গল্প-নীলাঞ্জনা||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই তো মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। জানিনা আমার লেখা গল্প গুলো আপনাদের কাছে কেমন লাগে। তবে গল্প লিখে সবার মাঝে শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আশা করছি আমার লেখা এই গল্প সবার ভালো লাগবে।
নীলাঞ্জনা:
Source
আজ বহু বছর পর কেন জানি বারবার নীলাঞ্জনার কথা মনে পড়ছিল আবিরের। আর মনে পড়ছিল সেই স্মৃতিগুলো।নীলাঞ্জনা ভারী মিষ্টি মেয়ে। তার রূপের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করত। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হয়তো ভুল করে তাকে কথা বলার ভাষা দেননি। নীলাঞ্জনা কথা বলতে পারতো না। তার মিষ্টি হাসি দেখলে কেউ বুঝতেই পারতো না তার ভেতরে এতটা চাপা কষ্ট। কথা বলতে না পারার চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে হাসিমুখে নিজেকে উপস্থাপন করত নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা তার বাবা-মায়ের খুবই আদরের। ছোটবেলায় যখন নীলাঞ্জনা তাদের ঘরে এলো তখন যেন তাদের সেই ছোট্ট ঘর আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। নীলাঞ্জনা সময়ের সাথে সাথে যখন বেড়ে উঠলো তখন সবাই বুঝতে পারল নীলাঞ্জনা সবার মত নয়। সে কথা বলতে পারতো না। কিন্তু সবার কথা বুঝতে পারতো। নীলাঞ্জনা ভালো কবিতা লিখত। তার মনের কথাগুলো যেন কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করত। এভাবেই দেখতে দেখতে নীলাঞ্জনা বড় হয়ে গেলো।
এবার নীলাঞ্জনা ভালো একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেল। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন নীলাঞ্জনা বুকে অনেকটা ভয় নিয়ে সেখানে গেল। সময়মতো ক্লাস শুরু হয়ে গেল। যখন স্যার একজন একজন করে সবার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন তখন নীলাঞ্জনার চোখ যেন কষ্টে ছলছল করছিলো। কারণ সে তো নিজের নাম বলতে পারবে না। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে সে তার স্কুল জীবনের একটি বান্ধবীকে পেয়ে গেল। এরপর মনে সাহসের সঞ্চার হল। এবার যখন নীলাঞ্জনা কে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হলো তখন তার বান্ধবী নামটি বলে দিল। হয়তো স্যার প্রথমে বুঝতে পারেনি এরপর বুঝতে পেরেছিলেন নীলাঞ্জনা কথা বলতে পারে না। নীলাঞ্জনা পড়াশোনাতে বেশ ভালো ছিল। দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো কিছুদিন। দেখতে দেখতে ইউনিভার্সিটির কালচারাল প্রোগ্রামের দিন নির্ধারণ হয়ে গেলো। নীলাঞ্জনার ক্লাসের অনেকেই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে চাইলো। নীলাঞ্জনার সেই বান্ধবী নীলাঞ্জনাকে জোর করে সেখানে নিয়ে গেল। নীলাঞ্জনা সেখানে যাওয়ার পর একটি ছেলের কবিতা আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো। এরপর জানতে পারলো ছেলেটির নাম আবির।
কিন্তু আবির কিছুতেই এই কবিতাটি প্রোগ্রামে করতে চাচ্ছে না। সে নতুন কোন কবিতা চাচ্ছিল। হঠাৎ করে নীলাঞ্জনা চিন্তা করল সে যদি তাকে কবিতা লিখে দেয় তাহলে তার কাজে লাগতে পারে। সেই ভাবনা থেকে নীলাঞ্জনা একটি কবিতা লিখে ফেলল। এখন আবিরকে কি করে দিবে সেটা সে বুঝতে পারছিল না। এরপর ইউনিভার্সিটির গ্রুপ থেকে ছেলেটিকে খুঁজে বের করল এবং সেই কবিতাটি তাকে পাঠালো। সেই কবিতাটি আবিরের কাছে অনেক ভালো লাগলো। আর পরের দিন রিহার্সালে যখন তারা গেল তখন আবির কবিতাটি আবৃত্তি করতে লাগলো। নীলাঞ্জনার তখন ভীষণ ভালো লাগলো। এরপর নীলাঞ্জনা নতুন করে কবিতা লিখতো আর আবিরকে পাঠাতে লাগলো। আবির জানতেও পারেনি নীলাঞ্জনা তাকে কবিতা লিখে পাঠাতো। এভাবে প্রোগ্রামটিও শেষ হয়ে গেল। আবিরের প্রতি নীলাঞ্জনার কেন জানি অদ্ভুত মায়া জন্মেছে। তাকে না দেখলে তার একটুকুও ভালো লাগেনা। আড়াল থেকে নীলাঞ্জনা আবিরকে দেখতো।
