অসহায়ত্ব||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। অসহায়ত্ব শব্দটি সত্যিই অনেক ছোট। কিন্তু এর সাথে মিশে আছে হৃদয়ের হাহাকার, কান্না আর দুচোখের নোনা জল। সবকিছু মিলেই আমাদের জীবন। তেমনি গল্পেও মাঝে মাঝে অসহায়ত্ব এসে ধরা দেয়। এবার তেমনি একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
অসহায়ত্ব:
অসহায়ত্ব শব্দটি কয়েকটি অক্ষরের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও এর বিশালতা অনেক গভীর। হয়তো হৃদয়ের কষ্ট থেকে অসহায়ত্ব নামক শব্দটির তৈরি হয়েছে। কিংবা হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস থেকে। হৃদয়ে জমা অনুভুতি গুলো যখন দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে যায় তখন হয়তো অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। কিংবা অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে হৃদয়ের চারপাশে। গ্রামের সাধারণ ঘরের মেয়ে সুদীপা। গ্রামেই তার বেড়ে উঠা। ছোট্ট এই গ্রামের মায়ায় পড়েছিল সুদীপা। তবে সুদীপার অনেক স্বপ্ন ছিল সে গ্রামের মানুষ গুলোর জন্য কিছু করবে। আর তার পরিবারের জন্য কিছু করবে। সুদীপা নিজের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে গেল। গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে সুদীপা শহরে চলে গেল। হয়তো নতুন স্বপ্নের খোঁজে কিংবা নতুন আশায়। সুদীপা বুকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছে। নিজেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে আজ সে শহরের বুকে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
সুদীপা যখন প্রথম ইউনিভার্সিটি তে যায় তখন ইউনিভার্সিটির মানুষগুলো তার দিকে ফেল ফেলিয়ে তাকিয়ে ছিল। সাদামাটা জামাকাপড়, পায়ে নিচু জুতা আর চোখে বড় ফেমের একটি চশমা। সবকিছু মিলিয়ে যেন সুদীপা সবার কাছে হাসির পাত্রী হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল সুদীপার জীবন যুদ্ধ। শহরের মানুষগুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিল না সে। অপমান অপদস্থ অবহেলা সব কিছুর সাথে সুদীপা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিল না। অসহায়ত্ব এসে ভিড় করেছিল তার জীবনে। এই ইট পাথরের দেয়ালের মাঝে তার অসহায়ত্বের কথাগুলো শোনার মত কেউ ছিল না। চিৎকার করে কেঁদেছিল সুদীপা। তার চিৎকার শুধু সেই ইট পাথরের দেয়াল গুলোই শুনেছিল। মানুষ নামক প্রাণীগুলো শুনেনি। তবুও সুদীপা দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেঁদেছিল। কারণ তার অসহায়ত্ব দেখার মত কেউ ছিল না।
গ্রামের সহজ সরল সুদিপা জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সৈনিক। সে নিজে হারতে শিখেনি। হয়তো অসহায়ত্বের কবলে পড়ে ভেঙেচুরে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জীবন যুদ্ধে হার মানেনি। এভাবেই চলছিল তার জীবন যুদ্ধ। ধীরে ধীরে সময় যত পার হতে লাগলো সুদীপা নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় সুদীপা ভালো ফলাফল করলো। কিন্তু কোন শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে শুভেচ্ছা জানালো না। কারণ সে তাদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। নিজে নিজে ভীষণ কষ্ট পেল সে। এরপর ধীরে ধীরে দু একজন বন্ধু হতে লাগলো সুদীপার। আসলে তারা শুধু নামেই বন্ধু ছিল। সুদীপা মনে মনে একটি ছেলেকে পছন্দ করত। আড়াল থেকে সেই ছেলেটিকে দেখতো। আসলে ভালোবাসা কখন হয়ে যায় কেউ জানে না। তেমনি এই ছেলেটির প্রতি সুদীপার ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল।
