গল্প-কাঁচের দেয়াল||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লিখি। আজকে সারাদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। এরপরেও আজকে একটি গল্প পোস্ট করতে চলে এলাম। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
কাঁচের দেয়াল:
Source
অনিতার জীবন যেন আজ চার দেয়ালের মাঝে বন্দী। একটা সময় ছিল যখন অনিতা মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়াতো। ছুটে চলে যেত ওই দিগন্তের পানে। মনের আনন্দে বেখেয়ালে কাটিয়ে দিত সময়গুলো। কবিতার ছন্দ কিংবা গল্পের মত সুন্দর ছিল তার জীবন। জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত যেন কেটে যেত হাসি আনন্দে। হয়তো জীবনটা সে উপভোগ করার চেষ্টা করেছে। হঠাৎ করেই সেই আনন্দ কেন জানি বিলীন হয়ে গেল। জীবনে নেমে এলো ধোঁয়াশা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাবা বড় ঘরে অনিতাকে বিয়ে দিলেন। মা মরা মেয়ে অনিতা। হাতের কাজ সেভাবে কখনো শেখা হয়নি তার। পরের ঘরে গিয়ে অনিতা যেন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে গেল। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। মনে হয় যেন সে খাঁচায় বন্দি পাখি। কখনো ছটফট করছে। কখনো বা আনমনে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকছে।
বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে অনিতা। স্বামী তার মস্ত বড় চাকরি করে। কিন্তু অনিতা যেন তার কাছে এক টুকরো ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো। হয়তো অনিতার কোন মূল্য নেই তার জীবনে। ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতই ক্ষণে ক্ষণে ছুড়ে ফেলে দেয় তাকে। অনিতা নীরবে কাঁদে। চোখের নোনা জল আর হৃদয়ের ক্ষত মিলেমিশে যেন তার জীবনটা কাঁচের দেয়ালে বন্দী হয়েছিল। অদৃশ্য এক দেয়াল যেন থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে যেতেও সে ভুলে গেছে। ওই পাখির উড়ে চলা আর তার শৈশব যেন আজ অতীত। সেই দিনগুলোর কথা ভেবে বারবার তার হৃদয় যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
অবহেলার চাদর আর হারিয়ে ফেলা নিজের অস্তিত্ব সবকিছু যেন তাকে আরও বেশি অসহায় করে তুলেছিল। তাদের জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেন তার কাছে বিষাদময় হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই কাটছিল তার দিনগুলো। কিন্তু কখন যে বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরেছিল বুঝতে পারেনি সে। হঠাৎ একদিন কেন জানি তার ভেতরে অন্য কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে না। নতুন আলোয় বাঁচতে শিখলো সেই অনুভূতি হয়তো অন্য রকমের ছিল। কিন্তু তবুও ছিল প্রিয় মানুষটির কাছে অবহেলা। অবহেলার চাদর তার গায়ে লেগেছিল। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। নতুন আশায় বাঁচতে চেয়েছিল। সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে ততই যেন নতুন স্বপ্ন তার বুকে বাসা বাঁধছে। নতুন একটি মানুষকে আপন করে পাওয়ার সেই তৃষ্ণা যেন তার মনে বাসা বেধেছিল। সময় চলে যাচ্ছিল আর নিজের মাঝে বেড়ে ওঠা সেই অস্তিত্বকে ভালো ভাবে অনুভব করতে পারছিল।
একদিকে সবার অবহেলা আর কাছের মানুষটির অনাদর। অন্যদিকে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা নিজের অস্তিত্ব। সবমিলিয়ে অনিতা ভালো থাকতে চেষ্টা করেছিল। হঠাৎ একদিন অনিতার ভেতরে বেড়ে ওঠা সেই অস্তিত্ব পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গেল। অনিতা ছটফট করছিল যন্ত্রণায়। তার পাশে কেউ ছিলনা। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কখন যে সে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল নিজেও জানে না। জ্ঞান ফিরে আসার পর সে দেখল সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। আর নিজের ভেতরের বেড়ে ওঠা সেই অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছে না। সে কাউকে দেখতে পেল না। অবশেষে তার বাবাকে পাশে পেল। মেয়েকে চোখ মেলতে দেখে বাবা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।এরপর অনিতা জানতে পারে পড়ে যাওয়ার পর তাকে হসপিটালে আনা হয়। তবে সেটা অনেকটা দেরিতে।
