বিকৃত বধ | পর্বঃঃ ০৪ | ধারাবাহিক থ্রিলার গল্প | মেহেদী হাসান রাব্বী
গল্পঃ #বিকৃত_বধ।
পর্বঃ ০৪
লেখকঃ মেহেদী হাসান রাব্বি
রাফি এই কয়দিনে আফসানার সাথে বেশ ভাব জমিয়েছে। যদিও মেয়েটা তার থেকে বয়সে বড় তবুও কেন জানি আফসানাকে রাফির বেশ ভালো লাগে। আফসানা সব সময় বোরকা পড়ে। হাতে-পায়ে মৌজা, চেহারায় মুখোশ তাকে অন্যান্য নারী থেকে আলাদা করে রাখে। তারা দুজনেই প্রতিদিন সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটতে যায়। আফসানা হাঁটা শেষ হলে অফিসে চলে যায় এবং রাফি মামুর জন্য সেখানে অপেক্ষা করে।
রাফি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসলে চলে যায়। আফসানার সামনে নিজেকে খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করা তার এখন একটা শখে পরিণত হয়েছে। আফসানার নীল রঙ প্রিয়। তাই আজ রাফি নীল রঙের একটি জিন্সের প্যান্ট, উপরে নীল রঙের ফুল স্লিভ শার্ট এবং চোখে সানগ্লাস পড়ে নিলো। এই সাজগোজে তাকে হলিউডের কোন সুপারস্টার থেকে কম লাগছে না। দরকারি সকল জিনিসপত্র ব্যাগের মধ্যে ভরে রওনা দিলো।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আফসানা। আফসানা বরাবরের মতো বোরকা পড়া। রাফির আবার তাকে এভাবে দেখতেই বেশি পছন্দ। আফসানা হাত নাড়িয়ে সম্বোধন করল রাফিকে। তবে আজকে আফসানা একা ছিল না। আজকে তার সাথে রাফির বয়সী একজন ছেলেও ছিল।
"রাফি, এই হলো আমার খালাতো ভাই, শুভ। এবার মেট্রিক পরীক্ষা দেবে।"
ছেলেটা আফসানার ছোট ভাই দেখে রাফির মনে অজান্তেই যেন একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।
"ও আচ্ছা। তোমার ছোট ভাই। হ্যালো শুভ, আমি রাফি।"
শুভর সাথে হাত মিলাতে মিলাতে বলল রাফি।
তারা তিনজনই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করল। হাঁটা চলার মধ্যে আফসানা বারবার রাফির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। রাফিও কম যায় না। আফসানা একবার তাকালে রাফি তাকায় দুইবার। শুভর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তাদের দুজনের মাঝখানে নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঝামেলায় পরেছে। সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত সময় কাটানোর পর তাদের যাওয়ার সময় হয়ে এলো।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে বেড়িয়ে রাফি আফসানা এবং শুভকে দুটো আইসক্রিম গিফট করলো। প্রথম আইসক্রিম আফসানার হাতে দিয়ে পরবর্তী আইসক্রিমটা শুভর হাতে দেবে এমন সময় রাফি অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করলো। শুভর হাত কিছুটা কাটা। অনেকটা ছুরির আঘাতের মতো।
"এখানে কী হয়েছে?" সেই স্থানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল রাফি।
"গোয়েন্দার চোখ দেখি কিছুই এড়ায় না।" হাসিমুখে বলল আফসানা।
"এটা তেমন কিছু না ভাইয়া। স্কুলে একবার ঝামেলা হয়েছিল। সেখান থেকেই এই আঘাতটা পাওয়া।" বলল শুভ।
"কিন্তু আঘাতটা তো মনে হচ্ছে কমপক্ষে একমাস আগের হবে।"
"হ্যাঁ ভাইয়া। ওই তো একমাস আগেই ঝামেলা হয়েছিল। ঠিক এক মাস না। দেড় মাস আগে ঝামেলাটা হয়েছিল।"
"ও আচ্ছা।"
"কী মিস্টার গোয়েন্দা, প্রশ্ন করা শেষ?" হাসি মুখে প্রশ্ন করলো আফসানা।
"আরে না, না। তেমন কিছু না। এমনি জানার জন্য প্রশ্ন করলাম।"
"কত কিছুই তো জানতে চাও, শুধু জানতে চাও না একটি কথা।" বলল আফসানা।
"কী বললে তুমি?" প্রশ্ন বলল রাফি।
"না, না। কিছু না। আমি চলি রাফি। আবার আগামীকাল দেখা হবে।"
আফসানা এবং শুভ দুজনেই চলে গেলো।রাফি এক দৃষ্টিতে আফসানার দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে দেখা যায়। আফসানা অদৃশ্যমান হওয়ার পরে সে তার মামুকে ফোন দিল। প্রতিদিন মামু ভাগ্নের গন্তব্য এখান থেকেই শুরু হয়।
.
