শৈশব স্মৃতি-পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার একটি শৈশব স্মৃতি||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। নতুন নতুন পোস্ট শেয়ার করতে ভালো লাগে। নিজের কাজের মাঝে নতুনত্ব আনতেও ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি আমার একটি শৈশব স্মৃতি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার পোস্ট সবার ভালো লাগবে।
পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার একটি শৈশব স্মৃতি:
Source
যখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে থাকতাম। যেহেতু আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন তাই সেই সুবাদে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আমার পরিবারের সবাই থাকতো। আমরা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের কোয়ার্টারে থাকতাম। আমাদের কোয়াটারের পেছনের দিকটাতেই ছিল শিশু পার্ক। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই কোয়ার্টারগুলো তৈরি হয়েছিল। প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমরা সবাই পার্কে যেতাম। আমি যে বিল্ডিংয়ে ছিলাম তার নিচ তলায় আমার সমবয়সী আরেকটি মেয়ে ছিল। ওর নাম ছিল লিমা। ওরও আমাদের মতই তিন বোন ছিল। যখন প্রথম আমি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যাই এবং কোয়ার্টারে উঠি তখন ওর সাথে আমার প্রথম বন্ধুত্ব হয়। যদিও আমাদের স্কুল আলাদা ছিল তবে বন্ধুত্বটা বেশ ছিল।
বিকেল বেলায় আমরা মাঝে মাঝে ছাদে আড্ডা দিতাম। আবার মাঝে মাঝে পার্কে গিয়ে আড্ডা দিতাম। আর ছোট বিচ্ছু বাহিনীর দল আমাদের পিছু ছাড়তো না। ছোট বোনগুলোও আমাদের পিছু পিছু চলে যেত। লিমা দেখতে যতটা সাদাসিধা ছিল ততটাই দুষ্টু ছিল। উপর থেকে দেখে তাকে বোঝা যেত না। আর আমি তো খুব কম কথা বলতাম। কিন্তু মাথায় সবসময় ভিন্ন ধরনের চিন্তা ঘুরত😅😅। একদিন বিকেল বেলায় লিমা আমাকে বলল চল পাহাড়ের উপরে যাই। ওখানে ছোট ছোট বন পেয়ারা পাওয়া যায়। আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি বন পেয়ারা কি। এরপর ও বলল চল আমার সাথে। ওর পিছে পিছে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠলাম। এরপর দেখি ছোট ছোট পেয়ারা গাছ। পাতাগুলো দেখতে দেশি পেয়ারা গাছের মতোই। তবে ডালপালা গুলো খুব একটা মোটা নয়। একদম চিকন চিকন। আর উচ্চতাতেও খুব একটা বড় নয়। যে কেউ হাত দিয়ে বন পেয়ারা ছিঁড়তে পারে। আর পেয়ারার সাইজ ছিল একদম বেশি বড়ই এর সমান 😅😅। প্রথমবার বন পেয়ারা পেয়ে তো আমি ভীষণ খুশি। খেতে কিন্তু দারুণ ছিল। সেদিন আর বেশিদূর এগোইনি। তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিলাম। এরপর ওই যে মনে লোভ ঢুকে গেল তারপর থেকে মাঝে মাঝেই পাহাড়ে চলে যেতাম।
