শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - "ছেলেবেলার জোলাবাতি " II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"ছেলেবেলার জোলাবাতি"
শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি
"ছেলেবেলার জোলাবাতি"
Banner credit --@maksudakawsar
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি আপনাদের দোয়ায়। আজ আবারও চলে আসলাম ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি নিয়ে। সত্যি বলতে প্রতিটি মানুষের জীবনে ছেলেবেলার হাজারও স্মৃতিতে ভরপুর থাকে। ভরপুর থাকে হাসি আর আনন্দে কাটানো কিছু সময়ের স্মৃতি। যতই বড় হোক না কেন? ছেলেবেলার স্মৃতি গুলো বার বার হাতছানি দিয়ে পিছু ডেকে নিয়ে যায়। আর আজ কদিন যাবৎই সে সমস্ত স্মৃতি গুলো বার বার মনের কোনে উকিঁ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই ভাবলাম যে যেহেতু আমাদের @rme দাদা আমাদের কে সুযোগ দিয়েছে তাহলে প্রতি সপ্তাহের মত করে আজও হয়ে যাক আরও একটি স্মৃতির উম্মোচন। তবে আমার ব্লগে যাওয়ার আগে সবার প্রথমে আমাদের সম্মানিত ফাউন্ডার @rme দাদা কে জানাই কৃতজ্ঞতা। তাহলে চলুন পড়ে আসি আমার আজকের শৈশবের স্মৃতি বিজরিত কিছু কথা।
আজ মনে পড়ে সেই ছেলেবেলার কথা । মনে পড়ে ছেলেবেলায় এমন শীতের দিন আসলে আমরা কি করতাম? হুম সেই সময়টাই ছিল আমাদের জন্য অনেক বেশ আনন্দঘন সময়। সাধারণত এই সময়ে আমাদের সকলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। তার সাথে সাথে স্কুলও বন্ধ হয়ে যেত। আর স্কুল বন্ধের এই সময়টা যে আমাদের কত রকামের দুষ্টুমি তে সময় কেটেছে, সেটা বলে শেষ করা যাবে না। সারাদিন যেমন তেমন। সন্ধ্যে হলে শীতের পোশাকের সাথে জুতা মোজা পড়ে সবাই মেতে উঠতাম ব্যাডমিন্টন খেলায়। অবশ্য মাঝে মাঝে আমাদের ভিন্ন রকমের ঝোঁক উঠতো। আমরা সবাই মিলে বুদ্ধি করতাম যে জোলাবাতি খেলবো। অবশ্য আমাদের কোয়াটারে একজন পোংটা বড় ভাই ছিল। সেই ভাইয়াই আমাদের কে উৎসাহ দিত জোলাবাতি খেলার।
তবে এই জোলাবাতি খেলার জিনিস পত্র যোগাড় কিন্তু আমাদের কে দিয়েই করানো হতো। ভাবছেন কি করে? তাহলে শুনুন। শীতের এই সময়টায় সপ্তাহে অন্ততঃ পক্ষে একবার করে আমরা জোলাবাতি খেলতাম। আর যেদিন আমরা জোলাবাতি খেলতাম সেদিন সকালে কোয়াটারের ছোটবড় সবাই ১০টাকা করে জমা দিতাম সেই বড় ভাইয়ের কাছে। উনি বাকী টাকাগুলো নিজের থেকে দিয়ে শীতের সব সবজি কিনে আনতো বাজার থেকে। সাথে থাকতো ডিম। তবে মাঝে মাঝে কেউ যদি বড় কোন ডোনেশন করতো তাহলে দুই একটু মাংসের মুখ দেখা যেত। আর না হয় সবজি খিচুড়ি দিয়েই চালিয়ে দেওয়া হতো আমাদের জোলাবাতি। তবে এই খাবার কিন্তু তখন সবাই খেত। মানে কোয়াটারের বড় মানুষগুলোও কিন্তু বাদ যেত না।
