গল্প রাইটিং:-"স্মৃতির বাঁকে ভালোবাসা" II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

Image created by AI Tools
মিলন আর সানা—দুজনের জীবন যেন একই গল্পের দুই চরিত্র, একে অপরের সঙ্গে যার শুরুটা হয়েছিল শৈশবেই। তাদের বাড়ি পাশাপাশি, দেয়াল দিয়ে আলাদা হলেও মনের দূরত্ব কখনোই ছিল না। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে বারান্দা থেকে বারান্দায় চোখাচোখি, কখনো হাসিমুখে হাত নাড়া, আবার কখনো বই বা কলম আদান-প্রদান—সবই যেন ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্কুলে দুজনের আসনও ছিল কাছাকাছি। মিলন সবসময় চুপচাপ পড়াশোনায় মন দিত, আর সানা ছিল প্রাণবন্ত, হাসিখুশি। তবু তাদের মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত ভারসাম্য—একজনের কমতি আরেকজন পূরণ করত।
প্রতিদিনের মতোই স্কুল শেষে তারা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরত। রাস্তায় পুরনো আমগাছের ছায়া, ফুটপাতে খেলতে থাকা বাচ্চারা, চায়ের দোকানের কোলাহল—সব কিছুই ছিল তাদের একসাথে কাটানো স্মৃতির অংশ। বাড়ি ফিরে পড়াশোনার চাপ থাকলেও বিকেলের খেলাধুলা, কখনো আড্ডা, কখনো গল্প—এসব ছাড়া যেন দিন শেষ হতো না। সানা কখনো নিজের হাতের আঁকা ছবি দেখাত, আবার মিলন নতুন শিখে আসা গণিতের ধাঁধা বুঝিয়ে দিত। বন্ধুত্বের এই বন্ধন এতটাই দৃঢ় ছিল যে, কখনোই কেউ ভাবেনি এর বাইরে কিছু হতে পারে।
তবে সময় থেমে থাকে না। স্কুলের শেষ দিনে, যখন সবাই বিদায়ী অশ্রু আর হাসির মাঝে ব্যস্ত, সানা হঠাৎ অনুভব করল—এটাই হয়তো শেষবার, তারা একসাথে এই পোশাকে, এই বেঞ্চে বসছে। তার ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা জন্ম নিল, যেন মিলন ছাড়া তার চারপাশ ফাঁকা হয়ে যাবে। সেদিন সে প্রথমবার বুঝল, তার মন মিলনের প্রতি শুধু বন্ধুত্বের টানেই আবদ্ধ নয়—আরও কিছু আছে সেখানে, যা সে আগে বোঝেনি। কিন্তু এই অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস তখনও তার ছিল না।
কলেজে ভর্তি হয়ে সানা নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও মিলনের অনুপস্থিতি তাকে বারবার মনে করিয়ে দিত—জীবনের কিছু মানুষকে হারিয়ে ফেলা যায় না। অন্যদিকে মিলনও কলেজে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু সানার অভাব যেন তার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়াল। পড়াশোনা, নতুন বন্ধু—সবই ছিল, তবু ভেতরে কোথাও এক ফাঁকা জায়গা থেকে যেত। সে বুঝতে পারছিল না, এটা কি কেবল শৈশবের বন্ধুর অভাব, নাকি এর চেয়েও গভীর কিছু।
কয়েক মাস পর কলেজের ছুটিতে তারা আবার দেখা করল। বিকেলের নরম রোদে, পুরনো আমগাছের নিচে বসে দুজন অনেকক্ষণ কথা বলল। প্রথমে কলেজের গল্প, নতুন বন্ধুদের কথা, পড়াশোনার চাপ—সবই এল আলাপের মধ্যে। তারপর একসময় সানা হঠাৎ বলল, “তুমি জানো, আমি কখনো ভাবিনি আমাদের বন্ধুত্ব বদলাবে, কিন্তু কিছুই তো আগের মতো নেই।” মিলন অবাক হয়ে তাকাল, “কি বলছো তুমি, সানা?” সানা একটু হেসে, আবার গম্ভীর হয়ে বলল, “আমার মনে হয়… আমাদের সম্পর্কটা এখন কেবল বন্ধুত্বে আটকে নেই। হয়তো এটা ভালোবাসা।”
মিলনের বুকের ভেতর যেন কিছু একটা কেঁপে উঠল। সে লাজুকভাবে বলল, “আমি আসলে অনেকদিন ধরেই এই অনুভূতিটা পাচ্ছিলাম। তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে সোনালী স্মৃতি হয়ে আছে। আমি ভাবতাম, তুমি কি কখনো বুঝবে?” সানা শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল, “আমি বুঝেছি, মিলন। আমি তোমাকে ভালোবাসি।” সেই মুহূর্তে তারা দুজনই বুঝল—বন্ধুত্বের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তারা ভালোবাসার নতুন দিগন্তে পৌঁছে গেছে।
