শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "ভয়ংকর সে দিনগুলো" II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
"ভয়ংকর সে দিনগুলো" |
---|
শুভ রাত্রি ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্থ্য জীবন, সুস্থ মন আর সুস্থ্য দেহ কামনা করে আজ আবার চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে । আমরা জীবনের অনেকগুলো গন্ডি পেরিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি । জীবনের এত গুলো সময় কে পেছনে ফেলে আজ আমরা এগিয়ে যাচিছ সামনের দিকে। কিন্তু আমরা কি কেউ আমাদের ফেলে আসা দিন গুলো কে ভুলতে পেরেছি? না আমরা ভুলতে পারিনি। কারন শৈশব যে আমার ভিত্তি প্রস্তর। আর সেই ভিত্তি প্রস্তরকে কি ভুলে যাওয়া যায়?
সেই ছেলেবেলা কত আনন্দ নিয়ে সময়গুলো কেটে যেত। আর সেসব আনন্দ ভরা দিন গুলো কে এখন অনেক মিস করি। মিস করি সেই সময়টাকে। কত যে ঘটনা আর গল্প জমে আছে জীবনের শৈশবের সময় গুলো কে নিয়ে। আজও সেই সমস্ত স্মৃতি গুলো মনে হলে কখনও আনন্দ, আবার কখনও বেদনায় শিউরে উঠে মন। কিন্তু সেই স্মৃতি গুলো কে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকাশ করার জন্য যেন কোন জায়গা পাচিছলাম না। আজ যখন আমাদের প্রিয় ফাউন্ডার আমাদের @rme দাদা আমাদের কে সেই স্মৃতি গুলো প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে তখন কি আর থেমে থাকা যায়? সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদার প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বন্ধুরা আজও আসলাম আপনাদের মাঝে ছেলেবেলার নতুন কিছু স্মৃতি নিয়ে। আশা করি আমার আজকের স্মৃতিগুলোও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
ঠিক মনে নেই বয়সটা কত ছিল। তখন হয়তো ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি। প্রতিদিনের মত করে সেদিনও স্কুলে যাচিছলাম আর সবার সাথে। রেডি হয়ে বাসা হতে ব্যাগ কাধেঁ বাসার নীচে নামতেই দেখি আমাদের বাসার সামনের মাঠে অনেক লোকজন ভিড় করে আছে এবং সবাই গোল হয়ে দাড়িঁয়ে কি যেনো দেখছে। তো আমরা একটু আগ্রহ নিয়ে সেখানে গেলাম। কিন্তু এত এত ভিড় যে ভিতরে ঢোকাটাই মুশকিল। তো কোন রকমের ফাকঁ দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। ভিতরে কি হচেছ। বেশ কিছুক্ষন চেষ্টা করার পর ভিতরে কি হচ্ছে তা দেখতে পেলাম।ভিতরের দৃশ্য দেখে তো ভয়ে মাথা ঘুরেই গেল।
তখন কিন্তু বিষয়টি তেমন বুঝিনি। শুধু এতটুকু বুঝলাম যে একটি ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাঠে ফেলে আরও কাটাকাটি করা হচেছ। আর গাদায় গাদায় লোকজন দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য উপভোগ করছে। এখনও মাঝে মাঝে আমার চোখে সেই করুন দৃশ্য ভাসে। ভিতরে এমন দৃশ্য দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। সেখানে আর দাঁড়াতে পারলাম না। দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। তারপর মায়ের কাছে সব খুলে বললাম। আমার মাও বেশ ভয় পেয়ে গেল। তাই আমাকে আর সেদিন স্কুলে পাঠালো না। মা তাড়াতাড়ি ঘরের জানালায় এসে দেখতে লাগলো ঘটনা কি হচেছ। আমরা সবাই তখন মায়ের সাথে ঘটনাটি দেখতে লাগলাম। বেশ অনেকক্ষন ধরে ছেলেটিকে আঘাতের উপর আঘাত। আর ছুরি দিয়ে কাটা কাটি করছে।
লোকজন ভয়ে ডরে কিছু বলার সাহস পাচেছ না। কারন এই ঘটনা যারা ঘটাচিছলো তারা সবাই ছিল এলাকার নাম করা সন্ত্রাসী। কে যাবে কার জান হারাতে। সবাই শুধু দেখছে আর আফসোস করছে। অবশ্য যেই ছেলেটিকে রক্তাক্ত করছিল সেও সবার বেশ পরিচিত। কিছুক্ষন পর শুনতে পেলাম যে ছেলেটিকে এমন ভাবে মারা হচিছল, যেন সে আর বেচেঁ ফিরতে না পারে। এমন কি ছেলেটি পানির জন্য চিৎকার করলে তাকে নাকি রক্ত খেতে দিয়েছিল পানি হিসাবে। ছেলেটির চিৎকার আজও কানে ভাসে।তার চিৎকারে সমস্ত এলাকা স্থবির হয়ে গিয়েছিল।
