পড়ন্ত বিকালে নিউ টাউন পার্কে

in Incredible India2 years ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

Picsart_23-01-18_21-04-13-658.jpg

গতকাল সারাদিন প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল শৈত প্রবাহের কারণে। ঠান্ডায় একরকম জমে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল। মনে হচ্ছিল শরীরের রক্তগুলো হিম হয়ে যাচ্ছে। বারবার শরীর কেঁপে উঠছিল ঠান্ডার কারণে। তাই ভাবতে লাগলাম কিভাবে শরীরে গরম ধরানো যায়। হঠাৎ একটি বুদ্ধি চলে এলো মাথায়।

যা ভাবা তাই কাজ তৎক্ষণাৎ চলে এলাম কুড়িগ্রাম নিউ টাউন পার্কে। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে বড় একটি পুকুরকে ঘিরে এই পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং পূর্ব দিকে জজ কোর্ট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন।

পুকুরের দক্ষিণ দিকে পুলিশ লাইন ও উত্তর দিকে স্টেডিয়াম অবস্থিত। এখানে পুকুরের চারদিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় সবসময় প্রচুর লোকের সমাগম থাকে। বাইরে থেকে আসা লোকজন ক্রান্তি দূর করার জন্য এখানে কিছুটা সময় বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায়।

20230118_184217.jpg

w3w location

যাইহোক আমিও গিয়েছিলাম পুকুরের চারিদিকে বাঁধানো রাস্তায় জোর কদমে হেঁটে শরীরে গরম ধরাতে। সবেমাত্র হাঁটতে হাঁটতে হালকা দৌড়ানো শুরু করেছি। এমন সময় ক্ষুদে বার্তা এল আমাদের এডমিন দিদির। এক ঘণ্টার মধ্যে একটি রিপোর্ট সাবমিট করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ানো বন্ধ করে বসে পড়লাম।

পুকুর পাড়ে বসে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কাজ করতে লাগলাম। কিন্তু ঠান্ডায় হাত জমে যাওয়ার উপক্রম তাই অনেকটা সময় লেগেছিল শেষ করতে। এদিকে কাজ করছি আর টুক টুক করে কিছু ফটোগ্রাফি করে নিচ্ছি আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

20230118_184606.jpg20230118_184056.jpg

20230118_184000.jpg20230118_174453.jpg

w3w location

এই পুকুরের চারিদিকে খুব সুন্দর ঢালাই করা বাঁধানো রাস্তা করা আছে। রাস্তার মাঝে মাঝে বেশ কিছু বসার জায়গা আছে। সেখানে যেমন বাইরে থেকে আসা লোকজন বসে বিশ্রাম নিতে পারে। তেমনি সকাল সন্ধ্যা স্বাস্থ্য সচেতন অনেক লোক হাঁটার জন্যও চলে আসে।

যেমন আমি নিজেও আজকে চলে এসেছি নিজেকে একটু ঝালিয়ে নেয়ার জন্য। অনেকক্ষণ হেঁটে এবং দৌড়ে আমার শরীরে গরম ধরাতে পেরেছিলাম। কিন্তু তারপর বসে বসে কাজ করতে আবারও সেই আগের অবস্থা হয়েছিল। কাজ শেষ করে যখন মাগরিবের আজান দিল তখন উঠে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।

ওঠার পর আর ঠান্ডায় হাঁটার শক্তি ছিল না। কি আর করা তবুও যেতে হল মসজিদ পর্যন্ত। এমনিতেই ঠান্ডায় অবস্থা খারাপ তার উপর আবার এই ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করা। বোঝেন কি অবস্থা হয়েছিল আমার।

20230118_184653.jpg

w3w location

পুকুরের পূর্ব দিকে যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের কথা বলেছিলাম এই সেই বিল্ডিং। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করতে আমার খুব ভালো লাগে। আরো বেশি ভালো লাগে যখন বর্ষা মৌসুমে পুকুর পানিতে ভরপুর থাকে। ভবনের প্রতিচ্ছবি যখন পুকুরের উপর পড়ে তখন অন্যরকম এক সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি হয়।

আট তলা বিশিষ্ট এই ভবনে কুড়িগ্রাম সদরসহ নয়টি উপজেলার বিচার কার্য সম্পন্ন হয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর লোক আসে এখানে। কয়েক বছর আগেও পুকুরটি সংস্কার করা ছিল না। তখন আসলেই শহরের বাইরের লোকজন ছাড়াও আমাদেরও অবসরে বসে থাকার কোন জায়গা ছিল না।