.
মামু ভাগ্নে দুজনেই শাহবাগের দিকে এগোতে লাগলো। গতকাল রাতে সেখানেও নাকি হারকিউলিস তার হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
"বুঝলে মামু, হারকিউলিসকে আমি অনেকটা ভূমিকম্পর সাথে তুলনা করি।"
"কীভাবে?" জিজ্ঞেস করল রবি।
"এই দেখো না, ভূমিকম্প হলে কখন হবে, কোথায় হবে তা আমরা জানি না। ঠিক একইভাবে হারকিউলিস এর পরবর্তী হামলা কখন হবে, কোথায় হবে সেটাও জানি না। তাই হারকিউলিস অনেকটা ভূমিকম্পের মতনই।"
রবি হেসে দিল।
"তা ঠিক বলেছিস রে ভাগ্নে।"
"ভূমিকম্পের সাথে হারকিউলিসকে মিলালে আরো একটা জিনিস আমরা পাই মামু।"
"কী সেটা?"
"ভূমিকম্পের কারণ আমরা জানি। আর একইভাবে হারকিউলিসের হত্যার কারণ আমরা জানি।"
"ভালো বলেছিস ভাগ্নে। আমার সাথে থাকতে থাকতে তোর মাথাটা একটু খুলেছে দেখা যাচ্ছে।" রাফির মাথায় একটি টোকা দিয়ে বলল রবি।
"হ্যাঁ, হয়েছে। তোমার আর মাথা। ঠিক যেন শীতকালে কাঁঠালের আশা করার মত। সবসময় পাওয়া যায় না।"
হাঁটতে হাঁটতে মামু ভাগ্নে দুজনেই একটি দোতলা বাড়ির সামনে চলে আসলো। পুলিশ প্রটোকল দিয়ে ঘেরা বাড়িটির সামনে এসপি তরিকুল ইসলাম তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে। তিনি মামু ভাগ্নেকে নিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকলো। প্রতিবারের মতো এটিও মধ্যরাতের খুন। ইনভেস্টিগেশন এর জন্য রুমে এখন পর্যন্ত কেউ ঢুকতে পারেনি। লাশটা যেরকম আছে সেই রকমই ফেলে রাখা হয়েছে। রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো তারা তিনজন। ঘরে একটি বিছানা, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, ও একটি চেয়ার-টেবিল আছে। টেবিলের উপর বেশকিছু বই ও একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার আছে। লাশের পাশেই একটি রক্তাক্ত গীটার পরে আছে। জয় মোটামুটি গান গাইতো। গানের জন্য এই এলাকায় তার টুকটাক নাম ডাক আছে।
"উফ। ঘরে তো বডি স্প্রের ছড়াছড়ি!" ঘরে ঢুকে নাক সিটকে বলল রাফি।
"আহ রাফি। কাজের সময় এসব না।" বলল এসপি তরিকুল ইসলাম।
রাফি দ্রুত পুরো ঘরের আনাচে কানাচে থাকা সব কিছুর ছবি তুলে নিল। রবি এবং এসপি তরিকুল ইসলাম পোস্টমার্টাম রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে লাগল। রাফির ছবি তোলা হয়ে গেলে ছবিগুলো দেখায় মনোযোগ দিলো। রবি এবং এসপি তরিকুল দুজনেই জয়ের লাশটার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখছে। দরজার পাশে দাঁড়ানো রাফির চোখ একটি ছবিতে যেয়ে আটকে গেলো। জয়ের বিছানা বরাবর টেবিলে একটি মোবাইল ফোন রাখা। ছবিটি দেখে রাফি ঝটপট টেবিলের সামনে যেয়ে ঠিকই একটি মোবাইল ফোন দেখতে পেল। মোবাইলটি ল্যান্ডস্কেপ করে পেছনে বই দিয়ে হেলান দিয়ে রাখা হয়েছে।
