মায়ের হাহাকার (পর্ব-০২)|| by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ৩০শে ভাদ্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বৃহস্পতিবার | শরৎকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



Maybe by@kazi-raihan_20230914_223417_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



গ্রামের ছোট্ট একটি এলাকায় নদীর পাড়েই ছিল রিঙ্কু নামে এক ছেলের বাড়ি। গ্রামের সবাই মিলে নদীর ধারে ফুটবল খেলতে যায় আর হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে এবং পর্যায়ক্রমে ঝড় উঠে আসে। ছেলেগুলো ঝড় উঠে আসার কারণে নদী পার হয়ে আর বাড়িতে ফিরতে পারে না তাই তারা পানিতে নেমে ঝড় থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সেই সাথে পানিতে সবাই মিলে গোসল করছিল আর মজা নিচ্ছিল যার মধ্যে রিংকু ছিল সবার চেয়ে ছোট। অন্যরা সবাই সাঁতার কাটতে জানতো কিন্তু রিংকু বয়সে সবার চেয়ে অনেক ছোট হওয়ায় সে সাঁতার কাটতে পারত না। সবার গোসল করা দেখে রিঙ্কু যখন পানিতে গোসল করতে যায় তখন সে হঠাৎ করেই পানিতে পড়ে যায় এবং স্রোতে ভাসতে ভাসতে একটি ছেলের পা ধরে বাঁচার চেষ্টা করে কিন্তু ছেলেটি ভাবে হয়তো নদীতে থাকার কোন প্রাণী বা ভয়ংকর কিছু তার পা ধরেছে এই ভেবে সে চিৎকার করে নদী থেকে উঠে পড়ে এই পর্যন্ত প্রথম পর্বে শেয়ার করেছিলাম এখন সেটা সংক্ষেপে বললাম।

ছেলেটি যখন চিৎকার দিয়ে পাড়ে উঠে আসে তখন রিংকু আরো স্রোতের মাঝে তলিয়ে যায় কিন্তু বাকি সবাই অন্য কিছু ভেবে ভয় পেয়ে পানি থেকে উঠে আসে। যেহেতু সবাই ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে পানি থেকে উঠে এসেছিল তাই যার যার নিজের মত নিজেদের বাড়িতে চলে যায় শুধু রিংকু ছাড়া। এদিকে বিকেল পেরিয়ে গেল ঝড় বৃষ্টি সব থেমে গেল আর রিঙ্কুর মা রিঙ্কুকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে কিন্তু রিঙ্কু আর বাড়ি ফিরে আসে না তাই দেখে রিঙ্কুর মা কান্নাকাটি শুরু করে দিল। হঠাৎ করেই ছেলেটা কোথায় গেল আর কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গ্রামের সব ছেলেরাই বাড়ি ফিরে এসেছে কিন্তু রিঙ্কু এখনো কেন বাড়িতে ফিরে আসলো না তার মা কান্না করছে। রিংকুর মা যখন চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে দিল তখন তাদের পাড়া-প্রতিবেশী সবাই বাড়িতে এসে রিংকুর মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করার পরে রিংকুর মা বলল সেই দুপুরবেলায় বাড়ি থেকে বের হয়েছে এখনো সে বাড়িতে ফেরেনি আমার ছেলে কোথায় গিয়েছে কি হয়েছে আমার ছেলের এই বলছিল আর কান্নাকাটি করছিল।



children-1822704_1280.jpg

Source



রিঙ্কুর মায়ের কান্নার আওয়াজে ধীরে ধীরে গ্রামের সব লোক তাদের বাড়িতে এসে ভিড় জমাতে থাকলো সেই সাথে ছোট ছেলেগুলো ধীরে ধীরে তাদের বাড়িতে আসতে থাকল। পাড়া প্রতিবেশী সবাই সেখানে চলে আসে এবং নদী পাড়ে খেলা করতে যাওয়া ছেলেগুলোর মধ্য একটি ছেলে বলে রিঙ্কু তো আমাদের সাথে খেলতে গিয়েছিল। তখনই রিংকুর মা চিৎকার করে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে বাবা তোমরা কোথায় খেলতে গিয়েছিলে বলো আমার ছেলে কোথায়?? ছেলেটি তখন বলে আমরা দুপুরবেলা নদীর পাড়ে খেলতে গিয়েছিলাম আর খেলা শেষ করে নদীতে গোসল করে বৃষ্টির পরে বাড়িতে এসেছি। এ কথা শোনার পরে রিংকুর মায়ের মনে সন্দেহ জাগে যে রিঙ্কু আবার নদীতে নামেনি তো?? তখন ছেলেটির কাছে জিজ্ঞেস করা হয় নদীর পারে কয়জন খেলা করতে গিয়েছিল আর কে কে খেলা করতে গিয়েছিল। ছেলেটি বিস্তারিত সবার নাম বলার পরে একে একে সবগুলো ছেলেকে সবকিছু জিজ্ঞেস করা হয় তখন যে ছেলেটির পা রিঙ্কু তলিয়ে যাওয়ার সময় ধরেছিল সেই ছেলেটি বলে আমরা যখন নদীতে গোসল করছিলাম কিছু একটা আমার পা ধরেছিল আর আমি ভয় পেয়ে সরিয়ে দিয়ে উপরে উঠে আসি, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে আমরা সবাই দ্রুত বাড়িতে চলে এসেছিলাম কিছু একটা আমার পা ধরেছিল তাই আমরা সবাই অনেক ভয় পেয়েছিলাম। এই কথা শোনার পরে রিংকুর মা চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয় আর মহল্লার লোকজন সবাই ভয় পেয়ে যায় আসলে ছেলেটি পানিতে ডুবে তলিয়ে যায়নি তো ?? তাদের মধ্য থেকে তখন আরও একটা ছেলে বলে ওঠে হ্যাঁ কাকিমা আমি রিংকুকে নদীতে নাতে দেখেছিলাম এমনকি আমরা তাকে একবার রাগ করে নদীর পাড় থেকে উপরে তুলে দিয়েছিলাম তারপরেও দ্বিতীয়বার সে আবার নেমেছিল। বলতে থাকে আমরা নদীর মধ্যে খেলছিলাম তাই রিঙ্কু কখন পানিতে নেমেছে আর কত পানিতে নেমেছে সেটা খেয়াল করতে পারিনি তারপর যখন কিছু একটা পা ধরেছিল তখন তো আমরা সবাই আরো ভয় পেয়েছিলাম আর ভয় পাওয়ার কারণে দ্রুত নদী থেকে উঠে আমরা বাড়িতে চলে আসি। ছেলেটি তখন বলে তাহলে কি কিছু একটা আমার পা ধরেছিল সেটা কি রিঙ্কু ছিল??