কেন জানি আবিরও সেই অচেনা মেয়েটির প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। বারবার সেই অচেনা মেয়েটির কবিতার প্রতীক্ষায় থাকতো। আবির কেন জানি বুকের মাঝে শূন্যতা অনুভব করতে লাগলো। হয়তো তাকে আড়াল থেকেই ভালোবেসেছিল আবির। এবার সে বুঝতে পারছিল না কি করে তাকে খুঁজবে। ইউনিভার্সিটিতে তো অনেক মেয়ে আছে। কে তাকে কবিতা লিখে পাঠাতো সেটা তো সে বুঝতে পারছে না। আবির কেন জানি দিনে দিনে বিষন্ন হয়ে যাচ্ছে। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। কয়েকদিন মেয়েটির লেখা কবিতা সে পাচ্ছে না। হয়তো কবিতার সাথে সাথে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল আবির। আবির পাগলের মত মেয়েটিকে খুঁজতে লাগলো। এরপর বাধ্য হয়ে নীলাঞ্জনার সেই বান্ধবী আবিরকে সব কিছু বলে দিলো। সে জানালো নীলাঞ্জনা তাকে কবিতা পাঠাতো। এরপর আবির নীলাঞ্জনার সাথে দেখা করতে চাইলো। এই কথা শুনে মেয়েটির চোখে পানি চলে এলো। মেয়েটি শুধু বলল আপনার হয়তো অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে তাকে খুঁজতে।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে নীলাঞ্জনা। মরণব্যাধি ক্যান্সার তাকে আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এই কথা শুনে আবিরের ভীষণ খারাপ লাগলো। এরপর যখন আবির নীলাঞ্জনার সাথে দেখা করতে গেল তখন আবিরকে দেখে নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে গেল। তার বিষন্ন মুখ দেখে আবিরের হৃদয় হাহাকার করে উঠলো। নীলাঞ্জনার চোখের নিচে কালি পড়েছে। সেই বিষন্ন মুখের আড়ালেও যেন অদৃশ্য এক হাসি লেগেই রয়েছে। মায়াবী সেই মুখের হাসিতে আবির যেন আবারও নীলাঞ্জনার প্রেমে পড়ে গেল। কিন্তু বিধাতা হয়তো তাদের মিলন লিখেননি। নীলাঞ্জনার সময় যে ফুরিয়ে এসেছে। হয়তো ভালোবাসি এই কথাটি নীলাঞ্জনা কখনো বলতে পারেনি। কিন্তু নিজের ভালোবাসা দিয়ে কবিতাগুলো লিখেছিল। আর সেই কবিতাগুলো তার ভালোবাসার মানুষটিকে উপহার দিয়েছিল। নীলাঞ্জনার জীবনের এই করুন পরিণতি দেখে আবীর ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। আজও আবির নীলাঞ্জনার কবরের পাশে গিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলে। আর নীলাঞ্জনার লিখা কবিতাগুলো আবৃত্তি করে। আবির এখনো মনে করে হয়তো নীলাঞ্জনা তার কবিতা শুনছে। আর কবিতার মাঝে আবির নিলাঞ্জনাকে খুঁজে পায়। নীলাঞ্জনার লিখা কবিতা আজও আবিরের মনে ভালোবাসা জাগায়।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা। আপনার টাইটেল পড়া মাত্রই মনের মধ্যে নচিকেতার সেই গানটা ভেসে আসলো। যাইহোক নীলাঞ্জনার লেখা কবিতাটি আবিরকে দেওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটি আশপাশের খোঁজ নেওয়া এবং খুঁজে বার করা বিষয়টা ভালো লাগলো। এদিকে নীলাঞ্জনার ক্যান্সার বিষয়টা জানার পর খুবই খারাপ লাগলো আমার। আসলে কেউ যদি কোন গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করে সেই থেকে অনেক কিছু জানা যায়।
মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা অনেক বেশি কষ্ট দেয়। তাই তো নীলাঞ্জনা কষ্ট পেয়েছে। আর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। তবে আবিরও কিন্তু সত্যিকারের ভালোবেসেছিল।
খুব সুন্দর একটি গল্প আমাদের শেয়ার করেছেন আপু। আসলে আপনার গল্প উপস্থাপন বেশ দুর্দান্ত হয়ে থাকে। ভাগ্যের নিয়তি নীলাঞ্জনার ক্যান্সার হয়েছে। প্রিয় মানুষ হারিয়ে আবির শোক পাথর হয়ে গেছে। প্রিয় মানুষের কবরে পাশে বসে আবির তার কবিতাগুলো আবৃত্তি করে। সত্যি এই বিষয়টি খুবই কষ্টদায়ক। গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
না ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। সত্যি ভাইয়া ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অনেক সময় মেনে নিতে হয়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আপনার লেখা গল্পগুলো পড়তে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে আপু। নীলাঞ্জনা গল্পের কাহিনীটাও খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপু। নীলাঞ্জনা এবং আবিরের ভালবাসা সত্যিকারের ছিল কিন্তু তাদের ভাগ্যে এক হওয়া ছিল না।মরণব্যাধি ক্যান্সার সবকিছু শেষ করে দিল । বলতেই হয় আপু, আপনি অসাধারণ গল্প লেখেন।
আসলেই আপু আপনি দারুণ লিখেন। আপনার লেখা গল্প গুলো পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। যাইহোক অবশেষে আবীর এবং নীলাঞ্জনার দেখা হয়,কিন্তু হাসপাতালের বিছানায়। আবীর তো নীলাঞ্জনার কবিতা পড়েই তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। নীলাঞ্জনার যদি ক্যান্সার না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদের মিলন হতো। গল্পটা পড়ে সত্যিই মর্মাহত হলাম। যাইহোক এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।