পুজো পরিক্রমা ২০২৩ : কাশী বোস লেন
নমস্কার বন্ধুরা,
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে নারীরা আজ সমাজের পুরুষের সাথে সমানতালে এগিয়ে চলেছে। একের পর এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারাও পুরুষের থেকেও কোন দিক থেকে কম নয়। সভ্যতার এত উন্নতি করার পরেও নারীদের প্রতিকূলতা যেন কাটছেই না। সারাজীবন ধরেই নানান অবহেলা ও লড়াই করেই তাদের জীবনটা কাটাতে হচ্ছে। হয়তো নারী নির্যাতন আগের থেকে বর্তমান সময়ে অনেকটাই কমেছে তবে পুরোপুরি এখন নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীদের অত্যাচারটা বেশি হয়ে থাকে। নারী নির্যাতনের পাশাপাশি রয়েছে নাবালিকা পাচার। যেটা আমাদের সমাজের কলঙ্ক। হাজার হাজার নাবালিকা আমাদের গ্রাম থেকে, শহর থেকে সবার অজান্তেই হারিয়ে চলেছে। কত নারী আজ না ফেরার পথে হারিয়ে গেছে। সেই বিষয়টাকে তুলে ধরেই এবারে কাশী বোস লেনের পুজোর থিম, "চাহি না হতে উমা"।
৮৬ বছরে পদার্পণ করে কাশী বোস লেন নাবালিকা পাচার এবং নারীর নির্যাতনের মতন দুটো ঘৃণ্য বিষয়কে সমাজের সামনে তুলে ধরেছে। নাবালিকা পাচারের বিরুদ্ধে দেশ ও পৃথিবী জুড়ে প্রচার চললেও তা থামানো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশ গুলিতে নাবালিকা পাচার এক দুরারোগ্য রোগে পরিণত হয়েছে। গ্রামে গঞ্জের কত উমা আমাদের অগোচরে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা এই। পাচার হয়ে তাদের কাউকে দিয়ে অসামাজিক কাজ করানো হচ্ছে বা কারো অঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সমাজের এই কালো দিক বেশির ভাগ মানুষের কাছে অজানা থেকে যায়। সেই বিষয় টিকে সমাজের আয়নায় তুলে ধরার প্রচেষ্টাতে কাশী বোস লেনের এবছরের ভাবনা।
হাতিবাগান সর্বজনীনের মন্ডপ দেখে বেরিয়ে গিয়ে কিছুটা হেটে যেতেই পৌঁছে গেলাম ঐতিহ্যবাহী কাশী বোস লেনের পুজো মণ্ডপে। রাত বাড়ার সাথে সাথে পুজো মণ্ডপে ভিড় বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই ধীরে ধীরে মূল মণ্ডপে ঢুকে পড়লাম। অসাধারণ আলোক সজ্জার মধ্য দিয়ে গোটা পুজোর মন্ডপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে পাটের চট, কাপড় ইত্যাদি।
মন্ডপের ভেতরে এক বিশাল ঘূর্ণায়মান বেদী তৈরি করা হয়েছে যার উপরে কিছু নাবালিকার অবয়ব মূর্তি তাদের ঘিরে রয়েছে সমাজের সেই নিকৃষ্ট জীব নাবালিকা পাচারকারী। যাদের শকুন হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্ডপে বিভিন্ন ভাবে নারী পাচারের সাথে যে নোংরা দিক জড়িয়ে রয়েছে সেটা তুলে ধরার প্রচেষ্টা পুজো কমিটি সর্বতভাবে করেছে। গর্ভ গৃহে অনেক নারীর ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে আর তার ঠিক উপরেই একটা খোলা দরজা।
সেই উমাদের উদ্ধার করতে পারবেন একমাত্র মা দুর্গা। তাদের বের করে আমাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। আর সেই কাজে বেরিয়ে আসতে হবে জ্যান্ত মা দুর্গা রূপী নারীদের। যারা সমাজের এই নোংরা দিকটাকে রুখে দিতে পারবে।
মন্ডপের ঠিক মধ্যিখানে বিরাজিত হয়ে আছেন জগৎ জননী মা দুর্গা।
দাদা পুজো পরিক্রমার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে জাস্ট মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সত্যি বলতে এত সুন্দর সুন্দর থিমের পূজা হয় দেখতে খুব ইচ্ছা করে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে শেয়ার করার জন্য।
আসলেই দাদা আমাদের সমাজে এখনও নারীদেরকে অবহেলার চোখে দেখা হয়। তবে এটা মোটেই ঠিক নয়,কারণ নারীরাও পুরুষদের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। আর নাবালিকা পাচারের কথা একসময় অনেক বেশি শোনা গেলেও, এখন তেমন একটা শোনা যায় না আমাদের দেশে। যাইহোক কাশী বোস লেন দুটি ঘৃণ্য বিষয়কে সমাজের সামনে তুলে ধরেছে। আশা করি তাদের এই ম্যাসেজের মাধ্যমে অনেকেই সচেতনতা অবলম্বন করবে। যাইহোক থিমের সাথে তাদের সম্পূর্ণ আয়োজন এককথায় দুর্দান্ত লেগেছে দাদা। প্রতিটি ফটোগ্রাফি চমৎকার ভাবে ক্যাপচার করেছেন। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
নারীদের আজকের যে অবস্থান এবং তারা যে পুরুষদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, এর পিছনে কিন্তু তাদের অজস্র পরিশ্রম রয়েছে দাদা। যদিও গ্রামাঞ্চলে এখনো নারী নির্যাতন হয়, তবে শহর অঞ্চলেও কিন্তু এই ব্যাপারটা কম নয় একেবারে। হয়তো আমরা বুঝতে পারি না। কাশী বোস লেন যে নাবালিকা পাচার এবং নারীর নির্যাতনের মতন দুটো ঘৃণ্য বিষয়কে সমাজের সামনে তুলে ধরেছে, এটা কিন্তু বেশ শিক্ষামূলক সবার জন্য। যদিও এবার পুজোয় ঘুরতে ওখানে যাওয়া হয়নি, তবে তোমার মাধ্যমে ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বেশ ভালো লাগছে।