reels আশক্তি ।

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago (edited)

আজ - ১৯ ই জ্যৈষ্ঠ |১৪৩২ বঙ্গাব্দ, | বর্ষাকাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

45450acb-ef28-41d1-855c-351103b9af4b.jpg.png

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনে ডিজিটাল মিডিয়ার গুরুত্ব যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে আমাদের ওপর তার প্রভাব। সোশ্যাল মিডিয়া এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী একটি উপাদান হলো রিলস ভিডিও। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব শর্টসসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত এই ১৫-৩০ সেকেন্ডের ভিডিওগুলো আমাদের অনেকের কাছেই এখন প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এই ক্ষণস্থায়ী ভিডিওগুলো ধীরে ধীরে আমাদের সবচেয়ে বড় একটি আসক্তিতে রূপ নিচ্ছে।

প্রথমে রিলস ভিডিওকে আমরা দেখেছি মজা করার জন্য। নাচ, গান, কৌতুক, মেকআপ টিপস, রান্না, ভ্রমণ — সবকিছু খুব সংক্ষিপ্ত আকারে আমাদের চোখের সামনে উঠে আসে। কিন্তু দিনে দিনে মানুষ এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, এটি একটি অভ্যাস থেকে আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।

আজকের দিনে একজন তরুণ বা কিশোর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই যদি স্মার্টফোন হাতে নেয়, তাহলে তার প্রথম ক্লিক থাকে ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে। একটু রিলস দেখতে গিয়ে কখন যে ৩০ মিনিট, এমনকি ১ ঘণ্টা কেটে যায়, তা সে নিজেই টের পায় না। এই ‘স্ক্রলিং’-এর অদ্ভুত চক্রে পড়ে আমাদের মন এবং সময় দুটোই ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে।

সময়ই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু রিলস ভিডিও সেই সময়কে যেন নিঃশব্দে খেয়ে ফেলছে। আমরা অনেকেই ভাবি — "শুধু ১টা ভিডিও দেখবো", কিন্তু এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, দশম — এভাবে চলতে থাকে। এই 'ডুম স্ক্রলিং' বা অবিরাম স্ক্রল করার প্রবণতা আমাদের সময় ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ভেঙে দিচ্ছে।

একজন শিক্ষার্থী হয়তো একটু বিরতি নেবে বলে রিলস দেখতে বসে, কিন্তু পড়ে থাকে ১ ঘণ্টা। একজন কর্মজীবী মানুষ হয়তো বিরতিতে রিলস দেখতে গিয়ে অফিসিয়াল কাজ ভুলে যায়। এর ফলে কর্মদক্ষতা কমে, মানসিক চাপ বাড়ে এবং কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

রিলসের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত অন্যদের ঝকঝকে, সুন্দর, সফল জীবন দেখে ফেলি। এটি একধরনের ‘সামাজিক তুলনা’ তৈরি করে, যার ফলাফল অনেক সময় হয় হীনমন্যতা। অন্যের চেয়ে পিছিয়ে আছি এই অনুভূতি মানসিক উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এবং হতাশার জন্ম দিতে পারে।

এছাড়াও অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত, চোখের সমস্যা, মস্তিষ্কের উপর চাপ ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের জন্য এটি একজন মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।

রিলস ভিডিওতে ডুবে থাকার কারণে আমাদের চারপাশের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতা কমে গেছে। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় — সবার সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগের জায়গায় চলে এসেছে ভার্চুয়াল বিচ্ছিন্নতা। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে থাকলেও প্রত্যেকের হাতে একটি ফোন, আর তারা ডুবে থাকে নিজের নিজের রিলসে। এর ফলে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত রিলস দেখার একটি মারাত্মক ক্ষতি হলো — এটি আমাদের সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করছে। আগে যেসব সময় আমরা বই পড়তাম, ছবি আঁকতাম, গান শিখতাম, গল্প লিখতাম, এখন সেই সময়টুকু চলে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখায়। মস্তিষ্ক চিন্তা না করে শুধু গ্রহণ করতে করতে অলস হয়ে পড়ে, যার ফলে সৃজনশীলতা ও নতুন কিছু শেখার আগ্রহ কমে যায়।

না, রিলস ভিডিও নিজের মধ্যে অনেক ভালো দিকও ধারণ করে। অনেক সময় ছোট ছোট ভিডিওতে আমরা নতুন কিছু শিখতে পারি — যেমন: রান্নার রেসিপি, মাইক্রো-লেসন, মোটিভেশনাল টক, হেলথ টিপস ইত্যাদি। অনেক তরুণ শিল্পী, উদ্যোক্তা এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য এটি একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