প্রথমে আমরা ছাদে দাঁড়িয়ে দেখতাম আজকে কোন দিকে যাওয়া যায়। এরপর সেই দিকে চলে যেতাম। সেদিন যখন আমরা অনেকটা মাটির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন এক আর্মি আঙ্কেল বললেন ওদিকে যাওয়া যাবে না আজকে ওখানে ফায়ার প্র্যাকটিস আছে। এরপর আমরা রাস্তা বদলে অন্য দিকে গেলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর বড় একটি পাহাড় দেখলাম। এরপর পাহাড়ের উপরে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। যদিও পাহাড়ের উপরে উঠতে আমার একটু কষ্ট হচ্ছিল। কারণ গলা বারবার শুকিয়ে উঠছিল। পিচ্চিগুলো তো একটু দূরে যেয়ে বসে পড়েছিল। এরপর ওদেরকে টেনেটুনে উপরে তুলেছি। উপরে তোলার পর প্রকৃতির সেই সৌন্দর্য দেখে এতটাই ভালো লেগেছিল যেটা বলার মত নয়। এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। এরপর কখন যে পাহাড়ের অন্য প্রান্তে চলে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর চারপাশের সবুজ ঘাস দেখতে এতটাই ভালো লাগছিল যেটা বলে বোঝানো যায় না। এরপর হঠাৎ করে দেখলাম খুব দূরে ছোট ছোট ঘর দেখা যাচ্ছে। দূর থেকে সেই ঘরগুলো অনেক ছোট লাগছিল। এরপর আমার সেই বান্ধবী লিমা বলল চল না সেদিকে যাই। সেই বাড়িগুলোতে গিয়ে পানি খেয়ে আসি।
লিমার কথা শুনে সবাই রাজি হয়ে গেল। কারণ তাদের সবার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। এতটা পথ আমরা সবাই গিয়েছি আর সবার বয়স খুবই কম ছিল। পরে ধীরে ধীরে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নামলাম। অনেক সাবধানে নামতে হয়েছিল। যেহেতু সবাই মোটামুটি ছোটই ছিল তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল। অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। এরপর যখন আমরা বাড়িগুলোর কাছে পৌঁছালাম তখন সেখানে গিয়ে দেখি অনেকগুলো মাটির ঘর। মাটির ঘর গুলো দেখতে সত্যি ভালো লাগছিল। এর আগে কখনো মাটির ঘর দেখিনি। তাই তো বেশি ভালো লাগছিল। এরপর দেখি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটি বরই গাছ। পাকা পাকা বড়ই গুলো দেখে অনেক ভালো লাগছিল। সেই বাসার যে লোকজন ছিল তারা আমাদেরকে বেশ কিছু বড়ই দিয়েছিল। এরপর যখন উনারা আমাদের কাছে জানতে চাইলো আমরা কোথায় থেকে এসেছি তখন লিমা বললো আমরা সেনানিবাস কোয়ার্টারে থাকি। আর সেখান থেকে এসেছি। এরপর লোকটি বলল সেটা তো অনেক দূরে।
লোকটির মুখে এমন কথা শুনে সবার গলা শুকিয়ে গেল। আর পিচ্চিগুলো তো প্রায় কান্না কান্না হয়ে গেল। এইদিকে প্রায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। এখন আমরা কি করব বুঝতেই পারছি না। এরপর লোকটি আমাদেরকে বলল ঠিক আছে তোমরা চিন্তা করিও না আমি তোমাদেরকে পৌঁছে দিব। যদিও লোকটির সাথে যেতে প্রথমে একটু ভয় লাগছিল। কারণ তিনি অচেনা লোক ছিলেন। এরপর ওই লোকটির সাহায্য নিয়ে আমরা অবশেষে নিজের বাসায় ফিরতে পেরেছিলাম। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা বাসার কাউকেই জানানো হয়নি। যেহেতু সবাই মিলে দল বেঁধে গিয়েছিলাম তাই কেউ আর বাসায় মুখ খুলেনি। সবাই ভেবেছিল হয়তো আমরা খেলতে খেলতে দেরি করে ফেলেছি। সেই দিনের কথা মনে হলে একদিকে যেমন ভালো লাগে অন্যদিকে এটাও ভেবে অবাক লাগে এতটা ছোট বয়সে আমরা কত পেকে গিয়েছিলাম 😅😅। তবে আজও সেই দিনগুলো মিস করি। আর সেই সাথে মিস করি আমার সেই বন্ধু লিমাকে। যদিও তার সাথে আর যোগাযোগ নেই। তবে সেই দুষ্টু মিষ্টি স্মৃতিগুলো অনেক মনে পড়ে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার বেশ চমৎকার একটি স্মৃতি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন আপু। যাইহোক আপনারা পাহাড় থেকে যে অচেনা লোকটার সাহায্যে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।
