জেনারেল রাইটিং-মাদকের ভয়াবহতা||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে নিজের মনে নানান রকমের কথা এসে ভিড় করে। আর সেই বিষয়বস্তুগুলো থেকে লিখতে বেশ ভালো লাগে। মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার এই পোস্ট সবার ভালো লাগবে।
মাদকের ভয়াবহতা:
![IMG_20240203_135358.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcc3aX4ELUJWi3ZPqFcc1UjNnjHHjqH9E47s1WwtfYNHF/IMG_20240203_135358.jpg)
সময়ের সাথে সাথে মাদকাসক্তি বড় ধরনের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ যেন সমাজের এক ভয়ংকর ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় যেমন চলে যাচ্ছে তেমনি এই ব্যাধি যুবসমাজের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। হয়তো হাজারো পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিংবা হাজারো যুবকের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতার কথা যখন মনে পড়ে তখন হৃদয় কেঁপে ওঠে। মনে হয় এই বুঝি আমাদের কোন আপন মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মনে হয় যেন সমাজ থেকে এই ব্যাধি যদি নির্মূল করা না যায় তাহলে কোন এক সময় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মাদকাসক্তি ব্যাধিতে জড়িয়ে পড়বে। এটা হয়তো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে। আর সেই সাথে এই ভয়ংকর ব্যাধি আমাদের আপন মানুষ গুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে গ্রাস করে নিবে।
আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। বছর দুয়েক আগে আমার বাড়ির পাশের একটি যুবক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। কারণ ছিল একটাই সে মাদকাসক্ত ছিল। বাবা মায়ের কান্না তাকে কষ্ট দিত। একপর্যায়ে হয়তো সে মাদক ছাড়তে চেয়েছিল। হয়তো ফিরে আসতে চেয়েছিল স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু সে যে ভয়ংকর এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। চাইলেও আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এখনো কানে বাজে সেই ছেলেটির চিৎকার করে কান্না করার শব্দ। সে ভালো হতে চেয়েছিল। বাবা-মার কাছে অনুরোধ করেছিল সে বাঁচতে চায়। কিন্তু কখন জানি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল সে। তাইতো রাতের আঁধারে নিজের আঁধার কালো জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছিল। হয়তো মনে তার অনেক কথা লুকিয়ে ছিল। কিন্তু বলতে পারিনি। এভাবেই আমাদের চোখের সামনে অনেক জীবন শেষ হয়ে যায়। শুধু আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি।
হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম আমাদের স্কুলের সেই ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রটি মাদকাসক্ত। প্রথমে শুনে অবাক হয়েছিলাম। শিক্ষক বাবার আদর্শে বড় হয়েছিল সে। হয়তো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই শহরে পাড়ি জমিয়েছিল। ভালোই কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো। হঠাৎ করে কিছু বন্ধুর পাল্লায় পড়ে মাদক সেবন শুরু করেছিল। শিক্ষক বাবা তাকে টাকা পাঠাতে পাঠাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি বাবা আমার কাছে আর টাকা নেই, তুই একটু না হয় কম করে খরচ করিস। শিক্ষক ভাবা ভেবেছিল হয়তো পড়াশোনার জন্য তার ছেলের অনেক খরচা হচ্ছে। ছেলের কষ্ট হবে ভেবে যেভাবেই হোক তাকে টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে যখন মাদকের ভয়াবহতা সেই শিক্ষক বাবার ছেলেটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে তখন অসহায় বাবার যেন বেঁচে থেকেও মৃত্যু হয়েছে।
আজকাল কিশোর বয়স থেকেই মাদকাসক্তি অনেক বেড়ে গেছে। স্কুল থেকে কলেজ সবখানে যেন মাদকের ছড়াছড়ি। বাবা মা সন্তানকে বড় করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়। হয়তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে একটি সন্তানকে বড় করে তোলে। কিন্তু তাদের সন্তান কখন মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে বাবা-মা বুঝতেই পারেনা। হয়তো তাদের স্বপ্নগুলো আর কখনো পূর্ণ হয়না। সেই সাথে তাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা ছোট্ট সংসারে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। আর শেষ হয়ে যায় সেই মেধাবী মানুষগুলো। শেষ হয়ে যায় সেই বেড়ে ওঠা জীবন গুলো। হয়তো তাদের জীবন আরো সুন্দর হতে পারত। হয়তো স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে তারাও ভালো কোথাও পড়তে পারতো। কিন্তু মাদকের নেশা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ তাদের জীবনের কোন লক্ষ্য নেই। নেই কোন আশা। আর তাদের জীবন জুড়ে নেমে এসেছে যেন শুধুই হতাশা।
