গল্প-অনুরাধা||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। গল্প লিখা আমার খুবই পছন্দের একটি কাজ। হঠাৎ করে কোন কিছু মাথায় এলেই সেই ভাবনা থেকেই গল্প লেখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকে আমি নতুন একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার কাছে ভালো লাগবে।


অনুরাধা:

indian-g12ac2a142_1280.jpg

Source


অনুরাধা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। হাসিখুশি চঞ্চল মেয়ে পুরো গ্রাম মাতিয়ে রাখত। অনুরাধার হাসি মুখ দেখে তার বাবা নিজের মনের যত দুঃখ ভুলে যেতেন। মা মরা মেয়েটিকে নিজে একা হাতে বড় করেছেন তিনি। অনুরাধা জন্মের সময় তার মা এই পৃথিবী থেকে চলে যান। অনুরাধাকে জন্ম দিয়ে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। আর বাবা মেয়ে একা হয়ে পড়েন। অনুরাধাকে আঁকড়ে ধরেই যেন তার বাবা বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। নিজের স্ত্রীকে হারিয়েও নতুন স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। মা মরা মেয়ে অনুরাধাকে আদর যত্নে লালন করেছেন তিনি। অনুরাধা তার হাসিমুখে সবাইকে ভুলিয়ে রাখত। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল বাবা মায়ের আনন্দের দিনগুলো। অনুরাধার বাবা কখনোই তার মেয়েকে মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। অনুরাধা কে সব সময় আগলে রেখেছেন। নিজের মেয়েকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতেন তিনি। গ্রামের অল্প শিক্ষিত একজন মানুষ হয়েও অনুরাধা কে শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি।


অনুরাধা লেখাপড়াতে বেশ মনোযোগী ছিল। তাই তো তার বাবা অনুরাধাকে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে অনুরাধা অনেকটা বড় হয়ে গেল। কখন যে ছোট্ট অনুরাধা বড় হয়ে গেল তার বাবা বুঝতেই পারেনি। চারপাশ থেকে অনুরাধার জন্য বিয়ের সম্বন্ধে আসতে লাগলো। অনুরাধার বাবা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। একদিকে মেয়ে বড় হচ্ছে অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চিন্তায় অনুরাধার বাবা ভেতরে ভেতরে সব সময় চিন্তিত থাকতেন। কিন্তু কখনো প্রকাশ করতেন না। একদিন অনুরাধার দূর সম্পর্কের এক মামা অনুরাধাদের বাড়িতে আসলেন। অনুরাধার মা মরার পর অনুরাধার নানা বাড়িতে আর কখনো যাননি অনুরাধার বাবা। এমনকি তারাও কখনো তাদেরকে দেখতে আসেনি। অনুরাধার মামা অনুরাধার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন। ছেলে নাকি বড় ব্যবসায়ী। শহরে তার বাড়ি। টাকা পয়সা, বাড়ি, সবই আছে তার। তাইতো অনুরাধার মতো মেয়ে দরকার তাদের।


অনুরাধার বাবা এই বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ভাবতে লাগলেন। বড় ঘরে মেয়েকে তিনি বিয়ে দিতে চান না। কারণ তারা যে মধ্যবিত্ত মানুষ। তাইতো তারা মধ্যবিত্ত কোন এক পরিবারের সাথে সম্বন্ধ করতে চান। কিন্তু অনুরাধার সেই দূর সম্পর্কের মামার জোড়াজোড়িতে বিয়েটা প্রায় পাকা হয়ে গেল। দেখতে দেখতে অনুরাধার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দুই এক মাস কাটতে না কাটতেই অনুরাধার জীবনে নেমে এলো কালো অন্ধকার। পনের জন্য অনুরাধাকে দিনরাত নির্যাতন করা হতো। অনুরাধা তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সব নির্যাতন সহ্য করে গেল। হয়তো বাবাকে কিছু বুঝতে দিবে না বলেই সব নির্যাতন নিরবে সহ্য করেছে সে। এরপর অনুরাধা তার স্বামীর বাড়ির প্রতিবেশীর কাছ থেকে জানতে পারে তার স্বামী এর আগেও একবার বিয়ে করেছিলো। অত্যাচার সইতে না পেরে সেই বউটা গলায় দড়ি দিয়েছিল। এই কথা শুনে অনুরাধার হৃদয় কেঁপে উঠলো।


