মুক্তিযুদ্ধের কালো সময় গুলি। (পর্ব-০২)|| by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ১৬ই অগ্রহায়ণ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | হেমন্তকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



Maybe by@kazi-raihan_20231125_213506_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



মুক্তিযুদ্ধের এই গল্পের প্রথম পর্বে হিয়া এবং কেয়া দুই বোনের কথাটা শেয়ার করেছিলাম আর সর্বশেষ পর্যায়ে এসে হিয়ার পরিবারের সবাইকে পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করে আর হিয়ার বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল বলে পাকহানাদার বাহিনীদের কাছে শহীদ হয় সব মিলিয়ে এক রাতের মধ্যেই হিয়া তার পরিবারের সমস্ত সদস্যকে হারিয়ে ফেলে।

রাত তিনটার সময় যখন হিয়ার বাড়িতে তার বাবার লাশ নিয়ে আসে তখন মুক্তিযোদ্ধার সদস্যরা দেখতে পেল সেখানে এসে পাখহানাদার বাহিনী কেয়া এবং তার মাকে গুলি করে হত্যা করেছে আর হিয়া সেই লাশের পাশে চুপচাপ বসে আছে কোন কথা বলতে পারছে না। বাইরে লোকজন দেখে হিয়া মনে করল হয়তো তারা গুলির শব্দে বাড়িতে এসেছে কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারল আসলে তারা এসেছে মূলত তার বাবার লাশ নিয়ে। সকালে হিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে দাফন করা হয় হিয়া বাড়িতে একা হয়ে পড়ে পৃথিবীতে তার আপন বলে আর কেউ রইল না এক রাতের অন্ধকারে সে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেল। কেয়া শুধু তার বোন ছিল না সে ছিল তার ছোটবেলার খেলার সাথী আর তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত সে চিন্তা করছিল আর মনে কষ্ট পাচ্ছিল সেই সাথে তার বাবা-মায়ের স্নেহের কথা মনে পড়ে আরো মন খারাপ করছিল। হিয়ার মনে জেদ তৈরি হলো সে এই ঘটনার বদলা নিবে। হিয়া নিজেকে আরো কঠোরভাবে তৈরি করতে লাগলো যেন সে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে পারে। এভাবে চুপচাপ থেকেই হিয়ার কয়েক দিন পার হয়ে গেল তারপর হঠাৎ একদিন গ্রামের এক স্কুলের পেছনে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে অনেকগুলো মিলিটারি। হিয়া দূর থেকে দেখেই বুঝতে পেরেছিল তারা হয়তো কোন নতুন ফুন্দি করছে আর হিয়া সেই বিষয়টা জানার জন্য নিজেকে আত্মগোপন করল। মিলিটারি বাহিনীরা কি প্লানিং করছিল সেটা পুরোপুরি শোনার চেষ্টা করল এবং পরবর্তীতে সেটা মুক্তি বাহিনীর কাছে গিয়ে সবকিছু জানালো।



twins-1703406_1280.jpg

Source



হিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্তারিত বিষয়গুলো জানানোর পরে তারা আগে থেকেই সাবধান হয়ে যায় আর মিলিটারিদের প্ল্যানিং আর সম্পূর্ণ হয় না। এভাবে প্রতিনিয়ত হিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করত সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে খাবার দাবার পৌঁছে দেয়া এবং যত ধরনের সেবা করা দরকার প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতো। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সহযোগিতা করতে করতে অনেকদিন কেটে যায় হঠাৎ একদিন হিয়ার নানা হিয়াকে সেখান থেকে নিতে আসে তবে হিয়া চেয়েছিল তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিবে সে তাই সে তার নানার সাথে যেতে রাজি হয় না। হিয়ার নানা হিয়াকে অনেক কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু হিয়া কোনমতেই তার নানার কথায় রাজি হয় না পরবর্তীতে হিয়ার নানা আবার বাসায় ফিরে যায়। হিয়ার নানা বাসায় ফিরে যাওয়ার পরে অবশ্য হিয়ার একটু মন খারাপ হয় কিন্তু সে নিজেকে আবার শক্ত করে আর দেশের হয়ে আবার নতুন করে কাজ শুরু করে। হিয়া আবার আগের মত মুক্তিবাহিনীদের বিভিন্ন কাজের সাহায্য করতে থাকে। মুক্তিবাহিনীরা যে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল তার পাশের একটি গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী হামলা দেয়। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দেয় আর সেই গ্রামের সমস্ত মেয়েদেরকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। হিয়া এই দৃশ্য দেখে দূর থেকেই সেটা লক্ষ্য করেছিল আর তাদেরকে পিছু নিচ্ছিল। হঠাৎ গাড়িটা ঠিক হিয়াদের বাড়ির পাশে গিয়ে থামে আর সেই সুযোগে হিয়া বাড়িতে গিয়ে শুকনা মরিচের গুঁড়া আর কিছু পাথর নিয়ে আসে। কিছু সময় অপেক্ষা করা দেখে হিয়া বুঝতে পারে হয়তো তারা কারো জন্য অপেক্ষা করছে আর সেই সুযোগেই হিয়া মিলিটারিদের গায়ে পাথর ছুড়ে মারে। হিয়া যখনই মিলিটারিদের গায়ে পাথর ছুড়ে মারে ঠিক তখনই মিলিটারিরা হিয়ার উপরে ধেয়ে আসে। যখনই মিলিটারীরা হিয়ার উপরে ধেয়ে আসে ঠিক তখনই মরিচের গুঁড়া তাদের চোখে ছিটিয়ে দেয় আর সেই সুযোগেই হিয়া মেয়েগুলোকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়।