বর্তমান সময়ে মাদকাসক্তি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে নিজেদের আপন মানুষগুলোকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা হয়। ছেলেমেয়ে সবাই আজকাল মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এই মাদকাসক্তি নিরাময় করা হয়তো আমার কিংবা আপনার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমরা যদি যে যার জায়গা থেকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝাই তাহলে হয়তো তারাও সচেতন হবে। এমনকি আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে নিজের পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলে হয়তো পরিবারের ছোটরা এই মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হবে। আর নিজের জীবনটাকে ভালোভাবে গড়তে পারবে। সব সময় প্রত্যাশা করি কোন পরিবারে যেন মাদকাসক্তির বিষাদ ছায়া নেমে না আসে। কোনো পরিবারের প্রিয় মানুষটি যেন মাদকের ছায়ায় নিজেকে বিলীন করে না দেয়।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
খুব ভালো একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন আপু। আসলে আপু ঠিকই বলেছেন আপনি। মাদকের ভয়াবহতা আসলে একটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যা কিনা আপনার আমার কিংবা আমাদের কারো পক্ষে ঠেকানো সম্ভব হবে না।এইতো সেদিন অফিসে যাচ্ছি দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো পলিথিন দিয়ে কি যেন টানছে। এমন কি আমাদের ফ্ল্যাটের একটি ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে ছেলেটিকে দেখলাম সঙ্ঘবদ্ধ কিছু বন্ধু নিয়ে ছাদে নেশা করছে। আমি দেখে ফেলায় লুকিয়ে ফেলেছে। তবে এগুলো তো আমাদের ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই যার যার ছেলে মেয়েদের দিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন এ সকল কিছু থেকে দূরে থাকতে পারে এবং আজেবাজে ছেলেমেয়েদের সাথে মেশা থেকে দূরে রাখতে হবে। ধন্যবাদ আপু খুব সুন্দর একটি বিষয় তুলে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
সত্যি আপু এখন আমাদের চারপাশের অনেকেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরকে সঠিক পথে ফেরানো অনেক মুশকিল। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
সময় উপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু।পোস্টটি পড়ে আপনার অনুভূতি গুলো জানা হলো। আসলে এই মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পরছে সবখানে।এ থেকে মুক্তির পথ আমাদের কারোই একার পক্ষে সম্ভব নয় জানা।নিজের আপন জনদের নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় আমাদের। ছেলেমেয়েরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তাই আমাদের সকলের উচিত ছেলেমেয়েদের দিকে লক্ষ্য রাখা।ধন্যবাদ আপু আপনাকে সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। আর সকলের উচিত ছেলেমেয়েদের প্রতি অনেক বেশি লক্ষ্য রাখা। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
আসলেই আপু কিশোর বয়স থেকেই এখন অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগে, দিনদিন মাদকদ্রব্য দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। প্রশাসনিক লোকজন সবকিছু জানা সত্ত্বেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এতে করে হাজার হাজার মা বাবার স্বপ্ন, হাজার হাজার ছেলে মেয়ে অকালে জীবন দিচ্ছে। মাদকাসক্ত হয়ে তাদের মূল্যবান জীবনটা একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে। আসলে বেশিরভাগ কিশোরেরা বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হচ্ছে, আবার কিছু কিছু ছেলেরা বেকারত্ব বা প্রেম ভালোবাসায় ব্যর্থতার কারণে হতাশ হয়ে মাদকাসক্ত হচ্ছে। যাইহোক দারুণ লিখেছেন আপু। এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমাদের আশেপাশের লক্ষ্য করলে এমন ঘটনা অহরহ দেখা যায় আপু। এখন কিশোর বয়স থেকে অনেক ছেলেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের ইচ্ছা থাকলেও হয়তো সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারে না। তাইতো তখন তারা আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত পথ বেছে নেই। ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
আজকে বেশ দারুন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আপু। আসলে মাদকের এই যে ভয়াবহতা সেটা যদি আমাদের বর্তমান ইয়াং জেনারেশনের ভিতর ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে হয়তো তারা এটা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে। আর যে কথাটা বললেন যে, শিক্ষক বাবা তার সন্তানের জন্য শত কষ্টের পরেও টাকার পর টাকা দিয়ে গেছে, আর এই কারণেই হয়তো নষ্ট হয়েছে ছেলেটা। কারণ যদি একটু খোঁজখবর নিত যে টাকা দিয়ে সে কি করছে, তাহলে হয়তো এই সমস্যা আর হতো না। আর যে লোকটা মারা গেছে মাদকের পাল্লায় পড়ে তাকে যদি প্রাথমিক দিকেই এই ব্যাপারটা সম্পর্কে বোঝানো হতো অথবা তাকে এখান থেকে বের করা হতো, তাহলে হয়তো এই মৃত্যু হতো না। তবে মাদক যারা গ্রহণ করছে, তার থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট যারা মাদক বিক্রি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।