গল্প-সোনালী||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাইতো সময় পেলে গল্প লিখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
সোনালী:
Source
সোনালী নামের সেই মিষ্টি মেয়েটি আর নেই। তবে তার মৃত্যু আজও সবাইকে কাঁদায়। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়েটির নাম ছিল সোনালী। হাসিখুশি মেয়েটি সবসময় হাসি আনন্দে মেতে থাকতো। বাবা মায়ের আদরে বড় হতে লাগলো সোনালী। তার মিষ্টিমুখের হাসি সবাইকে পাগল করত। সোনালী দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো। সময়ের সাথে সাথে সোনালীর বাবা মায়ের চিন্তাও যেন বেড়ে যেতে লাগলো। যদি তাদের মেয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এই ভয়ে তার বাবা-মা সব সময় চিন্তায় থাকতো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যদি কপালে দুঃখ লিখে রাখেন তাহলে নিজের দুঃখ যেন আমরা নিজেই তৈরি করি। সোনালীর ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটা হয়েছে।
মিষ্টি মেয়ে সোনালী প্রেমে পড়েছিল অচেনা একটি ছেলের। নাম তার সবুজ। যখন সোনালী সবুজ মাঠের প্রান্তর পেরিয়ে নিজের স্কুলে যেত তখন সেই সবুজ তাকে দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতো। সোনালী ধীরে ধীরে সবুজের প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু ভালোবাসি এই কথাটি হয়তো বলেনি। সময় যত যেতে লাগলো দুজনের মিষ্টি মধুর প্রেমের সম্পর্ক যেন আরও বেশি গভীর হতে লাগলো। একদিন হঠাৎ করে সবুজ সোনালীর সামনে এসে দাঁড়ালো। বাড়িয়ে দিল দুটি হাত। বলল সারা জীবন যদি একসাথে কাটাতে চাও তাহলে এই হাতটি ধরে চলো আমরা পালিয়ে যাই। সোনালী ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। ভুল মানুষের মায়ায় পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সোনালী।
সোনালী সেই সবুজের সাথে পালিয়ে গেল অনেক দূরে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সোনালীর বাবা-মা সোনালীকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। চারপাশে খোঁজাখুঁজি করেও সোনালীর কোন খবর পেল না। এরপর সোনালীর এক বান্ধবীর কাছে জানতে পারলো সে সবুজের সাথে দূরে কোথাও চলে গেছে। সোনালীর বাবা-মা অনেক কষ্ট পেল। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই সোনালীর বাবা মাকে ধিক্কার জানালো। ক্ষতবিক্ষত সেই বাবা মায়ের হৃদয় যেন আরো বেশি ভেঙেচুরে গেল। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা আর সামাজিকতা সবকিছু যেন তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতবিক্ষত করে দিল। এরপর শুরু হয়ে গেল সোনালীর নতুন জীবন।
অন্যদিকে সোনালী সবুজের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো দূর অজানায়। ভালোবাসার মানুষের ওপর ভরসা করে ছেড়ে এলো তার নিজের পরিবার এবং আপনজনদের। এরপর যখন দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল তখন রাস্তায় ঘুরছিল সবুজ আর সোনালী। এমন সময় সবুজ বলল তার এক পরিচিত জায়গা আছে সেখানে তারা থাকবে। রাতের আধার আর সোনালীর মনে আতঙ্ক। হঠাৎ যেন ভয়ে ধুক ধুক করছে সোনালীর বুক। এরপর পৌঁছে গেল সেই জায়গায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কেন জানি সোনালীর সবকিছু এলোমেলো লাগছে। বুঝতে পারছিল না কি হতে চলেছে। অনেক আশা নিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু কোথায় এসে পৌঁছেছে বুঝতেই পারছে না। চারপাশের মানুষের ব্যবহার তার কাছে কেন জানি বিষাক্ত লাগছিল।
সোনালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবুজ তাকে রেখে কোথায় যেন চলে গেল। যখন সোনালী সবুজকে খুঁজতে লাগলো তখন কোথাও পেল না। সোনালী বুঝতে পারল তাকে অন্য কোন জায়গায় আনা হয়েছে। আর সবুজ সেখান থেকে চলে গেছে। এবার সোনালীকে জানানো হলো মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। যার হাত ধরে ভরসা করে ঘর ছেড়েছিল। সেই মানুষটি তার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি। সোনালী তার দেহটাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিল। নিজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে এলো সে। হাজারো স্বপ্ন আশা বুকে লালন করে ঘর ছেড়েছিল সে। শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হল। আর সোনালীর মত একটি ফুটফুটে মেয়ে হারিয়ে গেল। হয়তো তার জীবনের ভুল সিদ্ধান্তই তাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করলো।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আপু আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। বর্তমান সমাজে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই এমন অনেক ঘটনা দেখা যায়। বাবা মায়ের সাথে এত বছরের সম্পর্ক শেষ করে যখন কোনো মেয়ে অপরিচিত মানুষের হাত ধরে চলে যায় তখন তাদের কপালে এমন পরিণতি লেখা থাকে। এটা সত্যিই ভালোবাসো মানুষকে অন্ধ করে দেয়। যাই হোক আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
