গল্প-বোবা কান্না||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যদিও ভালো গল্প লিখতে পারি না। তবুও মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লিখতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


বোবা কান্না:


Source


অনেক বছর পর নীলাদ্রি তার বাবা-মায়ের কোল আলো করে এসেছিল। কন্যা সন্তানের মুখ দেখে যদিও নীলাদ্রির বাবার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবুও নীলাদ্রির মা নীলাদ্রিকে আগলে রাখার চেষ্টা করত। হয়তো ছোটবেলায় নীলাদ্রি কিছুই বুঝতো না। মায়ের আদরে বড় হতে লাগলো নীলাদ্রি। হয়তো তার বাবা তাকে অবহেলা করত না কিন্তু মন থেকে যে ভালোবাসতো না সেটা নিলাদ্রী অনুভব করতে পারতো। হয়তো তার ভেতরে অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু কাউকে বলতে পারত না। সময় যত যেতে লাগলো নীলাদ্রি সময়ের সাথে সাথে বড় হতে লাগলো। নীলাদ্রি বড় হওয়ার সাথে সাথে তার কষ্ট গুলো যেন আরো বেড়ে যেতে লাগলো। অন্যান্য বাচ্চাদের মতো নীলাদ্রি কথা বলতে পারত না।


নীলাদ্রির এই অবস্থা দেখে তার মা চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েকে নিয়ে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অন্যদিকে নীলাদ্রির বাবা তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছিল না। দেখতে দেখতে আরো কিছুদিন পেরিয়ে গেল। নীলাদ্রি আরো বড় হতে লাগলো। কিন্তু তার মুখে কোন ভাষা ফুটল না। সবার মত সে কথা বলতে পারতো না। নীলাদ্রির প্রতি তার পরিবারের অবহেলা আরও বেড়ে গেল। শুধু তার মা তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করত। সবার অবহেলা আর অনাদর নীলাদ্রিকে যেন ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। তার ভেতরের বোবা কান্না হয়তো কাউকে বোঝাতে পারছিল না। কিন্তু নীলাদ্রি খুবই কষ্ট পাচ্ছিল। সময় যত যেতে লাগলো নীলাদ্রির কষ্ট যেন আরো বেড়ে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে নীলাদ্রির একটি ছোট্ট ভাই হল। এবার নীলাদ্রির মা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নীলাদ্রির মনের কষ্টগুলো শোনার মত কেউ থাকলো না।


আড়ালে গিয়ে নীলাদ্রি চোখের জল ফেলতো। কখনো বা ওই দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো কখনো বা নিজের কষ্টগুলো বুকে চাপা দিয়ে রাখত। হয়তো তার বোবা কান্না কেউ বুঝতে পারত না। সেও চাইতো সবার সাথে কথা বলতে। সেও চাইতো বন্ধুদের সাথে খেলা করতে। কিন্তু তার মুখে যে ভাষা নেই। সে কারো সাথে মিশতে পারত না। তার কোন বন্ধু ছিল না। ছোট ভাই হওয়ার পর নীলাদ্রির সাথে তার মায়ের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সে সারাক্ষণ ভাইকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে নীলাদ্রির না বলা কথাগুলো আর কাউকে বলা হয়ে ওঠেনা। সারাদিন নীলাদ্রি ঘরের কোণে চুপটি করে বসে থাকে। হয়তো তার ভেতরের কান্না কেউ দেখতে পায় না। অবহেলা অনাদরে বেড়ে ওঠা নীলাদ্রি বড় হয়ে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল আরো কিছুটা সময়।


