একটি হৃদয়বিদারক গল্প - মায়েরা কখনও বৃদ্ধ হয়না

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন বন্ধুরা ? আশা করি সবাই বেশ ভালই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালই আছি। তবে কয়েকটি দিন যাবৎ বেশ দূর্বিসহ জীবন কাটিয়ে আজ আবার আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম।

জীবন চলার পথে আমাদের কে প্রতিদিন কতশত অপিরিচিত মানুষের সান্নিধ্য যে লাভ করতে হয় তা বলা বাহুল্য। রাস্তায়, বাসে হাসপাতালে কোথাও না কোথাও আমরা পথ চলতে এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হই যাদের গল্প আমাদের কাছে রয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। যারা হয়তো তাদের মনের কষ্টগুলো কে আপন বা কাছের কারো কাছে শেয়ার করতে পারে না চক্ষু লজ্জায়।

এইতো কয়েকদিন আগের কথা। ছোট ভাই কে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। তখন ছিল খুব ভোর। চারদিকে ছিল ঘন কুয়শা আর কনকনে ঠান্ডা। আমরা কোন সিএনজি না পেয়ে উঠে গেলাম লাব্বাইক বাসে। যেটা শ্যামলী শিশু মেলা পর্যন্ত যায়। বাসে উঠে কোন সীট না পেলেও বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরই একটা সিট পেয়ে গেলাম। খেয়াল করে দেখলাম আমার পাশে বসে আছে একজন বৃদ্ধা মহিলা। বয়স না হলেও ৭০ এর মত হবে। কিন্তু খালাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব শক্ত সামর্থ্য। উনার সাথে গল্প হলো বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে। উনি যাচিছলো জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে। কিছুদিন আগে সেই হাসপাতালেই তিনি তার এক চোখ অপারেশন করিয়েছেন ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে। সে দিন আবার যাচ্ছেন আরেক চোখ অপারেশন করতে।কিন্তু ভদ্র মহিলা একাই যাচ্ছেন। কেউ নেই তার সাথে। কথায় কথায় তার অনেক গল্পই শোনা হলো। তাই আজ সেই গল্পই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

মায়েরা কখনও বৃদ্ধ হয়না.png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

জানা গেল উনার নাম আছিয়া। আছিয়া খালা, খুব অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর টানাপোড়নের সংসার। তার স্বামী যেন টানাপোড়নের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল। একে একে দুই ছেলে আর দুই মেয়ে হওয়ার পর আছিয়া খালার স্বামী চলে যান বিদেশে।এদিকে আছিয়া খালা সন্তানদের নিয়ে স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করেন। আর সন্তানদের পড়াশুনা করান। সন্তানরাও বড় হতে থাকেন। একসময়ে আছিয়া খালার স্বামী দশ বছর বিদেশে থাকার পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখন বাংলাদেশে কোন কাজ কাম না পাওয়ায় আছিয়া খালার স্বামী ঠিক করে সে কাঁচামাল বিক্রি করবে।

তাই আছিয়া খালার স্বামী কাওরান বাজার হতে পাইকারী কাঁচামাল আনার জন্য প্রতিদিন রাত দশটায় কাওরান বাজার চলে যায়। আর কাঁচামাল নিয়ে ভোরে ফিরে। কিছুক্ষন বাসায় বিশ্রাম নিয়ে কাচাঁমাল নিয়ে বাজারে চলে যায়। এভাবে দিনের পর দিনে পরিশ্রম করে শুধুমাত্র সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করার জন্য। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আছিয়া খালা ও তার স্বামী সন্তানদের কে মানুষ আর শিক্ষিত করার মহা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

একসময়ে দুই মেয়ে কে লেখাপড়া শিখিয়ে ভাল এবং শিক্ষিত ছেলের হাতে তুলে দেন তারা। আজ তাদের মেয়ের জামাইরা বড় বড় ব্যবসায়ী। মেয়েদের সুখের অন্ত নেই।হঠাৎ একদিন আছিয়া খালার স্বামী মারা যান। আছিয়া খালা তার বাকী দুই সন্তান অর্থাৎ বাকী দুই ছেলে কে অনেক কষ্টে মানুষ করেন। বড় ছেলে আজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আর ছোট ছেলে পড়াশুনা করার জন্য বাহিরে চলে গেছেন। ছোট ছেলে সেখানে কাজরে ফাঁকে ফাঁকে পার্ট টাইম চাকুরীও করেন। দুই ছেলের চোখের মধ্যমণি আছিয়া খালা। তারা মাকে জীবন দিয়ে ভালবাসেন।

আছিয়া খালার স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব একাকিত্ব জীবন যাপন করেন আছিয়া খালা। তাই সিদ্ধান্ত নেন বড় ছেলে কে বিয়ে করাবেন। তাই খুব সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দেন তিনি। কিন্তু বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই মায়ের প্রতি সেই ভালবাসার যেন কমতি ঘটতে শুরু করে বড় ছেলের। ছেলের বউ ঘুম থেকে উঠে রান্না করবে, এমন আশা করাটাই যেন বৃথা। ‍ ছেলের বউ আবার পড়াশুনা করে। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা করে কলেজের দিকে রওনা হয়ে যান। এদিকে আছিয়া খালার যেন কোন প্রকার রেস্ট নেই। সেই ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে হয় আছিয়া খালা কে। পদের পদের রান্না করে ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য টেবিল সাজিয়ে রাখেন আছিয়া খালা। এভাবেই যেন দিন যাচ্ছিল।