"মামু! একটা মোবাইল ফোন আছে এদিকে।"
মোবাইলটি হাতে নিয়ে রবির দিকে তাকালো রাফি। মোবাইলের কথা শুনতে পেয়ে দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়। মোবাইলটি বন্ধ ছিলো। অনেক চেষ্টা করেও মোবাইলটি কেউ খুলতে পারল না।
"আমার মনে হয় মোবাইলটিতে সম্ভবত চার্জ নেই।" বলল এসপি তরিকুল।
চার্জের কথা শুনে রাফি ঝটপট তার পকেট থেকে একটি পাওয়ার ব্যাংক বের করে মোবাইলটিকে চার্জে বসালো। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করার পর মোবাইলটি খুলতে সক্ষম হয় রাফি। মোবাইলটি মামুর হাতে দিয়ে সে বেশ কৌতুহল এর সাথে তাকিয়ে রইল রবির দিকে।
রবি মোবাইলের নানান ফোল্ডারে যেতে লাগলো। তেমন কোন কিছু পাওয়া গেল না।
"গতবারের মোবাইলটির মত এই মোবাইলটিতে অটো কল রেকর্ড হয় না। আর তাছাড়া রাত দশটার পরে কোন কল মোবাইলটিতে আসেনি।" বলল রবি।
"মামু একটা জিনিস খেয়াল করেছো? আমরা মোবাইলটিকে ল্যান্ডস্কেপ ভাবে পেয়েছি। আমরা এভাবে সাধারণত মোবাইলে কোন ছবি দেখি। সম্ভবত জয় নিজের গানের ভিডিও দেখছিল।"
"আরে গানের ভিডিও দেখলে আমাদের কী লাভ হবে?" বলল রবি।
"ঠিক। জয় গান কিংবা মুভি দেখলে তো আমাদের তেমন কোনো লাভ হওয়ার কথা না।" বলল এসপি তরিকুল ইসলাম।
কথা চালিয়ে যাওয়ার সময় রবি মোবাইলটা ঘেটেই চলছে। সকলের কথার মাঝখানে রবি লাফ দিয়ে উঠল।
"ইউরেকা!"
চিৎকার দিয়ে বলল রবি। রবির চিৎকারে আশেপাশের সকলে তার আড় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
"কেউ কোনো কথা বলবেন না! আমি এই ঘরে পিনপতন নিরবতা চাই।"
রবি কথা শেষ করে পেছনে বই হেলান দিয়েবমোবাইলটি টেবিলের উপরে রাখলো। সে ফোন মেমোরিতে বেশ কয়েকটি ফোল্ডার থেকে ভিডিওস নামক ফোল্ডারে যেয়ে রেকর্ড করা একটি ভিডিও ওপেন করলো। ভিডিওটির তারিখ ছিল গতকালের!
ভিডিওটি প্লে করলো রবি
যেহেতু জয় একজন গায়ক, তাই এরই ধারাবাহিকতায় সে মোবাইলে ভিডিও অন রেখে গিটার নিয়ে তিনি গান গাচ্ছিলো। সকলের দৃষ্টি মোবাইলের দিকে। ভিডিওটা ২৪ ঘন্টার। সকলের দৃষ্টি যখন জয়ের গানের দিকে, ঠিক তখনই জানালার পাশ থেকে একটি ছুরি সজোরে তার গলার ভেতর ঢুকে যায়!
