গল্প-দীপান্বিতা||

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যদিও ভালো গল্প লিখতে পারিনা। তবুও মাঝে মাঝে ভিন্ন ধরনের গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।


দীপান্বিতা:

vietnam-4905794_1280.jpg

Source


মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া দীপান্বিতা নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সেই ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে। চাচার সংসারে দীপান্বিতা আর তার মা যেন এক প্রকারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবার অপূর্ণতা দীপান্বিতা কে যেন ক্ষতবিক্ষত করে দিত। তার বাবার অতি আদরের দীপান্বিতা আজ নিজেকে অবহেলার চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছে। চাচা চাচির কথার আঘাত তাকে যেন হৃদয় থেকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। তবুও সে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। সব কষ্ট গুলো মেনে নিয়েছে সে। মায়ের ঔষধের টাকা যোগাড় করতে ও পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালাতে দীপান্বিতা টিউশনি করাতো। চাচার সংসারে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে এটাই তো অনেক। দীপান্বিতা কে কখনো তারা পড়াশোনার সুযোগ দেয়নি। নিজের চেষ্টায় দীপান্বিতা এগিয়ে যেতে লাগলো।


সময়ের সাথে সাথে দীপান্বিতা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠলো। খরচটা তার আরো বেড়ে গেল। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে লাগলো সে। একদিকে চাচা চাচির সংসারের সব কাজকর্ম অন্যদিকে নিজের পড়াশোনা। আর নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি তো আছেই। মায়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করার জন্য ছুটে চলতো ওই দূরদূরান্ত টিউশনি করাতে। কখন যে পায়ের তলার জুতাটা ক্ষয় হয়ে মাটির সাথে লেগে গেছে দীপান্বিতা বুঝতেই পারেনি। গায়ের জামা পুরনো হয়ে গেছে কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারিনি সে। হয়তো বলার মত কেউ ছিল না। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দীপান্বিতার দিনগুলো। হয়তো কষ্ট কিংবা ভালো লাগার মধ্য দিয়েই তার জীবনের দিনগুলো পার হচ্ছিল। কিন্তু দীপান্বিতা বুকে লালন করেছিল হাজারো স্বপ্ন। হঠাৎ একদিন যেন তার স্বপ্নের মাঝে মেঘ জমে গেলো। স্বপ্নগুলো যেন ভেঙে যেতে লাগলো।


দীপান্বিতার বিয়ের সম্বন্ধ এলো। ছেলে নাকি ব্যবসা করে। বয়সটা একটু বেশি। তাতে কি হয়েছে দীপান্বিতার চাচা চাচি তাতেও রাজি হয়ে গেল। দীপান্বিতা আর তার মা যখন তার চাচা চাচির সংসারে বোঝা হয়ে আছে তখন তাদেরকে তাড়াতে পারলেই যেন তার চাচী বেঁচে যায়। দীপান্বিতা এই বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। এরপর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অবশেষে দীপান্বিতার অমতে বিয়েটা করলো। দীপান্বিতা নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বিধাতা যে তার কপালে সুখ লিখেনি। নতুন ঘরে গিয়ে দীপান্বিতা যেন চার দেয়ালে বন্দী হয়ে গেল। নিজের স্বপ্নগুলো আর কাউকে বলতে পারল না। অপূর্ণ সেই স্বপ্নগুলো তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল। হয়তো তার জীবনের অপূর্ন ইচ্ছা গুলো তাকে আরও বেশি কষ্ট দিয়েছিল।


