জেনারেল রাইটিং পোস্ট || বিপদ আসলেই বলে কয়ে আসে না
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।
প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। এই পোস্টের টপিক হচ্ছে বিপদ আসলেই বলে কয়ে আসে না। যাইহোক বিগত দুই দিন খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এককথায় বলতে গেলে খুবই কঠিন সময় পার করেছি। গত পরশুদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাহিরে ছিলাম একটু ব্যক্তিগত কাজে। তো সন্ধ্যার পরপর বাসায় আসার পর, দেখলাম যে আমার ওয়াইফ এর শরীর কিছুটা খারাপ। অর্থাৎ তাকে দেখে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করার পর বললো যে, এমনিতেই শরীরটা কেমন যেনো লাগছে। আমি তাকে বললাম হসপিটালে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে বললো যে একটু পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আমি বললাম ঠিক আছে এবং আমি পোস্ট লেখা শুরু করলাম। কারণ সারাদিনের ব্যস্ততার জন্য পরশুদিন পোস্ট, কমেন্ট কিছুই করতে পারিনি।
দিনের বেলা ভেবে রেখেছিলাম বাসায় গিয়ে পতাকা নিয়ে একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট লিখবো এবং তারপর কমেন্ট করা শুরু করবো। যাইহোক আমি পতাকা নিয়ে পোস্ট লিখে সাবমিট করার পর,ওয়াইফের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে তার শরীরের তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। একটু পরেই দেখলাম যে তার শরীর হঠাৎ করে কাঁপুনি দিচ্ছে এবং সে চোখ খুলতে পারছে না। তাছাড়া ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো না এবং কথাও বলতে পারছিলো না। আমি কয়েকবার জোরে জোরে ওয়াইফ এর নাম ধরে ডাকার পরেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। এতে করে তো আমি পুরোপুরি ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর আমি মা'কে ডাক দিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম যে তখনই হসপিটালে ভর্তি করবো। আমি আমার শ্বাশুড়িকে ফোন দিলাম আমাদের বাসায় আসার জন্য। তারপর আমি এবং আমার মা, আমার ওয়াইফকে ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামালাম। এরইমধ্যে দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি এসেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।
আমার ওয়াইফের কোনো সাড়াশব্দ নেই বলে আমরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। হসপিটাল আমাদের বাসা থেকে একেবারে কাছাকাছি হওয়ায়,৫/৬ মিনিটের মধ্যেই হসপিটালে পৌঁছে গেলাম। তারপর ইমারজেন্সি তে নিয়ে গিয়ে সাথে সাথে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হলো এবং ব্লাড প্রেসার মাপা হলো। ব্লাড প্রেসার মাত্র ৫০/৮০ আসলো। মানে ব্লাড প্রেসার একেবারেই লো হয়ে গিয়েছিল। তবে পালস রেট অনেকটা স্বাভাবিক ছিলো। এমনিতে ওয়াইফের ব্লাড প্রেসার লো থাকে। কিন্তু এতো লো কখনোই হয়নি। তখন রাত ৯.৩০ টা বাজে। আমি খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম কোনো গাইনী ডক্টর তখন আছে কিনা। কারণ আমার ওয়াইফ চার মাসের প্রেগন্যান্ট এবং সে টুইন বেবি কনসিভ করেছে। সেজন্য তার ট্রিটমেন্ট বুঝেশুনে করাতে হবে। তো গাইনী ডক্টর অপারেশন থিয়েটারে ছিলো তখন এবং ওয়াইফকে সেই ডক্টর দেখে স্যালাইন এবং ইনজেকশন লিখে দিলো ও হসপিটালে ভর্তি করাতে বললো।
এই ডক্টর আমাদের পরিচিত ছিলো। এই ডক্টর আমার ওয়াইফকে এক বছর চিকিৎসা করেছিল এর আগে। যাইহোক আমরা এখন যে ডক্টরকে দেখাচ্ছি,সেই ডক্টরকে আমি ফোন দিয়ে সবকিছু খুলে বললাম এবং কি কি ইনজেকশন এবং স্যালাইন লিখে দিয়েছে, সেটাও উনাকে বললাম। উনি বললো সব ঠিক আছে এবং পরের দিন উনার কাছে নিয়ে যেতে বললো। তারপর আমি দুই ডক্টরকে ফোনে কথা বলিয়ে দিলাম। কারণ ব্যাপারটা খুব সেনসেটিভ ছিলো। যাইহোক হসপিটালে ভর্তি করিয়ে কেবিনের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পর স্যালাইন এবং অক্সিজেন দেওয়া হলো। মোটামুটি ঘন্টা খানেক পর ওয়াইফ কথা বলা শুরু করলো এবং কিছুটা সুস্থ বোধ করতে লাগলো। হসপিটালে তো আমাদের আত্মীয় স্বজন ভরে গিয়েছিল। মিনিমাম ১৫/২০ জন তো গিয়েছিল। যাইহোক একটু পর ডক্টরের সাথে যোগাযোগ করে নার্স আমাদেরকে কয়েকটি টেস্ট করতে বললো এবং কিছু মেডিসিন খেতে বললো। কিন্তু আমরা কিছুই করাইনি। শুধুমাত্র ২টা স্যালাইন শরীরে পুশ করা হয়েছে এবং অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল।
