গল্প রাইটিং:- “জীবনের অন্তিম অধ্যায়” II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

image.png

আরিয়ান ছিলেন তেপ্পান্ন বছরের এক খ্যাতিমান লেখক। জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন বই, সাহিত্য আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ঘেরা পরিবেশে। মানুষ তাকে সম্মান করত, তার লেখার প্রশংসা করত, তবে গভীরভাবে তিনি জানতেন—সব অর্জনের মাঝেও তার জীবনে একটা অদৃশ্য শূন্যতা থেকে গেছে। রাতের নির্জনতায় বা দীর্ঘ দিনের শেষে তিনি যখন একা হয়ে যেতেন, তখন সেই শূন্যতা যেন আরও গভীর হতো। তার এই নিঃসঙ্গ জীবনে আলো হয়ে এলো মায়া। মায়া ছিল ছোট শহরের এক কলেজপড়ুয়া তরুণী, বয়স মাত্র তেইশ। তার ভেতরে ছিল কৌতূহল, স্বপ্ন আর জীবনের প্রতি এক বিশেষ কৃতজ্ঞতা। আরিয়ানের একটি লেখা পড়ে সে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিল যে সাহস করে তাকে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলল। সেই চিঠিতে শুধু প্রশংসা ছিল না, বরং ছিল জীবনের ব্যাখ্যা, বেদনা আর স্বপ্ন নিয়ে গভীর কিছু চিন্তা।

চিঠি হাতে নিয়ে আরিয়ান যেন নতুন করে অবাক হলেন। এত কম বয়সে এমন চিন্তাভাবনা! তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মায়ার সঙ্গে একদিন দেখা করবেন। প্রথম দেখা হলো শহরের এক ছোট্ট কফিশপে। চারপাশে গুনগুন সুর বাজছিল, জানালার পাশে বসে হালকা রোদ ঝরে পড়ছিল টেবিলের ওপর। আরিয়ান আর মায়া দুজনেই প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন। বয়সের ব্যবধান যেন নীরবভাবে মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে কিছুক্ষণ পরই তারা আলাপ শুরু করলেন। মায়ার কণ্ঠে ছিল সতেজতা, তার চোখে এক ধরনের আগ্রহ। আর আরিয়ানের শান্ত স্বরে ছিল অভিজ্ঞতার ভার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের ভেতরের অস্বস্তি গলে গেল।

আরিয়ান হঠাৎ বললেন, “জীবনটা বইয়ের মতো, বয়স হলো কেবল পাতা ওল্টানো।” মায়া মুচকি হেসে উত্তর দিলো, “হয়তো তাই। তবে কিছু অধ্যায় এমন হয়, যা বারবার পড়তে ইচ্ছে করে, মুছে ফেলা যায় না।” এরপর থেকে নিয়মিত আলাপ চলতে থাকল। কখনও তারা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন, কখনও জীবনের একাকিত্ব বা আনন্দ নিয়ে কথা হতো। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা কেবল আলাপেই আটকে রইল না, বরং এক ধরনের আবেগের গভীরতায় গড়াতে লাগল। একদিন আরিয়ান স্বীকার করলেন, “তুমি জানো, তোমার চোখে আমি এমন আলো দেখি, যা আমাকে আবার লেখার টেবিলে ফিরিয়ে আনে।” মায়ার গাল লাল হয়ে উঠল। সে ধরা গলায় বলল, “তোমার লেখাই তো আমার ভেতরের আলো জ্বালায়, আরিয়ান।”

তাদের সম্পর্ক তখন বন্ধুত্ব পেরিয়ে প্রেমে রূপ নিচ্ছিল। তবে সেই প্রেমে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—বয়সের ফারাক। সমাজের চোখে সেটা সহজভাবে ধরা দেবে না। মায়া একদিন দ্বিধাভরা কণ্ঠে বলল, “মানুষ বলবে তুমি আমার বাবার সমবয়সী। আমি ভয় পাই না, তবে ভাবি, আমার পরিবার কি কখনো মেনে নেবে?” আরিয়ান শান্ত স্বরে বললেন, “ভালোবাসা বয়স দেখে আসে না, মায়া। আমাদের সম্পর্কের আসল শক্তি হলো বোঝাপড়া আর বিশ্বাস।”

কিছুদিন পর সাহস সঞ্চয় করে মায়া তার পরিবারকে জানাল। মা হতবাক হয়ে বললেন, “এই বয়সী মানুষের সাথে সম্পর্কটা সমাজে কেমনভাবে দেখাবে জানো? এটা তোমার ভবিষ্যতের জন্য সঠিক নয়।” মায়া মৃদু হেসে উত্তর দিলো, “মা, ভালোবাসা কোনো বয়স মানে না। হৃদয় যাকে চেনে, তার কাছেই শান্তি পায়।” অন্যদিকে আরিয়ানও তার পরিবারকে সত্যি কথা জানালেন। সন্তানরা অবাক হলো, কেউ কেউ কষ্টও পেল। তারা বলল, “আপনার বয়সে একজন তরুণী কেন আপনার সাথে জীবন কাটাতে চাইবে?” কিন্তু আরিয়ান বুঝতেন—এই প্রশ্নের উত্তর বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। কেবল সময়ই প্রমাণ করবে, সম্পর্কটা কতটা সত্যি। দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। আরিয়ান আর মায়া একসাথে সময় কাটাতে শুরু করলেন। কখনও নদীর ধারে বসে তারা গল্প করতেন, কখনও বইয়ের পাতায় হারিয়ে যেতেন। কখনও আবার নিঃশব্দে শুধু একে অপরের পাশে বসে থেকেও তারা শান্তি খুঁজে পেতেন।

এক সন্ধ্যায় নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আরিয়ান মায়ার হাত ধরে বললেন, “আমরা সবাই একদিন বুড়ো হবো। কিন্তু আমার চোখে তুমি চিরকাল তরুণী হয়ে থাকবে।” মায়া মুচকি হেসে তার হাত শক্ত করে ধরে বলল, “আমাদের সম্পর্কের বয়স নেই, আছে কেবল ভালোবাসার গভীরতা।”অবশেষে তারা সমাজের বাঁধা উপেক্ষা করে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। সমালোচনা এসেছিল, তিরস্কারও এসেছিল, কিন্তু তারা জানত—তাদের সিদ্ধান্তই সঠিক। সময়ের সাথে সাথে চারপাশের মানুষও ধীরে ধীরে মেনে নিতে শুরু করল। কেউ কেউ অবাক হলো, কেউ সমালোচনা করলো, তবে অনেকে তাদের সাহসের প্রশংসা করলো। আরিয়ান আর মায়া প্রমাণ করল—ভালোবাসা কোনো নিয়ম মানে না, কেবল হৃদয়ের ডাক শোনে। জীবনের শেষ বয়সে এসে আরিয়ান পেলেন এক নতুন সূচনা। আর মায়া তার যৌবনের উচ্ছ্বাসে খুঁজে পেল এক শান্ত আশ্রয়। তারা দুজনেই বুঝলেন—জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় অনেক সময় বইয়ের শেষ দিকেই এসে লেখা হয়।

কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.34
JST 0.036
BTC 109045.05
ETH 4404.36
USDT 1.00
SBD 0.83