অনুরাধা প্রতিবাদী মেয়ে। তবুও যেন তার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। প্রতিবাদী করার সেই ভাষা যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। অনেক সাহস নিয়ে সে প্রতিবাদে নেমে পড়ল। তার শ্বশুরবাড়ির মানুষের মুখের উপর জবাব দিতে শুরু করল। আর এরপর থেকেই তার জীবনে নেমে এলো আরো করুন পরিণতি। একদিন হঠাৎ সকাল বেলা অনুরাধার বাবার কাছে খবর এলো পা পিছলে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে অনুরাধা আহত হয়েছে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে। প্রতিবেশীরা তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে। মেয়ের এই খবর শুনে অনুরাধার বাবা ছুটে চলে গেলেন মেয়ের কাছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন তার শ্বশুরবাড়ির কেউ মেয়েটিকে দেখতে আসেনি। বাবাকে দেখে অনুরাধা শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে। আর দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হয়তো কোন চাপা কষ্ট ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে সে। কিন্তু বলতে পারছে না। বলতে গিয়েও যেন গলাটা তার চেপে আসছে। অনুরাধার এই করুন পরিণতি দেখে তার বাবা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। হয়তো অনেক দিনের কষ্ট বুকে জমিয়ে রেখেছিলেন। কি করে মেয়েকে বাঁচাবেন সেই চিন্তায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়লেন। নিজের শেষ সম্বল ভিটেমাটি টুকু বিক্রি করে দিলেন তিনি। এভাবে কেটে গেল তিনটি দিন। নিজের শেষ সম্বল টুকু দিয়ে অনুরাধার বাবা তার নিজের মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াতে লাগলেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে মেয়ের লাশ কাঁধে নেয়া যে বড্ড কঠিন। তাইতো তিনি মেয়েকে বাঁচানোর আশায় নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিলেন।


কিন্তু হ্যায়!জীবনের বাস্তবতা যে বড় কঠিন। জীবনের বাস্তবতার কাছে হেরে গেল অনুরাধা। আর হেরে গেলেন সেই অসহায় বৃদ্ধ পিতা। যিনি তার সবটা দিয়েও নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না। দীর্ঘ ছয় দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অনুরাধা পরপারে চলে গেল। আর রেখে গেল সেই অসহায় বাবাকে। মৃত্যুর আগে অনুরাধা হয়তো তার বাবাকে কিছু বলতে চেয়েছিল। নিজের কষ্টের কথা বলতে চেয়েছিল। নিজের খুনির কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বলতে পারেনি। চাপা কান্না আর হৃদয়ের ক্ষত যেন তার মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছিল। নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে ছিল ওই হাসপাতালের বিছানায়। এভাবেই মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে জীবনের শেষ মুহূর্তটাও শেষ হয়ে গেল। কখন যে জীবনের শেষ মুহূর্তটা ফুরিয়ে গেল কেউ বুঝতেই পারল না। আর পরপারে চলে গেল অনুরাধা। এভাবে হাজারো অনুরাধা নির্যাতনের শিকার হয়ে পরপারে পানি জমায়। হয়তো অনেক সময় এই অন্যায়ের বিচার হয় আবার অনেক সময় নিরবে নিভৃতে চাপা পড়ে যায় সেই চাপা কষ্টগুলো। আর সারা জীবন রয়ে যায় সেই অসহায় বাবা-মায়ের হাহাকার।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

সত্যি আপু অনুরাধার মতো অনেক অনুরাধা আছে আমাদের এই সমাজে। আসলে যাদের প্রতিবাদ করার ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় প্রতিবাদ করতে পারে না।যেমনটা হয়েছে অনুরাধার ক্ষেতে।একজন বাবার পক্ষে কতটা কষ্ট মেয়ের লাস নেওয়া তা শুধু বাবাই জানে।ধন্যবাদ আপু আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগল।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু এরকম অনেক অনুরাধা আছে যারা প্রতিবাদ করতে গিয়েও প্রতিবাদ করতে পারে না। আর শেষ পরিণত হয় মৃত্যু। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last year (edited)

যৌতুকের জন্য এভাবে অনেক অনুরাধা নিজের প্রাণ হারিয়েছেন।হয়তো কিছু গল্প আমাদের জানা কিছু গল্প আমাদের অজানা। কত অনুরাধা আছে যৌতুকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজে আত্মহত্যা করে বসে। আমরা শুধু নামের মানুষ হয়েছি মানবিক গুণে এখনো মানুষ হতে পারিনি। আপনার গল্পটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো আপু। অনুরাধার অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে তার বাবা কিভাবে মানবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56949.15
ETH 2401.26
USDT 1.00
SBD 2.33