সোনা মিয়া (পর্ব-০২)|| by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ৮ই মাঘ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | সোমবার | শীতকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



20240114_133547_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



প্রথম পর্বে সোনা মিয়া তার পরিবারের খরচ বহন করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছিল সেই বিষয়গুলো শেয়ার করেছিলাম। পরবর্তীতে সোনামিয়া তার মেয়ে বিয়ের খরচ যোগাতে সুন্দরবনের গভীরে মৌয়ালদের সাথে মৌচাকের মধু সংগ্রহের জন্য গিয়েছিল। তারা সুন্দরবনের অনেক গভীরে চলে গিয়েছিল তাই সেখানে তারা বাঘের গর্জন সুনে সে জায়গা ত্যাগ করতে চায়। বাঘের গর্জন শুনেই তারা সবাই লুকিয়ে পড়ে আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন তারা এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে পড়বে। এই পর্যন্ত প্রথম পর্বে শেয়ার করেছিলাম আর এখন পরবর্তী ঘটনাটা শেয়ার করব।

সবাই ভয়ে লুকিয়ে ছিল কিন্তু বাঘের গর্জন ধীরে ধীরে কাছে থেকে শোনা যাচ্ছিল অর্থাৎ মনে হচ্ছিল বাঘ যেন গর্জন ছাড়তে ছাড়তে তাদের দিকে আসছে। তারা সবাই আরো ভয় পাচ্ছিল সেই সাথে গাছের উপরে থাকা বানরের দল আরো বেশি লাফালাফি করছিল তারা সবাই বুঝতে পারছিল আজকে বোধহয় আর রক্ষা নেই। কিছু সময় গর্জন শোনার পর হঠাৎ করেই পরিবেশটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল বানরের দল সেখান থেকে পালিয়েছে আশপাশে কোন শব্দ নেই যে যার মত লুকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই জঙ্গলটা এমন শ্মশানের মতো নির্জন হয়ে যাওয়ার কারণটা কেউ বুঝতে পারছি না। সোনামিয়া ভাবছিল হয়তো বাঘ চলে গিয়েছে তাই সে সবার প্রথমেই গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে বলছিল বাঘ বোধহয় চলে গিয়েছে তোমরা সবাই বেরিয়ে এসো আমরা দ্রুত এই জায়গা থেকে চলে যাব। সবাই অনেক ভয়ে ভয়ে ছিল তাই তারা যে যেখানে লুকিয়ে ছিল সেখান থেকেই আশপাশের পরিবেশটা দেখার চেষ্টা করছিল আসলে বাঘ আদৌ চলে গিয়েছে নাকি সেটা দেখছিল। মূলত বাঘ সোনামিয়াকে দেখে শিকারের ভঙ্গিতে ছিল কিন্তু সোনা মিয়া সহ তার দলের লোকজন কেউ সেটা বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করেই একটি বাঘ এসে সোনামিয়ার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর যখনই সোনা মিয়ার উপরে বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই দৃশ্য তার দলের লোকজন দেখে যে যার মত দৌড়ে নৌকার দিকে যেতে থাকে।



amur-tiger-4155922_1280.jpg

Source



বাঘ এসে সোনামিয়ার মুখের উপর আক্রমণ করে আর নাকের উপর দিয়ে কামড় দিয়ে বসে। সোনা মিয়া চিৎকার করতে পারছিল না সে বাঘের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিল কিন্তু কোনমতেই পেরে উঠছিল না। সোনা মিয়া নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বাঘের সাথে লড়াই করছিল অন্যদিকে তার সঙ্গীরা জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে নৌকার দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই সোনামিয়া বাঘের মুখের উপরে হাত দিয়ে বাঘের নাক খোঁজার চেষ্টা করছিল। সোনামিয়া চেষ্টা করছিল সে যেন বাঘের নাকের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে পারে ঠিক কিছুক্ষন চেষ্টার পরেই সোনামিয়া বাঘের নাকের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে যখনি জোরে টান দিল তখনই বাঘ সোনামিয়াকে ছেড়ে দিল। সোনামিয়াকে আবার আক্রমণ করার আগেই সোনামিয়া বাঘের চোখের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিল আর বাঘ সোনামিয়াকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালালো। সোনামিয়ার নাক আর মুখের উপর থেকে কিছুটা মাংস বাঘ তুলে নিয়ে গিয়েছে। সোনা মিয়া কোন মতে অনেক কষ্টে নদীর পাড়ে গেল আর দেখতে পেল তার সঙ্গীরা নৌকা নিয়ে কিছু দূরে চলে গিয়েছে। সোনামিয়ার চিৎকার করার মত শক্তি ছিল না সে শুধু দুহাত উপর করে তাদেরকে ইশারা করছিল কিন্তু তারা তো জীবন বাঁচানোর জন্য দ্রুত সুন্দরবনের এরিয়া ত্যাগ করার চেষ্টা করছিল। মুখ থেকে রক্ত সোনামিয়ার বুক বেয়ে মাটিতে পড়ছে। হঠাৎ করেই এই দৃশ্যটা নৌকায় থাকা একজনের নজরে আসে আর তখনই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে আর বলে সোনামিয়াকে দেখা গিয়েছে। সবাই পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় পিছনে তাকিয়ে দেখে হাত উঁচা করে একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে মুখ থেকে বুক পর্যন্ত রক্তে পুরোটা রক্তে লাল। তারা বুঝতে পারল হয়তো বাঘের হাত থেকে সোনামিয়া কোন মত বেঁচে ফিরেছে। তারা নৌকা ঘুরিয়ে সোনামিয়াকে নৌকায় তুলে দ্রুত গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করলো।



