ভালোবাসার ভিন্ন রূপ

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম

❤️শুভ সকাল ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার❤️। সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করে আবার আজ চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে। জীবনটাই একটি গল্প। জীবনে ঘটে যাওয়া আঘাত প্রতিঘাত নিয়েই যে কত গল্প রচনা করা যায় তা কি আর বলতে। আমরা যদি বিভিন্ন লেখকের গল্প বা উপন্যাস লক্ষ্য করি সেটাও কিন্ত কারও না কারও জীবন থেকেই নেওয়া। আর জীবন ঘনিষ্ঠ এসব গল্পই হয়তো সময়ে সময়ে আমাদের সুখ দুঃখের বাহন হয়ে যায়।

অবসর সময়ে নিজেকে কিছুটা বিনোদন পাওয়ার জন্য আমরা বিনোদন কে আমাদের সঙ্গী করে নেই। আর আমাদের বিনোদনের সঙ্গী হওয়া সে সমস্ত গল্পই কিন্তু এক সময়ে কারো না কারো জীবনের ইতিহাস। মাঝে মাঝে অবসর সময়ে গল্প পড়তে কিন্তু বেশ ভালো লাগে আমার। তাই অবসরের কিছুটা সময়ই কিন্তু আমি বই বা গল্প পড়ে কাটাই। এক সময়ে কত যে লেখকের বই দিনের পর দিন পড়ে শেষ করে দিয়েছি। তখন কি আর বুঝতে পেরেছি যে আমিও একদিন এমন করে একটি গল্প লেখবো। আর সেটা কেউ পড়বে। তো বন্ধুরা আজও আসলাম আপনাদের জন্য একটি গল্প নিয়ে। আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের ভালো লাগবে।

source

অধরা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। আর কিছুদিন গেলেই তার ফাইনা পরীক্ষা। কিন্তু এর আগেই ঘটে গেল অধরার জীবনে বেশ সেই চরম দুর্ঘটনা। আর এমন সময় এসে অধরার এমন একটি ঘটনা অধরা নিজেও মেনে নিতে পারছে না। আর কি ভাবেই বা সে পারবে এমন একটি ঘটনা মেনে নিতে। কারন সে যে আজ অপারগ। কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে অধরা আজ? কি করা উচিত তার? সব ভেবেই যেন অধরা নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছে।

ইউনিভার্সিটিকে ভর্তি হওয়ার এক বছরের মাথায় অধরার সাথে পরিচয় শোভনের। বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের একটি ছেলে শোভন। চলতে চলতে একে অপরের প্রতি এতটাই ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যে তা বলে বুঝানো যাবে না। দুজন যেন দুজনের জন্যই সৃষ্টি হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে। অধরার কিছু হলেই যেন শোভন নিজেও তার আঘাত বা আবেশ অনুভব করে। ্আর এভাবেই চলে যাচিছলো তাদের ভালোবাসার সময় গুলো। এক সাথে শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও একান্তে নিজেদের মত করে সময় কাটানো ছিল তাদের প্রতিদিনের কাজ।

শোভনের ভালোবাসায় অধরা মুগ্ধ। তারা নিজেরা নিজেদের কে আরও আপন করে পেতে চায়। কিন্তু কি করবে? এই মহূর্তে তো আর বিয়ে করা সম্ভব নয়। আর দুজনের পরিবার এমন একটি বিষয় মেনেও নিবেনা। এক সময়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে দুজনে আপততঃ পালিয়ে বিয়ে করে নিবে। কিন্তু কারো পরিবার সেটা জানবে না। আর যখন তারা স্টাবলিশ হবে তখন তারা পরিবার কে বিষয়টি জানাবে। তো তারা বিয়ে করে নেয়। বিয়ের পর দুজনেই কলেজের শিক্ষা সফরের কথা বলে ঢাকার বাহিরে কাটিয়ে আসে একান্তে কটা দিন। আর এভাবেই যাচিছলো তাদের জীবন। কিন্তু অধরা এক সময়ে বুঝতে পারে যে তার মধ্যে নতুন কোন অস্থিত্বের অনুভব। মানে নতুন কেউ আসছে তার জীবনে। কি করবে সে বুঝতে পারছে না।

বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। শোভন কে সব কিছু খুলে বলে অধরা। সব কথা শুনে শোভন তো খুব মন খারাপ করে। তার চাকুরী নাই, বেকার একজন ছেলে কি করবে সে? অধরা শোভন কে বলে পরিবারের সাথে কথা বলে তাকে ঘরে তুলে নিতে। কিন্তু শোভন তো কিছু করে না কি করবে? শোভন অধরা কে আশ্বাস দেয় যে সে পরিবারের সাথে কথা বলে তাকে ঘরে তুলে নিবে। কিন্তু পরের দিন অধরা যখন শোভনের মোবাইলে ফোন দেয় তখন সে শোভনের মোবাইল বন্ধ পায়। অনেক চিন্তায় পড়ে যায় অধরা। শোভনের বন্ধুদের কাছে খোঁজ করেও তাকে আর খুজেঁ পাওয়া গেল না। শুধু শোভনের এক বন্ধুর কাছে শোভনের দেওয়া একটি চিঠি পেল অধরা। সেখানে শোভন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে যে তার পক্ষে এ মহূর্তে অধরাকে নিয়ে ঘর বাধাঁ সম্ভব নয়। সামনে তার এক সুন্দর ক্যারিয়ার।

এদিকে অধরা সমাজে তার এ কলঙ্ক নিয়ে কিভাবে চলবে? নিজের কথা কাকে বলবে? বেশ চিন্তায পড়ে যায়। অবশেষে তার কোন কুল কিনারা না পেয়ে তার মামাতো পিয়াসের সাথে সব কথা শেয়ার করে। এদিকে তার পিয়াস কিন্তু তাকে সেই ছেলেবেলা থেকেই পছন্দ করে। কিন্তু কখনও কিছু বলার সুযোগ পায়নি। আজ অধরার কথা শুনে তার ভিষণ মায়া হচেছ। তাই সে অধরার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অধরাও কোন কুল কিনারা না পেয়ে পিয়াস কে বিয়ে করে সংসার করা শুরু করে। দেখতে দেখতে বেশ কিছু দিন পার হয়ে যায়। এক সময়ে অধরার কুল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। অধরা আর পিয়াস বেশ সুখে শান্তিতেই সংসার করছিল।

হঠাৎ একদির ফিরে এলো শোভন। আজ শোভন বেশ ভালো মানের একটি চাকুরী করে। শোভনের আজ সমাজে নাম, জস খ্যাতি সবই হয়েছে। শোভন আজ অধরার কাছে ফিরে এসেছে তাকে ফিরিয়ে নিতে। একদিন অধরার স্বামী অফিস চলে যাওয়ার পর শোভন অধরার সাথে দেখা করতে আসে। শোভন কে দেখে অধরার বেশ রাগ হয়। সে কিছুতেই শোভন কে ঘরে ঢুকতে দিতে চায় না। বেশ খানিকক্ষন জোড় করার পর শোভন কে ঘরে প্রবেশ করতে দেয় অধরা। শোভন অধরা কে তার সব কথা খুলে বলে। শোভন অধরা কে বলে সেদিন আমার কোন সৎ সাহস ছিল না তোমাকে নিয়ে সংসার করার। ছিল না কোন টাকা পয়সা। কিন্তু আজ আমার সব হয়েছে তাই আজ আমি তোমাকে নিতে এসেছি। আমার সন্তান কে নিতে এসেছি। শোভনের এ কান্না যেন অধরার সব কিছু ভেঙ্গে দিলো। অধরা শোভনের কথা ফিরিয়ে দিতে পারলো না। তাই সে সব কিছু নিয়ে শোভনের সাথে পালিয়ে গেল।