নীলাদ্রি সবার মত স্কুলে যেতে চাইল। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না। নীলাদ্রি যখন নিরালায় নিভৃতে বসে বসে নিজের কষ্ট গুলো মনে করত তখন দু চোখের জল মাটিতে পড়তো। কিন্তু কাউকে কখনো নিজের বোবা কান্না দেখাতে পারেনি। এবার দেখতে দেখতে নীলাদ্রি অনেকটা বড় হয়ে গেল। গ্রামের একটি স্কুলে সে পড়তো। তার কোন বন্ধু ছিল না। সবাই খেলতো আর নীলাদ্রি দূরে দাঁড়িয়ে দেখতো। দেখতে দেখতে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে গেল সে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেল। নিলাদ্রি তার মা সেদিন অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু তার বাবা তেমন কিছুই বলেনি। দেখতে দেখতে নীলাদ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে গেল। কেটে যেতে লাগলো আরো কিছুদিন। ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি সেই অবহেলা এখনো রয়েই গেল। তার তখনও কোন বন্ধু ছিল না। একদিন নীলাদ্রি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল না। তার মা বেশ চিন্তা করছিল। তার বাবাকে গিয়ে বলল নীলাদ্রি এখনো ফিরেনি ঘরে। নীলাদ্রির বাবা খুব একটা গুরুত্ব দিলো না। এরপর দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। তখন নীলাদ্রির বাবা-মা দুজনে নীলাদ্রিকে খুঁজতে লাগলো। পাশের গ্রামের একটি ফাঁকা জায়গায় নীলাদ্রির ক্ষত বিখ্যাত দেহটা খুজে পেল তারা। কোন এক নরপিশাচ তার দেহটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। আর তার ভেতরের বোবা কান্না কেউ দেখেনি। সে চিৎকার করে কাঁদতে পারেনি। হয়তো তার বোবা কান্না মুখ ফুটে বের হয়নি। শেষ হয়ে গেছে নীলাদ্রি। আর শেষ হয়ে গেছে তার স্বপ্নগুলো।


গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে গল্প লিখার চেষ্টা করি। জানিনা আমার লেখা গল্প আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। তবে চেষ্টা করেছি ভিন্ন ধরনের একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

শুরুর দিকে গল্পটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম হয়তো এই অসহায় মেয়েটির ভবিষ্যৎ ভালো হবে। কিন্তু হায় এ কি হলো।শেষমেষ তার কথা না বলতে পারাটাই তার জন্য কাল হয়ে গেল।খুব খারাপ লাগলো,যদিও গল্পটা বেশ ভালো লিখেছেন আপু।

 last year (edited)

মাঝে মাঝে ভাগ্য সহায় হয় না। তাই তো শেষে এসে নীলাদ্রি তার জীবন দিয়ে দিল। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

বরাবরের মতো বেশ সুন্দর লিখেছেন আপু ।নীলাদ্রিরা এভাবে অবহেলায় বেড়ে উঠে। তারা পরিবার ও সমাজে অবহেলেয় একদিন এভাবেই চলে যায়। কিন্তু সমাজ তার নিজের গতিতে ছুটে চলে।নীলাদ্রিদের কথা কেউ মনে রাখে না। বেশ ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।

 last year 

আপু আমি সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। আসলে অনেক সময় নীলাদ্রির মত মেয়েরা অবহেলায় বেড়ে ওঠে। আর এভাবেই অবহেলায় হারিয়ে যায় নিজের পরিবার কিংবা সমাজ থেকে। হয়তো তাদের কথা আর কেউ মনে রাখে না।

 last year 

গল্পটি পড়ে নীলাদ্রির জন্য খুবই খারাপ লাগলো আপু। মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই সে অনাদরে বড় হয়েছে আর শেষে এসে এইভাবে তার মৃত্যু হল, ছোট থেকে বড় অব্দি কোনো বয়সে এসেই নীলাদ্রি শান্তি পেল না। এই গল্পটির মধ্যে দিয়ে সত্যিই বোঝা গেল, যারা কথা বলতে পারে না নীলাদ্রির মত ,তাদের মনের ভাষা গুলো এই ভাবেই চাপা পড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। খুবই দুঃখজনক ছিল গল্পটি।

 last year 

অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে ওঠা নীলাদ্রি কখনো সুখের মুখ দেখল না। শেষ হয়ে গেল তার স্বপ্নগুলো। আর শেষ হয়ে গেল নীলাদ্রি। ধন্যবাদ অপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপনি সবসময়ই দুর্দান্ত গল্প লিখেন আপু। তাইতো আপনার গল্প গুলো নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করি। এই গল্প পড়ে নীলাদ্রির জন্য খুব খারাপ লাগলো। নীলাদ্রি জীবনে কিছুই পেল না। বাবার ভালোবাসাও পেল না। শেষমেশ নরপিশাচের কবলে পড়ে জীবনটা দিয়ে দিতে হলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