একদিন হঠাৎ করে খবর এলো দীপান্বিতার মা এই পৃথিবীতে নেই। মাকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। কিন্তু তাকে যেতে দিচ্ছিল না তার স্বামী। যখন সে মায়ের মৃত্যুর কথা শুনেছে তখন যেন পাথর হয়ে গেছে দীপান্বিতা। কিছু বলার ছিল না তার। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্টগুলোর কথা বলার মত কেউ রইল না তার এই পৃথিবীতে। হয়তো চিৎকার করে কাউকে আর বলতে পারবে না তার কষ্টগুলোর কথা। সময়ের সাথে সাথে দীপান্বিতা কেন জানি বদলে যেতে লাগলো। দীপান্বিতা তার স্বামীকে জানালো আবারও সে পড়াশুনা করতে চায়। কিন্তু এই কথা শুনে তার স্বামী যেন আকাশ থেকে পড়ল। দীপান্বিতা যেন আজ কোন কিছুতেই বাঁধা মানছে না। দীপান্বিতা চার দেয়াল থেকে নিজেকে মুক্ত করল। বেরিয়ে গেল তার স্বামীর ঘর থেকে। দীপান্বিতা নিজের মতো করে জীবন তৈরি করার চেষ্টা করছিল। সে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। অবশেষে তার জীবনে সফলতা এলো। অনেক যুদ্ধ করে নিজের জীবনে বিজয় আনলো সে।


স্বামীর অবহেলা আর নির্যাতন সহ্য করে তবুও সে ঘুরে দাঁড়ালো। জীবনে হয়তো অনেক কিছুই পাওয়া হয়নি তার। তবুও অপূর্ন ইচ্ছে গুলো মনে চাপা দিয়ে সফল হয়েছে সে। একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছে সে। কিন্তু জীবন যে বড় নিষ্ঠুর। দীপান্বিতা হয়তো নিজের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। কিন্তু বিধাতা তাকে হারিয়ে দিল। হঠাৎ একদিন দীপান্বিতা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত ডক্টরের কাছে যাওয়ার পর দীপান্বিতা জানতে পারে তার ক্যান্সার হয়েছে। আর সে লাস্ট স্টেজে আছে। এই কথা শুনে দীপান্বিতা যেন পাথর হয়ে গেল। তবুও কেন জানি অদৃশ্য এক হাসি লেগেছিল দীপান্বিতার চোখে মুখে। হয়তো সে বিজয়ের হাসি হেসেছে। জীবন সংগ্রামে সে জয়ী হয়েছে। জীবন যুদ্ধে সে হার মানেনি। হয়তো মৃত্যু তাকে হারিয়ে দিল। তবুও সে সবটা মেনে নিয়েছিল। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত দীপান্বিতা হাসিখুশি ভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। হয়তো হাসিমুখের আড়ালে বুকে তার অনেক কথাই লুকিয়ে ছিল। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি।হয়তো এভাবেই দীপান্বিতার না বলা কথাগুলো না বলাই রয়ে গেল। আর হারিয়ে গেল জীবন যুদ্ধে হার মেনে নেয়া দীপান্বিতা।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 10 months ago 

অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপু। তবে দীপান্বিতার মা মারা যাওয়ার বিষয়টা বেশ দুঃখজনক। আমাদের জীবনে বাঁচতে হলে অনেক রকম যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। দীপান্বিতার ও এরকমই একটা জীবন। যাইহোক অনেক ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার।

 10 months ago 

আপু আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করার। মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের হাজারো দীপান্বিতা এভাবেই হারিয়ে যায়।

 10 months ago 

আপনার গল্পটা পড়ে দীপান্বিতার জন্য অনেক খারাপ লাগল। সত্যি হাজার চেষ্টা করেও দীপান্বিতার জয়ী হতে পারলো না। আসলে সব কিছু সহ্য করে যখন ঘুরে দাঁড়ালো তখনও সে শেষ রক্ষা করতে পারলো না।ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 10 months ago 

আসলে সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকটি মানুষকে পরিবর্তন হতে হয়। তাই দীপান্বিতার মাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ করে একসময় কলেজে উত্তীর্ণ হয়েছিল। আসলে মায়ের মৃত্যুর খবর শোনা প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই অত্যন্ত দুঃখের একটি সংবাদ। ভাগ্যের পরিণতিতে এই গল্পে দীপান্বিতার মা মৃত্যুবরণ করেছিল। তার স্বামী তাকে অত্যাচার এবং নির্যাতন করতো কিন্তু সবকিছু থেকে তিনি আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ডক্টরের কাছে যাওয়ার পরে জানতে পারে যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। আসলে গল্পটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম কিন্তু গল্পটি বেশ দুঃখের। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 10 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনের বাস্তবতা পাল্টে যায়। হয়তো মাঝে মাঝে জয়ী হয়। আবার মাঝে মাঝে হার মেনে যায়। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 10 months ago 