ছুরিটি ডান দিক থেকে ছোড়া হয়েছে এবং সেটা ডান দিক বরাবরই গলার মধ্যে আঘাত হানে।
ছুরিটি আঘাত হানার কিছুক্ষণ পরে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে হারকিউলিস! কালো প্যান্ট, কালো মাথার টুপি, সাথে কালো মুখোশ। তার দেহের গঠন অনেকটা হালকা পাতলা। পেছনে সেই ব্যাগটি ঝোলানো আছে। জয় তখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। হারকিউলিস জয়ের দিকে এগিয়ে যেতেই সে ক্যামেরার বাইরে চলে গেল। এরপর আর কিছুই দেখা গেল না। ভিডিও চলছে তার আপন গতিতে। পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ কাটার সময় এবং শরীতে লবন দেওয়ার সময় জয়ের চিৎকার এবং আর্তনাদ সবাইকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলল। তার আর্তনাদ ছাড়াও ভিডিওতে একটি পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল। পুরুষকন্ঠটির মালিক নিজের পরিচয় দিচ্ছিল হারকিউলিস হিসাবে। একই সাথে জয়ের সাথে কী কী হবে তার সারসংক্ষেপ বলছিল। যখন হারকিউলের সব কাজ হয়ে যায়। তারা আরো একবার হারকিউলিসকে ক্যামেরার ফ্রেমে দেখতে পায়। সে দ্রুত জয়ের দোতলা ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে গেল। এর পরের ভিডিওর ফ্রেম একই রকম থাকে। কাজগুলো হয়েছে মাত্র ২০ মিনিটে। আর জয়ের গান রেকর্ড হয়েছিল ৪ মিনিটের। ২৮ মিনিট ভিডিওর ফ্রেমে ভিন্ন ভিন্ন জিনিস ছিল। ২৮ মিনিটের পর থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ভিডিওর ফ্রেমে একই দৃশ্য দেখলো। এরপর হঠাৎ করে ভিডিওটি বন্ধ হয়ে গেল।
রবি মোবাইলটি সাবধানতার সাথে একটি ব্যাগে ভরে ফেলল।
"ভিডিও বন্ধ হওয়ার কারন ছিলো মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া!" বলল রাফি।
"কী বুঝলেন, হারকিউলিস ছেলে না মেয়ে?"
রবি তরিকুল ইসলামের কথায় কান না দিয়ে রাফিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,
"ভাগ্নে, তুই যখন এই রুমে প্রথম প্রবেশ করেছিলি, তখন তুই যেন কী বলেছিলি?"
"বলেছিলাম ঘরটি তো বডি স্প্রের ছড়াছড়ি।"
"এগজ্যাক্টলি! এখানে বডি স্প্রে ইউজ করা হয়েছে। আমি যতটুকু খোঁজ পেলাম ঘর তল্লাশি করে, মোহাম্মদ জয় কখনো বডি স্প্রে ইউজ করে নাই। সে পারফিউম ইউজ করত। কেননা তার ড্রেসিং টেবিলে আমি শুধু পারফিউমের বোতল পেয়েছি। আর ঘরটিতে যেই বডি স্প্রে ইউজ হয়েছে তা অনেকটা এক্স বডি স্প্রের মত। যা সাধারণত মেয়েরা ইউজ করে না। আমার কনক্লুশন, আমি এইটুকু নিশ্চিত যে হারকিউলিস নিশ্চয়ই কোন ছেলে। আর তাছাড়া একটা মেয়ে কীভাবে এতগুলো খুন করবে? হারকিউলিস নিশ্চয়ই কোন ছেলেই হবে। যাই হোক আমরা হারকিউলিসকে ধরার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এসপি সাহেব বাকি দুইটা লাশের তদন্ত করতে হবে আমাদের। চলুন।"
.
.
রাত আটটা।
রবি এবং রফি দুজনে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। তারা আজ মোট তিনটা লাশের তদন্ত করেছে। সকালে জয় এরপর শরিফুল ইসলাম এবং বিকেলে মোহাম্মদ শাহিন। তিনটি তদন্তেই কোন না কোন ক্লু পাওয়া গিয়েছে। শরিফুল ইসলাম এবং শাহিনের লাশেও ওই একই রকমের পারফিউমের ঘ্রাণ পাওয়া গিয়েছে। যার ফলে রবির সন্দেহটা তীব্রভাবে ছেলের উপরে পরছে।
"আচ্ছা মামু, একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না। সেদিনের তদন্তের ক্লু দুটি আমাদের বিশ্বাস করেছিলো হারকিউলিস কোন মেয়ে।"
"একটা জিনিস চিন্তা কর ভাগ্নে। সকালের লাশটা যার নাম জয়, সে কিন্তু ছেলে হয়েও মেয়েদের পারফিউম ইউজ করত। রাইট?"
