মায়াবতী||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ শেয়ার করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। হয়তো গল্পগুলো কারো না কারো জীবন থেকে নেওয়া। কিংবা মনের কল্পনার চরিত্রগুলো গল্পের ভাষায় ফুটে ওঠে। তেমনি আজকে আমি মায়াবতী নামক সুন্দর একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপহার দিতে যাচ্ছি। যারা গল্প পড়তে পছন্দ করেন আশা করছি তাদের কাছে ভালো লাগবে।
মায়াবতী:
Source
গ্রামের নাম ধানসিঁড়ি। আর সেই ছোট্ট গ্রামে বসত করে মায়াবতী। মায়াবতী নামের সাথে যেন তার চরিত্রের অনেক মিল আছে। মায়া ভরা মায়াবতীর মুখের দিকে তাকালে হৃদয় জুড়ে যায়। মায়াবতীর মিষ্টি হাসি সকলের হৃদয় কেড়ে নেয়। মায়াবতীর চোখের মায়ায় ঘায়েল হয়েছে হাজারো যুবক। মায়াবতী যেন তার মায়ায় ঘিরে রেখেছে চারপাশ। সেই ছোট্ট মায়াবতী দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠলো। কখন যে এতটা বড় হয়ে গেল তার বাবা-মা বুঝতেই পারেনি। বাবা মায়ের অতি আদরের মায়াবতী। মায়াবতী স্বপ্ন দেখতো দূরের কোন অচেনা রাজকুমার তাকে নিতে আসবে। হয়তো তার মনের কল্পনায় কোন এক রাজকুমার জায়গা করে নিয়েছিল। মায়াবতীর বাবা মা তাকে আদর দিয়ে আগলে রাখত। হয়তো তারা বিলাসিতায় মায়াবতীকে বড় করতে পারেনি। তবে ভালোবাসার চাদরে ঘিরে রেখেছিল মায়াবতীকে।
মায়াবতী গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যেত। হাসিখুশি সেই মেয়েটি তার গ্রামের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। মায়াবতী দেখতে যেমন মায়ায় ভরা তেমনি গুনবতী। দেখতে দেখতে ছোট্ট সেই মায়াবতী অনেক বড় হয়ে গেল। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে গেল। মায়াবতীর বাবা সামান্য কৃষক। তাই তো সে মায়াবতীকে কলেজে ভর্তি করতে চাইছিল না। অন্যদিকে মায়াবতী স্বপ্ন দেখতো সে লেখাপড়া করে তার গ্রামের স্কুলের বাচ্চাদের পড়াবে। অবশেষে মায়াবতীর স্বপ্ন পূরণের জন্য তার বাবা তাকে কলেজে ভর্তি করে দিল। কলেজে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মায়াবতীর আরো কিছুদিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে কলেজে যাওয়ার সময় এল। নিজের গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে দূর শহরের কলেজে যেতে লাগল সেই মায়াবতী। অচেনা অজানা শহর আর অচেনা অজানা লোকজন মায়াবতীর বেশ ভয় লাগছিল। তবুও বুকে সাহস নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল। কারণ সে হারতে শেখেনি। এভাবেই কাটছিল মায়াবতীর দিনগুলো।
হঠাৎ একদিন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। মায়াবতী কলেজ থেকে ফেরেনি। তার বাবা-মা খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। তারা কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। অন্যদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। মায়াবতী বাড়ি ফিরল না। মায়াবতীকে বাড়ি ফিরতে না দেখে তার বাবা-মা বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। আশেপাশের লোকজনও মায়াবতীর জন্যও অনেক চিন্তা করছিল। অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে শহরে রওনা দিল। শহরের পথঘাট আর আলোর মাঝে গ্রামের মানুষগুলো মায়াবতীকে খুঁজতে লাগলো। অন্ধকার রাত আর বৃষ্টি ভেজা রাতে ভয়ঙ্কর ভাবে সেজে উঠেছিল চারপাশ। কোথায় খুঁজবে তারা মায়াবতীকে ভেবে পাচ্ছিল না। তবুও তারা অসহায়ের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। কোথাও খুঁজে পেলো না মায়াবতীকে। দেখতে দেখতে রাত বারোটা পার হয়ে গেল। মায়াবতীর বাবা আর তার গ্রামের মানুষজন ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
অবশেষে তারা থানায় যেতে বাধ্য হলো। যখন তারা মায়াবতীর হারিয়ে যাওয়ার কথা থানায় গিয়ে বলল প্রথমে তারা হাসাহাসি করল। বলল হয়তো আপনাদের মায়াবতী তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে। এসব কথা শুনে তার বাবা অনেক কষ্ট পেল। কিন্তু তার মনে মায়াবতীর প্রতি বিশ্বাস ছিল যে তার মেয়ে এমন কিছু করবে না যাতে করে তার বাবা-মা কষ্ট পায়। মায়াবতীর বাবা অনেকটা জোর গলায় বলল আমার মেয়ে এরকম কিছুই করেনি। আপনারা তাকে খোঁজার ব্যবস্থা করুন। পুলিশ অফিসারের কথা শুনে তার গ্রামের লোকজন কানাকানি করতে লাগলো। কিন্তু তার বাবা হাল ছাড়েনি। এভাবে কেটে গেল পুরোটা রাত। রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করল। তবুও তারা মায়াবতীকে খুঁজে পেল না।
যখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে তখন চারপাশে ভোরের পাখি গুলো কিচিরমিচির করছিল। ভোরের পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে যখন সবাই জেগে উঠেছে এমন সময় পুলিশের কাছে খবর এলো একটি মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ যখন সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন মায়াবতীর বাবাকে কথাগুলো বলছিল। কথাগুলো শুনে মায়াবতীর বাবা যেন একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিছু বলার ভাষা সে হারিয়ে ফেলেছে। এরপর তারা ছুটে গেল সেই রাস্তার পাশে। যেখানে পড়েছিল একটি মেয়ের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। দেহটাকে ক্ষতবিক্ষত করে নরপিসাঁচড়া তাকে মেরে ফেলেছে। শারীরিক নির্যাতনে তার দেহটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে আছে। এসব দেখে মায়াবতীর বাবা চিৎকার করে উঠলো। তার মেয়ের ওড়না দিয়েই তার মুখ বাঁধা ছিল। মায়াবতীর বাবার বুঝতে আর বাকি রইল না তার মেয়ের সাথে কি হয়েছে।
ওড়না দিয়ে মুখ বাঁধা আর রশি দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় মায়াবতীর মৃতদেহ পাওয়া গেল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু হিংস্র মানুষরূপী জানোয়ার তার পবিত্র দেহটাকে অপবিত্র করে ফেলেছে। আর মায়াবতীর সেই মায়া ভরা মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। হয়তো সেই মানুষরূপী পশুগুলোকে দেখে তার হৃদয় কেঁপে উঠেছিল। ভয়ে তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। হয়তো চিৎকার করতে চেয়েছিল কিন্তু পারিনি। কিংবা তার সেই চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। হয়তো ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে গিয়েছিল মায়াবতী। আসলে এতটা কষ্ট দিয়ে মায়াবতীকে মারা হয়েছে যে তার দেহটা দেখেই সবার হৃদয় কেঁপে উঠেছিল। সেই মানুষরূপী নরপশুগুলো এই সমাজেরই মানুষ। হয়তো আমাদের চারপাশেই তাদের বসবাস। হয়তো এভাবেই হাজারো মায়াবতীর জীবন কেড়ে নেয় তারা। তাদের ক্ষণিকের লালসার জন্য হাজারো মায়াবতী জীবন দিয়ে দেয়। কিংবা তারা মায়াবতীদের বাঁচতে দেয় না।
এভাবেই হয়তো হাজারো স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়। যেই স্বপ্ন দেখেছিল মায়াবতী। আমাদের সমাজের সেই মানুষরূপী পশুগুলো দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। হয়তো তাদের করা অন্যায়ের কোন প্রমাণ থাকে না। কিংবা আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। আবারও কোন মায়াবতীর উপর নির্যাতন চালায়। এটাই হয়তো আমাদের সমাজের কিছু বাস্তব চিত্র।
এসকল লোকের জন্য আমাদের সমাজে হাজারো মায়ামতি নিঃশব্দে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মায়াবতীর বাবা যখন থানায় গিয়ে বলল আসলে তারা সব কিছু হাসি মুখে উড়িয়ে না দিয়ে সাথে সাথে তালাশ করলে হয়তো এমন নাও হতে পারতো। আর আইন ব্যবস্হার কথা আর কি বলবো। আসলে এরা মানুষ নয়, হিংস্র মানুষরূপী জানোয়ার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটা গল্প শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু এসকল লোকের জন্য আমাদের সমাজের অসহায় মেয়েগুলো শেষ হয়ে যায়। হয়তো সমাজ ব্যবস্থার অবহেলা কিংবা মনুষত্বের অভাব সবকিছু মিলিয়ে যেন আমাদের চারপাশ। ধন্যবাদ আপু মতামতের জন্য।
এইরকম লোক আমাদের সমাজে অনেক আছে। আপনার গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো।মায়াবতী সুন্দরী এবং লেখা পড়া করে। আসলে মায়াবতীর উপর কিছু নিষ্ঠুর লোকের নজর পড়েছে। থানায় যখন কমপ্লিং করল তখন তারা হাসাহাসি করতে লাগলো। আসলে কারো বিপদের সময় কেউ হাসাহাসি করলে এটি অনেক খারাপ লাগে। এবং ভোরবেলায় তার ক্ষতবিক্ষত দেহাটা পাওয়া গেল। এরকম সামনে থেকে কোন পিতা-মাতা তার মেয়েকে দেখলে কেমন যে লাগে তা বলার ভাষায় নেই। অনেক সুন্দর করে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন।