অন্যদিকে পিয়াস বাসায় ফিরে অধরা ও তার সন্তান কে না দেখে বেশ অস্থির হয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষন পর পিয়াস দেখতে পেল যে টেবিলে একটা চিঠি রাখা। পিয়াস চিঠিটা হাতে নিলো এবং পড়লো। অধরা চিঠিতে লিখেছে সে কেবল তার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য পিয়াস কে বিয়ে করেছে। সত্যিকারের অর্থে পিয়াস কে সে কখনওই মন থেকে ভালো বাসতে পারেনি। আজ সে তার সন্তানের সত্যিকারের স্বীকৃতি খোজেঁ পেয়েছে। তাই সে তার সাথেই ফিরে যাচ্ছে। তাকে যেন আর খোঁজ করা না হয়। নতুন করে সংসার করে যেন পিয়াস সুখী হয়। কিন্তু পৃথিবীর সবাই তো আর এক রকমের হয় না। পিয়াস অধরার দেওয়া সে কষ্ট ভুলতে না পেরে অবশেষে তার স্থান হয়েছে মানসিক হাসপাতালের একটি বিছানায়। আর অন্য দিকে অধরা শোভনের সাথে সুখে সংসার করতে লাগলো।

আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। সকলেই ভালো থাকবেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

image.png

Add a heading (1).png

image.png

image.png

Posted using SteemPro Mobile

ভালোবাসার ভিন্ন রূপ
Sort:  
 last year 

গল্পটি পড়ে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল।আসলে মেয়েরা এমনই বিপদে পরলে সবকিছু দিয়ে দেয়। আবার বিপদ কেটে গেলে আর কিছুই চিনে না।আর আমার বিশ্বাস যদি গল্পটি সত্যি হয়ে থাকে তবে অধরাও বেশি দিন সুখে থাকতে পারবেন না।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

বুঝাই যাচেছ যে আপনি বেশ মনযোগ নিয়ে সম্পন্ন পোস্ট পড়েছেন। আমারও কিন্তু আপনার মত মনে হয়। অধরা বেশী দিন সুখি থাকতে পারবে না।

 last year 

বাহ গল্পটি আপনি দারুন শেয়ার করেছেন। আসলে এক সময় আমরা অনেক বই পড়তাম কিন্তু এখন পড়ি না। আপনি বেশ মজার একটি গল্প শেয়ার করলেন পড়ে ভাল লাগলো। শোভন আর অধরার অবশেষে মিলন হলো। শোভন তার সন্তানকে মেনে নিলেন। আর অধরা খুশি হয়ে ফিরে গেলেন সংসারে। খুব ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আরে আপু এ কেমন কথা হলো শোভন আর অধরার মিলনে আপনি খুশি হলেন? অধরার অসময়ে যে তার মামাতো ভাই নিজের জীবন টা অধরার জন্য ত্যাগ করে দিলো। তাহলে এ কেমন হলো শোভনের সাথে অধরার চলে যাওয়া? ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

অধরা যে মানুষটিকে তার বিপদের সময় পাশে পায়নি সেই মানুষটির সাথে আবারো সংসার করছে এটা আমি ভাবতে পারছি না। আসলে এতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে যেই মানুষটি তাকে ছেড়ে গিয়েছিল সেই মানুষটি আবারও তার জীবনে ফিরে এসেছে এতে আমার কাছে মনে হয়েছে অধরা আবারও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কখনোই সুখী হতে পারবে না। অন্যদিকে একজন নিরপরাধ মানুষকে কষ্ট দেওয়া ভীষণ অন্যায় হয়েছে। অধরার এটা বোঝা উচিত ছিল। সেরকম পরিস্থিতিতে সমাজ সংসারের কথা চিন্তা করে হয়তো সে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারত। কিন্তু পিয়াস তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

 last year 

এত সুন্দর একটি মন্তব্য পড়লেই বুঝা যায় যে আপনি বেশ মনযোগ নিয়ে পোস্টি পড়েছেন। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আসলেই আজকে আপনার ব্লগ পড়ে ভালোবাসার ভিন্ন রুপ দেখলাম। অধরা শোভনের সাথে পালিয়ে যাওয়াটা কখনে মেনে নেওয়া যায় না। যখন অধরাকে শোভন দুরে ঠেলে দেয় তখনই পিয়াস কাছে টেনে নিলো। আর এখন শোভন আবার ফিরে আসায় পিয়াসকে ভুলে গেল। এমন ঘটনা সমাজে প্রায় দেখা যায়। ধন্যবাদ।

 last year 

এটা কিন্তু সত্য যে এমন ঘটনা সমাজে অহরোহ হয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68195.23
ETH 2703.52
USDT 1.00
SBD 2.78