শৈশব স্মৃতি-ছোটবেলার এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। শৈশব স্মৃতি নিয়ে লিখতে অনেক ভালো লাগে। সেই সাথে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো মনে করতেও ভালো লাগে। তবে মাঝে মাঝে মনের অজান্তে এমন কিছু স্মৃতি মনের মাঝে এসে যায় যেটা মনে হলে ভীষণ ভয় লাগে। তাই আজকে আমি আমার ভিন্ন ধরনের একটি শৈশব স্মৃতি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি।


ছোটবেলার এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি:

people-3060182_1280.jpg

Source


আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। আমি তখন খুব সম্ভবত সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমরা তিন বোন। তখন আমার ছোট বোনটা কেবল পৃথিবীতে এসেছে। দুই বোনের পর যখন আমার ছোট্ট বোনটা হয়েছিল তখন আমার মায়ের ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। উনি হয়তো মনে মনে একটি ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা করেছিলেন। হয়তো মনে মনে অনেক বড় আশা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মানুষের সব আশা পূর্ণ করেন না। আর মায়ের কোলজুড়ে এসেছিল ছোট্ট ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। ছোট বোনকে পেয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। যখন আমার বোন এই পৃথিবীতে এলো তখন আমার মা ভীষণ অভিমান করেছিলেন। হয়তো বোনের উপর অভিমান করেছিলেন কিংবা সৃষ্টিকর্তার উপর।


যখন আমার বোনের জন্ম হয় তখন আমরা গ্রামের বাসায় ছিলাম। আমার বোন হওয়ার কিছুদিন আগে বাবা আমাদেরকে গ্রামের বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। যাতে করে সবাই দেখাশোনা করতে পারে। এরপর যখন আমার বোন হয়েছে তখন বাবা ছুটিতে আসতে পারেননি। কিছুদিন পর যখন ছুটিতে এসেছিলেন তখন সাথে করে আবার সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবা আমার বোনকে অনেক ভালোবাসতেন। যখন আমরা বাবার সাথে শহরে চলে গেলাম তখন আমার বোন খুবই ছোট ছিল। মাত্র দুই মাস বয়স। নতুন জায়গায় গিয়ে আমরা প্রথমে মন বসাতে পারছিলাম না। মা বিকেলবেলায় আমাদেরকে নিয়ে বাহিরে যেতেন। কিন্তু ছোট বোন থাকার কারণে মাঝে মাঝে যাওয়া হতো না। আর বাবা যেহেতু অনেক ব্যস্ত থাকতেন অনেক সময় মা নিজে অন্যান্য আন্টিদের সাথে গিয়ে বাজার করে আনতেন। আর নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কেনার জন্য নিজেই যেতেন।


এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। একদিন সকালবেলায় মা বললেন তুমি বাবুকে দেখো আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। বাবুর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনতে হবে। আমার মেজো বোন তখন অনেকটাই ছোট। সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তাই ওকে বলে যাওয়া আর না যাওয়া সব একই কথা। আমি বললাম ঠিক আছে আমি বাবুকে দেখব। মা চলে গেলেন। বাবু ঘুমিয়ে ছিল। আমি আর আমার মেজো বোন দুজনে মিলে খেলছিলাম। আমরা আমাদের রুমে খেলছিলাম আর বাবু আম্মুর রুমে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে জোরে একটি শব্দ হল। সেই শব্দে আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম। কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দৌড়ে গেলাম আম্মুর রুমে। যেহেতু পাশাপাশি রুম ছিল তাই বেলকনির দরজা দিয়ে চলে গেলাম তাড়াতাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখি আম্মু একটি চার্জার লাইট চার্জে দিয়ে গিয়েছেন। সেটা হঠাৎ করে বিকট শব্দে ব্লাস্ট হয়ে গেছে।


চার্জার লাইটটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে। সেই সাথে চার্জার লাইটের তারগুলো পুড়ে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যেহেতু আমার ছোট বোন বিছানায় শুয়ে ছিল তাই আমার আরো বেশি ভয় লাগছিল। বিছানা থেকে সেই কারেন্টের সুইচ বোর্ডের দূরত্ব ছিল দুই হাতের মত। তখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। বাবুর দিকে তাকিয়ে আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। কি করব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এরপর আমার মেজ বোনকে বললাম তাড়াতাড়ি গেটের দরজাটা খুলে রাখ। আমি ওমনিতেই বাবুকে জড়িয়ে নিয়ে নিচ তলায় চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে নিচ তলার আন্টিকে ডাকতে লাগলাম। ভাগ্য ভালো সেদিন আঙ্কেল বাসায় ছিলেন। এরপর আঙ্কেল আন্টি দুজনে উপরে চলে এলেন এবং সবকিছু দেখে কারেন্টের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন।


যদিও খুব একটা ক্ষতি হয়নি। তবে কারেন্টের ভোল্টেজ আপ ডাউন করার কারণে এমনটা হয়েছিল। আমি সেই ভয়ংকর মুহূর্তের কথা কখনোই ভুলতে পারবো না। আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। আজকে যখন সেই স্মৃতি নিয়ে লিখছিলাম তখন বারবার হৃদয়ের মাঝে কেন জানি চাপ অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন এইতো চোখের সামনে সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন সেই ভয় এখনো আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে। আমার ছোট বোনটা দেখতে দেখতে এখন বড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেই পুরনো স্মৃতি এখনো আমার মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই বিছানার উপর শুয়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুটির মুখখানি। যাকে নিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কোন কিছু না ভেবেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে চলে গিয়েছিলাম।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 last year 

