মুভি রিভিউ-ডাব চিংড়ি|
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি@monira999। আমি একজন বাংলাদেশী। আজকে আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে একটি নাটক মুভি শেয়ার করতে যাচ্ছি। যদিও মুভি রিভিউ খুব একটা শেয়ার করা হয় না। আজকে যখন এই মুভিটি দেখছিলাম তখনই হঠাৎ করে মনে হল আজকে এই মুভি রিভিউ শেয়ার করব। আসলে মুভিটি দেখার পর দুচোখে পানি চলে এসেছিল। তাইতো এই মুভিটির রিভিউ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি।
নাম | ডাব চিংড়ি |
---|---|
প্রযোজক | সৃজনী রায় |
পরিচালনা | সুদীপ দাস |
প্রধান সহকারী পরিচালক | সৌমেন মন্ডল |
অভিনয়ে | ইশা সাহা,রঞ্জন, সাহেব ভট্টাচার্য খুষাল চ্যাটার্জী ও আরো অনেকে |
দৈর্ঘ্য | ১ ঘন্টা১৪ মিনিট |
মুক্তির তারিখ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ |
ধরন | মুভি |
ভাষা | বাংলা |
দেশ | ইন্ডিয়া |
এই মুভিটির শুরুতে আমরা দেখতে পাই একজন বৃদ্ধ লোক সাইকেলে করে খাবার ডেলিভারি করছে। হঠাৎ করে রাস্তায় তার এক্সিডেন্ট হয়। এরপর সবাই মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আসলে তিনি ছিলেন একটি বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ারটেকার। সেই বৃদ্ধাশ্রমের সবাই তাকে অনেক ভালোবাসতো। তার এই অবস্থার কথা শুনে তাকে দেখতে সবাই সেখানে ছুটে আসে এবং কিভাবে কি করবে সেটা ভাবতে লাগে। এরপর সবাই মিলে বুদ্ধি করে তাদের নিজেদের জমানো টাকা একসাথে করার কথা ভাবে। এরপর তারা চিন্তা করে তাদের সন্তানদের কাছ থেকে কিছু টাকা চাইবে। যেহেতু সেই বৃদ্ধ লোকটির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন তাইতো সবাই বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। এরপর সবাই যখন তাদের পরিবারের কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে এসেছে তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় অন্য কিছু করার। কারণ সেই বৃদ্ধ কেয়ারটেকারের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। তাই তো তাদের অনেক টাকার প্রয়োজন পড়েছিল। আর এই বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য না হয়েও এই বৃদ্ধাশ্রমের মধ্যমনি হলো সোহিনী।
যেহেতু তারা ছোট পরিসরে "ঠাকুমার হাড়ি" নামের একটি ছোটখাটো খাবার হোম সার্ভিসের সিস্টেম চালু করেছিল তাই সবাই মিলে প্লান করে তারা বড় পরিসরে রান্নার অর্ডার নেবে এবং তাদের কেয়ারটেকারের চিকিৎসা করাবে। সোহিনী তাদেরকে সাহায্য করতে লাগে। সে তাদের রান্না করা খাবার গুলো এক জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে দেখে অন্য বড় কোম্পানির লোকজন সেখানে এসেছে। তারা সুন্দর করে সবকিছু প্রেজেন্ট করেছে। আর সোহিনী টিফিন বক্সে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেসব দৃশ্য দেখে। এরপর লোকটি বলেন খাবারগুলো রেখে যেতে। সোহিনী অনেকটা হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে আসে। এরপর রাতে যখন লোকটি সেই খাবারগুলো খাচ্ছিল তখন তার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। তার ঠাকুমার হাতের রান্নার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এরপর তিনি ফোন করে ৩০০ লোকের জন্য খাবারের অর্ডার করেন। এরপর তারা ৩০০ লোকের খাবারের আয়োজন করার অর্ডার পায় ও সবাই অনেক খুশি হয়ে যায়। এরপর সবাই মিলে লেগে পড়ে সেই খাবারের আয়োজন করার জন্য। অবশেষে তারা সফল হয় এবং সবার প্রশংসা পেয়ে তাদের অনেক ভালো লাগে।
