শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলির স্মৃতি - " দশ টাকার জন্য হারিয়ে যাওয়া "

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম

শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলির স্মৃতি
" দশ টাকার জন্য হারিয়ে যাওয়া"

❤️শুভ রাত্রি প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার❤️। সকলের সুস্থ্য জীবন, সুস্থ মন আর সুস্থ্য দেহ কামনা করে আজ আবার চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে । ভালো থাকা বা নিজেকে ভালো রাখার বিষয়টি কিন্তু আপেক্ষিক। অনেক সময় হাজার চেষ্টা করেও পারিপাশ্বিক কিছু ঘটনার জন্য আর নিজকে ভালো রাখার বিষয়টি হয়ে উঠে না। তবুও আমাদের কে চলতে হয়। চলেই যাচিছ কোন একভাবে।

❤️ আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম! সত্যিই কিন্তু তাই। এখন প্রায় মনে হয় কেন বড় হলাম? আগের মত ছোট থাকলে কি ক্ষতিই বা হতো? যখনই সুযোগ পাই তখনই নিজের অজান্তে চলে যাই শৈশবের সেই দিনগুলিতে। আগে ডায়রির পাতায় নিজের সেই সব কথাগুলো কে স্থান দিতাম। কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় ফাউন্ডার @rme দাদা আমাদের সেই পুরানো দিন গুলো কে নতুন রূপে মেলে ধরার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। সম্প্রতি দাদা নতুন আরও একটি স্লট যুক্ত করেছেন আমাদের জন্য । আর তা হলো ছেলে বেলার মজার স্মৃতিগুলো কে শেয়ার করা। আর এমন একটি সুযোগ হাত ছাড়া করতে মন চায় না। নিজের মধ্যে যে কত জমানো স্মৃতি। আর তাইতো আজও চলে আসলাম আরও একটি স্মৃতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য❤️।

ai-generated-8099011_1280.jpg

source

তখন আর কোন ক্লাসে পড়ি। ক্লাস ফাইভ হবে হয়তো। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় বাবার কাছ হতে দশ টাকা করে নিয়ে যেতাম টিফিন খাওয়ার জন্য। বাবা তো অফিসে চলে যেত। তাই আমার দশ টাকা বাবা মায়ের কাছে দিয়ে যেত। আমি প্রতিদিন যখন স্কুলে যেতাম তখন মায়ের কাছ হতে সেটা নিয়ে যেতাম। আর সেই টাকা দিয়ে টিফিনের সময় বিভিন্ন মজার জিনিস কিনে খেতাম। তবে আমি কিন্তু ছেলেবেলা হতেই একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। আর আমার সাথে কেউ দুষ্টুমিতে পেরে উঠতো না। সে যাই হোক একদিন ঘটে গেল একটি তান্ডব কান্ড। আর আমার কান্ড দেখে তো পরিবারের সবাই হতবাক!

স্কুল তখন বন্ধ । কিন্তু স্কুল বন্ধ তো কি হয়েছে আমার নিয়ম কানুন তো আর বন্ধ থাকবে না। আমাকে প্রতিদিন দশ টাকা দিতেই হবে। তো বাবা প্রতিদিন আমার টাকাটা মায়ের কাছে দিয়ে গেলেও ক দিন হলো বাবা আমাকে আর টাকা দেয় না। কারন স্কুল তো বন্ধ। একদিকে বাবা সব প্রয়োজনীয় খাবার নিজেই কিনে নিয়ে আসে। আবার অন্য দিকে মায়ের নালিশের জন্যই বাবা আমাকে কদিন হলো আর টাকা দেয় না। কিন্তু আমি তো মালাই বেশ পছন্দ করি। টাকা না হলে মালাই আইসক্রিম কোথায় পাবো? বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি করা যায়? তো একদিন চিন্তা করলাম বাবা কে অফিসে যাওয়ার সময় ধরতে হবে। তো যা বলার তাই করলাম। মা পাকের ঘরে রান্না করছে। এই হলো সুযোগ। যে করেই হোক বাবা কে ধরতেই হবে।