জ্বী আপু ওই লোকটির সাহায্যে বাসায় ফিরতে পেরেছিলাম। না হলে খুবই বিপদ হয়ে যেত। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি আপু ছোটবেলার ঘটনা গুলো শুধু স্মৃতি হয়ে থাকে। যে শান্তা সভাবের সে কিন্তু অনেক দুষ্ট হয়। আর সবাই এক সাথে দল বেঁধে অনেক দূর গেলে বুঝা যায় না কতো দূর এসেছি। আর অপরিচিত লোকের সাথে যেতে ও ভয় লাগে। যাইহোক অবশেষে লোকটার সাহায্যে নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো।
সত্যিই আপু ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে হলে অনেক ভালো লাগে। তাই তো এই স্মৃতি তুলে ধরেছি। সেই দিনগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে আপু।
আমরা শিক্ষা সফরে স্কুল থেকে কুমিল্লা ময়নামতি গিয়েছিলাম। লাঞ্চের সময় কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট এর ভিতরে খাওয়া দাওয়া করেছিলাম। তবে ময়নামতি পাহাড়ে ঘুরতে খুব ভালো লেগেছিল। আপনি আর আপনার বান্ধবী তো বেশ দুষ্ট ছিলেন দেখছি। পাহাড়ে উঠে কতদূরে চলে গিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো যে সেই লোকটা ভালো ছিলো। নয়তোবা কোনো বিপদও হতে পারতো। যাইহোক শৈশবের স্মৃতি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া আপনি শিক্ষা সফরে কুমিল্লা ময়নামতি গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো। জায়গাটি সত্যি অনেক সুন্দর। তবে সত্যি ভাইয়া আমি এতটা দুষ্টু ছিলাম এটা ভাবতেই অবাক লাগে।😅
আসলে ছোটবেলার স্মৃতি কখনো ভুলার মত নয়। শিক্ষা সফর আমিও একবার কুমিল্লায় ময়নামতি গিয়েছিলাম। সারাদিন ঘোরাফেরা খাওয়া-দাওয়া করে বেশ আনন্দে সময় কাটিয়েছিলাম জায়গাটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। যাইহোক পাহাড়ে অনেকদূর গিয়ে পরে লোকটির সাহায্যে আবার ঠিকমতো বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন এটাই অনেক।ছোটবেলায় পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন আপু ছোটবেলার স্মৃতি কখনো ভোলা যায় না। আপনি শিক্ষা সফরে সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো। সেই লোকটি না থাকলে অনেক ঝামেলায় পড়ে যেতাম।
হাহা! পেয়ারা সাইজ শুনে আমার হাসি পাচ্ছে আপু। বড়ই এর মতো পেয়ারা, তবে খেতে মজা ছিল! আমি ভাবছি লোকটা যদি না থাকতো তাহলে আপনাদের অবস্থা কি হতো! ফাইনালি আসতে পেরেছিলেন কোয়াটারে এটা জেনে ভালো লাগলো
গাছ যেমন পেয়ারাও তেমন। গাছগুলো খুব একটা বড় ছিল না। তাইতো সাইজটাও তেমন। তবে মাঝে মাঝে কিন্তু এখনো সেই দিনগুলোর মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
আসলে ছোটবেলার কিছু কিছু স্মৃতি মনে পড়লে আসলেই বেশ ভালো লাগা কাজ করে। আসলে ছোটবেলায় কোথায় যায় নিজেই বুঝতে পারি না। কিন্তু পরে যখন বাসার কথা মনে পড়ে তখনই বোঝা যায় আমি আসলে হারিয়ে গিয়েছি। যাই হোক আপনারা হারিয়ে গিয়েও যে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি জেনে ভালো লাগলো। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
সত্যি ভাইয়া ছোটবেলার কিছু কিছু স্মৃতি মনে পড়লে অনেক ভালো লাগে। আমার তো সেই শৈশবে আবারো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।