একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
রাহুল অনেক ভালো মনের মানুষ সে গ্রামের গরিব দুঃখী মানুষদের পাশে সব সময় দাঁড়ায়। গ্রামের কারো কোন বিপদ হলে সবার আগে রাহুলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সে নিজের বিপদের কথা চিন্তা না করে অন্যকে কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে করা যাবে সেটা নিয়েই ভাবে। তাই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে তার পদচারণা।
স্কুলে বরাবর খুব ভালো রেজাল্ট করায় সবাই রাহুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আশাবাদী। স্কুলের প্রত্যেকটা শিক্ষক লেখাপড়ার ক্ষেত্রে থাকে অনেক সহযোগিতা করে। ফলস্বরূপ এসএসসি পরীক্ষায় সেই স্কুলের টপ রেজাল্ট করে। শুধু তার নিজের স্কুলেই নয় উপজেলা শহরে রাহুলের উপরে কারো নম্বর ছিল না।
এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর নিয়ে পাশ করার পর স্কুলের শিক্ষক ও পরিবারের সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরে কোন ভালো স্কুলে পড়তে যায় রাহুল। শহরে এসে প্রথম এসে খালার বাড়িতে ওঠে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর একটি ভালো মেস কিংবা হোস্টেলে সিট পেলে উঠে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু তার ব্যবহারে খালার বাড়ির সকলে এতটাই মুগ্ধ হয়ে যায় যে তাকে আর হোস্টেলে উঠতে দেয় না। কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই সে কলেজ হোস্টেলে সিট পেয়ে যায়। বরাবরই রাহুল ছিল অনেক ভালো স্টুডেন্ট। তাই তার কলেজ হোস্টেলে সিট পেতে কোন সমস্যা হয়নি। ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে প্রিন্সিপালের স্পেশাল অর্ডারে কলেজ হোস্টেলের সিটের ব্যবস্থা হয়ে যায়।
অথচ নতুন ছাত্র ভর্তি হওয়ার পর সাধারণত এক বছরের মাথায় সিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অথচ একজন ভালো ছাত্রের জন্য কর্তৃপক্ষ কি না করতে পারে। এ বিষয়টির প্রশংসা না করে পাওয়া যায় না। যাইহোক এক্ষেত্রে আর রাহুলের কলেজ হোস্টেলে উঠা হলো না। খালার বাড়ির সকলের কথা রাখতে গিয়ে সেখান থেকেই কলেজে লেখাপড়া চলতে থাকে।
রাহুল খালার বাড়ি থেকে নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করতে থাকে। রাহুলের স্বভাব বাকি ছেলেদের মত কখনোই ছিল না সে কোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকাতো না। কয়েক মাস যাওয়ার পর রাহুল কয়েকটা বিষয়ে বিভিন্ন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এরকম কলেজগুলোতে ছাত্র ছাত্রীরা কখনো শতভাগ শিখতে পারে না।
যাইহোক কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়ার সময় হঠাৎই একটি মেয়ের সঙ্গে চোখে চোখ পড়ে যায় রাহুলের। রাহুল বেশ লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মেয়েটির নাম জ্যোতি। জ্যোতি কলেজের প্রথম থেকেই মনে মনে রাহুলকে পছন্দ করতে শুরু করে। রাহুলেরও প্রথমবারের মতো আজ কোন মেয়েকে ভালো লাগলো কিন্তু তার এই ভালোলাগা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সে কখনো জ্যোতিকে বুঝতে দেয়নি সে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এভাবেই কিছুদিন চলতে লাগলো। এক পর্যায়ে জ্যোতি নিজে থেকেই একদিন রাহুলকে ডেকে নিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানালো। সেদিন কোনো এক কারণে স্যার প্রাইভেট অফ রেখেছিল। সেটা আগে থেকে কাউকে জানানো হয়নি। আর ঐদিন সেই সময়টা তারা সবাই মিলে একসঙ্গে গল্প করেছিল। তারপর একপর্যায়ে জ্যোতি আলাদা করে রাহুলকে দেখে নেয়।
ধীরে ধীরে রাহুলের ভালোবাসা গভীর হতে শুরু করে। রাহুল এবং জ্যোতি দুজনেরই প্রথম প্রেম তাই দুজনের কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। জ্যোতির বাড়ি রাহুলের খালা বাড়ির কয়েকটা পরে সেটা রাহুল আগে জানতো না। যাইহোক এখন সে ভালোভাবেই জানতে পেরেছি। একদিন জ্যোতির বড় ভাই পার্কে রাহুলের সঙ্গে জ্যোতিকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে ফেলে।