সঠিকভাবে ব্যবহার করলে রিলস হতে পারে শেখার এক চমৎকার মাধ্যম। এটি আমাদের অনুপ্রেরণা, তথ্য ও বিনোদন তিনটিই দিতে পারে — যদি আমরা বুঝে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে এটি ব্যবহার করি।

আমাদের এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই দরকার আত্মচেতনা। আমরা প্রতিদিন কত সময় রিলস দেখতে ব্যয় করি, তা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ফোনের স্ক্রিন টাইম অপশন দেখে প্রতিদিনের সময় সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এরপর ধাপে ধাপে রিলস দেখার সময় কমাতে হবে। সময়ের একটি রুটিন তৈরি করে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারলে রিলস থেকে সময় বাঁচিয়ে সেটি কাজে লাগানো যাবে পড়াশোনা, কাজ, পরিবার বা নিজের উন্নয়নে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো — নির্বাচনমূলক কনটেন্ট দেখা। শুধুমাত্র মজার বা বেহুদা কনটেন্ট না দেখে এমন ভিডিও দেখতে হবে যেগুলো কিছু শেখায়, উদ্বুদ্ধ করে, এবং মানসিক উন্নতি ঘটায়।

এই আসক্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের জীবনধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারি। ডিজিটাল দুনিয়া থেকে আমরা দূরে যেতে পারি না, কিন্তু তার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি।

এখন সময় এসেছে — আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্লেষণ ও সচেতনতার মাধ্যমে আমাদের সময়, মনোযোগ ও জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে ফিরিয়ে আনার।

রিলস ভিডিও আমাদের জীবনে এসেছে বিনোদনের মাধ্যমে, কিন্তু আমরা যদি তার মোহে পড়ে যাই, তাহলে সেটি ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সময়, সম্পর্ক, সৃষ্টিশীলতা — সবকিছুই হারাতে বসেছি আমরা এই আসক্তির ফলে। এখনই সময় সচেতন হবার, নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটার। রিলসকে যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি, তাহলে এটি আমাদের উন্নতির সহায়ক হতে পারে। কিন্তু যদি আমরা তার নিয়ন্ত্রণে চলে যাই, তবে জীবনের সব সম্ভাবনা একে একে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

আমরা বেছে নিতে পারি — রিলস আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, না আমরা রিলসকে নিয়ন্ত্রণ করবো।



সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

1000038736.webp


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 3 months ago 

আমরা অনেকেই ভাবি — "শুধু ১টা ভিডিও দেখবো", কিন্তু এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, দশম — এভাবে চলতে থাকে।

একেবারে যথার্থ বলেছেন ভাই, এমনটা বর্তমানে অনেকের সাথেই ঘটছে। মোটকথা দিনদিন অনেকেই রিলসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। রিলস দেখতে দেখতে সময় যে কিভাবে কেটে যায়, সেটা টেরই পাওয়া যায় না। তবে এতে করে নিঃসন্দেহে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাই ছাত্র ছাত্রীদের উচিত রিলস না দেখা। সময়োপযোগী একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

আপনার লেখাটি বর্তমান ডিজিটাল যুগে রিলস ভিডিও আসক্তির প্রকৃত চিত্র ও তার প্রভাবের ওপর একেবারে সময়োপযোগী ও গভীর বিশ্লেষণ। শুধু বিনোদন নয়, রিলসের আসক্তি আমাদের সময়, মনোযোগ, সৃজনশীলতা এবং সম্পর্কের উপর কতখানি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সেটি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি আপনি বিষয়টির সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের কথাও ব্যাখ্যা করেছেন যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনার মতো সচেতন ও দৃষ্টিসম্পন্ন লেখক আমাদের কমিউনিটিতে থাকায় আমরা সৌভাগ্যবান। ধন্যবাদ এত গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে ভাবনামূলক পোস্ট শেয়ার করার জন্য ।

 3 months ago 

reels আশক্তি সত্যি অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সময়ের সাথে সাথে সবার মাঝে এই reels আশক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই reels আশক্তি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কারণ কিছুক্ষন পর পর টপিক পরিবর্তন হয়ে যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.35
JST 0.033
BTC 115058.36
ETH 4516.05
SBD 0.82