বে ওয়ান ক্রুজ জাহাজে ঘুরতে যাওয়া ।
আজ -৮ য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আজকের বিকেলটা যেন দীর্ঘ এক অপেক্ষার পর আসা প্রশান্তির মতো ছিল। অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছিল, একটা দিন দরকার—যেখানে না থাকবে ব্যস্ততার তাড়া, না থাকবে দিনের হিসাব-নিকাশ। ঠিক এমন এক সময়েই সিদ্ধান্ত নিই বের হয়ে পড়বো একটু সমুদ্রের দিকে, আর সেই উপলক্ষেই যাওয়া হলো চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি এলাকায়, যেখানে বে ওয়ান ক্রুজ জাহাজে চড়ার অভিজ্ঞতা জীবনের আরেকটি সুন্দর অধ্যায় হয়ে উঠল।
আমার বাসা থেকে নেভাল একাডেমি বেশ খানিকটা দূরে হলেও আজ যেন সেই দূরত্বটুকুও কোনো ক্লান্তি এনে দিতে পারেনি। রাস্তায় যেতে যেতে জানালার বাইরে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, কোনো এক অজানা মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি—যেখানে শহরের কোলাহল নেই, শুধু প্রশান্ত এক অনুভব অপেক্ষা করে আছে। নেভাল একাডেমিতে পৌঁছে যখন বে ওয়ান ক্রুজ জাহাজে উঠলাম, মনে হলো, এই তো আমি ঠিক সেই জায়গায়, যেটার জন্য আমার ভেতরে এতদিন ধরে একটা হাহাকার ছিল। বিশাল জলরাশির বুক চিরে জাহাজটা যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিল, চারপাশটা যেন একধরনের নীরব সৌন্দর্যে মোড়ানো ছিল।
সোনালি বিকেলের আলো পড়ছিল পানির গায়ে, বাতাস ছিল হালকা ঠাণ্ডা, আর দূরে দেখা যাচ্ছিল অসীম সমুদ্রের রেখা—যেখানে আকাশ আর জল এক হয়ে মিশে গেছে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম জাহাজের রেলিংয়ে, একা, চুপচাপ, আর মনে হচ্ছিল—এই মুহূর্তটা আমার নিজের, একান্ত আমার। আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল, কারো হাতে ফোন, কেউ সেলফি তুলছিল, কেউ আবার চুপচাপ বসে ছিল নিজের মতো করে; কিন্তু আমার কাছে যেন সময় থেমে গিয়েছিল।
আমি কেবল তাকিয়ে ছিলাম সামনে, সেই অসীম জলের দিকে, আর শুনছিলাম ঢেউয়ের নরম শব্দ, বাতাসের ঝিরঝিরে ছোঁয়া। এই অনুভব ঠিক বলে বোঝানো যায় না—এটা কেবল হৃদয়ে অনুভব করা যায়। সেই মুহূর্তে আমি বুঝেছিলাম, কেন মানুষ সমুদ্রের কাছে গিয়ে অনেক সময় কেঁদে ফেলে, কিংবা কেন কোনো নীরব বিকেল মনের গভীরতম কষ্টগুলোকে হালকা করে দেয়। বে ওয়ান ক্রুজে কাটানো এই সময়টুকু যেন আমার ক্লান্ত আত্মার জন্য একটা পরম প্রশান্তির সন্ধান ছিল।
নেভাল একাডেমির সুশৃঙ্খল পরিবেশ, রোদমাখা জাহাজের ছাদ আর সেই অপার জলরাশির মাঝে দাঁড়িয়ে আমি যেন নিজের ভেতরেই একটু ঘুরে এলাম। দিন শেষে মনে হচ্ছিল—আমরা সবাই ব্যস্ত থাকতে থাকতে নিজেরাই ভুলে যাই, একটুখানি নিঃশ্বাস দরকার, একটু নিজের মতো করে বাঁচা দরকার। আজকের বিকেলটা তাই শুধু একটি ঘোরাঘুরির গল্প না, এটা ছিল একটা আত্মার পুনর্জাগরণের গল্প। হয়তো এই মুহূর্তগুলো বারবার আসে না, কিন্তু এমন একবারের স্পর্শও যে মনের ভেতর দীর্ঘকাল ধরে শান্তির মতো বাজতে থাকে, সেটা আজ আমি নিজের মধ্যেই টের পেলাম।










This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
লেখাটা পড়েও একধরনের প্রশান্তি অনুভব করলাম। না গিয়েও উপলব্ধি করতে পারলাম আপনার অনুভব করা শান্তিটুকু।
আসলে মাঝেমধ্যে সবারই এভাবে সময় কাটানো উচিত। একেবারে নিজের মতো করে। এতে করে মনটা একেবারে ফ্রেশ হয়ে যায়। একসময় বিকেলে মাঝেমধ্যে আমারও জাহাজে চড়া হতো। কিন্তু এখন আর সেটা হয়ে উঠে না। যাইহোক ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। এককথায় দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন আপনি। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।