এরকম লোক আমাদের সমাজে আছে বলেই আমরা এখনো অনেকটা অনিরাপদ। আসলে মায়াবতীর মত হাজার হাজার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হয়তো কারো কিছু করার থাকে না। অসহায় মা-বাবারা শুধু কষ্টই পেয়ে যায়।
এগুলো এখনকার সমাজের বাস্তবতা, এখন কোন মেয়ে নিরাপদ না। সমাজ ঘৃন্য নরপিশাচে ছেয়ে গেছে। নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ শুধু ওঁত পেতে থাকে ক্ষতি করার জন্য, তাই সাবধানে চলতেই হবে।
গল্প হলেও বাস্তবতার ছোঁয়া পেলাম পুরোটা।
ভালো ছিল গল্পটি আপু।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া এগুলো আমাদের সমাজের বাস্তবতা। আসলে আমাদের সমাজে এমন কিছু ঘৃন্য নরপিশাচ আছে যারা মায়াবতীর মত অসহায় মেয়েদেরকে বাঁচতে দেয় না। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মতামতের জন্য।
এটা গল্প হলেও আমাদের আশেপাশে এখন প্রায় এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। মানুষরূপী পশুগুলো এখন ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে কাউকে ছাড় দেয় না। এদের লালসা এতটা যে তারা কিছুই মানার চেষ্টা করে না বা বোঝার চেষ্টা করে না। এক নিমিষে এই মায়াবতীর স্বপ্নগুলো শেষ হয়ে গেল এবং মায়াবতী বাবার বুকটা খালি হয়ে গেল। গল্পটা খুবই ভালো লেগেছে আপু।
আসলে গল্পগুলো বাস্তবতা থেকে নেওয়া হয়। আমাদের চারপাশে এরকম ঘটনা সব সময় ঘটে যাচ্ছে। মানুষরূপী পশু গুলো অসহায় মেয়েটিকে ছাড় দেয়নি। তাই তো সেই মেয়েটির উপর নির্মম অত্যাচার করেছে এবং জীবন কেড়ে নিয়েছে।
আপু আপনি সমাজের একটি বাস্তব চিত্র গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এমন হাজারো মায়াবতী রয়েছে যারা দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করতে শহরে যায় কিন্তু মানুষরূপী কিছু নরপিশাস তাদের ক্ষণিকের লালসার জন্য মায়াবতীর মত মেয়েদের জীবন নষ্ট করে দেয়। এরপর নরপিশাচ গুলো সমাজে ভালো মানুষের রূপে ভালোভাবেই ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ খুঁজে বেড়ায় আবারও কোন মায়াবতীর জীবন নষ্ট করার জন্য। বিষয়টা আমাদের সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক এবং ভয়ংকর। গল্পটি ভালো লিখেছেন আপু। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি গল্পের মাধ্যমে আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য। দু চোখে স্বপ্ন নিয়ে হাজার হাজার মেয়ে পড়াশোনার জন্য শহরে যায়। আর কিছু নরপিশাচ আছে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে অত্যাচার করে। আর ভেঙে যায় একটি সুন্দর স্বপ্ন।
আপনার এই গল্পের মধ্যে বাস্তবতার হাতছানি দিচ্ছে। আজকাল বর্তমানে এভাবে চললে হবে না। খুবই সাবধান। মানুষ নামের অনেক জানোর ওত পেতে আছে, এই সমাজ টা আর সমাজ নাই, এই সমাজটি হয়ে গেছে ঘৃণ্য নরপিশাচে ভরা। এমন একটা আদরের মেয়ে তার বাবার বুক খালি করে গেলো, বাবার বুকটা কি আর ঠিক থাকবে। মানুষ নামের জানোয়ার, মায়া দয়া কিচ্ছু নাই। ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য
বাস্তবতা থেকে গল্পের সৃষ্টি হয়। হয়তো বাস্তবে এরকম ঘটনা সব সময় ঘটে। আমরা হয়তো দেখেও এড়িয়ে যাই। কিংবা ক্ষনিকের জন্য কষ্ট পাই। কিন্তু যে বাবা-মা তাদের সন্তানকে হারায় তারা সারা জীবন ধরে কষ্ট পায়। ধন্যবাদ আপনাকে মতামতের জন্য।
আপু আপনার গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছে একদম বাস্তব হতে নেওয়া। এখন সমাজে কিছু নরপিচাশ জন্ম নিয়েছে। যারা ছোট ছোট বাচ্চাদের কেও ছাড় দেয় না। আর এখন তো মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। তাই আমি মনে করি নিজের হাতিয়ার নিজেকেই গড়তে হবে।
ঠিক বলেছেন আপু গল্পগুলো বাস্তবতা থেকে নেওয়া। আমাদের সমাজের এমন অনেক মানুষ আছে যারা দিনের পর দিন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। কেউ মুখ খুলছে কেউ বা জীবন দিচ্ছে। এভাবেই চলছে সবকিছু। নিজেকে অবশ্যই শক্ত থাকতে হবে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।