"হুম, রাইট।"
"তাহলে হারকিউলিস ছেলে হয়ে একটা গোলাপ ফুলের কী হোল্ডার কেন ইউজ করতে পারবে না?"
"খারাপ বলনি তো মামু।"
"এমন তো না যে গোলাপ ফুল শুধুমাত্র মেয়েরাই পছন্দ করে। ছেলেদেরও তো গোলাপ ফুল পছন্দ হতে পারে।"
"এটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু মারার সময় 'উহ' শব্দটার ব্যাপারে কী বলবে?"
"ভুলে যাসনি আমরা কিন্তু শুধু উহু শব্দটাই শুনেছি। যখন আমরা কাউকে মারতে যাবো যাই তখন আমাদের গলার প্রতি নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। হয়তোবা স্বরটা এমনিতেও বেড়িয়ে গিয়েছে। আর কোন ছেলে চাইলেই অনেকটা মেয়েদের মত গলা করতে পারে। আর এটাও হতে পারে ওর গলার প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যার ফলে আঘাত করার সময় ঐ শব্দটা এসেছে। আর এই উহ মানেই যে হারকিউলিস মেয়ে এমন কিন্তু কোন কথা নেই।"
রাফি চুপচাপ তার মামুর কথা শুনছিলো। রবির কথা শেষ হতেই সে বলল,
"আরেকটা জিনিস খেয়াল করো মামু, আমরা আজকে সরাসরি হারকিউলিসের কথা শুনেছি। কিন্তু হারকিউলিসের চেহারা না দেখলেও আমরা তার শরীরের গঠন দেখেছি। তোমার কী মনে হয়, ঐরকম ভারী একটা গলা ওই চিকন চাকন দেহের হতে পারে?"
"কেন পারবে না? তুই যখন হিংস্রভাবে কথা বলবি তখন তোর গলার স্বর পরিবর্তন হতে বাধ্য। হারকিউলিস চায় সকলে তাকে ভয় পায়। এজন্য হয়তোবা তার গলার স্বর একটু ভারী এবং মোটা করে কথাগুলো বলেছে।"
"তাহলে মামু তুমি নিশ্চিত যে হারকিউলিস ছেলে?"
"অনেকটাই নিশ্চিত। এবার দেখতে হবে কে এই হারকিউলিস!"
.
.
রবি এবং রাফি দুজনেই 'মামু ভাগ্নে গোয়েন্দা এজেন্সির' হেডকোয়ার্টার অর্থাৎ রাফিদের বাড়ির পাঁচতলার ছোট কামরার মধ্যে বসে আছে। রবি হাতের মধ্যে একটি এক্স বডি স্প্রে নিয়ে নড়াচড়া করছিল। হঠাৎ কী মনে করে তার হাতেই বেশ কয়েকবার স্প্রে করলো স্প্রেটা।
"কী একটা ঘ্রাণ তাইনা ভাগ্নে? এই স্প্রে দিলে নাকি মেয়েরা তোকে চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলবে। হাহাহা।"
"হাসিও না তো মামু। তুমি আবার কবে থেকে এসব মেয়ে পটানোর স্প্রে নিয়ে ঘুরছো? যতই যা করো মামু, তোমার কপালে মেয়ে নেই।"
"আরে ধুর। এটা দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছি। নাকের মধ্যে ঘ্রাণটা সেট করে নেব। যেন এরপরেই টুক করে ধরে ফেলতে পারি ঘ্রাণটাকে।"
হঠাৎ রাফি কী মনে করে বলল,
"আমি মনে হয় এই ঘ্রাণ আরো কোথাও পেয়েছি।"
"মানে!" হাত থেকে বডি স্প্রের বোতলটি টেবিলে রেখে রাফির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রবি।
"মানে আমি কোথাও না কোথাও এই স্প্রের মতই ঘ্রাণ পেয়েছি। কিন্তু আমার মনে পড়ছে না। আমি কোথাও যেন এই ঘ্রাণ পেয়েছি মামু।"