হসপিটালে আনার পর ডাক্তাররা জানায় তার বাচ্চার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বাচ্চাটা পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই কথা শুনে অনিতার অসুস্থ শরীর নিয়েও সে তার সন্তানকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে। এরপর ছুটে চলে যায় সেই কাঁচের দেয়ালের মাঝে। এক পাশে অনিতা আর অন্য পাশে কাঁচের দেয়ালের ভেতর বন্দি তার ছোট্ট শিশুটি। অনিতা যেন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। তার শিশুটি যেন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু তার প্রতীক্ষার অবসান হয়। কারণ সেই শিশুটি আর কখনো চোখ মেলে পৃথিবীর আলো দেখবেনা। অনিতা হারিয়ে ফেলেছে নিজের মাঝে বেড়ে ওঠা সেই অস্তিত্বকে। আর কাঁচের দেয়ালের মাঝেই আটকে গেছে তোর স্বপ্নগুলো।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আহারে! অনিতার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। অবহেলার চাদর জড়িয়ে থাকার পরেও নতুন আশায় বুক বেধে ছিলো, সেই আশাও আলোর মুখ দেখার আগেই নিজেই নিভে গেলো!! আপনি খুব সুন্দর করে লিখেছেন আপু।
সত্যিই আপু মাঝে মাঝে অবহেলার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে রাখার পর যখন শেষ আশার আলোটুকুও নিভে যায় তখন সত্যি অনেক খারাপ লাগে। আমার পোস্ট পড়ে আপনি মন্তব্য করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনার গল্পটা যতই পড়ছিলাম ততই ডিপে চলে যাচ্ছিলাম। অনিতার শেষ অবস্থাটা মোটেও যে ভালো ছিল না। স্বামীর অনাদর, অবহেলায় বেড়ে উঠা মেয়েটি কঠিন মুহূর্তটাতে পেল না কাউকে। ভালো লিখেছেন আপু 🙏
সত্যি ভাইয়া অনিতার শেষ অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। আসলে জীবনের দুঃখগুলো হয়তো এভাবেই চলে আসে। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।
গল্পটা পড়ে যেন আমার চোখের কোনায় জল জমে গিয়েছে। যতই গল্পটা পড়ছিলাম তো তুই খুবই খারাপ লাগছিল এবং কষ্ট হচ্ছিল। অনিতার মাঝে বেড়ে ওঠা সেই অস্তিত্বও শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছে তাকে ছেড়ে। যদি ঠিক সময় তাকে হসপিটালে আনা হতো তাহলে তার অস্তিত্বটা তার সাথে থাকতো। খুব খারাপ লেগেছে পুরোটা। আপনি অনেক সুন্দর করে সম্পূর্ণটা লিখেছেন দেখে বুঝতে অনেক সুবিধা হয়েছে।
আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনার চোখের কোনে জল চলে এসেছে জেনে সত্যিই কষ্ট লাগলো। আসলে মানুষের জীবনে কিছু কিছু পরিণতি আছে যেগুলো অনেক কষ্টের।
আসলেই কিছু কিছু মানুষের জীবনে এমনই হয়। যখন অবহেলায় অনাদরে বড় হতে থাকে তখন নতুন কিছু স্বপ্ন দেখে আবার। এক সময় দেখবেন সেই নতুন কিছু স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। যা অনেক টা অনিতার জীবনের মত। হয়তো সেই তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছে। কিন্তু এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল তার কপালে আর সইলো না। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করলেন অনেক ভালো লেগেছে পড়ে।
যখন জীবনে অবহেলা নাম শব্দটা থাকে তখন সব স্বপ্নগুলোই এলোমেলো হয়ে যায়। তাই তো অনিতা জীবনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সময় কাটিয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
মাঝে মধ্যে এমন ঘটনা যখন শুনি,তখন খুব খারাপ লাগে। বড় চাকরি করলে বা অনেক ধনী হলে যে নিজের বউকে অবহেলা করতে হবে, কিংবা অহংকার করতে হবে তার কোনো মানে নেই। অনিতার মতো এমন অনেক মেয়ের স্বপ্ন সেই সমস্ত পুরুষদের কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনিতার জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগলো। যাইহোক এমন বাস্তব সম্মত একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সত্যি ভাইয়া মাঝে মাঝে আমাদের চোখের সামনে এরকম অনেক ঘটনা ঘটে। অনেক বিপদ একটি নারীর জীবন শেষ করে দেয়। কিংবা তার স্বপ্নগুলোকে শেষ করে দেয়।