পাহাড় চড়ে আজিনকেতারা ফোর্টে এক ছুটির দিন৷ ভ্রমন ব্লগ

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

☘️ নমস্কার বন্ধুরা☘️


🙏🙏🙏


1000192867.jpg

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত



1000192877.jpg

কেমন আছেন? আশাকরি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা ভালোই আছেন৷ আপনারা সবাই নিজেদের প্রিয়জন নিয়ে ভালো থাকুন এই কামনা করি৷ আমিও ভালো আছি। বন্ধুরা, আজ আপনাদের নিয়ে যাবো পুণের আজিনকেতারা ফোর্টে। ফোর্টটির ইতিহাস আমি ঠিক জানি না৷ তবে মহারাষ্ট্রের ফোর্ট মানে কোন না কোন মারাঠা রাজাই করেছেন৷ কিছু না জেনেই উঠেছি আর ফিরেও এসছি কেন জানেন? ওই ওপরে উঠে গেলে এতো সুন্দর বাতাস আর সাথে মনোরম দৃশ্য যা দেখার জন্য বহু পাহাড়ে রাজি। আপনাদের কারও পাহাড় চড়তে ভালো লাগে? যদি না লাগে তবে আমার অভিজ্ঞতা শুনে দেখুন, ইচ্ছে জাগতেও পারে। আর যদি ভালো লাগে তবে চলুন আর দেরি না করে শুরু করে দিই পাহাড় চড়ার গল্প।

1000192728.jpg

আজিনকেতারা ফোর্ট। ফোর্ট অফ সপ্ত ঋষি। পুনে থেকে একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে গেলেই এই ধরুন গাড়িতে আড়াই ঘণ্টা। একটা ছোট্ট পশ্চিমঘাটের পাহাড়ি পথ পেরিয়ে গেলেই ছোট ছোট গ্রামের ভেতর দিয়ে পৌঁছে যাই সাতারার আজিনকেতারা পাহাড়ের নিচে। সমতল থেকে খানিক ওপরে হওয়ার কারণে গাড়ির পার্কিং লট থেকে সামনের মফস্বলের দৃশ্যটা কি অপূর্ব দেখাচ্ছিল। প্রতিটা বাড়ির মাথায় সামান্য জায়গাতে নীল রঙের চালা রয়েছে। আমার ধারণা সিঁড়ি ঘরের চাল। নীল রঙের কারনে ওপর থেকে মিনি গ্রিস মনে হচ্ছিল। যাইহোক এখানে খুব বেশি সময় না কাটিয়ে আমরা পাহাড়ে উঠতে শুরু করেছিলাম। প্রথমবার ভুল পথে প্রায় কুড়ি মিনিট গিয়ে আবার ফিরে এসেছি। তারপর সঠিক পথে শুরু করেছিলাম।

1000192745.jpg

সেদিন পাহাড়ে চড়ার মুহূর্ততে প্রচন্ড রোদ ছিল। তবে খানিক বাদে রোদটা কমে যায়। তাই পাহাড়ে ওঠাটা আমাদের সবার কাছেই একটু সহজ হয়ে যায়। পশ্চিমের প্রতিটা ফোর্টই পাহাড়ের উপর। ঘন্টাখানেক বা ঘন্টা দেড়েক হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। তবে পার্কিং এরিয়াতে বলছিল এই ফোর্টটিতে গাড়িতে করেই যাওয়া যায়। কিন্তু সবাই মিলে পায়ে হেঁটে যাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে। তাছাড়া অনেক ধরনের পাহাড়ি ফুল গাছপালা ইত্যাদি দেখাও যায়।