মনের অজান্তেই হয়তো ভালোবাসার তৈরি হয় কিংবা গভীর অনুভূতি থেকে। সুদীপা নিজের ভালোবাসার কথাগুলো প্রকাশ করতে পারছিল না। কারণ সে যদি তাকে ফিরিয়ে দেয় তাই তো সে ভয়ে কিংবা লজ্জায় কিছু বলতে পারছিল না। আড়াল থেকেই সুদীপা ছেলেটিকে ভালোবেসেছিলে। একদিন সুদীপা যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল হঠাৎ করে দেখতে পেল সেই ছেলেটি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। সুদীপা তাকিয়ে ছিল কিন্তু কিছু বলতে পারেনি। হয়তো হৃদয়ে গভীর অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। ছেলেটি সুদীপার সাথে কখনোই কথা বলেনি। কিন্তু তার বন্ধুরা ছেলেটিকে বলেছিল মেয়েটি তোর দিকে তাকিয়ে থাকে। বোধয় তোকে কিছু বলতে চায়। ছেলেটি হাসির ছলে উড়িয়ে দিয়েছিল কথাগুলো।
একদিন সুদীপা জানতে পারলো ছেলেটির জন্মদিনের কথা। তার জন্মদিনে সুদীপা তাকে কিছু উপহার দিতে চায়। ইউনিভার্সিটির কোন এক রুমে সবাই মিলে ছেলেটির জন্মদিন সেলিব্রেশন করতে গেল। সুদীপা তাকে দেওয়ার জন্য একটি ডায়রি আর লাল গোলাপ নিয়ে তার জন্মদিনে গেল। ডায়রিতে তার মনের না বলা কথাগুলো লেখা ছিল। সুদীপা সেখানে গিয়ে সবকিছুর সাথে নিজেকে বেমানান মনে করছিল। তাই তো সে তার হাতে থাকা ডায়রিটি আড়াল করে রেখেছিল। একটি মেয়ে হঠাৎ করে তার হাত থেকে ডায়রিটি ছিনিয়ে নেয়। মেয়েটি সবার সামনে ডায়রির লেখা গুলো পড়তে শুরু করে। মেয়েটি সবার সামনে সুদীপার লেখাগুলো পড়তে লাগলো আর সুদীপা ভেঙে চুরে সুরমার হয়ে যাচ্ছিল।তখন সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো। সুদীপা বেশ কষ্ট পেল। সবার হাসি তামাশা মেনে নিতে পারছিল না সুদীপা। হয়তো সে ছেলেটির সাথে বেমানান। কিন্তু ভালো তো বেসেছিল। অন্যায় তো আর করেনি। সবার অপমান আর হাসি তামাশা মেনে নিতে পারছিল না সুদীপা। সেই মুহূর্তে যেন অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছিল তাকে।
সেদিনের পর থেকে সুদীপাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সুদীপার পদচারণা আর ছিল না। কারণ সেদিন সুদীপা অপমান সহ্য করতে না পেরে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। হয়তো এই সমাজের কাছে সুদীপা নামটি খুবই ছোট। কিন্তু তার ভালোবাসার বিশালতা ছিল অনেক বেশি। তাইতো সে নিজের অপমানকে মেনে নিতে না পেরে নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছিল। হয়তো নিজের অসহায়ত্বের কাছে হার মেনেছিল সুদীপা। হয়তো তার নিজের জীবনের কাছে হার মেনে ছিল সে। ছেলেটি এখন মনে মনে সুদীপাকে খোঁজে। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে সে। হয়তো সুদীপার মত আর কেউ তাকে কখনো ভালোবাসবে না।
জীবনের অসহায়ত্ব হয়তো কাউকে বোঝানো যায় না। তাই তো জীবন দিয়ে এই পৃথিবীকে বোঝাতে হয় সে এই জীবনে কতটা অসহায়। এভাবেই হয়তো হাজারো সুদীপা অসহায়ত্বের কাছে হার মেনে যায়। কিংবা এই সমাজের কাছে। হয়তো সুদীপার গল্পগুলো চাপা পড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতায় তৈরি হয় আবারও নতুন কোনো সুদীপা।
সুদীপার গল্পটি পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। যদিও এটা গল্প তবুও এখনকার যুগে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। ভীষণ আবেগপ্রবণ এখনকার জেনারেশন, এদের কিছু বললেই আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। যাক লিখনীটার শেষ পরিণতি বেশ কষ্টের।
ধন্যবাদ আপু গল্পটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
হয়তো সুদীপার মত অনেকেই আছে নিজের জীবনকে সামলে নিতে পারে না। কিংবা অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আসলে হয়তো ভুল ছিল। তবুও মাঝে মাঝেই এরকম পরিস্থিতির তৈরি হয়।
অনেক ভাল লিখেছেন আসলে অসহায়ত্ব এমন একটা জিনিস কাউকে বোঝানো যায় না কাউকে দেখানো যায় না।নিজের মনের অজান্তে নিজেকে শেষ করে দেয়।সুদীপার কি অপরাধ ছিল ভালবাসাটাই ছিল তার অপরাধ সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।আমাদের সমাজে এমন অনেক ঘটনা আছে যেগুলো প্রকাশ হয় না কিন্তু গোপনে ঘটে যায়।
আপু আমি চেষ্টা করেছি নিজের অনুভূতি থেকে এই গল্পটি লেখার জন্য। আসলে অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। এরকম ঘটনা আমাদের সমাজে অনেক ঘটছে। কিন্তু এরকম ঘটনাগুলো অনেক সময় সমাজের সামনে প্রকাশ পায় না।