জীবনের ব্যস্ত সময় থেকে একটু বিরতি নেওয়া কি ভুল?
আজ- ১৭ ই শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল ।
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
জীবনের ব্যস্ত সময় থেকে একটু বিরতি নেওয়া কি ভুল? আমাদের সমাজ, শিক্ষা, কর্মজীবন সবকিছুই যেন একটানা দৌড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ছোটবেলা থেকেই শিখি—সময় নষ্ট করা যাবে না, থেমে গেলে পিছিয়ে পড়তে হবে, যারা দৌড়ায় তারাই জয়ী হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দৌড়ে আমরা সত্যিই কোথায় যাচ্ছি? কখনো কি একটু থেমে চারপাশটা দেখি? একটু নিজের দিকে তাকাই? বাস্তবতা হলো, আমরা মানুষ—মেশিন নই। আমাদের শরীর, মন, আবেগ—সবকিছুই বিশ্রাম চায়, একটু শান্তি চায়। দিনের পর দিন কাজের চাপে, দায়িত্বের ভারে, সামাজিক প্রতিযোগিতায় আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, অথচ বুঝতেই পারি না। থেমে যাওয়ার সময়টাকে আমরা অলসতা ভেবে ভুল করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া মানে হলো নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করা, নিজের ভেতরের শক্তিকে ফিরিয়ে আনা। একজন ক্লান্ত মানুষ যেমন দীর্ঘ সময় ভালোভাবে কাজ করতে পারে না, তেমনি জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ঝাপসা হয়ে যায় যখন আমরা বিশ্রামহীন থাকি। কিছুক্ষণের জন্য কাজ থামিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকানো, প্রিয় গান শোনা, পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা নিজের ভেতরের অনুভবগুলোকে প্রকাশ করা—এসবের মাধ্যমে আমরা নিজের ভেতরের ভারসাম্যটা আবার ফিরিয়ে আনতে পারি।
অনেক সময় আমরা ভাবি, "এখন থেমে গেলে কি পিছিয়ে পড়বো না?"—হয়তো সাময়িকভাবে মনে হবে পিছিয়ে পড়ছি, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেখলে দেখা যাবে আপনি আরও গুছিয়ে, শান্তভাবে, স্থির মনে এগিয়ে যেতে পারছেন। পৃথিবীর বড় বড় সফল মানুষদের জীবন দেখলেও দেখা যাবে, তারা প্রত্যেকেই মাঝেমধ্যে থেমেছেন, বিশ্রাম নিয়েছেন, চিন্তা করেছেন—তবেই আবার ছুটেছেন পূর্ণ উদ্যমে। থেমে যাওয়া মানেই পিছিয়ে যাওয়া নয়, বরং থেমে যাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সামনের পথ আরও পরিষ্কারভাবে দেখার সুযোগ। বিরতি নেওয়া আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল আমরা যতই প্রযুক্তি নির্ভর হই না কেন, আমাদের মন ঠিকই অনুভব করে ক্লান্তি, চাপ, অস্থিরতা। এই কারণেই আজকে এত বেশি মানুষ ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি বা বার্নআউটের শিকার হচ্ছে। এসব সমস্যার পেছনে অন্যতম কারণ হলো নিজেকে সময় না দেওয়া, নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করা। একটু থেমে গেলে আমরা নিজেকে জানতে পারি, নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারি, নিজের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ পাই।
বিরতি মানে সব কিছু ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাওয়া নয়। এটা হতে পারে দিনের কিছুটা সময় ফোন বন্ধ রাখা, এক কাপ চা নিয়ে নিজের জন্য ১০ মিনিট সময় বের করা, কিংবা ছুটির দিনে প্রিয় গান শোনা বা বই পড়া। এই ছোট ছোট কাজগুলোই জীবনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। আমরা যতই ব্যস্ত হই না কেন, আমাদের ভেতরের মানুষটা যেন ভালো থাকে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন মানসিকভাবে সুস্থ মানুষই পারে সমাজে, পরিবারে, কর্মস্থলে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যত দ্রুতগতির হয়ে যাচ্ছি, ততই হারিয়ে ফেলছি আমাদের মানবিক দিকগুলো। তাই মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত—এই দৌড়টা কি শুধুই অর্জনের জন্য, না কি বেঁচে থাকার জন্যও কিছু দরকার?
জীবন মানেই শুধু দৌড় নয়, জীবন মানে অনুভব, সম্পর্ক, প্রশান্তি, ভালোবাসা। আর এই অনুভবগুলো টিকিয়ে রাখতে মাঝেমধ্যে একটু বিরতি নেওয়া জরুরি। এটি কোনো ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মচর্চা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। যারা নিজেকে ভালোবাসে, তারাই জানে কখন থামতে হয়, কখন আবার শুরু করতে হয়। তাই যদি কখনো মনে হয় ক্লান্ত, দিশেহারা—তাহলে নির্দ্বিধায় একটু থেমে যান, নিজেকে সময় দিন, ভালো কিছু করুন, প্রিয় মানুষদের পাশে থাকুন। নিজের মনকে বলুন—এই থেমে যাওয়া আমার জন্য, আমার আগামী দিনের জন্য, আমার জীবনের ভারসাম্যের জন্য। মনে রাখবেন, আপনি জীবনের দৌড়ে জয়ী হবেন তখনই, যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসতে শিখবেন। সুতরাং, জীবনের ব্যস্ত সময় থেকে বিরতি নেওয়া কোনো ভুল নয়—এটা একটি চেতনা, একটি সাহসী সিদ্ধান্ত, যা আপনাকে আরও পূর্ণ করে তুলবে।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
ব্যস্ততার মাঝে আমরা নিজেদের অস্তিত্বগুলো হারিয়ে ফেলি। কাছের মানুষদের থেকে দূরে চলে যাই। সব ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে সবাইকে সময় দেওয়া উচিত। তাহলে সম্পর্ক ভালো থাকবে এবং মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যাবে।