"ভাগ্নে, ভাগ্নে মনে করার চেষ্টা কর!" অনুনয় বিনয় করে বলল রবি।
রবি চোখ বন্ধ করে মাথার চুলগুলো যেন ছিড়তে শুরু করল। তার উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ যাচ্ছে এই ভেবে রবি তাকে শান্ত হতে বলল।
"থাক, বেশি প্রেশার দিস না। পরে তোর আবার কিছু হয়ে যাবে।"
রাফিকে রেখে রবির ছাদের দিকে রওনা দিলো। ঠিক তখনই রাফি ভাঙাচোরা টেবিল চাপড়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ভাঙাচোরা টেবিলটা দুমড়ে-মুচড়ে পড়লো। ঘরের মধ্যে এরকম শব্দ শুনে রবি দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করতেই রাফি এক চিৎকার দিয়ে রবিকে জড়িয়ে ধরল।
"মামু গো মামু, হারকিউলিসকে পেয়েছি!" নাচতে নাচতে কথাটি বলল রাফি।
"মানে, কো বলছিস এসব?"
"আফসানার ভাই শুভ! হ্যাঁ আফসানার ভাইয়ের শরীরে আমি এই বডি স্প্রের ঘ্রাণ পেয়েছি!"
"সিরিয়াসলি? আফসার ভাইয়ের শরীরে এই ঘ্রাণ পেয়েছিস তুই?"
"আরে মামু হ্যাঁ! শুধু তাই নয়, ওর ভাইয়ের হাতে একটা কাটা দাগ রয়েছে! আমার সাথে হয়ত মিথ্যা বলেছে ও! হয়ত এসব করতে যেয়ে...!"
মামু ভাগ্নে দুজনে দুজনকে ধরে নাচতে শুরু করলো। তবে হঠাৎ একটা সময় মামু নাচা থামিয়ে দেয়। রাফি আগের মতোই রবিকে ধরে নাচতে থাকে। কিন্তু রবির থেমে দেখে রাফি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
"কী হলো মামু? থেমে গেলে যে।"
"একটা জিনিস ভাবছিরে ভাগ্নে।"
"কী জিনিস?"
"আফসানার ভাইয়ের দেহের গঠন কী রকম রে?"
"আরে একদম সেইম। চিকন-চাকন পাতলা। যাক একটা পয়েন্ট মিলল। এবার দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি, তুই কি কখনো ওর গলার স্বর শুনেছিস?"
"হ্যাঁ শুনেছি তো। আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। ওয়েট আ মিনিট! তুমি কী বুঝাচ্ছো মামু?"
"আফসানার ভাইয়ের গলা এবং জয়ের মোবাইলের হারকিউলিসের গলার স্বর কি এক?"
রবির কথা শুনে রাফি আকাশ থেকে পড়ল। মুখে হাসির নিমিষেই মলিন হয়ে গেল।
"না তো। দুজনের গলার ভয়েসই তো আলাদা। আর শুভর গলার ভয়েস তো বাচ্চাদের মত। একদম চিকন চাকন। কিন্তু হারকিউলিসের গলার ভয়েস তো...।"
রাফিকে থামিয়ে দিয়ে রবি ঘর থেকে বের হয়ে একটি সিগারেট জ্বালিয়ে ফুকতে ফুকতে ছাদে চলে গেল। রাফি মনে মনে বলল,
"মামুর কাছে মনে হয় কেইসটা খুব জটিল মনে হচ্ছে। কারন মামু এভাবে বিষণ্ণ মনে সিগারেট তখনই খায়, যখন কেইস গুলিয়ে ফেলে। হারকিউলিস আসলেই কে?"
মনে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে ভাঙা টেবিলটা জোরা দেওয়ার জন্য হাতুরি আর পেরেক নিয়ে কাজে লেগে পড়লো রাফি।
চলবে...........।