দীপান্বিতা গল্পটা পড়ে আমার চোখে জল চলে এসেছে আপু। নিজের স্বপ্নের সাথে সে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বিধাতা তাকে এগিয়ে যেতে দিল না। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে সে তার মাকে হারিয়েছিল। কিন্তু তারপরে সে আবারো পড়ালেখা শুরু করেছিল, নিজের ভেতরে থাকা স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পেরেছিল। কিন্তু তাকে এই পৃথিবীতেই বাঁচতে দিল না। তার ক্যান্সার হয়েছিল জেনে সত্যি অনেক খারাপ লেগেছে। অবশেষে সে মারা গিয়েছে এটা শুনে চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি।

 10 months ago 

আমার লিখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আমি চেষ্টা করেছি একটি মেয়ের গল্প তুলে ধরার। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 10 months ago 

দ্বীপান্বিতার এভাবে চলে যাওয়াটা আসলেই কষ্টের ছিল। তবে দীপান্বিতার প্রাপ্তির খাতাটা মনে হয় পূর্ণ ছিল। এতোটকু সুখ নিয়ে হয়তো জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে হাসতে পেরেছিল। ভালো লিখেছেন আপু 🍀

 10 months ago 

মাঝে মাঝে আমরা জীবনের বাস্তবতার কাছে হার মেনে যাই ভাইয়া। দ্বীপান্বিতার জীবনেও তেমনটা হয়েছে। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 10 months ago 

এরকম গল্প গুলো পড়লে চোখের জল আটকে রাখা যায় না। দীপান্বিতার জীবনটা অনেক বেশি কষ্টের মাধ্যমে কাটলেও পরবর্তীতে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। কিন্তু সে তো আর এই পৃথিবীটাতেই থাকতে পারলো না। ক্যান্সার হওয়ার কারণে সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। যদিও চেয়েছিল স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে বাঁচতে কিন্তু বাঁচতে পারল না। সব মিলিয়ে বেশ কষ্টের একটা গল্প শেয়ার করেছেন।

 10 months ago 

আমার লেখা গল্প পড়ে আপনার চোখে জল চলে এসেছে জেনে সত্যি একটু দুঃখ পেলাম। তবে মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা গুলো আমাদেরকে অনেক কষ্ট দেয়। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 10 months ago 

দীপান্বিতার গল্পটা খুবই দুঃখজনক ছিল আপু। সারা জীবন ধরে নানা রকম ভাবে সে যুদ্ধ করার পর ,শেষে এসে যখন একটু সুখের মুখ দেখল তখনও মৃত্যু তাকে হারিয়ে দিয়ে গেল। তবুও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে যে জয়ের হাসি হাসতে পারল, এটুকুই ভালো ছিল তার সমস্ত দুঃখ ভরা জীবনের মাঝে।

 10 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু দীপান্বিতার জীবনটা অনেক দুঃখে ভরা ছিল। সুখ তার কপালে লেখা ছিল না। তবে শেষে কিন্তু বিজয়ের হাসি হাসতে পেরেছে। মৃত্যু তাকে আর কষ্ট দিতে পারেনি।

 10 months ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই মর্মাহত হলাম আপু। দীপান্বিতা পুরোটা জীবন সংগ্রাম করার পর সফলতা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়েছে। আবার দীপান্বিতার সফলতা তার মা ও দেখতে পারেনি। কারণ দীপান্বিতা সফল হওয়ার আগেই তার মা মারা যায়। তবুও দীপান্বিতা সফল হতে পেরেছে শেষ পর্যন্ত এটাই অনেক কিছু। আর মৃত্যুর উপর কারো হাত থাকে না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 10 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া দীপান্বিতা পুরোটা জীবন সংগ্রাম করেছে। আর সফলতা পেয়েও ভালো থাকতে পারল না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59999.40
ETH 2646.89
USDT 1.00
SBD 2.44