আমি তো বের হয়ে বাবার পেছন পেছন যাচিছ। আর বাবাকে ডাকছি। কিন্তু বাবা আমার ডাক শুনতে পাচেছ না। আমি যাচ্ছি আর যাচিছ। হঠাৎ কি যেন এক দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসলো মাথায়। বাবা কে ডাকা বন্ধ করে দিলাম। যদি বাবা আমাকে মারে বা ধমক দেয়। তাই চুপ চাপ বাবার পেছন পেছন যেতে থাকলাম। বেশ অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলাম বাবা আমার সামনে আর নেই। আমি বাবা কে হারিয়ে ফেলেছি। এখন কি আর করি। আমি তো কিছু চিনিনা। শুরু করে দিলাম এক জায়গায় দাড়িঁয়ে কান্না। এক সময় দেখি সেখানে অনেক মানুষের ভিড় জমে গেছে। আমি শুধু বাবার নামটি বলতে পারতাম। কিন্তু কোথায় থাকি বা বাবা কোন অফিসে চাকুরী করে সেটা কিছুই আর বলতে পারতাম না। আমি তখন অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে কি হারিয়ে গেলে কিন্তু লাভ আছে। অনেক কিছু খাওয়া যায়। রাস্তায় যে মানুষগুলো জমা হয়েছিল তাদের কেউ কেউ আমাকে বিস্কুট আর চকলেট কিনে দিয়েছিল। কিন্তু কে খায় ঐ গুলো। আমি তখন আমার বাবার জন্য কেঁদে সারা।

দিন চলে যাচেছ কিন্তু কেউ আমাকে নিতে আসছে না। আমাকে সেখানকার লোকজন একটি দোকানে বসিয়ে রেখেছিল। যদি কেউ খোঁজ করতে আসে। কিন্তু কই কেউই তো আসছে না আমাকে নিতে। আমি তো ভাবলাম আর মনে হয় বাবা মাকে দেখতে পাবো না।আমি বসে বসে কান্না করছি। দেখতে দেখতে সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেল। অফিসও ছুটির সময় হয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম বাবার এক বন্ধু আমার কাছে আসছে। আমাকে দেখে বলে কি রে তুই এখানে কেমনে আসলি। আমি তো তাকে দেখে কাকা করে কান্না করতে করতে তার কাছে চলে গেলাম। তখন কাকা সবাই কে বলল যে সে আমাকে চিনে। কিন্তু সেখানকার মানুষজন আমাকে তার কাছে দিবে না।

এরপর কিছুক্ষন পর কাকা বাবা কে নিয়ে আসলো। হায় হায় বাবা কে দেখে তো আমার কি কান্না। কিন্তু আমার কান্না শুনে কে? দিলো বাবা টাস করে গালে লাগিয়ে ‍দু ঘাঁ। কেন গেলাম আমি তার পিছন পিছন। তারপর বাবা আমাকে নিয়ে তার অফিসে গেল। অফিসের সবাই তো আমাকে আদর করে এটা সেটা খেতে দিলো। আমিও মজা করে খেতে লাগলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে দশ টাকার জন্য হারিয়ে খারাপ হয়নি। আইডিয়াটা মন্দ না।

কিছুক্ষন পর বাবা আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। আল্লাহ বাসায় এসে তো দেখি লঙ্কা কান্ড। রীতিমত মাইকিং চলছে। বাবার সাথে আমাকে দেখে আমার সব বন্ধু বান্ধব দৌড়ে আসলো আমার কাছে। আর আমার মা তো আমাকে পেয়ে যেন দুনিয়া ফিরে পেলো। সেদিন বাবা অবশ্য মায়ের দিকে খুব বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু মায়ের শুকনো মুখ খানি দেখে কিছু আর বলার সাহস পায়নি।এরপর থেকে কিন্তু বেচেঁ থাকা পর্যন্ত বাবা আমাকে আর দশ টাকা দিতে ভুল করেন নি।

এখন যখন ছেলেবেলার সে সমস্ত দিন গুলো মনে করি নিজের অজান্তেই দু চোখ বেয়ে শুধু পানিই ঝড়ে। এখন তো আর বাবা ও নেই, আর মা ও নেই। আছে শুধু বাবা মার জন্য বুক ভরা কষ্ট আর হাহাকার। মাঝে মাঝে ভাবি যে কেন চলে গেল সে সব দিন গুলো? কেন চলে গেল বাবা মা পৃথিবী ছেড়ে। কেন যাওয়ার বিধান টা করা হলো? আরও কত কি? আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো জীবনের ডায়রী হতে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের কোন স্মৃতির পাতা নিয়ে নতুন ভাবে আপনাদের কাছে। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের ব্লগটি ? আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায় রইলাম। সবাই ভালো থাকবেন এবং সাবধানে থাকবেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

image.png

Add a heading (1).png

image.png

image.png

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58751.99
ETH 2642.76
USDT 1.00
SBD 2.47