এরপর তারা সেই বৃদ্ধ লোকটির চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা জোগাড় করে ফেলে এবং জমা দিয়ে দেয়। এবার একটি বড়সড় টেন্ডারের জন্য তারা চেষ্টা করে। অন্যদিকে অন্য একটি বাঙালি খাবারের কোম্পানি "ঠাকুমার হাড়ি" নামক এই ছোট্ট কোম্পানিটিকে কিনে নিতে চায় এবং সবার দায়িত্ব নিতে চায়। প্রথমদিকে তারা কেউ তাদের "ঠাকুমার হাড়ি" ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। এরপর দুই একজন ভাবল তাদের বয়স হয়ে গেছে এত চাপ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাইতো রাজি হয়েছে। এবার ভোটিংয়ের মাধ্যমে সবটা নির্বাচন করা হলো। অবশেষে তারা আর রাজি হলো না। "ঠাকুমার হাড়ি" তাদের খুবই প্রিয় ছিল। এরপর যখন টেন্ডার জমা দেওয়ার জন্য সব কিছুই রেডি করা হলো তখন সোহিনী এবং আরো দুজন সেখানে পৌঁছে গেল। অন্যদিকে সেই বৃদ্ধর ছেলে অর্থাৎ শিবুকে দায়িত্ব দেওয়া হল খাবার গুলো পৌছে দেওয়ার। কিন্তু সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও সে আসলো না। কারণ সে ওই বড় কোম্পানির কাছ থেকে টাকা পেয়েছিল। এরপর যখন শিবু এলো তখন বলল তার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে এবং সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। এই কথা শুনে সবাই মন খারাপ করেছে। আর তাদের টেন্ডার জমা দেওয়া হয়নি।
এবার সবাই মিলে চিন্তা করতে লাগলো কি করে টাকার জোগাড় করবে। অন্যদিকে সেই ছেলেটি অর্থাৎ কেয়ারটেকারের ছেলে শিবু যখন হসপিটালে টাকা জমা দিতে যায় তখন জানতে পারে সব টাকা আগে জমা দেওয়া আছে। এই কথা শুনে শিবুর বুঝতে বাকি রইল না তার ধারণা ভুল ছিল এবং সে ভুল করেছে। সে সবকিছু বুঝতে। এবার একটি বড় আয়োজনের জন্য কল আসে। আর তাদের ডিমান্ড ছিল তারা যেন অবশ্যই ভালো মানের ডাব চিংড়ি পায়। এরপর যখন সোহিনী সেখানে সেই খবরটি দিতে আসে তখন সবাই অনেক খুশি হয়ে যায়। এবার সবাইকে জিজ্ঞাসা করার পর জানতে পারে একজন ডাব চিংড়ি বানাতে পারে। কিন্তু তিনি এই আয়োজনের জন্য বানাবেন না। তিনি নিজের ঘরে চলে যান। সবার আবারো মন খারাপ হয়ে যায়। এরপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তারা অন্য কোম্পানিটিকে তাদের "ঠাকুমার হাড়ি" দিয়ে দিবে। এমন সময় সেই মহিলাটি আসে এবং ডাব চিংড়ি তৈরি করার সব লিস্ট হাতে ধরিয়ে দেয়। এটা দেখে সোহিনী অনেক খুশি হয়ে যায় এবং সবাই আবারো পুরোদমে লেগে পরে কাজে। সবাই রঞ্জন বাবুর মেয়ের এঙ্গেজমেন্টের জন্য সবকিছু আয়োজন করতে থাকে।
সবকিছুর আয়োজন যখন শেষ তখন সবাই অপেক্ষা করছিল খাবারগুলো আসার। কিন্তু শিবু তখনও খাবার আনতে দেরি করছিল। আর ফোন রিসিভ করছিল না। এবার সবাই চিন্তায় পড়ে যায় আর সবাই বলে তুমি রঞ্জন বাবুকে সবটা বলে দাও। যাতে ওরা অন্যভাবে ব্যবস্থা করে খাবারের। এই কথা শুনে সোহিনী যখনই রঞ্জন বাবু কে সব কিছু বলতে যায় তখনই দেখে শিবু খাবার নিয়ে চলে এসেছে। এরপর সব কিছুই ভালোভাবে মিটে যায়। এরপর রঞ্জন বাবু যখন ডাব চিংড়ি খান তখন অনেকটা অবাক হয়ে যান এবং সেই রাধুনীর সাথে দেখা করতে চান। কিন্তু সেই মহিলাটি কিছুতেই রঞ্জন বাবুর সাথে দেখা করতে রাজি হন না। এরপর সোহিনী বুঝতে পারেন আসলে উনার সাথে রঞ্জন বাবুর আগের সম্পর্ক আছে। এরপর সোহিনী শিবুকে বলেন সেখান থেকে ওনাকে নিয়ে চলে যেতে। যখন তিনি সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিলেন তখন তার এবং তার ছেলের কাটানো অনেক মুহূর্ত তার মনে পড়ছিল। দু চোখে জল নিয়ে অনেক কষ্টে তিনি বাড়ি থেকে আবার বেরিয়ে আসেন। এভাবে কেটে যায় আরো বেশ কিছুদিন। এরপর হঠাৎ একদিন দেখা যায় তিনি রঞ্জন বাবু অর্থাৎ উনার ছেলেকে চিঠি লিখছেন এবং নিজেদের সবটা জানাচ্ছেন। আর তারা যে বেড়াতে যাচ্ছেন সেই খবরও জানান। এরপর গাড়িতে উঠে সেই চিঠিটি হাওয়ায় উড়িয়ে দেন। আসলে বৃদ্ধাশ্রমের সেই মানুষগুলোর না বলা কথাগুলো হয়তো এভাবেই না বলাই থেকে যায়। এভাবেই মুভিটি শেষ হয়ে যায়।
এই মুভিটি দেখে শেষ পর্যায়ে এসে আমার চোখে জল চলে এসেছিল। আসলে বৃদ্ধাশ্রমের সেই মানুষগুলোর কষ্ট হয়তো কেউ উপলব্ধি করে না। যারা গভীরভাবে সেই কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে তারাই শুধু বুঝতে পারে সেই কষ্টটা কতটুকু। নিজের আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে থাকতে তাদের কতটা কষ্ট হয় শুধু তারাই জানে। হয়তো কল্পনায় তারা অনেক কিছুই ভেবে নেয়। কিন্তু তাদের ছেলে মেয়ে কিংবা আপন মানুষগুলোকে কাছে না পেয়ে তারা অনেক কষ্ট পায়। হয়তো অনেকে আছে টাকা দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করে দেয়। কিন্তু তাদের বাবা-মা যে তাদের প্রতীক্ষায় থাকে তাদের ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে সেটা তারা কখনো বোঝেনা। তারা বৃদ্ধ মানুষগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেয়। আর সেই বৃদ্ধ মানুষগুলো শেষ বয়সে এসেও তাদের যোগ্যতায় "ঠাকুমার হাড়ি" গড়ে তুলেছে। আর সফল হয়েছে। শেষ বয়সে এসেও তারা নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেছে। সব মিলিয়ে মুভিটি দারুন ছিল।
