এক অমাবস্যার রাতে গ্রামের রাস্তায়
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
আজকে এত তাড়াতাড়ি বাজার জনশূন্য হয়ে গেছে কেন ভাবছে মনে মনে। ভাবতে ভাবতে দূরে সেই দোকানের কাছে চলে গেল মজিদ। বাজারে একমাত্র এই চাচা রয়েছে যিনি এখন পর্যন্ত দোকান খোলা রেখেছেন। কারণ গ্রামের কিছু লোক কাজ সেরে বাসায় ফেরার সময় তার দোকান থেকে পান বিড়ি কিনে নিয়ে যায়। তাই তারা এত রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা।
চাচার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল মজিদ ধর্মপুর গ্রামে যাওয়ার জন্য কোন রিক্সা বা ভ্যান পাওয়া যাবে কিনা। উত্তরে তিনি বললেন অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে সব আগেই বাসায় চলে গিয়েছে। অনেকদিন পর নানা বাড়ি বেড়াতে এসেছে রাস্তাঘাট ঠিকমতো আছে কিনা তাও জানেনা। যাওয়ার জন্য কোন রিক্সা বা ভ্যান পেলে অনেক সুবিধা হত।
অন্ধকার রাত গ্রামের রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটতেও বেশ ভয় করছে। কিন্তু কি আর করা এতটা পথ এসেছে যখন বাসা পর্যন্ত একাই যেতে হবে এভাবে। মনে ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল মজিদ। গ্রামের রাস্তা দিয়ে এভাবে এত রাতে কখনও একা একা যাওয়া হয়নি তার। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চলছে।
মোবাইলের হালকা আলোয় অন্ধকার কিছুটা কমে আসলো। তাই গ্রামের মেঠো পথ চিনে নিয়ে নানা বাড়ির দিকে রওনা দিল। মনে অনেক ভয় নিয়ে অন্ধকারে পথ চলছে এমন সময় পিছন দিকে কেমন যেন একটা শব্দ শুনতে পেল মজিদ। পিছনে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না শুধু হালকা একটা বাতাস অনুভব করল।
মনের ভুল ভেবে আবার হাঁটা শুরু করল। লোকালয় ছেড়ে সামনে অনেক দূর ফাঁকা জায়গা। এই ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে সামনে যে গ্রাম পাওয়া যাবে সেই গ্রামেই মজিদের নানাবাড়ি। এই জায়গাটা পেরিয়ে যাওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মসজিদের কাছে। কারণ এই জায়গা নিয়ে এর আগে অনেক কিছু ঘটনার খবর তার জানা আছে।
ফাঁকা মাঠের মাঝামাঝি গিয়ে একটি জায়গায় কয়েকটি শিমুল গাছ আছে। গ্রামে কথিত আছে এই জায়গায় রাতের বেলা অপ্রত্যাশিত অনেক ঘটনা ঘটে। এরকম নানান কিছু উদ্ভট চিন্তা তার মনে উঁকি দিচ্ছে।
সামনে একটি মৃত প্রায় নদী আছে সেই নদীর পাশের সরু রাস্তা দিয়ে যেতে হবে মজিদকে। এই জায়গা পার হয়ে কিছুদূর গেলে সেই তিনটি শিমুল গাছ। এই এলাকা পার হলেই মসজিদের নানা বাড়ি গ্রাম। সেখানে পৌঁছতে পারলে সব ভয় কেটে যাবে। গ্রামে ঢুকলে কোন না কোন একজনকে পাওয়া যাবে পথ চলার জন্য।
যাইহোক মনে অনেক কিছু চলছিল মসজিদের। আরো কিছু দূর এগিয়ে হঠাৎ ডান দিকে একই ঝোপের মধ্যে কিছু আওয়াজ পেল। মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি বুঝে ওঠার জন্য মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে ভালো করে দেখে নিল। আলো পেয়ে ঝোপ থেকে দৌড়ে পালালো কি যেন একটা। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখতে পেল একটি শিয়াল।
শিয়াল দৌড়ে পালাতে দেখে সে মনে মনে একটু স্বস্তি পেল। নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেই ঘুরেছে হঠাৎ সামনে দেখে ধবধবে সাদা লম্বা কি যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে। একবার চোখ মেলে তাকায়। পায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু করে যখন দেখে মুখের দিকে তখন সে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত লম্বা ধবধবে সাদা কি যেন একটি।
মসজিদে এতটাই ভয় পায় চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে দৌড়াতে থাকে। তার বুক একদম শুকিয়ে গেছে হাঁপাতে হাঁপাতে শুধু দৌড়াচ্ছে কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এক পর্যায়ে ফাঁকা জায়গা ছেড়ে গ্রামের মাঝে ঢুকে গেল। কিন্তু সে আর নিজের মধ্যে নেই মনে হচ্ছে সে এখনই মরে যাবে।
মজুদ এতটাই ভয় পেয়ে গেল সে দৌড়াতে দৌড়াতে এক জায়গায় হোঁচট খেয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। পরে যখন জ্ঞান ফিরে পেল তখন নিজেকে আবিষ্কার করল বিছানায় শোয়া অবস্থায়। পরে সবার কাছ থেকে শুনতে পেল রাস্তার পাশে এক খাদে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সে। ভোরের আলো ফুটতেই গ্রামের লোকজন তাকে খুঁজে পায়।
মজিদ কে চিনতে পেরে সবাই বাসায় নিয়ে আসে। তারপর যখন সুস্থ হয়ে মজিদ তখন অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। তারপর সবাইকে রাতের ঘটনা বর্ণনা করলো। সবাই শুনে অনেক ভয় পেয়ে গেল। তারপর মসজিদকে বলল আল্লাহর রহমতে তুমি সুস্থ আছো। তুমি রিকশা বা ভ্যান না পেয়ে বাসায় ফোন করতে পারতে। কেউ গিয়ে তোমাকে এগিয়ে নিয়ে আসতো।
মজিদ এখন বিষয়টি বুঝতে পারল কি করে সে এত বড় ভুল করলো কাল রাতে। যখন সে রিক্সা অথবা ভ্যান কিছুই পেল না তখন বাসায় ফোন করলে কেউ তাকে এগিয়ে নিয়ে আসতো। আসলে ভুল যখন হয় এভাবেই হয়। যাইহোক ভয়ানক একটি রাত কাটিয়ে এখন সে নানা বাড়িতে সুস্থ অবস্থায় আছে।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ভূতের ভয় এমন একটা ভয় যে মাথায় ভুত আসলেই চোখের সামনে ভুত উপস্থিত 🤣। এরকম অহরহ ঘটনা ঘঠছে, রাস্তা ফাকা একা একা হাটছি, পিছনে কোন পাখি বা কোন পোকা গাছের ডালে আওয়াজ করলো, আর আমরা ভেবে নিলাম নিশ্চিত ভুত।
আসলে ভুত বলতে কিছু নাই, আছে কিছু খারাপ জ্বীন পরী, খারাপ জ্বনার। আর বর্তমান বন জঙ্গলও আর নাই বললেই চলে। তাই এমন এমন ঘটনা এখন শুধু গল্পতেই আসে বাস্ততবে নাই বললেই চলে।
ভালো লাগলো আপনার মজিদকে নিয়ে সুন্দর আমাবস্যা রাতের গল্প। এরকম ভৌতিক গল্প পড়লে একটু ভয় লাগে বাট বেশ এনজয়ও করি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম