEhskd2s8HBHr4RhMM9omL4rxSgvTJqwSSnNUzvj...be9rb7FDWzxUHqitBaapJsRqCRjhnVAThRvqhZUGBCJvV4KwGya5FG9QBW4wYrve2oc9ZtfxPSURk6a8Q2ZazNPCEtExJfp3Mm5t568RwbAgAuyAsXhtL75JLN.png

Sort:  
 7 months ago 

আমিনার জীবনের গল্পের প্রথম পর্বটা আমি পড়েছিলাম। আর এই পর্বের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমিনা নিজের সন্তানদের জন্য অনেক বেশি কষ্ট করেছিল। তবে তার বড় সন্তান এরকম ভাবে নিজের মাকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারল। অন্য সন্তানগুলো তো তবুও ভালো ছিল। মায়ের সেবা যত্ন করার জন্য লোক রেখেছিল, আবার মাকে আবারো বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমিনা দেশে থাকবে বলেছিল। তার বড় সন্তানের উচিত ছিল নিজের মায়ের প্রতি খেয়াল রাখা। শেষ পর্যন্ত আমিনার মৃত্যু হয়েছে এটা দেখে খারাপ লাগলো। শেষ বয়সে অনেক বেশি কষ্ট করেছে।

 7 months ago 

সত্যি ভাইয়া আমিনা শেষ বয়সে অনেক কষ্টে মারা গিয়েছে।ধন্যবাদ ভাইয়া

 7 months ago 

আমিনা নিজে কষ্ট করে নিজের সন্তানদেরকে বড় করেছি। তবে তার বড় সন্তানের এরকম ব্যবহার দেখে আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগতেছে। শেষ পর্যন্ত আমিনা হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে ভাবতেই খারাপ লাগতেছে। তবে আমিনার মেজ ছেলে অনেক ভালো ছিল এটা তার কাজ দেখেই বুঝতে পারছি। নিজের মায়ের কষ্ট হবে বলে বাড়িতে লোক রেখেছিল, যা বড় বউয়ের অত্যাচারে চলে গিয়েছে। আর মায়ের শরীর খারাপের কথা শুনে বিদেশ থেকে চলে এসেছে। তার মা যদি বিদেশে থাকতো তাহলে হয়তো ভালো থাকতো। তবে বিদেশের বন্দি জীবনটা সে অতিবাহিত করতে পারছিল না বলে দেশে চলে এসেছিল। খুব সুন্দর করে আপনি পুরো গল্পটা শেয়ার করলেন।

 7 months ago 

জ্বী আপু অন্য অন্য ছেলেরা বেশ ভালো জানত কিন্তু সে যেখানে থাকে সেখানে কোন সাপোর্ট পেতো না। ধন্যবাদ আপু পোস্টি পড়ার জন্য।

 7 months ago 

আমিনার জীবনের গল্প প্রথম পর্ব পড়েছিলাম আর আজ শেষ পর্ব পড়ছি।আমিনার বিদেশি ছেলেরা তো যথেষ্ট ভালো।মায়ের জন্য টাকা পয়সা এবং অনেকে খোজ খবর নেয়।তবে বড়ো ছেলে ও ছেলের বউ কুলাঙ্গার। আমিনার সব কিছু ভোগ দখল করে কিন্তুু খেয়াল রাখে না এবং দুর্ব্যবহার করে আসলে এতো কষ্ট করে আমিনা ছেলেদের কে মানুষ করেছে অথচো আজ আমিনার সুখের দিনে দুঃখ।এমন ঘটনা গুলো সত্যি ভীষণ কাঁদায়।ধন্যবাদ গুছিয়ে পর্বগুলো শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

এমন ঘটনা দেখতে সত্যি অনেক খারাপ লাগে, ধন্যবাদ আপু।

 7 months ago 

আমিনা শুরুতেও অনেক কষ্ট করেছিল, আবার মৃত্যুর সময়ও এরকম কষ্ট করেছে। অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদেরকে বড় করেছিল এবং ছেলেমেয়েদের অবস্থাও ভালো ছিল। বড় ছেলে এবং ছেলের বউ এরকম খারাপ ছিল, এটা দেখেই খারাপ লেগেছে। বড় ছেলে অন্য ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের সংসার চালাত এবং বসে বসে খেতো। মাকেও দেখাশোনা করত না। আমি তো মনে করি একমাত্র বড় ছেলে এবং বড় ছেলের বউয়ের কারণেই এরকম ভাবে আমিনা মারা গিয়েছে।

 7 months ago 

জি ভাইয়া বড় ছেলে আর বউয়ের জন্য এমন অবস্থা হয়েছিল,ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট পড়ে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 7 months ago 

এই গল্পের প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম৷ খুবই সুন্দর হয়েছিল। আজকেও খুবই সুন্দর ভাবে আপনি এই গল্পটি তুলে ধরেছেন৷ এখানে আমিনার যে ছেলেরা বিদেশে ছিল তারা তার জন্য টাকা পয়সা পাঠাতো৷ সেই টাকা তার বড় ছেলে নিয়ে খেয়ে ফেলতে এবং তার মাকে কিছু দিত না শুনে খুব খারাপ লাগলো৷ বড় ছেলে এবং বড় ছেলের বউ তার মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে যা তার মনে অনেকটা কষ্টের দাগ দিয়েছিল৷ সে অনেক কষ্ট নিয়েই তার জীবন ত্যাগ করেছে৷

 7 months ago (edited)

সত্যি ভাইয়া সে অনেক কষ্ট নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 7 months ago 

আমেনার বড় ছেলের জন্য আমেনাকে এতো কষ্ট করতে হলো। আমেনার অন্য ছেলেরা তো খুব ভালো। তারা তো আমেরিকায় থাকতে বলেছিল আমেনাকে। কিন্তু আমেনা তো দেশে থাকতে চাইতেন সবসময়। আমেনার বড় ছেলে অনেক হারামি এবং বড় ছেলের বউ আরও বেশি হারামি। এতো কষ্ট করে আমেনা সন্তানদের বড় করলো এবং আমেনার বড় ছেলেকে সব দিয়ে দিলো আমেনা,তবুও তারা এতো খারাপ করলো আমেনার সাথে। হয়তো ভবিষ্যতে বড় ছেলে এবং তার বউয়ের সাথে,তার ছেলেও এমন করবে। কারণ যেমন কর্ম তেমন ফল। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 7 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া যেমন কর্ম তেমন ফল ভবিষ্যতে তারাও এমন পাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60788.02
ETH 2632.71
USDT 1.00
SBD 2.63