বেশ কিছু পর ফাঁকা গুলি ছাড়তে ছাড়তে পুলিশ আসে সেখানে। ততক্ষনে গুলির আওয়াজ পেয়ে সন্ত্রাসীরা সব পালিয়ে গেছে। এদিকে সেই রক্তাক্ত ছেলেটির নিথর দেহ পড়ে রইল মাটির উপর। পুলিশ বাহিনী বেশ হৈ হুল্লোড় করলো কতক্ষন। কিন্তু আসামীদের আর ধরতে পারলো না। ততক্ষনে কি তারা আর থাকে? তারপর পুলিশ বাহিনী সেখানে জমা করা লোকজনের জবানবন্দী গ্রহন করে রক্তাক্ত ছেলেটিকে গাড়ীতে নিয়ে চলে যায়। এলাকার সবাই বলাবলি করছিল যে, পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের বাচাঁনোর জন্যই এমন ফাঁকা গুলি করতে করতে স্পটে এসেছিল। যাতে করে সন্ত্রাসীরা পালাতে পারে।
আর এই ঘটনা নিয়ে এলাকা বেশ গরম ছিল কিছুদিন। কারন শুনেছি যে যাকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল সেও ছিল একজন সন্ত্রাসী। সেও নাকি ঐ সন্ত্রাসীদের কাকে খুন করে এতদিন বিদেশে পালিয়ে ছিল। আর আজ যখন তাকে বাটে পেল,তাই তারা আর চান্স মিস করে নাই। আর এই জন্যই রক্তাক্ত সন্ত্রাসীর সাঙ্গু পাঙ্গুরা সারাদিন টহল দিতো তাদের কে ধরার জন্য। আর এলাকার মানুষগুলো সারাদিন বেশ ভয়ে থাকতো। কখন আবার কি হয়।
কয়েকদিন পর শুনতে পেলাম যে সেই রক্তাক্ত ছেলেটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। আর তখন এই ব্যপারটি পেপার পত্রিকায় বেশ প্রতিদিনই লেখালেখি হতো। সবাই আতংকে থাকতো। এসব বিষয় নিয়ে আবার কি হয়। কিন্তু কি আর হবে ধীরে ধীরে মানুষ এসব ঘটনা সব ভুলে যায়। আর এই ভয়ংকর ঘটনার পর আমি যে কয় রাত্রি ঘুমাতে পারিনি, তার কোন হিসাব নেই। এমন ঘটনা কি আর ভুলা যায় বলেন তো? তবে অবাক করা কান্ড কি জানেন? এখনও কিন্তু মাঝে মাঝে সেই সব সন্ত্রাসীদের দেখতে পাই। কিন্তু আজ তারা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তাদের কিন্তু সে সময়ে কোন শাস্তিই হয়নি। হয়নি কোন বিচার।
ছেলেবেলার এই ঘটনাটি আজও আমার মনে দাগ কাটে। মাঝে মাঝে যখন মনে পড়ে তখন সেই রক্তাক্ত লোকটির চেহারাও ভেসে বেড়ায় চোখের সামনে। একটি জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে মেরে ফেলা হলো তার কোন বিচারই হলো না। এ কেমন বিচার? কেমন দেশ? যেখানে অন্যায়ের কোন বিচার নেই। নেই কোন দন্ড। মাঝে মাঝে ভাবি যে, কি সহজেই অন্যায়কারীরা মুক্তি পেয়ে যায়।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সকলের সুস্থ্যতা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। আর ও হ্যা কেমন লাগলো আমার আজকের শৈশবের কাহিনী। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আসলে আপু আমাদের দেশে একটা সময় সন্ত্রাস এত বেড়ে গিয়েছিল যে বলার কথা নেই। আমাদের এলাকার দিকে প্রচুর পরিমাণ সন্ত্রাস ছিল এমনকি আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে সন্ত্রাস প্রতিনিয়ত যাতায়াত করত। কিছু সন্ত্রাস এই ছেলেটাকে কিভাবে রক্তাক্ত করেছে যেটা শুনে আমার শরীরের লোমগুলো ফুলে উঠেছে। যখন ছেলেটার নিথর দেহটা পড়ে আছে তখন পুলিশ আসছে এটা হল পুলিশের কাজ এবং এমন ভাবে আসছে যেন সন্ত্রাসীরা যেন পালিয়ে যেতে পারে সেজন্য সতর্ক করছে। আসলে ওই দিনের ঘটনাটি ছিল মর্মান্তিক ও ভয়ংকর একটি ঘটনা।
ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
খুবই মর্মান্তিক এবং ভয়ংকর একটি ঘটনা। আপনার আজকে শেয়ার করা বিষয়টি পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো রীতিমতো। খুবই ভয়ংকর একটি কাহিনী। কিন্তু খারাপ লাগলো এটা ভেবে যে আসামিদের কোন শাস্তি হলো না।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
এমন মর্মান্তিক ঘটনা সরাসরি দেখলে তো ভয় পাবার ই কথা। আসলে যারা সন্ত্রাসী তারা প্রায়ই সন্ত্রাসের হাতে মরে। এই ছেলেটার ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। তবে সেটা আসল কথা নয়,আসল কথা হচ্ছে আমাদের দেশে অপরাধের তেমন কোনো শাস্তি হয় না। তাইতো একের পর এক অপরাধ বেড়েই চলছে। যাইহোক শৈশবের স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আর হবেও না এদেশে অপরাধের বিচার। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।