গল্প-ডায়েরির পাতায়||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। যখন আমার মন খারাপ থাকে তখন মন ভালো করার জন্য মাঝে মাঝে গল্প লিখি। মনের কল্পনায় বিভিন্ন চরিত্রকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করি। তাইতো আজকে আমি একটি নতুন গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
ডায়েরির পাতায়:
Source
অয়ন যখন ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিল তখন কিছুক্ষণ পরেই বাস চলে এলো। অয়ন উঠে পড়ল সেই বাসে। পাশের সিটে কেউ ছিল না। পরে ছিল একটি ডায়েরি। আশেপাশে খুঁজেও ডায়েরির মালিককে খুঁজে পেল না অয়ন। ডায়েরির পাতায় এক পলক তাকাতেই যেন তার মনের মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করল। কি সুন্দর লেখনি। আর কি সুন্দর কথাগুলো। অয়নের কেন জানি ডায়েরি পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো। যদিও কারো ডায়েরি পড়া উচিত নয় তবুও কেন জানি অয়নের মন বাঁধা মানলো না। ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে এসে অয়ন ডায়েরিটা পড়তে লাগলো। একটি মেয়ে নিজের ভালোবাসার কথাগুলো ডায়েরিতে লিখেছে। তার মনের না বলা কথাগুলো ডায়েরিতে লিখেছে। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় যেন অয়ন নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিল। বুঝতে পারছিলো কেউ একজন ইচ্ছে করেই ডায়েরিটা তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
পরের দিন আবারো যখন অয়ান ভার্সিটিতে গেল। তখন হঠাৎ করে সে বুঝতে পারল তার পাশে কেউ একজন ডায়েরি রেখে গেছে। কিন্তু কখন রেখে গেছে সেটা বুঝতে পারেনি। ডায়েরি হাতে নিয়ে দেখল সেই আগের হাতের লেখা। আর অসাধারণ সব কথোপকথন। ডায়েরিটা পড়ে অয়নের ভিশন ভালো লাগছিল। অন্যদিকে এটা ভেবে ভয় পাচ্ছিল কে তাকে ডাইরি পাঠাচ্ছে। আর কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। তার আশেপাশে যাকে দেখছিল তাকেই জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোন ভাবেই ডায়েরির মালিককে খুঁজে পাচ্ছিল না অয়ন। এবার অয়ন বেশ অবাক হয়ে গেল। মেয়েটি অয়নকে ভালোবাসে। কিন্তু সামনে আসতে চাচ্ছে না। অয়ন বুঝতে পারছে না এই পাগলামি গুলো কে করছে। মেয়েটি ডায়েরিতে নিজের হৃদয়ের কথা লিখেছে। আর অয়ন সেই কথাগুলোর প্রেমে পড়ে গিয়েছে।
অচেনা সেই মেয়েটিকে খুঁজতে লাগলো অয়ন। কোনভাবেই যেন তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। এভাবে কেটে গেল কয়েকটা দিন। আর তার কাছে আরো একটি ডায়রি এলো। ডায়েরির লেখায় কেন জানি কষ্টের আভাস পাচ্ছিল অয়ন। বুঝতে পারছিল না কি হতে চলেছে। মেয়েটির লেখায় যেন হৃদয়ের বেদনা ফুটে উঠেছিল। সেই লেখাগুলো পড়ে অয়ন আরো বেশি ছটফট করতে লাগলো। বুঝতে পারছিল না কি করবে। এরপর কেটে গেল আরো কিছুদিন। অয়ন মনে মনে যেন আরো ডায়েরী খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বেশ কিছুদিন সে কোন ডাইরি পেল না। অয়ন যেন সেই ডায়েরির প্রতীক্ষায় ছিল। অবশেষে দুই মাস পেরিয়ে গেল। কিন্তু অয়ন ডায়েরি পেল না। একদিন হঠাৎ করে অয়ন দেখতে পেল কেউ একজন আবারও ডাইরি রেখে গিয়েছে। ডায়েরি দেখে অয়ন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। আসলে সেই অচেনা মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল অয়ন। কিংবা তার কথার মায়ায় পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এবারের ডায়েরির লেখাগুলো ছিল অনেক বেশি কষ্টের। মেয়েটি তাকে ভালোবাসতো। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। হৃদয়ের না বলা কথাগুলো হয়তো কখনো বলতেও চায়নি। কিন্তু মেয়েটি যখন জানতে পেরেছিল তার জীবনের সময় শেষ হয়ে এসেছে তখন সে নিজের মনের কথাগুলো লিখে অয়নের কাছে পাঠাতো। ডায়েরির শেষ পাতায় মেয়েটি নিজের নাম লিখেছিল। মেয়েটির নাম ছিল অহনা। অহনা নামটির সাথে অয়ন আগে থেকেই পরিচিত ছিল। কারণ অহনাকে সে অনেক আগে থেকেই চিনতো। একটা সময় অহনার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু অহনা কথা বলতে পারতো না। তাইতো ধীরে ধীরে অহনা আর অয়নের বন্ধুত্বর মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। হয়তো ইচ্ছে করেই অহনা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল। অয়ন এতটা কাছে থেকেও অহনার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি। আর অহনা নিরবে অয়নকে ভালোবেসে গিয়েছিলাম। অয়ন বিভিন্ন মাধ্যমে অহনার খোঁজ নিতে লাগল। অয়ন এবং অহনার আরেক বন্ধু তাকে অহনার কাছে নিয়ে গেল। সেই ফুলের মত মেয়েটা আজ নিস্তেজ হয়ে গেছে। মাথার চুল গুলো সব উঠে গেছে। লম্বা চুলের বেনুনি আর নেই। চোখের নিচে কালি পড়েছে অহনার।
