চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালা : পর্ব ২
নমস্কার বন্ধুরা,
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা খননকার্যের মাধ্যমে এবং পরবর্তী সময়ে এবং বিভিন্ন পাওয়া ভাস্কর্য গুলি খুব সুন্দরভাবে চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত করা রয়েছে। প্রথম পর্বে এক ঝলক আপনাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছি। আসলে যে জিনিসগুলো আমাদের বঙ্গের পুরনো ইতিহাসের কিছুটা হলেও ধারণা দেয় সেই নিদর্শন গুলো চন্দ্রকেতুগড়ের আশপাশের বিভিন্ন ছোট গ্রামের যেন খনির আকারে সঞ্চয়িত আছে। যেগুলো একমাত্র খননকার্য হলেই উদ্ধার সম্ভব। আমার ধারণা আরো নিদর্শন যা এখনো মাটির তলায় আছে সেগুলো উদ্ধার হলে সেই সময়ের মানুষের জীবন যাপন কেমন ছিল সেটার ধারণা হয়তো আমরা কিছুটা পাব।
পূর্বের পর্বে আমরা সেই সময়ের মাটির তৈরি কিছু নিদর্শন দেখেছিলাম। প্রথমে দেখে নিই অ্যাম্ফোরা জাতীয় কিছু নিদর্শন। অনেকটা ফ্লাস্কের মতো আকৃতির পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি আধারকে অ্যাম্ফোরা বলে। লম্বাটে আকারের অ্যাম্ফোরা নীচের অংশটি শঙ্কু আকৃতির। আবার অনেক ক্ষেত্রে অ্যাম্ফোরার দুপাশে কাঁধ উচু করা হাতলও আছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, অ্যাঙ্কোরা তেল বা কোনো বিশেষ তরল রাখার কাজে ব্যবহার করা হতো।
আরেকটি বিষয় যা অ্যাম্ফোরাকে অন্যান্য নিদর্শনের থেকে আলাদা করে তা হলো অ্যাম্ফোরার ভিতরের অংশ। যা রজন জাতীয় কোনো বিশেষ পদার্থ দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হতো যার ফলে অ্যাম্ফোরাতে ঢালা কোনো তরল সহজে1 শুকিয়ে যেতো না। তাছাড়াও অ্যাম্ফোরা গায়ে নানা ধরনের লিপি ও বিভিন্ন ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাম্ফোরার ব্যবহার মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বেশি হতো। আর চন্দ্রকেতুগড়ে পাওয়া অ্যাম্ফোরা সেই সময়ে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ গুলির সাথে চন্দ্রকেতুগড়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ হিসেবে জ্বলজ্বল করছে।
অ্যাম্ফোরা পরেই দেখে নেবো সেই সময়ের পশুর মুখ বিশিষ্ট খেলনা গাড়ির কিছু নিদর্শন। পৃথিবীর যেকোনো সভ্যতার উল্লেখযোগ্য উপকরন হলো পুতুল ও খেলনা। কল্পনা ও বাস্তব জগতের অনবদ্য সৃষ্টি পুতুল ও খেলনা। আর চন্দ্রকেতুগড়ে তার ভিন্নতা নেই। সেখানে যে প্রাচীন সময় থেকেই খেলনার প্রচলন ছিলো তার নিদর্শন আমরা পাই বিভিন্ন পোড়ামাটির খেলনার মাধ্যমে। খেলনা গুলি যে কারণে বেশি নজর কাড়ে সেটি হলো খেলনা গুলিতে হাতি, ভেড়া, ঘোড়া, কুমির মতো নানা ধরনের পশুর মুখ। আর পোড়া মাটির খেলনাতে চাকার ব্যবহার অন্য মাত্রা এনে দেয়।
দাদা চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালার প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম। আজকে দ্বিতীয় পর্ব পড়েও দারুণ লেগেছে। আসলে পুরনো নিদর্শন গুলো দেখলে অনেক কিছু জানা যায়। সেখানকার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মাটি খনন করে অনেক কিছুই বের করেছে। আশা করি মাটি খনন করে আরও অনেক কিছু বের করতে পারবে। যাইহোক প্রতিটি ফটোগ্রাফির নিদর্শন বেশ উপভোগ করেছি দাদা। বিশেষ করে অ্যাম্ফোরা দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। যাইহোক এতো সুন্দর সুন্দর নিদর্শন আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।