কারণ আমাদের প্ল্যান হচ্ছে পরের দিন সেই হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে, আমরা যে গাইনী ডক্টরের কাছে চেক-আপ করাই সেখানে চলে যাবো। যাইহোক গতকালকে বেলা ১১ টার পর আমরা হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। তারপর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চাষাড়া শাখায় চলে গেলাম। এরপর ডক্টর দেখালাম এবং সবকিছু খুলে বললাম। ডক্টর কিছু মেডিসিন লিখে দিলো এবং এনটি স্ক্যান করে উনাকে রিপোর্ট দেখাতে বললো। তারপর টেস্ট করে রিপোর্ট দেখানোর পর বললো ২ বেবি সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। এটা শুনে অনেক বড় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলাম। কারণ ওয়াইফের উপর অনেক বেশি ধকল গিয়েছে হসপিটালে ভর্তি করানোর আগ পর্যন্ত। যাইহোক এরপর আমরা বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর বাসায় আসলাম। এখন ওয়াইফ অনেকটা সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা সবাই আমার ওয়াইফ এবং অনাগত দুই সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা আমার ওয়াইফ এবং যমজ সন্তানকে সুস্থ রাখে এবং সুস্থ সন্তান আমাদেরকে দান করেন।
পোস্টের বিবরণ
ক্যাটাগরি | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @mohinahmed |
ডিভাইস | Samsung Galaxy S9 Plus |
তারিখ | ৫.১২.২০২৪ |
লোকেশন | নারায়ণগঞ্জ,ঢাকা,বাংলাদেশ |
বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি এইচএসসি/ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর, অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে এবং গান গাইতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹
ডেইলি টাস্ক প্রুফ:
X-promotion
আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে।হঠাৎ করেই বিপদ চলে আসে।মা ও বেবি সুস্থ আছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি এই সময় টা মেয়েদের জন্য অনেক কষ্টের।দোয়াকরি যেন সব সময় সুস্থ থাকে।
হঠাৎ করে এমন একটা বিপদ আসবে,সেটা কল্পনাও করিনি। যাইহোক এভাবে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
প্রথমে ভাবীর জন্য অনেক অনেক দোয়া ও সুস্থতা কামনা করি। এমন অবস্থায় তার পাশে একাধিক মানুষ থাকতে হবে এবং তার শরীর তো যথেষ্ট দুর্বল যা বুঝতে পারছি তাই আপনাকে সময় দিতে হবে। আপনি পতাকা নিয়ে পোস্ট সাবমিট করার মুহূর্তে লক্ষ্য করলেন ভাবীর এমন অবস্থায় আপনি দ্রুত হসপিটালে নিয়েছেন যেন ভালো লাগলো। তবে ভাইয়া রিলিজ পেয়েছেন বাসায় নিয়েছেন এখন থেকে অনেক অনেক যত্ন রাখেন। আলহামদুলিল্লাহ বাবু ভালো রয়েছে দোয়া করি সুস্থ সবল ভাবে যেন মহান সৃষ্টিকর্তা দুনিয়ার বুকে তাদের প্রেরণ করেন এবং মায়ের কোলে হাসিখুশি ভাবে বেড়ে ওঠে, সেই কামনা রইল।
হ্যাঁ ভাই তার পাশে আসলেই বেশ কয়েকজন মানুষ থাকতে হবে। শরীর একেবারেই দুর্বল। যাইহোক যথাযথ মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
হ্যাঁ ভাইয়া বিপদ আসলে বলে আসে না। আর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তো অনেক চিন্তা বেড়ে যায়। তবে আপনার ওয়াইফ অসুস্থ শুনে খুব খারাপ লাগলো। ভাইয়া কোন মানুষের যদি ব্লাড ৫০ থেকে ৮০ তে নেমে যায় তাহলে তো শরীর একদম দুর্বল তার। ডাক্তার দেখিয়েছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ভালোই করেছেন। তবে আপনার ওয়াইফের জন্য অনেক দোয়া রইল। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ রাখে এবং তার ভবিষ্যৎ টিকে ও সুস্থ রাখে।
ব্লাড প্রেসার এতোটা কমে গিয়েছিল বলেই তো সমস্যা হয়েছিল ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা ভাইয়া আপনার জন্য ভাবীর যখন বেবি কনসিভ করার জন্য চিকিৎসা চলছিলো আমি জেনারেল চ্যাটে আপনাকে বলেছিলাম টেনশন করিয়েন না সৃষ্টি কর্তা চাইলে দুটো বেবি একবারে দিতেও পারে আর আজকে টুইন বেবি কনসিভ করেছে ভাবি জেনে খুব খুশী হলাম।ভাবি হঠাৎ অসুস্থ হয়েছিলো জেনে খুব খারাপ লাগলো।ভাগ্যিস খুব তারাতারি হাসপাতালে নিয়েছিলেন।এখন ভাবি কিছু টা ভালো আছে জেনে ভালো লাগলো।অধিক যত্ন নিতে হবে ভাবির।শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
হ্যাঁ আপু আপনি বলেছিলেন টুইন বেবি হতে পারে। আপনার কথা একদম মিলে গিয়েছে। এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।