জেনারেল রাইটিং-পহেলা বৈশাখ ও শৈশব||আমার বাংলা ব্লগ
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। প্রথমেই সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বাংলা নববর্ষ মানে বাঙালির ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষ মানে বাঙালির মনে আনন্দের মেলা। এই নববর্ষের দিনটিকে ঘিরে আমাদের অনেক শৈশব স্মৃতি রয়েছে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে সবকিছু অতীত। তবে মাঝে মাঝে যখন শৈশব স্মৃতি গুলো মনে পড়ে তখন ভীষণ ভালো লাগে। তাই আজকে আমি আমার কিছু শৈশব স্মৃতি ও কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি।
পহেলা বৈশাখ ও শৈশব:

Source
পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আর বাঙালিরা নানান ভাবে এই দিনটি উদযাপন করে। বাঙালির আনন্দ যেন পহেলা বৈশাখে আরো বেড়ে যায়। বাঙালির ঐতিহ্য, বাঙালির সাংস্কৃতিক সবকিছুই প্রকাশ পায়। ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন দেখতাম বড় আপুরা কি সুন্দর লাল সাদা শাড়ি পরেছে। সাদা ও লাল পাড় শাড়ি পরে তারা বৈশাখের আনন্দে মেতে উঠেছে। তাদের সেই আনন্দ দেখে ভীষণ ভালো লাগতো। আমিও বায়না করতাম লাল সাদা জামা তৈরি করার জন্য। মা আগে থেকেই কিনে দিতেন। আসলে সেই আনন্দ সত্যিই দারুন ছিল। হয়তো সময়ের পরিক্রমায় সবকিছুই বদলে গেছে। কিন্তু সেই শৈশবের স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে।
আমার এখনো মনে সেই দিনটার কথা। আমাদের গ্রামের বাসার পাড়ার মোড়ে সবাই মিলে পান্তা ভাতের দোকান দিয়েছিল। সেই দোকানের দায়িত্বে যারা ছিল তারা নিজেদের বাসার মানুষের অর্থাৎ বাবা,চাচা,ভাই সবাইকে পান্তা খাওয়াতো। আর বিনিময়ে তারা টাকা নিতো। অনেকে আবার খুশি হয়ে বেশ ভালো পরিমাণে টাকা দিত। যাতে করে সবাই উৎসাহ পায় এবং আনন্দ পায়। একবার তো এমন হয়েছিল আমার এক চাচাতো বোনের কাছে সব টাকা জমা ছিল সে তো ভুল করে টাকার ব্যাগ ফেলে এসেছিল। যদিও টাকাটা পাওয়া গিয়েছিল। এরপর সবাই আনন্দে একসাথে রং খেলতাম।
বৈশাখের যে আনন্দ আগে ছিল এখন কেন জানি সময়ের পরিক্রমায় সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর কারো ভিতরে কোন উদ্দীপনা নেই। সকালে উঠে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, শুটকি ভর্তা এসব খেতে খুবই ভালো লাগতো। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পাল্টে গেছে। সেই স্মৃতিগুলো শুধুই অতীত। সেই সাথে বদলে গেছে আমাদের অনুভূতিগুলো। হয়তো এখন আর ইচ্ছে করে না লাল সাদা সেই বৈশাখী ড্রেস কিনতে। এখন আর ইচ্ছে করে না হাত ভর্তি লাল কাঁচের চুড়ি পরতে। এখন আর ইচ্ছে করে না লাল ফিতায় চুলগুলো বেনুনি করতে। সবকিছুই সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছি আমরা।
পহেলা বৈশাখে আমরা শৈশবে যেমন আনন্দ করেছি রং খেলেছি সময়ের সাথে সাথে এখন আর সেসব নেই। এখন বাচ্চাদের মাঝে সেই উদ্দীপনা নেই। বৈশাখের সেই আনন্দ এবং বাঙালিয়ানার বৈচিত্র এখন আর লক্ষ্য করা যায় না। এখন সবাই হয়তো ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজনকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে সবাই যে যার মত ব্যস্ত। আগেকার মতো সেই আন্তরিকতা কিংবা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করা এখন আর কারো হয়ে ওঠে না। আর সেই সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছে না। আমরা যেমন আমাদের অর্থাৎ বাঙালির ঐতিহ্য ভুলতে বসেছি তেমনি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এসব বিষয়ে জ্ঞান খুবই কম হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালিদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝানো উচিত। অপসংস্কৃতির মাঝে নিজের সংস্কৃতিকে কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বর্তমানে হয়তো অপসংস্কৃতির কারণে নিজের সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। তবুও সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে যদি আমরা সচেতন করতে পারি তাহলে ধীরে ধীরে সমাজের মানুষগুলোকেও সচেতন করতে পারবো। হয়তো আমাদের সচেতনতাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি শৈশব উপহার দেবে। আর তারাও মনের আনন্দে প্রাণ খুলে বৈশাখের আনন্দ উদযাপন করবে। শুরুটা আমাদেরকেই করতে হবে। তবেই না সমাজ বদলাবে। আর আমরা যদি নিজেরাই বদলাতে না পারি তাহলে কখনোই সমাজ বদলাবে না। আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতেই পারবে না। পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ ভাজার সেই ঐতিহ্য তাদের অজানাই থেকে যাবে।
আমরা আমাদের নিজেদের শৈশব গুলো মনে করে যদি এখনো আবার সেই পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাই তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের সুন্দর শৈশব পাবে। আর আমরা যদি তাদেরকে সুন্দর একটি শৈশব উপহার দিতে চাই এবং বৈশাখের আনন্দ তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই তাহলে অবশ্যই নিজেদেরকে বদলাতে হবে এবং বাঙালিদের ঐতিহ্যকে ছোটদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তবেই তারা বাঙালিয়ানা শিখবে এবং তারাও নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেখাতে পারবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কিছু কথা আমি আজকে লেখার চেষ্টা করেছি। জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আশা করছি লেখাগুলো ভালো লাগবে।
আপু আপনাকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নববর্ষ কে ঘিরে খুব সুন্দর কিছু অনুভূতি আপনি আজ আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। সত্যি ই খুব ভাল লাগলো। আগের সময়ের আনন্দ আর এ সময়ের আনন্দের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাঙালীদের এই ঐতিহ্য কে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের কেই তুলে ধরতে হবে।খুব সুন্দর গুছিয়ে কথাগুলো লিখে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপু শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু আগের সময়ের আনন্দ আর এই সময়ের আনন্দের মাঝে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাঙালীদের সেই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।আমাদেরকেই সেই ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
শুধু বৈশাখের প্রথম দিনই নয়। বৈশাখ আসার আগেই নববর্ষের নতুন জামা কেনার ধুম,বৈশাখের দিন সকালে র্যালি,সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এখন সব কিছুই যেন মিইয়ে গেছে।আগের মত মজা আর নেই। খুব ভাল লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ আর নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া বৈশাখ আসার আগেই নববর্ষের নতুন জামা কেনার ধুম পরে যেত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ঐতিহ্য কিছুই খুব একটা চোখে পড়ে না এখন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।