1000192747.jpg

বন্ধুরা আমাদের যাত্রাপথের মাঝেই বলে রাখি ফোর্ট হল দূর্গ। তখনকার দিনে মারাঠা শাসকরা নানান জায়গায় রাজ্য শাসনের জন্য ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের দূর্গ বানিয়ে রেখেছিলেন। প্রয়োজনে সে সমস্ত জায়গায় গিয়ে থাকতেনও। বেশ কিছু দূর্গে এখনো তোপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে সিংহভাগই ভগ্ন প্রায় অথবা শুধু প্রধান ফটকটুকু দাঁড়িয়ে আছে, কোথাও আবার সেসবও নেই। তবুও পাহাড়ে চড়ি। পাহাড় চড়তে ভালো লাগে তাই চড়ি৷ আসলে উপরে উঠলে এত সুন্দর বাতাস আর প্রকৃতির সবুজ আকাশের নীল নিচের দিকে তাকালে মানবজাতিকে বড্ড ক্ষুদ্র মনে হয়। আমরা তো সত্যিই অত্যন্ত ক্ষুদ্র। তাই না?

1000192866.jpg

আমরা কিছুটা করে উঠছিলাম। আর খানিকক্ষণ বসছিলাম। সেখানে নানান ধরনের পাতা, কেউ শুকনো, কোন গাছ আবার সদ্য মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এইসব দেখে কচিকাঁচাদের ছোটখাটো প্রাক্টিক্যাল ক্লাসও নিয়ে নিলাম। শুকনো পাতার হাতে তুলে দেখালাম পাতার জালিকাকার শিরাবিন্যাস, সমান্তরাল শিরাবিন্যাস, গুচ্ছ মূল, ছোটখাটো একটা ক্যাকটাসও দেখিয়ে দিলাম। প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে পড়াশোনা করার মজাই আলাদা। যেন খেলার ছলে নতুন কিছু শেখা।

1000192748.jpg

বেশ খানিকটা ওপরে ওঠার পর দেখলাম এক ধরনের সাদা ফুল। পরে ভালো করে দেখে বুঝলাম এটি পাহাড়ি আবহাওয়া জন্ম নেওয়া একধরনের জংলি অর্কিড। পুরো একটা জায়গা জুড়ে সাদা হয়ে রয়েছিল। কি অপূর্ব নাই দেখাচ্ছিলো। আমি কায়দা করে খানিকটার ছবি তুলেছি। জানেন যে পথে আমরা উপরে উঠছি জঙ্গল পেরিয়ে গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে, সেই জঙ্গলের অধিকাংশই সেগুন গাছে ভরা। বড় বড় পাতার ছায়া আমাদের প্রাকৃতিক ছাতার মতো আরাম দিয়ে গেছে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর আমরা পৌছলাম ফোর্টের পেছনদিকের দরজার নিচে। আবার খানিক বসলাম, একটু চকলেট খেলাম জল খেলাম, দিয়ে সোজাসুজি উঠবো বলে বেরোলাম। হঠাৎ কানে শুকনো পাতার খড়খড় শব্দ এলো। যে জায়গাটা দিয়ে হাঁটছিলাম ঠিক তার পাশে। পেছন ঘুরে দেখি ফনা তোলা সাপ। সম্ভবত কিং কোবরা। আমি প্রচন্ড সাপে ভয় পাই। কোনরকমে প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়ে উঠেছি। তারপর নিচে দাঁড়িয়ে ওই প্রকাণ্ড গেটের ছবি তোলার আর সাহস হয়নি। তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেলাম ঠোটের ওপর।

1000192746.jpg

ফাঁকা ফোর্ট৷ কোথাও কিচ্ছু নেই। শুধু মাথা তোলা গাছ। নিজেকে বড় বেমানান লাগছিল। এই নির্মল প্রকৃতির মাঝে আমরা ধ্বংস ছাড়া কি বা করতে পেরেছি। ধ্বংস বলছি কেন জানেন ফোর্টের ওপরে রাস্তায় দেখেছি কেবিল পাতা। সামনে বিরাট টাওয়ার। পরে অবশ্য জেনেছিলাম এটি পুনের আকাশবাণী রেডিও স্টেশনের টাওয়ার। হেঁটে যখন ফোর্টের সামনের দিকে চলে গেছিলাম তখন সাতারার আকাশবাণীর অফিসের গেটটা চোখে পড়েছিল।