আমাদেরও যখন দুই বোনের পরে আবার একটি ছোট বোন হয়েছিল তখন আম্মু আব্বুর একটু মন খারাপ হলেও আমার খুব ভালো লাগছিল বোন হওয়াতে।
যাক!!আপনি যেহেতু একটু বড় ছিলেন তাই বুদ্ধি করে নিচতলার আন্টি আংকেল কে ডেকে এনে সমস্যা সমাধান করতে পেরেছিলেন। কিন্তু আপনাদের কোন ক্ষতি হয়েছিল না এটা জেনে খুব ভালো লাগলো।

 last year 

সত্যি আপু আমার যখন বোন হয়েছিল আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। যাই হোক সেদিন বুদ্ধি করে নিচ তলায় চলে গিয়েছিলাম বলেই বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছিল। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

আপু আপনার শৈশব স্মৃতির কিছু মুহূর্ত পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে আমাদের শৈশবে কত ঘটনাই ঘটে যায়। যার কিছু মনে থাকে কিছু থাকে না ।তবে এ ধরনের ঘটনা আসলে ভোলার নয় ।তারপরে তো আপনি বুদ্ধি করে বাবুকে নিয়ে নিচে নেমেছিলেন ফেলে রেখে যাননি । আল্লাহর রহমতে বাবুরও কোন সমস্যা হয়নি । কাচের টুকরো ছিটে গায়ে লাগতে পারতো ।যাই হোক বড় বিপদ থেকে আপনারা বেঁচে গিয়েছিলেন ।ধন্যবাদ।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু শৈশবের স্মৃতিগুলো আমাদের মনে সারা জীবন থেকে যায়। আর সেই স্মৃতিগুলো কখনো ভোলা যায় না। জি আপু সেদিন বাবুর কোন সমস্যা হয়নি। বিপদ থেকে সবাই রক্ষা পেয়েছিলাম।

 last year 

আসলে সবাই চায় একটি ছেলে সন্তান যেহেতু আপনারা দু বোন তাই পরের জনের আগমন ছেলে হিসেবে চেয়েছিলেন ছেলে হয়নি তাই মন খারাপ হয়েছিল ওনার।ভাগ্য ভালো বড়ো ধরনের কোন কিছু হয়নি।তবে আপনি অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বোনের প্রতি ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এই কামনা করছি।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু সবাই ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু আবারো মেয়ে হওয়াতে মন খারাপ করেছিল তারা। যাইহোক ভাগ্য ভালো ছিল বলে আমরা বিপদে পড়িনি।

 last year 

এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আসলে হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। আপনি কাজের কাজ করেছিলেন নিচ তলার আঙ্কেলকে জানিয়ে। যেহেতু বাবু বিছানায় শুয়ে ছিল, ব্যাটারির এএলিমেন্ট ব্লাস্ট হয়ে গায়েও পরতে পারতো। যাক, আপনার গল্পটা আসলেই কখনো ভুলার মতো নয়।

 last year 

মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। আর অসাবধানতায় অনেক বিপদ হয়ে যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

 last year 

রক্ষা করার মালিক আল্লাহ। আর এই জন্য সর্বদা মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের আনুগত্য প্রকাশ করতেই হবে। অতীতে অনেকের জীবনে অনেক প্রকার ঘটনা ঘটে থাকে কিছুটা ভয়ের কিছুটা আতঙ্ক জনক। ঠিক তেমনি ঘটনা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন আজকে।যাইহোক দোয়া করব সব সময় আপনারা সারা জীবনের জন্য একে অপরের প্রতি মায়া ও মহব্বত রেখে দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকবেন।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া রক্ষা করার মালিক সৃষ্টিকর্তা। যাইহোক আমরাও বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম এটার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার কাছে। মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last year 

আপু আপনি ঠিকই বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা সবার সকল আশা পূর্ণ করেন না। আর তাই হয়তো আপনার মায়ের কোলে আপনাদের দু'বোনের পর আবারো তৃতীয় একজন বোন জন্ম নিয়েছিল। তবে আল্লাহ যা করেন সব মঙ্গলের জন্যই করেন, এর চেয়ে বড় সত্য কথা আর কিছুই নেই। যাইহোক আপু, আপনার ছোটবেলার ভয়ংকর স্মৃতির কথা পড়তে পড়তে আমি নিজেও যেন ভয়ে ভীত হয়ে যাচ্ছিলাম। আর আপনি তো ওই সময় ছোট ছিলেন। ঐরকম একটি মুহূর্তে আপনি যে আপনার ছোট বোনকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিচ তলায় চলে গিয়েছিলেন, এটা খুবই ভালো কাজ করেছিলেন। যাক মহান আল্লাহ তায়ালা সেদিন আপনাদের কপালে তেমন দুর্ভোগ লিখে রাখেননি, এটাই হচ্ছে বড় কথা। আপু,ছোটবেলার ভয়ংকর স্মৃতিটুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

সত্যি ভাইয়া সেই ভয়ংকর স্মৃতি মনে হলে এখনো আমার ভয় লাগে। আসলে কিছু কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো কখনো ভোলা যায় না। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 last year 

কিছু কিছু দুর্ঘটনা সারাজীবন মনের মধ্যে দাগ কেটে থাকে এবং চাইলেও সেগুলো ভোলা যায় না। আপনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন আপু,নয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। ভোল্টেজ আপ ডাউন এর কারণে অনেক সময় অনাকাঙ্খিত এমন দুর্ঘটনা ঘটে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া কিছু কিছু দুর্ঘটনা সারা জীবন মনে থাকে। সেদিন বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া মতামত প্রকাশের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 78890.33
ETH 3180.07
USDT 1.00
SBD 2.68