আমার লেখা গল্প পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। বর্তমানে এরকম ঘটনা অনেক ঘটছে। ধন্যবাদ আপু মতামতের জন্য।
অনেক মেয়েই আছে, যারা অল্প বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে পরিশেষে তাদের জীবনটাই শেষ হয়ে যায়। আপনার আজকের লেখা গল্পটি বর্তমান সমাজের একটি উদাহরণ। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা গল্পটি পড়ে। আপনার প্রত্যেকটি গল্পই আমার কাছে খুবই ভালো লাগে আপু।
ঠিক বলেছেন আপু আমাদের আশেপাশে অনেক মেয়ে আছে যারা অল্প বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে জীবন দিতে হয়।
আপু আপনার গল্পের সোনালীর জন্য আমার বেশ মায়া হচ্ছে। এখানে আসলে সোনালীর কোন দোষ নেই। সোনালী ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু তার এই বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে প্রতারণা করা হলো। এর জন্য তো সোনালী দায়ী নয়। ধিক্কার জানাই সে সমস্ত ভন্ড প্রেমিকদের যারা সোনালীদেরকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়।
ঠিক বলেছেন আপু সোনালী ভালোবেসেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে নিজের জীবন দিয়েছে। মন্তব্য প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সোনালীর গল্পটা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু । আসলে লাইফে কিছু ছোট ছোট ভুল কারণে আমাদের এমন অবস্থা হয় । সোনালী যদি জানতে পারত তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে এভাবে বিক্রি করে দিবে, তাহলে হয়তো সে কখনোই ভুল রাস্তাটা বেচে নিত না । খুব ভালো লিখেছেন আপনি ।
সোনালী গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। সত্যি ভাইয়া এরকম অনেক নিচু মানসিকতার মানুষ আছে যারা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেউ বিক্রি করে দেয়।
আসলে জীবন চলার পথে এমন কিছু কিছু সিদ্ধান্ত মানুষকে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি সোনালীর মত হাজার হাজার নারীকে জীবন দিতে হয়। সেটা শুধু নারীর ক্ষেত্রে নয় পুরুষের ক্ষেত্রেও এমন ভয়া বহতার সম্মুখীন হতে হয়। ওই ছেলেটি সোনালীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। অবশেষে সোনালি নিজের প্রাণটা দিয়ে প্রাণে বেঁচে গেল। অসাধারণ একটি গল্প লিখলেন আপনি। গল্পের শেষ মুহূর্তটা পড়ে খুবই খারাপ লেগেছে।
ঠিক বলেছেন আপু আমাদের জীবনে আমরা এমন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে তার মাশুল সারা জীবন দিতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো জীবন দিতে হয়। ধন্যবাদ আপু মতামতের জন্য।
গল্পটি পড়ে খুব কষ্ট লাগলো আপু।আসলে মানুষের একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানুষকে কতোটা যে ভোগায় তা দেখতে পেলাম এই গল্পে।আপনি বেশি ই বিরহের গল্প লিখেন আপু। 😂 যাই হোক বর্তমান প্রেক্ষাপটে গল্পটি বাস্তবতা সমৃদ্ধ ছিল।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
বিরহের গল্প লিখতে ভালো লাগে আপু। তাই তো বিরহ নিয়ে লিখি। যাইহোক সমাজের বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
সোনালীর মতো মেয়েরা আসলেই বোকা টাইপের হয় এবং প্রচুর স্বার্থপর হয়ে থাকে। তাইতো তাদের শেষ পরিণতি এমন হয়। দুই দিনের পরিচয়ে অন্যের হাত ধরে কিভাবে পালিয়ে যায়, সেটা আমার বোধগম্য হয় না। এতো পছন্দ হলে নিজের পরিবারকে জানাতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে ফেলে। তারপর নিজের জীবন দিয়ে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে। সবসময় পরিবারের উপর ভরসা করা উচিত, অন্যের উপর না। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।