1000192853.jpg

সারা সপ্তাহ দৈনন্দিন জীবনের নানান কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু যদি শুদ্ধ বাতাস নেওয়া যায়, তখন মনে হয় ধরে প্রাণ এলো। এনার্জি একদম ভর্তি। আসলে গ্রামে বড় হওয়ার কারণে শহরের এই কংক্রিটের জীবনযাত্রায় আমি কোনদিনই মানিয়ে নিতে পারি না। আমার মন পড়ে থাকে গাছের ভিড়ে, পাখির ভিড়ে, ধান জমি, ফুলের চাষ, নদী, কালভার্ট, দীঘি- দুনিয়ায়৷ এই শহরের জটিলতাগুলো কোনোভাবেই নরম সহজ সরল হয়ে উঠতে পারে না। এখানে বাতাসে স্বচ্ছতা কোথায়? তাই মাঝেমধ্যেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই আর বেঁচে নিই খানিক প্রাণ ভরা জীবন। বন্ধুরা আপনাদেরও কি তাই মত? বিশেষ করে যারা গ্রামে বড় হয়েছেন।

1000192756.jpg

প্রতিটা ছবি দেখুন কি অসম্ভব নির্মল। মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই করতে পারিনা আমার প্রিয় ভারতবর্ষে এমনও নির্মল জায়গা রয়েছে। কিন্তু আছে সত্যিই আছে। নানান জায়গায় গিয়ে দেখেছি আমার ভারতবর্ষের প্রকৃতিতে বৈচিত্রের কোন শেষ নেই। তার মধ্যেই সাম্য আছে। শান্তি আছে। মানুষ পৌঁছে গেলে অশান্তিও দেখা যায়। হা হা হা।

1000192758.jpg

যাইহোক কেমন লাগল আজকের স্বল্পক্ষণের ভ্রমণ? ও হ্যাঁ কথায় কথায় বলাই হয়নি নামার সময় আমরা আর হেঁটে নামিনি। ছোট ছোট বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল বলে চার চাকার সাহায্য নিয়েছিলাম।

1000192754.jpg

আচ্ছা, আর বকবক করবো না। আজ এ পর্যন্তই থাক। আবার কাল আসবো নতুন কোন গল্প বা অন্য কিছু নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভীষণ ভালো থাকুন। সবাইকে ভাল রাখুন। আর প্রকৃতির হয়ে, প্রকৃতিকে ভালোবেসে, প্রকৃতির পাশে থাকুন। আসি?

টাটা!

স্থান সাতারা,মহারাষ্ট্র
ফোর্টের নাম আজিনকেতারা
প্রতিষ্ঠাকাল ষোড়শ শতক
প্রতিষ্ঠাতা শেলারা রাজবংশের রাজা ভোজ
ছবির মাধ্যম স্যামসাং গ্যালাক্সি F54

1000192865.png

~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Sort:  
 4 months ago 

আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে যেন আমি সেই সব সাদা অর্কিডের ফুল, সেগুন গাছের ছায়া এবং ফোর্টের ঐতিহাসিক গল্পগুলো নিজের চোখে দেখছি। আপনার লেখায় প্রকৃতি এবং ইতিহাসের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। এই ধরনের লেখা পড়ে মনে হয়, আমাদের চারপাশের প্রকৃতি এবং ইতিহাসের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর পোস্টের জন্য।

 4 months ago 

কী সুন্দর মন্তব্য করলেন দাদা৷ আমরা প্রকৃতির প্রতি সামান্য ভালোবাসা দেখালেই সৌন্দর্য বেড়ে যাবে৷ আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত বোধ করছি। অনেক ধন্যবাদ এমন পজিটিভ মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68588.91
ETH 2458.42
USDT 1.00
SBD 2.35