আপনি অনেক সুন্দর একটা রিভিউ পোস্ট করেছেন। ডাব চিংড়ি মুভিটার রিভিউ পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এরকম মুভি গুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে দেখতে। এই মুভিটা যদিও আমার এখনো পর্যন্ত দেখা হয়নি তবে, সময় পেলে অবশ্যই চেষ্টা করব এই মুভিটা দেখে নেওয়ার।
আমার শেয়ার করা মুভি রিভিউ আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। সময় পেলে অবশ্যই এই মুভিটি দেখার চেষ্টা করবেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মুভির নামটা পড়া মাত্রই যেন হাসি আসলো মনের মধ্যে আগে কখনো শুনিনি এমন সিনেমার নাম। জানিনা কতটা ভালো লাগার সিনেমা হতে পারে এটা তবে আপনার রিভিউ পড়ে বুঝতে পারলাম যথেষ্ট সুন্দর একটা সিনেমা। কোন একদিন দেখার জন্য সুযোগ করে নেব।
মুভিটির নাম সত্যি একেবারে ভিন্ন রকমের। তবে মুভিটি বেশ ভালো ছিল। সময় পেলে দেখতে পারেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
বিদেশি নাটক খুব একটা দেখা হয়না।কিন্তু আপনার রিভিউটা পরে নাটকটা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।অনেক সুন্দর একটি গল্প দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া এটা একটি মুভি। তবে অনেকটাই নাটকের মত। আমার উপস্থাপন আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো ভাইয়া।
আগে প্রায় সময় নাটক এবং মুভি দেখো হতো। তবে এখন ব্যস্ততার কারণে নাটক, মুভি দেখা হয় না । আজ আপনি বেশ সুন্দর একটি মুভি আমাদের মাঝে রিভিউ করেছেন। আপনার ডাব চিংড়ি মুভি টি দেখে খুব ভালো লাগলো। তবে এই মুভি আমি দেখি নি আপনার পোস্টের মাধ্যমে মুভি সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো । মুভির চরিত্র এবং সংলাপ বেশ অসাধারণ । এত সুন্দর মুভি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ব্যস্ততা আমাদের জীবনের অংশ। তবুও ব্যস্ততার মাঝে সময় করে নাটক কিংবা মুভি দেখতে ভালো লাগে। আপনিও সময় পেলে দেখতে পারেন ভাইয়া।
দারুন একটি মুভি রিভিউ করেছেন আপু। মুভিটির রিভিউ পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। এ ধরনের মুভি গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে।মুভিটির কাহিনী সত্যিই আমার কাছে দারুন লেগেছে। ধন্যবাদ সুন্দর এই মুভি রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু এই ধরনের মুভি গুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। তাইতো আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে আপু। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
মুভিটির গল্পটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। শেষের দিকে ডাব চিংড়ির রেসিপি ঠাকুর মা বাড়িতে বানানে বলে সবার মন খারাপ করে বসে থাকলো তবে ভালো লাগার বিষয় হলো বৃদ্ধাশ্রমের অনেক কিছুই তুলে ধরা হয়েছে। ভালো ছিল আপনার রিভিউটি
জ্বী ভাইয়া বৃদ্ধাশ্রমের অনেক কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। সেসব মানুষের কষ্টগুলো তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
উপস্থাপনটা খুবই চমৎকার ছিল আর নামটা খুবই ইন্টারেস্টিং, আমি খানিকটা রিভিউ করলাম এতে ভাবলাম মুভিটা আমার দেখা উচিত, আশা করি খুব শীঘ্রই আমি এই মুভিটা দেখে নিব।
সত্যি ভাইয়া মুভিটির নাম বেশ ইন্টারেস্টিং। তাইতো মুভিটি দেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তবে মুভিটি সত্যি দারুন ছিল।
যেহেতু ১০/১০ রেটিং দিলেন আপু মুভি রিভিউ পোস্টে।আর পুরো কাহিনী পড়ে ভালোই লাগলো।মুভিটি সময় করে দেখে নিব।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।