sea-6975501_1280.jpg

Source



ছেলেটি যখনই পরলো আমার যে পা ধরেছিল সেই মনে হয় রিঙ্কু ছিল তখন সবাই আরো ভয় পেয়ে গেল। তখন ছেলেটি বলতে থাকে ও হয়তো তলিয়ে গিয়েছিল আমার পা ধরে উঠে আসতে চেয়েছিল এসব কথা শুনে রিংকুর মা কান্নায় ভেঙে পড়ে আর ছেলে হারানোর শোক তাকে আরো কাবু করতে থাকে। গ্রামের কিছু লোকজন তখন নদীতে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু নদীতে স্রোত ছিল যার কারণে তাকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি ছোট রিঙ্কু সেই হারিয়ে গেল তাকে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া গেল না। সেদিন নদীতে শেষবারের মতো নেমেছিল আর নদী থেকে উঠতে পারেনি ছোট্ট রিঙ্কু। মায়ের মনে আজও ভাসতে থাকে সেই ছোট্ট রিঙ্কুর ছবিটা। এখনো রিংকুর মা ডাক শোনার প্রবল ইচ্ছা জাগে তার মায়ের, রিংকুর কন্ঠে মা ডাক শোনার আশায় সে এখনো অপেক্ষা করছে যদিও তার ছেলে হয়তো আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। দুচোখ ভরে জল আসে তার কথা মনে পড়লে। রিংকুর মা বারান্দায় বসে কান্না করে আর উঠানের দিকে তাকিয়ে থাকে যে কখন যেন রিঙ্কু এসে চিৎকার করে মা মা বলে ডাকবে আর তার কোলে এসে উঠবে তাকে জড়িয়ে ধরবে।

ছোট ছেলেকে হারানোর পরে মা কতটা কষ্ট পেতে পারে সেটা হয়তো আমাদের কারোর অজানা নয়। ঠিক ততটাই কষ্ট পাচ্ছে রিঙ্কুর মা।রিঙ্কুর কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত তার মায়ের কাছে স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। যাদের বাচ্চা সন্তান আছে তারাই এই কষ্টটা বেশি বুঝতে পারবে। গল্প শেষে একটা কথাই সবাইকে বলতে চাই আপনার সন্তানকে সব সময় চোখে চোখে রাখুন কেননা এরকম ঘটনার স্বীকার আপনিও হতে পারেন বিশেষ করে যারা গ্রামের বাস করে তাদেরকে বেশি সতর্ক হতে বলছি।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last year 

আমার কাছে এই গল্পটার দ্বিতীয় পর্ব পড়ে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আমার তো মনে হচ্ছে ছেলেটা পানিতে এমন ভাবে তলিয়ে গিয়েছিল যে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। যার কারণে তাকে এত খোঁজাখুঁজি করার পরেও পাওয়া যায়নি ‌। আসলেই সন্তান হারালে মায়ের কি রকম কষ্ট হয় এটা বুঝতেই পারছি। মা এখনো তার ছেলের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। অনেক সুন্দর ছিল সম্পূর্ণটা এটাই বলতে হয় ‌।

 last year 

গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

এই গল্পটা সত্যি অনেক বেশি দুঃখজনক ছিল‌। আসলে ছোট বাচ্চা হারানোর কষ্ট টা কত বেশি, এটা একটা মা ছাড়া আর কেওই তেমন একটা অনুভব করতে পারে না। আমার তো চোখে জল চলে এসেছে এই গল্পটার দ্বিতীয় পর্ব পড়ে। ছোট্ট রিঙ্কু কোথায় হারিয়ে গিয়েছে এটা অজানা থেকে গেল সবার মাঝে। আর তার মা তো এখনো মনে করে তার ছোট্ট রিঙ্কু তার কাছে ফিরে আসবে।

 last year 

আসলে ছোট বাচ্চার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে সেটা দুঃখজনক হওয়া স্বাভাবিক।

 last year 

গল্পটি পড়ে সত্যিই বেশ কষ্ট লাগলো। সন্তানহারা মায়ের অবস্থা কেমন হয় সেটা আমাদের সবারই জানা। তবে রিংকু যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল নিজের প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না রিংকুর। আসলে দুনিয়াতে রিংকুর আয়ু এতটুকুই ছিলো। অবশ্যই প্রতিটি মা বাবার উচিত নিজের সন্তানদের খেয়াল রাখা। যাইহোক গল্পটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবেন।

 last year 

এমন ঘটনায় কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক । মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65792.35
ETH 2676.19
USDT 1.00
SBD 2.90