গল্প-মাধবীলতা||

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। বলতে পারেন গল্প লেখা আমার পছন্দের একটি কাজ। তবে সব সময় গল্প লেখার মানসিকতা থাকে না। গল্প লিখতে গেলে মানসিক প্রস্তুতি অনেক বেশি দরকারি। যখন আমার গল্প লিখতে ইচ্ছে করে তখনই গল্প লিখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকেও আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প আপনাদের ভালো লাগবে।


মাধবীলতা:

beauty-girl-8542836_1280.jpg

Source


মাধবীলতা আজ নিজের জীবনের কিছু সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। যেই সত্যটা এতদিন মুখ বুঝে লুকিয়ে রেখেছিল। এখন তার সময় এসেছে সোচ্চার হওয়ার। সময় এসেছে নিজের কষ্টগুলো কমানোর। মাধবীলতা এখন আর ছোট নেই। ভয় কিংবা আতঙ্ক এখন আর তার জীবনে খুব একটা প্রাধান্য পায় না। মাধবীলতা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা-মায়ের সাথে ভালোই কাটছিল তার দিনগুলো। মাধবীলতার বাবা-মা দুজনেই চাকরি করতেন। সেই সুবাদে দিনের বেশিরভাগ সময় মাধবীলতা একাই সময় কাটাতো। মাধবীলতা পড়াশোনাতে যেমন ভালো ছিল তেমনি ভালো কাজ করতো। নাচের প্রতি তার আলাদা রকমের ভালো লাগা ছিল। তার নাচ দেখে সবাই প্রশংসা করতো।


ছোটবেলা থেকেই মাধবীলতা নিজের ইচ্ছা গুলো প্রাধান্য দিয়েছে। তার বাবা-মাও তাকে কখনো বাঁধা দেয়নি। কারণ তাদের মেয়ে ছিল খুবই পরিশ্রমী। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, ড্রইং সবকিছুর প্রতি মাধবীলতার ভীষণ আগ্রহ ছিল। যেহেতু বাবা-মা দুজনেই চাকরি করতেন তাই ছোটবেলা থেকেই সে স্বাবলম্বী। ছোটবেলা থেকেই মাধবীলতা একা একা চলতে শিখে গেছে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো। তখন মাধবীলতা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। নাচের ক্লাস শেষ করে সিএনজির জন্য দাঁড়িয়েছিল মেয়েটা। হঠাৎ করে একটি বাস সামনে চলে আসে। মাধবীলতা ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। একদিকে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল অন্যদিকে সিএনজি পাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বাসে উঠে পড়ে সে।


বাসে ওঠার সাথে সাথে মাধবীলতার মনে কেন জানি অজানা ভয় কাজ করছিল। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল মেয়েটা। চারপাশের লোকগুলোর চাহনি দেখে মাধবীলতা ভয় পেয়েছিল। বাহিরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। বাসে খুব একটা যাত্রী নেই বললেই চলে। বিষয়টি যখন মাধবীলতা ভালোভাবে খেয়াল করল তখন তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো। এমন সময় মাধবীলতা বুঝতে পারল দুই একজন যাত্রী ছিল তারাও নিজের গন্তব্যে নেমে পড়েছে। বাস জুড়ে শুধু তিনজন আছে। মাধবীলতা এবং বাসের কিছু কর্মচারী বাসে আছে। এটা দেখে তো তার ভীষণ ভয় লাগলো। ধীরে ধীরে লোকগুলো মাধবীলতার কাছে এসে দাঁড়ালো। তাদের বাজে ইঙ্গিত মাধবীলতাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছিল। বৃষ্টির শব্দে মাধবীলতার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি সেদিন মাধবীলতা নিজের সম্মান হারিয়েছিল। রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল তাকে। হয়তো মৃত ভেবে ফেলে দিয়েছিল।