ঘটনাটি নাটক, সিনেমা বা কোন গল্পের বইয়ে লিপিবদ্ধ কোন ঘটনার মতো মনে হলেও তা কিন্তু নয়। একদম সত্য ঘটনা এটি আমার চোখের সামনে ঘটেছে। জ্যোতির বড় ভাই ঘটনাটি দেখার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় অসমাপ্ত প্রেমের আসল ঘটনা। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি এইভাবে মোড় ঘুরে যাবে আমরা কখনোই কল্পনা করিনি। একদম অপ্রত্যাশিত ছিল।
এত দ্রুত সবকিছু ঘটে গেছে আমি জানলেও কিছু করতে পারিনি। পরের দিন কলেজ বন্ধ ছিল তাই হয়তো তারা পার্কে কিছুটা সময় বসে কথা বলছিল। বন্ধের দিন রাহুল পার্শ্ববর্তী বাজারে গিয়েছিল টুকিটাকি কিছু বাসার খরচ করতে। সেখানে জ্যোতির বড় ভাই রাহুলকে দেখে ফেলে। সে রাহুলকে ডেকে বাজারের এক পার্শ্বে নিয়ে যায়। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে পকেট থেকে ধারালো ছুরি বের করে।
রাহুল কোন রকমে হাত ফসকে দৌড়ে পালায় জ্যোতির ভাই কয়েকজন সহ তার পিছনে দৌড় দেয়। রাহুল জীবন বাঁচাতে কোন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থাকে। পরবর্তীতে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায় কিন্তু রাহুল বাসায় ফেরেনা। এক পর্যায়ে বিকালে যখন রাহুল বাসার দিকে ফিরতে থাকে তখন হঠাৎ একজন দা দিয়ে হাতে কোপ দেয়। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।
রাহুল হাত চেপে ধরে বাসার সামনে এসে কাঁদতে থাকে আমি কান্না শব্দ পেয়ে বাইরে এসে দেখি এই অবস্থা। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালে নেয়ার পর হাতে কয়েকটি সেলাই দিয়ে ভর্তি করানো হয়। ডক্টর এক দিনের অবজারভেশনে রেখেছে। যদি হাতের নিচের অংশ রং পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে হয়তো সার্জারি করা লাগতে পারে।
আলহামদুলিল্লাহ তেমন কিছু হয়নি। পরের দিন রাহুলকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এদিকে আরো চরম বিপর্যয় অপেক্ষা করছিল। বিকালে কমিশনার ও এলাকার গণ্যমান্য কিছু লোক ডেকেছে রাহুলের বিচারের জন্য। তারা জ্যোতিকে দিয়ে এইটা বলাতে চেয়েছিল রাহুল তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে। কিন্তু জ্যোতি রাহুলকে অনেক ভালোবাসে তাই এটা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু মেয়ের ভাইয়েরা এটা কোনভাবে প্রমাণ করেছে কারণ মেয়ে পক্ষের ক্ষমতা অনেক বেশি আইনে। চরম অপমানিত হয়ে রাহুল এখান থেকে চলে যায়। শুরু হয়ে যায় জ্যোতি ও রাহুলের উল্টো পথ চলা। রাহুল সেই যে চলে গেল এখান থেকে আর শহরে লেখাপড়ার জন্য ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে সে আর অন্য কোথাও ভর্তি হয়নি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
দুঃখ কষ্ট ও অপমান নিয়ে সে সবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম। তাইতো চাকরি নিয়ে চলে যায় অনেক দূরে আর কখনো জ্যোতির মুখোমুখি হয়নি। ফিরে না আসার অনেক বড় কারণ আছে। সেদিনের সেই ঘটনার পর রাহুল তো চলে গেল কিন্তু এদিকে জ্যোতির ভাইয়েরা সাত দিনের মাথায় অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়।
জ্যোতি সেখানেও মন দিয়ে সংসার করতে পারিনা কয়েক মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়। তখন থেকে আজ অবদি সে একাকী জীবন যাপন করছে। ওদিকে রাহুলও কোনদিন আর অন্য মেয়ের দিকে তাকায়নি। দুজন দেশের দুমেরুতে দুজনকে ভেবে কষ্ট পাচ্ছে হয়তো এখনও তারা একে অপরকে ভালবাসে। কিন্তু পরিস্থিতি তাদেরকে আর এক হতে দিচ্ছে না হয়তো আর কখনো সম্ভবও না।
এভাবেই চলছে একটা অসমাপ্ত প্রেমের গল্প। অথচ এর উল্টোটাও হতে পারতো। রাহুল মেধাবী ছাত্র যদি জ্যোতির সঙ্গে তারা বিয়েটা হয়েই যেত তাহলে হয়তো দুজনের জীবন অনেক সুন্দর হতো। একটি প্রেমের সুন্দর পরিসমাপ্তি দেখতে পেতাম। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এরকম সহজটা কেউ মেনে নেয় না।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।