নাটক রিভিউ-মনের মানুষ ||Drama Review||
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
ভালো লাগার জায়গা বা মানুষ সব কিছুই কিন্তু জীবনের জন্য একটি আর্শিবাদ। কারন এ দুটো জিনিসই সহজে মন ভালো করে দেয়। মন কে রাঙিয়ে তুলে এক অপার আনন্দে। যেখান থেকে দূরে সরে থাকলে নেমে আসে হতাশা আর অবসাদ। আমার বিশ্বাস আমরা যারা এই প্লাটফর্মে কাজ করছি প্রত্যেকের কাছেই কিন্তু এটি একটি ভালো লাগার জায়গা। তাই আমরা সবাই পরিবারের মতই একত্রে কাজ করতে পারছি। প্রিয় বন্ধুরা আমার শুভ সন্ধ্যা। আজও আবার আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ। বেশ কয়েকটা দিন মনের মত করে আপনাদের সাথে কাজ করে যেতে পারিনি। পারিনি আপনাদের সাথে থাকতে। আর তা নিয়ে হৃদয়ে জমা আছে হাজারও অবসাদ। আর তাই তো আর বসে থাকতে পারলাম না। চলে আসলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে।
ভালোবাসা কিন্তু পবিত্র। কখনও যে কার জন্য কার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি হয় সেটা কেবল উপর ওয়ালাই জানে। তবে আমার মনে হয় ছোট বেলার যে ভালোবাসা, প্রথম জীবনের যে ভালোবাসা সেটা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। জীবনের প্রথম প্রেম গুলো কিন্তু খুব খুনসুটি পূর্ণই হয়ে থাকে। আর তেমনি একটি নাটক সেদিন চোখে পড়লো ইউটিউব চ্যানেলে। সত্যি বলছি নাটকটি দেখে আমি বেশ কিছুটা সময় কেঁদেছি। জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লাগবে। আশা করবো আমি আজ আপনাদের সাথে সে নাটকটি শেয়ার করবো সেটা সবার কাছেই বেশ ভালো লাগবে। আর ভালো না লাগলে পঁয়সা ফেরত।
নাম | মনের মানুষ |
---|---|
পরিচালক | হাসিব হোসেন রাখি |
রচনা | হাসিব হোসেন রাখি |
অভিনয় | তৌসিফ মাহমুদ, কেয়া পায়েল, আব্দুল্লাহ রানা, শম্পা নিজাম এবং আরও অনেকে |
দৈর্ঘ্য | ৫৭ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড |
মুক্তির তারিখ | ১৫ই অক্টোবর/২০২৩ |
ধরন | নাটক |
ভাষা | বাংলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
প্রচার | ইউটিউব |
★ তৌসিফ মাহমুদ- জীবন
★কেয়া পায়েল- মিতু
নাটকের মূল চরিত্র হলো জীবন এবং মিতু কে ঘিরে। মিতু এবং জীবন একই সাথে ছেলেবেলা হতে বড় হয়েছে। তাদের বাবারা যেমন বন্ধু। তেমনি তাদের মায়েরাও বান্ধবী। পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক । গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার তারা। মিতু এবং জীবন ছেলেবেলা হতে এক সাথেই বড় হয়েছে। দুজনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু মিতুর জন্য জীবন কে প্রায় তার বাবার হাতের মাইর খেতে হয়। কখন বরফের উপর দাড়িঁয়ে থাকতে হয়। আবার কখনও বা জুতার বাড়ি খেতে হয়। আর এ কারনেই জীবন মিতু কে পছন্দ করলেও ভয় পায়। আর এড়িয়ে চলে। এই যেমন একদিন মিতু স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় জীবন কে দেখতে পায়। জীবন তখন সাইকেলে চড়ে গ্রামের অন্য ছেলেদের সাথে ক্যারাম খেলতে যাচেছ। মিতু রাস্তায় জীবন কে থামিয়ে তাকে সাইকেল চালানো শিখাতে বলে। কিন্তু জীবন তো কিছুতেই রাজি হয় না। তখন মিতু তার মোবাইলে জীবনের সিগারেট খাওয়ার ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। জীবন যদি মিতু কে সাইকেল চালানো না শিখায় তাহলে জীবনের বাবার কাছে ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। জীবন বাধ্য হয়ে শিখাতে চাইলেও পড়ে মিতু কে সাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়। আর মিতু এসব ঘটনা বেশ বানিয়ে মিতুর বাবার কাছে বললে সে জীবনের বাবা কে বলে। আর শাস্তি হিসাবে জীবনের কপালে ঘটে বরফের উপর দাড়িঁয়ে থাকা।