কয়েক বছর আগে এক মহিলা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এই পুকুরটি সংস্কার করা হয়েছিল। তারপর থেকে আমরা অনেকেই এখানে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছি। কাগজে-কলমে এটা নিউ টাউন পার্ক হলেও স্থানীয়ভাবে আমরা সকলে সুলতানা সরোবর বলি।

ওই জেলা প্রশাসকের নাম ছিল সুলতানা কামাল। তার নাম অনুসারেই পুকুরের এই নামকরণ।

20230118_184522.jpg

w3w location

শুকনা মৌসুমে পুকুরে পানি না থাকার কারণে সৌন্দর্য্য অনেকটাই মলিন হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে সবকিছুই একটু খারাপ লাগে। তবে যখন বর্ষা মৌসুমে পুকুর পানিতে ভরপুর থাকে তখন জায়গাটা কিন্তু অনেক ভালো লাগে দেখতে।

পুকুরের চারিদিকে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য বেশ কিছু ফুলের গাছ ও ঝাউ গাছ লাগানো আছে সারিবদ্ধভাবে। বর্ষা মৌসুমে যখন প্রত্যেকটি গাছ ফুলে ভরপুর থাকে তখন পরিবেশটাই অন্যরকম হয়ে যায়। এখানে বসে থাকতেও তখন অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি হয়।

20230118_184718.jpg
20230118_184424.jpg

w3w location

অনেক খারাপ লাগার মাঝেও পড়ন্ত বিকালে এসে একটু সূর্য্য দেখতে পেয়ে মনটা চনমনে হয়ে গেল। শৈত প্রবাহের কারণে কয়েকদিন থেকে সূর্য্য দেখছি না। বৈরী আবহাওয়ার সাথে সাথে সূর্য্যও যেন আমাদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। তাই দিনশেষে একবার সূর্যের দেখা পাওয়া কেমন অনুভূতি হতে পারে আপনারাই বলেন ?

ঠিক সে কারণেই গাছের ফাঁকে দেখতে পাওয়া সূর্যের লাল রশ্মি আমার মনকে দোলা দিয়ে গেল। এমন দৃশ্য দেখে আর লোভ সামলানো গেল না। তাই মুঠোফোন বের করে শুরু হলো ক্লিক ক্লিক !!

20230118_174245.jpg

w3w location

এই সেই জায়গা পুকুরের একমাত্র বাঁধানো ঘাট। এখানে বসেই পড়ন্ত বিকালে আমি আমার কাজটুকু করে নিয়েছিলাম। আমার সাথে আরও কয়েকজন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তারা সম্ভবত কোর্টে কোন কাজে এসেছে। একজনের মুখে আসামি জামিনের কথা শুনে তাই মনে হল।

দিনটি কেমন কাটলো এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে আমার মনে। একদিকে যেমন ঠান্ডায় জর্জরিত ছিল আমার পড়ন্ত বিকাল। অপরদিকে পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ সূর্য্য রশ্মি দেখে মনটা চন মনে হয়ে উঠল। দিনশেষে আমরাও মানুষ মাঝে মাঝে আমাদের মন অনেক কিছু বুঝেও আবার বুঝতে চায় না।
তাই বিষয়টা অমীমাংসিতই থেকে গেল।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

5ShzsKnKF7vppGeV6VN3m3GSDcLoRruAhMmifZtFSDkYScaQyCM2iuQ1WQQy6nniRf12cc5CtS93357FVJGtsJxDuskm1PhG5v3j8PRTTLNJMvkMUPWrwxdV4doFh5KLHsCHWYfgqWW8XGht9fW3YpYm.gif

Sort:  
 2 years ago 

আমাদের এখানেও একটা নিউটাউন আছে।আপনার বিকেলের অনুভূতি পড়ে ভালো লাগল।ছবি গুলো দেখে মনে হল পার্কের আশপাশ অনেক ফাঁকা।এরকম জায়গা ঘুরতে বেশ ভালো লাগে।তবে এই শীতে বাইরে বেড়ানো খুব মুশকিল।আবহাওয়া ঠান্ডা সেই সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া যেনো হাড় কাপিয়ে দিচ্ছে।

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 59022.17
ETH 2569.27
USDT 1.00
SBD 2.53