কিন্তু নতুন এই সম্পর্ক তাদের মনে কিছুটা ভয়ও ঢুকিয়ে দিল। মিলন একদিন সানাকে বলল, “আমরা কি পারব? বন্ধুত্ব আর প্রেম—দুটো একসাথে চালানো কি সম্ভব? আমি ভয় পাচ্ছি, যদি একদিন কোনো সমস্যায় আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।” সানা তার হাত ধরে ধীরে ধীরে বলল, “বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। প্রেম আসুক বা না আসুক, আমরা একে অপরকে হারাব না। এটা আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।” তাদের মধ্যে থাকা অদৃশ্য বন্ধন যেন আরও শক্ত হয়ে উঠল।
তবু বাইরের দুনিয়া সবসময় এমন সম্পর্ককে সহজভাবে নেয় না। কিছু বন্ধু মজা করে কথা বলত, আবার কিছু আত্মীয় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখত। “বন্ধুত্ব থেকে প্রেম? এটা কি টিকবে?”—এই প্রশ্ন যেন তাদের কানে বারবার বাজত। কিন্তু তারা জানত, এই সম্পর্ক আলাদা। সানা একদিন বলল, “সবাই ভাবে বন্ধুত্ব আর প্রেম একসাথে চলতে পারে না। কিন্তু আমরা প্রমাণ করব, তা সম্ভব।” মিলন হাসল, “আমরা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নই, আমরা সেরা বন্ধু। আর বন্ধুরা একে অপরকে সহজে ছেড়ে যায় না।”
সময়ের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। কলেজ শেষ করে দুজনেই কর্মজীবনে পা দিল। ব্যস্ততা বাড়লেও তারা একে অপরের জন্য সময় বের করত। কখনো সন্ধ্যার কফিশপে, কখনো ছুটির দিনে নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে তারা নিজেদের স্বপ্ন, ভয়, পরিকল্পনা শেয়ার করত। জীবনের ছোটখাটো সাফল্য থেকে বড় ব্যর্থতা—সবকিছু তারা একে অপরের সঙ্গে ভাগ করত।
একদিন নদীর ধারে বসে মিলন বলল, “তুমি জানো, আমি যতই বড় হই, বুঝি যে, ভালোবাসা শুধু রোমান্স না—এটা দায়িত্ব, বিশ্বাস আর প্রতিদিনের ছোট ছোট যত্নে গড়া।” সানা হাসল, “হ্যাঁ, আর সেই যত্নের শুরুটা হয়েছিল আমাদের বন্ধুত্ব থেকেই।”
তাদের সম্পর্কের এই যাত্রা ছিল ধীর, স্থির, কিন্তু শক্ত। শৈশবের স্মৃতি থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের কঠিন বাস্তবতা পর্যন্ত তারা একে অপরের হাত ধরে এগিয়েছে। আর এই পথ চলায় তারা বুঝেছে—বন্ধুত্বে গড়া ভালোবাসা কখনো ভেঙে পড়ে না, বরং সময়ের সাথে আরও দৃঢ় হয়।
শেষমেশ, তারা একে অপরকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিল। বিয়ের দিনে মিলন সানার কানে ফিসফিস করে বলল, “আমাদের গল্পটা শুরু হয়েছিল স্কুলের বারান্দায়, আর আজ এটা দাঁড়িয়েছে জীবনের মঞ্চে। তুমি আমার শুধু প্রেমিকা নও, তুমি আমার সেরা বন্ধু।” সানার চোখে জল এসে গেল, “আর তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
তাদের গল্প প্রমাণ করল—যে প্রেম সত্যি হয়, তা বন্ধুত্বের শেকড় থেকে জন্ম নেয়, আর সময়ের সাথে তা সত্ত্বায় পরিণত হয়। শৈশবের হাসি-কান্না, কৈশোরের দ্বিধা, যৌবনের স্বপ্ন—সব মিলিয়ে তাদের সম্পর্ক ছিল এক সুন্দর যাত্রা, যেখানে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা পাশাপাশি হাঁটতে শিখেছে। আর এই যাত্রা থামবে না কোনোদিন।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

বাহ আপু আপনারা খুব চমৎকার একটি গল্প লিখেছিন। তবে আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে প্রেম এমন এক জিনিস শত বাধার মাঝেও সবাই চেষ্টা করে ভালবাসার মানুষকে পেতে। আবার বন্ধুত্ব থেকেও প্রেম হয়। যেমনটি আপনার স্মৃতির বাঁকে ভালোবাসা নিয়ে লেখা পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম। আর মিলন আর সানা প্রমাণ করলো প্রেম আর বন্ধুত্ব নিয়ে ভালোবাসা।