কিন্তু কথা হলো জোলাবাতির জন্য তো সবজি, ডিম বা মাংসের যোগান হতো। চাল আর ডাল আসতো কোথা হতে? তাই না? এবার চলুন জানা যাক চাল, ডাল আর পেঁয়াজ মসলার যোগান কোথা হতে হতো? আমাদের সেই পোংটা বড় ভাই আমাদের কে বড় একটি গামলা ধরিয়ে দিত। যাতে আমরা কোয়াটারের প্রতিটি ফ্লাট হতে এগুলো চেয়ে চেয়ে নিয়ে আসি। কেউ যদি যেতে রাজি না হতো তাকে পিপঁড়ার বাসার উপর কানে ধরে দাড়ঁ করিয়ে রাখা হতো বেশ কিছুক্ষন। আর কোয়াটারের মুরব্বীরা এই বিষয়ে তাকে কেউ কিছু বলতো না। কারন সবাই তাকে বেশ পছন্দ করতো। আর করবেই না কেন। সমস্ত কোয়াটারের ছোট ছোট বাচ্চাদের কে তো সেই বড় ভাই খুব আদর করতো। সবার জন্য কোয়াটারের মাঠে বেশ সুন্দর করে নানা রকমের খেলার জায়গা করে দিতেন তিনি। আবার কেউ পরীক্ষায় খারাপ করলে তার জন্যও শাস্তির ব্যবস্থা তিনিই করতেন।
যাক সে সমস্ত কথা। তো সবাই তার কথা মতো যেত প্রতিটি ফ্লাটে। কেউ দিত চাল, কেউ দিত ডাল, আর কেউ দিত মসলা। তবে এখানে আমরা তিন বান্ধবী ছিলাম। যারা নাকি এমন ঘটনায় কোন দিনও এক পা আগাইনি। আর এ জন্য কিন্তু আমাদের কে কোন শাস্তিও পেতে হয়নি। কি করে এমন হলো বলেন তো? আরে আমরা যে দুষ্টু ছিলাম। তাই প্রতিবার হাবলা দেখে তিনজন কে বের করে আমাদের পোশাক ওদের কে পড়িয়ে দিতাম। আর সবাই কে চকলেট কিনে দিতাম। যাতে এ কথা কাউ কেই না বলে। পরে যা হওয়ার তাই হতো। আমাদের পরিবর্তে প্রতিবার আমাদের সেই বন্ধুরা যেয়ে পিঁপড়ায় দাঁড়াতো। হি হি হি। আচ্ছা আপনারাই বলেন তো কারও ঘরের সামনে যেয়ে কি আর ভিক্ষকের মত করে চাল ডাল চাওয়া যায়? ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জা।
অবশেষে চাল ডাল উঠে আসলে সবাই বসে যেতাম কাটা, ধোয়া আর রান্নার কাজে সহায়তা করতে। আর বেশ জোড়ে জোড়ে গান বাজানো হতো। তখন বেশ আনন্দও হতো। তারপর রান্না শেষ হয়ে গেলে বেশ মজা করে খেয়ে দেয়ে বাসায় চলে যেতাম নাচতে নাচতে। আর যারা শাস্তি পাওয়ার ছিল তারা খাওয়ার পর পাচঁ মিনিট পিঁপড়ার বাসার উপর দাড়িঁয়ে থাকতো। ঐযে কোথায় আছে না, খায় কুদ্দুছে মোটা হয় জব্বার, এই আর কি। তবে একথা সত্য যে আমার মনে হয় আমাদের ছেলে বেলার মত এত দুরুন্ত পানায় আর কারও জীবনের ছেলেবেলা হয়তো কাটেনি।
শেষ কথা
শেষ কথা
আজও ছেলেবেলার সেই স্মৃতিগুলো মনে করে বেশ হাসি। জীবনের যদি কোন সুন্দর অনুভূতি থেকে থাকে তা হলো ছেলেবেলা। যা জীবন থেকে কখনও মুছে ফেলা যায় না। আর যাবেও না কোন দিন। তাই তো মাঝে মাঝে মনে হয় আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম। কি সুন্দর দুশ্চিন্তা মুক্ত ছিল আমাদের জীবন। জীবনে ছিল না কোন হতাশা বা না পাওয়ার বেদনা।
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আপনারাও তো বেশ চালাকি করতেন দেখছি। আপনাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিতেন। বেশ মজা লাগলো আপনার আজকের লেখাগুলো পড়ে। ছোটবেলা খুব আনন্দে কাটিয়েছেন। কোয়াটারে এরকম একজন বড় ভাই থাকলে আর কি লাগে। সবদিক থেকে দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু আয়োজন করা এবং সবাইকে মাতিয়ে রাখে। আপনাদের শৈশবের স্মৃতিগুলো পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
কি আর করবো বলেন?মাঝে মাঝে সে সব স্মৃতি গুলো মনে হলে খিল খিল করে হাসি। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে পাশে থাকার জন্য।
ছোটবেলায় আমরাও প্রায়ই ঝোলাবাতি খেলতাম। আসলে এটা যে কতোটা আনন্দের ছিলো, সেটা বলে বুঝানো যাবে না। তবে আমরা নিজেদের বাসা থেকে সবকিছু নিয়ে এবং অল্প অল্প টাকা দিয়ে নিজেরাই সবকিছু কিনে ঝোলাবাতি খেলতাম। আপনাদের ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং ছিলো। কারণ আপনাদের সেই বড় ভাইয়ের কথামতো সবার বাসায় গিয়ে চাল,ডাল এবং মসলা নিয়ে আসতো সবাই। আপনারা তিন বান্ধবী তো বেশ চালাক ছিলেন দেখছি। নিজেরা যাননি কালেক্ট করতে এবং শাস্তি ও পাননি। যাইহোক শৈশবের এমন মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর এবং উৎসাহ মূলক একটি মন্তব্য করার জন্য।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Tweet
আসলে ছোটবেলার সেই সমস্ত স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে আমার খুবই ভালো লাগে। আমি যখন একা থাকি তখন এভাবে স্মরণ করি আমার অতীত জীবনের কথা। কতই না মধুর ছিল ছোটবেলার দিনগুলি। ছিল না কোন টাকা পয়সা ইনকামের চিন্তা। যাইহোক সুন্দর একটি ব্লগ কিন্তু আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। পড়তে বেশ ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। আর আগে ১০ টাকায় অনেক কিছু পাওয়া যেত।
আসলে তখনই ভালো ছিলাম। ছিল না কোন টাকার টেনশন। ধন্যবাদ সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।
হ্যাঁ আপু এই ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা শেষ স্কুল জীবনের সেই স্বাধীন মুহূর্তগুলো সবাই মিস করি । কতই না স্মৃতি কতই না আনন্দ করার মুহূর্ত। যেটা এখন চাইলেও ফিরে পাবো না। আপনার সেই মুহূর্তে জোলাবাতি খেলার বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমরাও বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে উঠতাম। এখন শুধুই স্মৃতি যেগুলো আমরা এই প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করছি।
আসলে ছোট বেলায় আমাদের সবারই কম বেশী সুন্দর সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
ছোটবেলায় যারা এরকম জোলাবাতি রান্না করে নাই তাদের আসলে জীবনটাই বৃথা। কারণ এত মজার একটি বিষয় ছিল সেটা যারা এরকম আয়োজন করেছে বা যারা এরকম জোলাবাতি খেয়েছে শুধু তারাই বুঝতে পারবে। আমরা আমার জেঠাতো বোন চাচাতো ভাই সবাই মিলে জোলাবাতির আয়োজন করতাম। খুব মজা হতো তখনকার সময়। আর এখনকার বাচ্চাদেরকে দেখি সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। আমরা যেসব মজা করেছি সেগুলোর ধারে কাছেও নেই তারা। ধন্যবাদ আপু চমৎকার স্মৃতিচারণ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।