সেও আমাকে ভালোবেসেছিলো তবে আমার থেকে একটু কম।
আজ - ১৮ ই জ্যৈষ্ঠ |১৪৩২ বঙ্গাব্দ, | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি, যা পরিমাপযোগ্য নয়। কেউ হয়তো চোখে-চোখে কথার চেয়ে অনেক বেশি বলে দেয়, আর কেউ হয়তো মুখে অনেক কিছু বলেও হৃদয়ের গভীরে তা ধরে রাখতে পারে না। ভালোবাসা যখন একতরফা হয়, তখন সেটা কষ্টের, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের সেই সম্পর্কগুলো যেখানে দুইজনই ভালোবাসে, কিন্তু একজন আরেকজনের চেয়ে একটু কম।
এই লেখার শিরোনামটা কোনো কবিতার লাইন নয়, বরং এক বাস্তব জীবনের টুকরো কথা — “সেও আমাকে ভালোবেসেছিলো তবে আমার থেকে একটু কম।” এ কথাটির মধ্যে আছে এক তীব্র বাস্তবতা, এক নিরব বেদনা, আর এক অসম প্রেমের ছায়া।
রিমি ও রাফির ( ছদ্দ নাম) প্রেম হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। দুজনেই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ত, একই ক্লাসে, একসাথে প্রজেক্ট করত, আর ধীরে ধীরে বন্ধুত্বটা রূপ নেয় এক অন্যরকম অনুভবের দিকে। রিমি ছিল একটু চঞ্চল প্রকৃতির, প্রাণবন্ত, সবকিছুতেই খুঁটিনাটি যত্ন নেয়, আর রাফি ছিলো শান্ত, সংযত, একটু গম্ভীর ধরণের মানুষ। কিন্তু এই ভিন্নতা থেকেই যেন দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
রিমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, সে রাফিকে শুধু বন্ধু হিসেবে দেখতে পারছে না। তার প্রতি একটা গভীর টান অনুভব করে সে। একদিন সাহস করে রিমি নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে দেয় রাফিকে। রাফি তখন চুপ করে ছিল কিছুক্ষণ, তারপর বলেছিল,
"রিমি, আমি জানি না এটা প্রেম কিনা, কিন্তু আমি তোকেও অনেক পছন্দ করি। তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে গেছিস।"
রিমির জন্য এটা ছিলো স্বপ্নপূরণের মতো মুহূর্ত। সে বিশ্বাস করেছিল, সময়ের সাথে সাথে রাফিও তাকে ঠিক তার মতো করেই ভালোবাসবে।
প্রথম দিকটা ছিল অসাধারণ। একসাথে সময় কাটানো, ক্লাসের ফাঁকে চায়ের দোকানে আড্ডা, রাতে ফোনে গল্প — যেন সময় থেমে যেত দুজনের জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে রিমি বুঝতে শুরু করে, রাফির ভালোবাসা হয়তো তার ভালোবাসার মতো গভীর নয়।
রাফি কখনোই ‘আমি তোকে ভালোবাসি’ বলতো না, কিংবা বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু করতো না। রিমি ভেবেছিল, সে হয়তো এক্সপ্রেস করতে জানে না। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, ততই অনুভব করে—এই সম্পর্কটায় সে একাই বেশি দিচ্ছে, একাই বেশি চেষ্টা করছে, আর একাই বেশি ভালোবেসে যাচ্ছে।
রাফি হয়তো কখনো রিমিকে কষ্ট দিতে চায়নি। সে থেকেছে, দেখা করেছে, সময় দিয়েছে, কিন্তু সেই চেষ্টাটা, সেই আগ্রহটা যা রিমির ভেতর ছিল, তা রাফির মধ্যে ছিল না। ধীরে ধীরে রিমি বুঝে যায়—সে সত্যিই ভালোবাসে, রাফিও ভালোবাসে, তবে তার চেয়ে একটু কম।
একদিন রিমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, জ্বর, দুর্বলতা । বিছানা থেকে উঠতেও পারছিল না। সেইদিন রাফি এসেছিল, কিন্তু আধাঘণ্টার বেশি থাকেনি। অফিসে জরুরি মিটিং বলে চলে যায়। রিমি চোখের পানি লুকিয়ে বলেছিল , ঠিক আছে, তুমি যাও,
রাফি বুঝেছিল হয়তো, কিন্তু থেকেও যায়নি। সেদিন রিমি অনুভব করেছিল, সে থাকলে হয়তো সবকিছু ফেলে রাফির পাশে থাকত, কিন্তু রাফির কাছে সে প্রাধান্য পায় না সেভাবে।
রাফির ভালোবাসা খাঁটি ছিল, কিন্তু গভীরতা ছিল সীমিত। সে অভ্যস্ত ছিলো নিজের মতো থাকার, নিজের জায়গায় কমপ্রোমাইজ না করার। রিমি ধীরে ধীরে অনুভব করেছিল, সে এভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।
ভালোবাসা কেবল বলা বা অনুভব করার বিষয় নয়, ভালোবাসা মানে দায়িত্ব নেওয়া, আগলে রাখা, একে অপরের অনুভূতির প্রতি যত্নবান হওয়া। রাফি ভালোবাসত ঠিকই, কিন্তু সে ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার বানাতে পারত না। আর রিমি? সে তার স্বপ্ন, সময়, আবেগ সব কিছু রাফির ওপর নিংড়ে দিয়েছিল।
এই অসম প্রেমের ভারে একদিন সম্পর্ক ভেঙে পড়ে। বিচ্ছেদ হয়েছিল কোনো ঝগড়া ছাড়াই। শুধু একদিন রিমি চুপচাপ বলেছিল,
"তুই আমাকে ভালোবেসেছিস, আমি জানি। কিন্তু তুই যতোটা পেরেছিস, আমি তার চেয়েও অনেক বেশি দিয়ে ফেলেছি। আর এখন আমি ক্লান্ত।"
রাফি চুপ ছিলো, চোখ নামিয়ে রেখেছিল। হয়তো তার কাছেও কিছু উত্তর ছিল না।
সত্যি যে ভালোবাসা অনেক কঠিন জিনিস --------
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community