যখন অনেকটা রাত হয়ে গেছে তখন মাধবীলতার বাবা-মা মাধবীলতা কে খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। এরপর হঠাৎ করে মাধবীলতার নাম্বার থেকে ফোন আসে। তখন মাধবীলতার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। তার বাবা-মা তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। মাধবীলতা সেই লোকগুলোকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মাধবীলতার বাবা-মা নিজের মেয়ের সম্মানের কথা চিন্তা করে থানায় যায়নি। মাধবীলতা ভীষণ মনমরা হয়ে থাকতো। ভেতরে ভেতরে চাপা কষ্টগুলো তাকে আঘাত করতো। আগের সেই মাধবীলতাকে এখন আর খুঁজে পাওয়া। তার সেই চঞ্চলতা এখন আর নেই। নাচার প্রতি তার আগ্রহ এখন আর নেই। কেন জানি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সে। ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কেটে গেছে অনেকটা সময়। কিন্তু আজও মাধবীলতা সেই স্মৃতিগুলো ভুলতে পারেনি।


দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেকগুলো বছর। মাধবীলতার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন সে এক সন্তানের মা। কিন্তু সেই ভয়াবহ স্মৃতিগুলো এখনো তাকে কাঁদায়। মাধবীলতা তার স্বামীর সাথে বিষয়গুলো শেয়ার করেছিল। স্বামীর উৎসাহে মাধবীলতার সাহসটা যেন আবারও বেড়ে গেল। সে রুখে দাঁড়ালো সেই মানুষ রূপী পশুদের বিরুদ্ধে। মামলা দায়ের করা হলো তাদের বিরুদ্ধে। একে একে সবাই ধরা পরলো। যেহেতু অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছিল তাই তারা বুঝতেও পারছিল না তাদের অপরাধ কি। অবশেষে যখন মাধবীলতা সেই মানুষগুলোর সামনে এসে দাঁড়ালো তখন সবাই তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। কারণ তারা ভেবেছিল হয়তো মেয়েটির মারা গিয়েছে। মাধবীলতা তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে চিৎকার করে বলছে চিনতে পেরেছিস আমাকে? আমি সেই অসহায় মেয়েটা। যাকে তোরা মৃত ভেবে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলি। এতটা বছর ধরে সেই যন্ত্রণা আমি বুকে লালন করেছি। মানুষরূপী নরপিচারদের শাস্তি দিতে পেরে আজ আমার যন্ত্রণা গুলো মুক্তি পেয়েছে। মাধবীলতা মনে মনে বলে আজ যদি আমি তাদেরকে শাস্তি না দিতাম তাহলে হয়তো কোন একদিন আমার মেয়েও তোদের মত মানুষের কাছে নির্যাতিত হতো।


আমি আমার এই গল্পের মাধ্যমে একটি কথাই বলতে চাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই তাহলে অপরাধীরা দ্বিতীয় বার কোন অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। তাই অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। আমরা প্রতিবাদী হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো থাকবে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।বাস্তবসম্মত একটি গল্প লিখেছেন যা ইদানিং ব্যাপকভাবে ঘটে যাচ্ছে । আসলেই আমাদের সকলেরই প্রতিবাদ করা উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে । সম্মান নষ্ট হবে এই ভেবে অপরাধীদের ছেড়ে দিলে অপরাধীরা অপরাধ করতেই থাকবে। তাই সবার উচিত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ভালো লাগলো গল্পটি ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last month 

সত্যি আপু অপরাধীকে শাস্তি না দিলে তারা আবারও অপরাধ করবে। আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো।

 2 months ago 

ঠিক এমনই একটি ঘটনা অনেকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়েছিলাম। সত্যি মেয়েরা কোথাও নিরাপদ না। এত বছর পর মাধবীলতার প্রতিবাদী রূপ দেখে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে তার স্বামীর পাশে থাকাটা।তার স্বামী পাশে ছিল সাহস যুগিয়ে ছিল বলেই মাধবীলতা রুখে দাঁড়াতে পেরেছিল। বেশ ভালো লাগলো আপু আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি বাস্তববাদী গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 last month 

এই ঘটনা গুলো অনেক ঘটছে। তাই তো আমি নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করেছি আপু। প্রতিবাদী হওয়ার কারণেই অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59032.15
ETH 2518.27
USDT 1.00
SBD 2.46