ভাইয়া আমি ভালো গল্প লিখি কিনা জানিনা তবে মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। সত্যি ভাইয়া নীলাদ্রি তার জীবনে কিছুই পেল না। হয়তো অবহেলায় জীবনটা শেষ হয়ে গেল।

 last year 

গল্পটার প্রথম দিকে বেশ ভালোই লাগছিল তবে শেষের অংশে এসে একটু কষ্ট লাগলো। নীলাদ্রির সাথে শেষের দিকে সে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা আসলেই খুবই দুঃখজনক যদিও সে বোবা কথা বলতে পারতো না তারপরেও সে বড় স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু সেটা আর সফল হতে দিলো না।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

মাঝে মাঝে জীবনটাই কষ্ট দিয়ে সাজানো থাকে। তাই তো কষ্টের অনুভূতি গুলো লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

 last year 

গল্পের প্রথমে পড়ে বেশ ভালোই লেগেছিল। তবে শেষের দিকে এসে নীলাদ্রির জন্য অনেক খারাপ লাগল। আসলে আমাদের সমাজে এমন মানুষ এখনো আছে কন্যা সন্তান দেখলে রাগ করে। আর নীলাদ্রি এমন অবহেলার জন্য অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো।আসলে আমাদের সবারই উচিত সন্তানকে সময় দেওয়া। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 last year 

আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং শেষের দিকে এসে গল্পটি পড়ে আপনার কষ্ট লেগেছে বুঝতে পারছি আপু। আসলে অনেক সময় জীবনের বাস্তবতা গুলো এমন হয় আপু।

 last year 

আপু আপনি কিন্তু দারুন গল্প লিখেন। একটা কথা কি অভাগী যেদিকে যায় সাগর সেদিকে শুকায়। নিলাদ্রির জীবনেও হয়েছে তাই। সেই ছেলে বেলা হতে জীবন যুদ্ধে নিপীড়িত একটি মেয়ে শেষ অবদি ভাগ্যের নির্মমতা হতে রক্ষা পেল না। আচ্ছা আপু বলেন তো এখানে কার দোষ? নিলাদ্রী নাকি তার ভাগ্যের?

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু ভাগ্য খারাপ থাকলে সবদিক থেকেই বিপদ আসে। জীবন যুদ্ধে হয়তো এভাবেই অনেকে হার মনে। আর মৃত্যুর পথে চলে যায়। আসলে দোষটা তার ভাগ্যের। অন্যদিকে ভাবতে গেলে দোষ সেসব মানুষরূপী পশুদের। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপনার লেখা গল্প গুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে আপু ।খুব সুন্দর গল্প লেখেন আপনি। আজকের গল্পের শেষটা খুবই কষ্টদায়ক ছিল। মেয়েটির বোবা কান্না কেউ শুনতে পেল না। ধন্যবাদ অসাধারণ এই গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।।

 last year 

আমার লেখা গল্প পড়তে আপনার ভালো লাগে জেনে ভালো লাগলো আপু। চেষ্টা করি মাঝে মাঝে ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার জন্য। সত্যি আপু মেয়েটির বোবা কান্না আর কেউ শুনতে পেল না।

 last year 

আপু আপনার লেখা গল্পগুলো বেশ ভালো লাগে।গল্পের প্লট খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেন আপনি।নীলাদ্রির গল্পটি অনেক ভালো লাগলো।এরকম ঘটনা আমাদের বাস্তবজীবনে অনেক দেখা যায়।শেষে নীলাদ্রির ক্ষত বিক্ষত দেহ পড়ে থাকলো। সৌভাগ্য মানুষের জীবনকে যেভাবে সুন্দর করে ,ঠিক একইভাবে দুর্ভাগ্য মানুষের জীবনকে শেষ করে দেয়।যেমনটি নীলাদ্রির ক্ষেত্রে দেখতে পেলাম আমরা।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আপু আমি চেষ্টা করি গল্প লিখার। গল্পের প্লট সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। আসলে বাস্তবতা থেকেই হয়তো গল্পের সৃষ্টি হয়। এভাবে হাজারো নীলাদ্রি হারিয়ে যায় অন্ধকারে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65792.35
ETH 2676.19
USDT 1.00
SBD 2.90