কেন জানি বিষন্ন লাগছে অহনাকে। অহনার এই রূপ দেখে অয়ন অবাক হয়েছিল। অহনার মলিন হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল অফুরন্ত দুঃখ। কিন্তু বলতে পারেনি। কারণ সে তো কথাই বলতে পারেনা। মরণব্যাধি ক্যান্সার তার শরীরে বাসা বেধেছিল। তাই তো সে জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে নিজের ভালোবাসার কথাগুলো ডায়েরীতে লিখে গেছে। আর অহনা এবং অয়নের সেই বন্ধু অয়নের কাছে সেই ডাইরিগুলো পৌঁছে দিয়েছে। বন্ধুর শেষ ইচ্ছে পূরণ করেছে। অয়নও অহনাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু অহনার এই রূপ দেখে তার হৃদয় কেঁদে উঠেছিল। অয়ন সেদিনই সিদ্ধান্ত নেয় জীবনের বাকি কয়টা দিন তারা একসাথে কাটাবে। এরপর সেদিনই তারা বিয়ে করে ফেলে। অহনা সেদিন সত্যিই অনেক খুশি হয়েছিল। তার মুখে ফুটে উঠেছিল অদৃশ্য এক হাসি। মনে হয়েছিল যেন তার জীবনের সব পাওয়া হয়ে গেছে। জীবনে আর কিছু অপূর্ণ নেই। এরপর কেটে গেল ৬ টি দিন। ভোর বেলায় হঠাৎ করে অয়ন বুঝতে পারল অহনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তার শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অয়ন বুঝতে পারল সে তার জীবনসঙ্গিনীকে হারিয়ে ফেলেছে। হয়তো আর কখনো ফিরে পাবে না। সে ছিল তার ক্ষণিকের জীবনসঙ্গী। কিন্তু তার দেওয়া ডায়েরি গুলো সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়তো তার অহনা বেঁচে থাকবে ডায়েরির পাতায়। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। কখনো বেঁচে থাকে স্মৃতির পাতায় কখনো বা ডায়েরির পাতায়।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
দারুন একটা গল্প আজ আমাদের মাঝে উপহার দিলেন। এরকম অনেক নাটক সিনেমা দেখা হয়েছে বাস্তব জীবনে ভালোবাসার সার্থকতা এখানেই। যখন প্রিয় মানুষের জন্য ধারাবাহিকভাবে তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে থাকে এটাই প্রকৃত ভালোবাসা অনেক ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি দারুণ একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। আপনার কাছে গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।
আমরা অনেক সময় জানিও না মনে মনে আমাদেরকে কেউ ভালোবাসলে। অহনা অয়নকে মনে মনে ভালোবাসতো ঠিকই, কিন্তু কখনো বলতে পারেনি পরিস্থিতির কারণে। অবশেষে মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে ডায়েরির মাধ্যমে সব কথা জানাতে পারলো অয়নকে। অয়নও তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে অহনার জীবনের শেষ কয়েকটা দিন সঙ্গ দিয়েছে, এই ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লেগেছে। এটাই অহনার জীবনে সবচেয়ে বড় একটি প্রাপ্তি। আসলেই প্রকৃত ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া হয়তো মনের অজান্তেই কেউ কারো মনে জায়গা করে নেয়। তবে শেষ পর্যন্ত তারা জীবনের বাকি দিনগুলো একসাথে থাকতে পেরেছে এটাতে আমার কাছেও ভালো লেগেছে। মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ওয়াও আপু!!!!
আপনি কিভাবে পারেন এতো সুন্দর গল্প লিখতে। আমাকে কিন্তু গল্প লেখা শিখিয়ে দিবেন😊।অয়ন এবং অহনার ভালোবাসাটা কত মিষ্টি ছিল।ডায়েরির মাধ্যমে অহনা তার ভালবাসা অয়নের কাছে পৌঁছায় দিচ্ছিল। এভাবে অয়নও অহনাকে ভালোবেসে ফেলল। জীবনের শেষ সময়ে এসে অহনা এবং অয়ন বিয়ে করে একসাথে ছয়টা দিন সময়ও কাটিয়েছে। তাদের ভালোবাসা সার্থক হয়েছে। মন ছুঁয়ে গেল আপু ডায়েরির পাতায় গল্পটি পড়ে ।
আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। আপনি চেষ্টা করলে আমার চেয়েও ভালো গল্প লিখতে পারবেন আপু। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।