এদিকে জীবন গ্রামের বন্ধুদের সাথে একদিন ক্যারাম খেলছিল তখন মিতু এসে সবাই কে খাওয়ানো এবং ছবি দেখানোর প্রস্তাব দেয়।কিন্তু কেউ মিতু কে বিশ্বাস করে না। পরে মিতু তার ব্যাগ থেকে টাকা বের করে সবাই কে দেখায় এবং বলে তার মামা তাকে তিন হাজার টাকা দিয়েছে হাত খরচের জন্য। তাই মিতু তার সব বন্ধুদের কে খাওয়াতে চায়। মিতুর কথায় বিশ্বাস করে সবাই যেতে রাজি হলেও জীবন যেতে রাজি হয় না। পরে সবার সাথে তাল মিলিয়ে জীবনও যায়। পরদিন মিতুর বাবার সাথে স্কুলের শিক্ষকের দেখা হয়। তার মাধ্যমে মিতুর বাবা জানতে পারে যে স্কুলের পরীক্ষার ফি এখনও বাকী রয়ে গেছি। কিন্ত মিতুর বাবা তো মিতু কে পরীক্ষার ফি দিয়ে দিয়েছে। রাতে খাবার টেবিলে মিতুকে তার বাবা পরীক্ষার ফি এর কথা জিজ্ঞেস করলে মিতু বাবার সাথে বিভিন্ন রকমের মিথ্যা কথা বলে। অবশেষে বাবার হাত থেকে বাচঁতে মিতু জীবনের নামে মিথ্যা কথা বলে। মিতু বলে যে জীবন রাস্তার পাড়ে বসে কাঁদতে ছিল। কারন জীবনের বাবা অসুস্থ। আর জীবনের বাবার চিকিৎসা খরচ চালানোর মত হাতে টাকা নেই। তাই বাবার এই অবস্থা দেখে জীবন অনেক কান্না কাটি করছিল। আর জীবনের কান্নাকাটি দেখে মিতু তাকে টাকা দিয়ে দিয়েছে। এদিকে মিতুর বাবা তো বন্ধুর এই অবস্থার কথা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। পরদিন মিতুর মাকে জীবনদের বাড়িতে পাঠায় টাকা দিয়ে যাতে জীবনের বাবা ঠিক মত চিৎিসা করেন। এদিকে মিতুর মা জীবনদের বাড়িতে গিয়ে এসব কথা জিজ্ঞেস করলে জীবনের বাবা তো বেশ রেগে যায়। তাই জীবন বাসায় আসলে তাকে বেদম পিটায়। পিটাতে পিটাতে লাঠি ভেঙ্গে ফেলে । এমন কি জুতা দিয়েও পিটায়।
এদিকে মিতু জীবন কে বার বার ফোন দিয়েও পায় না।পরদিন জীবনের সাথে দেখা হলে তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। তারপর দুজনে নৌকায় ঘুরে এবং অনেক সুন্দর সময় পার করে। কিন্তু মিতু বাসায় ফিরে তার বাসায় দেরী করে ফেরার এবং স্কুলে না যাওয়ার বিষয় নিয়েও বাবার কাছে জীবনের সমন্ধে মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে এবং সম্পন্ন দোষ জীবনের দেয়। এতে করে মিতুর বাবা মায়ের জীবনের প্রতি অনেক খারাপ ধারনা তৈরি হয়। এদিকে জীবনের বাবা সিদ্ধান্ত নেয় জীবন কে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু জীবন বিদেশে যেতে রাজি হয় না। আর এই বিষয়টি নিয়ে জীবনের মা মিতুদের বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করলে মিতু বলে ভালোই হবে খালা। জীবন দেশে থাইকা কি হইবো। ওয় তো পড়ালেখা করে না। বরং বিদেশ গিয়ে তিন বছর দেশে ফিরে বিয়ে করবে। জীবনের বিদেশ যাওয়ার কথায় মিতু বেশ খুশি হয়। আর এদিকে মিতু আর জীবনের সময় দুষ্টামীর মাধ্যমে কেটে যেতে থাকে।
এদিকে মিতুর ফুপু আর লন্ডন ফেরত ফুফাতো ভাই তাদের বাড়িতে আসে। মিতুর ফুফু তার ছেলের জন্য মিতুর সাথে বিয়ের কথা বলে। মিতুর ফুপুর সব কথা শুনে মিতুর বাবা মা রাজি হয়ে যায়। মিতুর মা এসব কথা মিতু কে বললে সে বারন করে যে এখন বিয়ে করবে না। কিন্তু মিতুর মা তাকে ধমক দিয়ে না করে দেয়। মিতু এসব কথা শুনে জীবনের কাছে দৌড়ে যায়। জীবন কে সব খুলে বলে। এমনকি বলে জীবন কে মিতুর বাবার কাছে যেতে যেয়ে বলতে যে জীবন আর মিতু একজন আর একজন কে ভালোবাসে। কিন্তু এবার আর জীবন মিতুর ফাঁদে পা দেয় না। কে জানে মিতুর কথা বিশ্বাস করে কোন বিপদে পড়ে।তাই সে মিতু কে অপমান করে বের করে দেয় । মিতু যাওয়ার সময় জীবন কে শাসিয়ে যায় যে সে আর মিতুকে পাবেনা। কিন্তু জীবন তুবুও মিতুর কথা বিশ্বাস করে না।
পরদিন মিতুর বাবা জীবন কে ডেকে পাঠায় যে মিতুর হবু বরের কমপ্লিট সেট বানাতে নিয়ে যেতে। এমন কি মিতুর বিয়ের অনেক দায়িত্বও জীবন কে দেয়। কিন্তু জীবন তখন বুঝতে পারে যে এবার মিতু সত্য কথা বলেছিল। তাই জীবন অনেক চেষ্টা করে মিতুর সাথে কথা বলতে। কিন্তু না মিতু তো জীবনের সাথে কথা বলেই না। বরং জীবন মিতুর বিয়ের কাজে তাদের বাড়িতে আসলে তার সাথেও অনেক খারাপ ব্যবহার করে। জীবন কে দেখলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। আবার অপমান জনক কথাও বলে। জীবন মিতুর এমন আচরণে অনেক কষ্ট পায়। তাই জীবন তার বাবকে বলে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে। তাই এক সপ্তাহের মধ্যে জীবনের বিদেশ যাওয়ার সব ঠিক হয়ে যায়।