আছিয়া খালা হঠাৎ একদিন ছেলে কে ডেকে বলে দেখ বাবা আমি একা মানুষ কি করে এত বড় সংসার টা চালাই? তখন আছিয়া খালার ছেলে আছিয়া খালা কে বলে, না পারলে কাজের বুয়া রাখতে। কিন্তু তার স্ত্রীর পড়াশুনা থাকায় সে ঘরের কাজে সহায়তা করতে পারবে না। এভাবে দিনের পর দিন কেটে যায়। আছিয়া খালার বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে বাসা বাধঁতে শুরু করে নানা রং এর রোগ ব্যাধি।যার চিকিৎসা চলে বিদেশে থাকা ছেলের টাকায়।

এভাবেই দিনের পর দিন আছিয়া খালার কেটে যায়। আছিয়া খালা ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে একবার রান্না করে। আবার দুপুরে আর রাত্রে রান্না করে। এরই মধ্যে মাঝে মাঝে লোকাল কোন বাসে চরে চলে যায় সরকারি কোন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। সাথে থাকে না তার কেউ। এমন কি নিজের কোন মেয়েও তার সাথে যায় না। মাঝে মাঝে ছেলের বউ কে কাজের কথা বললে, আবার ছেলে আলাদা খাওয়ার হুমকি দেয়। তাই আছিয়া খালা আর ছেলে কে বা ছেলের বউ কে কিছুই বলে না। প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে রান্না বান্না, দুপুরে রান্না বান্না এবং রাতের রান্না বান্না আছিয়া খালাই করে। আর বাসায় একজন কাজের বুয়া রাখা হয় যে, বাকী কাজ করে দেয়।

আছিয়া খালা আজ সন্তান হারানোর ভয়ে নীরবে সয়ে যাচ্ছে সন্তানের সকল বেদনা। সন্তান কে কি কষ্ট করেই না মানুষ বানালো। সু শিক্ষায় শিক্ষিত করে ইঞ্জিনিয়ার বানালো। কিন্তু কি হলো সেই শিক্ষার মূল? কি দাম হলো?। যদি এই শিক্ষা মায়ের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা, ভালবাসা, দায়িত্ব আর কর্তব্য শিখাতে না পারে। যে শিক্ষা আছিয়া খালাদের বৃদ্ধ হতে দেয় না, সে শিক্ষা কি খুবই প্রয়োজন?

কেমন লাগলো বন্ধুরা আপনাদের কাছে একটি হৃদয়বিদারক গল্প-মায়েরা কখনও বৃদ্ধ হয়না ? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

image.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

এমন আছিয়া খালার অভাব নেই আশেপাশে খুজলে অনেক পাওয়া যাবে। আজকালকার সন্তানেরা শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে সু সন্তান হয়ে উঠতে পারে না। যে মা তাদের জন্য এত কষ্ট করলো তাকেই ফেলে দেয়। এত বয়সে মহিলাটি একা একাই বাসে করে নিজের চোখের অপারেশন করতে যাচ্ছে আসলেই ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। ছেলেরা যাই হোক মেয়েদের কথাটি শুনে আরো খারাপ লাগলো।

 2 years ago 

আসলে ছেলেমেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার আগে মনুষ্যত্বের উন্নত করা উচিত তা না হলে বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার কষ্টের শেষ থাকে না। কিছু কিছু ছেলে মেয়ে হয় অকৃতজ্ঞ। বাবা-মা এত কষ্ট করে মানুষ করার পরেও তারা বড় হয়ে সেসব কথা ভুলে যায়। এই আছিয়া খালার কথাই চিন্তা করেন সব দায়িত্ব কি তার ছেলেদের একার? মেয়েদের তো কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের দেশের মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের পরে মনে করে যে বাবা-মার দায়িত্ব শুধুমাত্র ভাইদের । তাদের কোন দায়িত্ব নেই। এই মন মানসিকতার চেঞ্জ হলে অনেক বাবা মারই এই দুর্দশা দেখতে হয় না। তাছাড়া বিয়ের পরও ছেলেরা কেন যে বউয়ের কথায় বাবা-মাকে এত কষ্ট দেয় বুঝতে পারি না।

 2 years ago 

আছিয়া খালার মত হাজারো নারী নিরবে নিভৃতে কষ্টের জীবন যাপন করে যাচ্ছে। নিজের মেয়েরাও সংগ দিচ্ছে না কতটা অসহায় সেই ভদ্রমহিলা। মেয়েরা যেখানে মাকে সম্মান দেখাচ্ছে মা সেখানে ছেলের বউ কি সম্মান দেখাবে বলেন। যাই হোক খুব মন খারাপ হলো আছিয়া খালার গল্প পড়ে। আশা করছি আছিয়া খালারা শান্তির সুস্থ্য জীবন যাপন করবে। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

অনেক আছিয়া খালা আমাদের সমাজে নিরবে নিভৃতে কেঁদে যাচ্ছেন। সুশিক্ষিত করে গড়ে উঠালেই সেআদর্শ সন্তান হয় না। যদি সেই সন্তানের মায়ের
প্রতি মনুষত্ববোধওশ্রদ্ধা থাকে তবেই সে আদর্শ সন্তান। আজকাল এসব কমই দেখা যায়। ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে গল্পটি পড়ে অনেক কষ্ট লাগলো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60270.61
ETH 2411.66
USDT 1.00
SBD 2.43