মাধবীলতার রূপা।

in #blog25 days ago

নিশীথ রাতের নীরবতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের এক কোণে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন এক বৃদ্ধা, নাম তার মাধবী। মাধবী বৃদ্ধ বয়সে তার একমাত্র নাতনী রূপাকে নিয়ে দিন কাটাতেন। রূপা ছিল তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন।

মাধবীর জীবন ছিল কষ্টে ভরা। কিন্তু রূপা তার জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছিল। রূপা ছিল খুবই মেধাবী। স্কুলে পড়াশোনায় সবসময় ভালো করত। তার একটাই স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে শিক্ষিকা হবে এবং গ্রামের সব শিশুদের শিক্ষিত করবে।

একদিন স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে রূপা মাধবীর কাছে এসে বলল, "দিদা, আজ আমাদের স্কুলে নতুন শিক্ষক এসেছেন। তিনি আমাদের অনেক ভালো পড়াচ্ছেন। আমি যখন বড় হয়ে শিক্ষক হবো, তখন আমি ওনার মতোই পড়াবো।"

মাধবী তার নাতনীকে দেখে খুশি হলেন এবং বললেন, "রূপা, তুই আমার গর্ব। তোর স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি যা করতে পারি করব।"

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল আর রূপা আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছিল। একদিন স্কুলে একটি প্রতিযোগিতা হয়, যেখানে রূপা প্রথম স্থান অধিকার করে। পুরস্কার হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরল রূপা, মাধবী তাকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললেন।

কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা মাধবীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। তার শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। রূপা এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আরও যত্নশীল হয়ে উঠল।

একদিন রূপা তার দিদার হাত ধরে বলল, "দিদা, তুমি চিন্তা করো না। আমি বড় হয়ে তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করব। তুমি শুধু আমার পাশে থাকো।"

মাধবী তার নাতনীর কথা শুনে হেসে বললেন, "তোর মতো নাতনী পেয়ে আমি সত্যিই ধন্য। তুই আমার জীবনের শেষ আলো। তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারলে আমি সত্যিই শান্তি পাবো।"

রূপা তার শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের সঙ্গে এগিয়ে চলল। তার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনও বাধাই তাকে দমাতে পারল না। মাধবীর জীবনের শেষ দিনগুলোতে রূপার সাফল্যই ছিল তার শান্তির উৎস। রূপা সত্যিই বড় হয়ে শিক্ষিকা হল, এবং গ্রামের শিশুদের শিক্ষিত করে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করল।

মাধবী তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে দেখেছিলেন রূপার সাফল্য। সেই দিন তিনি শান্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করলেন, কারণ তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। রূপা হয়ে উঠেছিল তার জীবনের সত্যিকারের আলো।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 67931.04
ETH 3244.57
USDT 1.00
SBD 2.67