মিতুর যেদিন বিয়ে সেদিনই জীবনের বিদেশ যাওয়ার তারিখ ফাইনাল হয়। এদিকে বিয়ের সাজে বসে মিতু তার বাবার কাছে সব খুলে বলে যে সে জীবন কে ভালোবাসে । এ বিয়ে সে করতে পারবে না। মিতু তার বাবা কে বরে জীবন কে বিদেশ যাওয়া আটকাতে। মিতু তার বাবা কে এও বলে সে জীবন কে ছাড়া বাঁচবে না। এমন কি থাকতেও পারবে না। জীবন বিদেশ গেলে আর কখনও দেশে ফিরবে না। কিন্তু না মিতুর বাবা এবার আর মেয়ের কথা বিশ্বাস করে না। মিতু কে সাফ জানিয়ে দেয় এখানেই তাকে বিয়ে করতে হবে। আর অন্যদিকে হাজারও কষ্ট বুকে নিয়ে জীবন বিমানে করে বিদেশের বুকে পাড়ি জমায়। আর এর মাঝেই শেষ হয়ে যায় মনের মানুষ নাটকটি।
সত্যিকারের অর্থে মিতু ছিল অবুঝ। তার এমন সব দুষ্টামি আর মিথ্যার জন্য যে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলবে সেই হিতাহিত জ্ঞান তার ছিল না। যার কারনে জীবন কে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসার পরও মিতু তাকে নিজের করে নিতে পারলো না। মিতুর বানানো সব মিথ্যের জন্যই তাকে তার ভালোবাসাকে হারাতে হলো। মিতুর মিথ্যা এবং দুষ্টামি একদিকে যেমন জীবনের ভালোবাসা কে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তেমনি অন্য দিকে নিজের ভালোবাসাকেও হারাতে সাহায্য করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে নাটকটি অনেকেরই ছেলেবেলার বাস্তবতার প্রতিক । নাট্যকার তার গল্পের মাধ্যমে ছেলেবেলার না বলা হাজারও ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
আজ আর নয়। আবার নতুন করে নতুন কোন স্বাদের খাবারের রেসিপি নিয়ে চলে আসবো আপনাদের মাঝে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো এবং সুস্থ থাকেন। আর রেসিপিটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপু আপনি খুব সুন্দর একটি নাটক রিভিউ দিয়েছেন। আপনার আজকের নাটক রিভিউ পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আমার কাছে বাংলা নাটক দেখতে অনেক ভালো লাগে। এই নাটক এখনো দেখা হয়নি তবে সময় পেলে অবশ্যই দেখবো। আপনার রিভিউ পড়ে মনে হলো এর কাহিনী খুব সুন্দর। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর নাটক রিভিউ দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।
মনের মানুষ নাটকটা এখনো পর্যন্ত যদিও আমার দেখা হয়নি, তবে সময় পেলে অবশ্যই চেষ্টা করব এই নাটকটা দেখে নেওয়ার। মিতু যদি বানানো মিথ্যা গুলো না বলতো, তাহলে তার ভালোবাসাকে হারাতে হতো না। তার বানানো মিথ্যা গুলো বলার কারণে সে তার ভালোবাসাকে হারিয়েছে। নাটকটার রিভিউ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আমরা কিন্তু ভুলে যাই যে মিথ্যাই আমাদের জীবনের অনেক কষ্টের কারন। যাই হোক সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আপনার লেখা মনের মানুষ নাটকের রিভিউটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে মিথ্যা যে মানুষকে ধ্বংস করে সেই বিষয়টি এই নাটকের মাঝে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। চমৎকার একটি নাটকের রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমিও বলি যে মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
মনের মানুষ নাটকটার রিভিউ পড়ে দারুন লেগেছে আমার কাছে। তৌসিফ মাহমুদ এবং কেয়া পায়েলের একটা নাটক আমি কয়েকদিন আগেও দেখেছিলাম। তবে এই নাটকটা এখনো পর্যন্ত দেখা হয়নি। নায়িকার নিজের জন্যই তার প্রিয় মানুষটা এখন তার কাছে নেই। আর পরবর্তীতে তার বাবাও তার কথা বিশ্বাস করেনি।
সুযোগ করে দেখে নিয়েন। আমি তো চোখের পানি আর নাকের পানি এক করে ফেলেছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
Tweet