war-469503_1280.jpg

Source



যেহেতু হিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের হয়ে কাজ করতো তাই সে এই ঘটনাটা আগে থেকেই মুক্তিবাহিনীর সাথে শেয়ার করেছিল আর যখনই পাক বাহিনীর চোখে মরিচের গুঁড়া যায় সেই সুযোগে মুক্তিবাহিনীরা আক্রমণ করে আর সেখানেই পায়খানাদার বাহিনীর সদস্য গুলো মৃত্যুবরণ করে। গাড়িতে থাকা গোলাবারুদসহ সব সরঞ্জাম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীরা তাদের আস্তানায় চলে যায় এভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা গোলাবারু সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটি আরো শক্ত করতে থাকলো। একইভাবে হিয়া প্রতিনিয়ত তাদেরকে সাহায্য করতে থাকল আর এভাবেই পর্যায়ক্রমে হিয়ার দিন পার হতে থাকলো। পর্যায়ক্রমে এভাবে হানাদার বাহিনীর ব্যর্থতার ফলে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায় আর মুক্তিবাহিনীরা যুদ্ধে জয়লাভ করে আর সারাদেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। চারিদিকে আনন্দের ধুম পড়ে যায় হিয়া অনেক খুশি হয় সে তার মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যের যারা হত্যা করেছিল তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। চারিদিকে খুশির জোয়ার বইছিল সেই সাথে হিয়ার মনেও বেশ আনন্দ বই ছিল কিন্তু কিছুদিন পরে যখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায় তখন সে আবার তার বাবা-মা এবং তার বোনকে খুব মিস করতে শুরু করে। সেই কাল রাতের কথা বারবার মনে পড়তে থাকে এক রাতের ব্যবধানে কিভাবে তার পরিবারের সব সদস্যকে সে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

একই সাথে মা বাবা আর আদরের বোন কেয়ার লাশ তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। বাবার হাত ধরে বোনকে নিয়ে মেলায় গিয়ে পুতুল কেনার দৃশ্য মনে পড়ে তার চোখে জল চলে আসে। পৃথিবীতে তার দেখার মতো তার নানা ছাড়া আর কেউ নেই সে প্রতিনিয়ত অতীতের কথা গুলো মনে করতে থাকে আর চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। এখনো যেন তার মনের মধ্যে সেই রাতের কথা ফুফরে উঠে।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 11 months ago 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছুদিন আগেও আপনি আমাদের মাঝে একটি পর্ব শেয়ার করেছিলেন, ঠিক তেমনি আজকে দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করেছেন। আপনার আজকের এই পোস্টের মধ্যে থেকে বেশ অনেক ঘটনা জানতে পারলাম। যেখানে পাক হানাদারকে মুক্তিবাহিনারা যথেষ্ট চেষ্টার মাধ্যমে নিপাত করে এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায়। আর এভাবেই তো আমাদের দেশ স্বাধীনতার পথ শুগম করে।

 11 months ago (edited)

চলছে ডিসেম্বর মাস। এ মাস হলো আমাদের বিজয় মাস। আর আপনি এই মাসকে সামনে রেখে বেশ সুন্দর একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।সত্যি বলতে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এদেশে হিয়ার মত হাজারও হিয়া ছিলেন। যারা এভাবে মুক্তি যোদ্ধাদেরকে সহায়তা করে গেছেন। অনেক সুন্দর ছিল ভাইয়া আজকে আপনার গল্পটি।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

হিয়া ছিলো প্রচন্ড সাহসী একজন মেয়ে, আর তাই প্রতিনিয়ত এভাবে সাহায্য করতে পেরেছে মুক্তিযোদ্ধাদের। হিয়ার পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবারকে তখন মেরে ফেলেছিল পাক হানাদার বাহিনীরা। হিয়া তো প্রতিশোধ নিতে পেরেছে তার মা বাবা এবং বোনের খুনীদেরকে হত্যা করে। কিন্তু অনেকেই সেটা করতে পারেনি। যাইহোক অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর, আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 75924.44
ETH 2901.21
USDT 1.00
SBD 2.67