boat-1511602_1280.jpg

Source



নৌকায় থাকা সোনামিয়ার দলের লোকজন গামছা দিয়ে তার মুখের কিছুটা অংশ চেপে বেঁধে রাখার চেষ্টা করল যাতে রক্ত ঝরা বন্ধ হয়। দ্রুত সোনামিয়াকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল আর তাদের বাড়িতে খবর দেওয়া হল সোনামিয়ার উপরে বাঘের আক্রমণ হয়েছে। তার চার কন্যা সন্তান আর তার স্ত্রী দৌড়ে হাসপাতালে চলে আসলো। সোনা মিয়ার মেয়ে সোনামিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো বাবা পৃথিবীতে আমাদের আর কিছুরই দরকার নেই তুমি শুধু আমাদের পাশে থাকো আমরা নিজেরাই সবকিছু ম্যানেজ করে নিব এই বলে কান্না করতে লাগলো। বেশ কিছুদিন পর সোনামিয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেল। সোনামিয়ার বড় মেয়ের একটি ভালো পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে হল কারণ সোনামিয়ার বড় মেয়ে দেখতে অনেক সুন্দরী ছিল তাই তার মেয়ের সৌন্দর্য দেখে তাদের ঘরের বউ করে নেয়। সোনামিয়ার জামাই বেশ ভালো মানুষ তাই তার শশুরের কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়। ধীরে ধীরে সোনা মিয়ার সংসারে শান্তি চলে আসে অভাব অনটন দূর হয়ে যায়। আর্থিকভাবে অনেকটা সচল হয়ে যাওয়ার পরে সোনামিয়ার পরবর্তী মেয়ে গুলোরও ভালো পরিবারে বিয়ে হয় আর সোনামিয়া আর সোনামিয়ার স্ত্রীর সুখের দিন চলে আসে। সোনামিয়ার বড় মেয়ের সুন্দর একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয় আর এভাবেই নাতিপুতি নিয়ে সোনা মিয়ার দিন পার করতে থাকে। যেহেতু সোনামিয়া বাঘের সাথে লড়াই করে নিজের জীবন বাঁচিয়েছে তাই এলাকায় সোনামিয়া এখন বাঘা সোনা মিয়া নামে বেশি পরিচিত।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি কবিতা লিখতে ভালবাসি, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ভালোবাসি। তবে বাইক নিয়ে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 6 months ago 

এই গল্পের প্রথম পর্বটি আমার পড়া হয়নি তবে দ্বিতীয় পর্বটি যখন প্রথমের দিকে পড়ছিলাম গা বেশ শিউরে উঠেছিল। সত্যি সোনা মিয়ার প্রশংসা করতে হয় বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরেছে। যাক অবশেষে মেয়ে, স্ত্রী এবং নাতি নাতনিকে নিয়ে এখন সুখে সংসার করছে জেনে ভালো লাগলো। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

গল্পটি পড়ে সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 6 months ago 

সোনা মিয়া তো একেবারে অসাধ্যকে সাধন করলো। বাঘের সাথে লড়াই করে জেতার পর, গ্রামের মধ্যে সোনা মিয়া চমৎকার একটি নামও পেয়ে গেল। যাইহোক অবশেষে সোনা মিয়া তার সব মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরেছে এবং তার সংসারে শান্তি এসেছে। এখন সোনা মিয়া একেবারে সার্থক। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 6 months ago 

সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 6 months ago 

ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন। যদিও এর আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি তবে শেষ পর্ব পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। বিপদে পড়লে বোঝা যায় কে কত আপন? সোনামিয়াকে বাঘে আক্রমণ করেছে আর সেই সময় সঙ্গীরা চাইলে কিন্তু সবাই মিলে বাঘের হাত থেকে সোনা মিয়াকে রক্ষা করতে পারতো। কিন্তু তা না করে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য সবাই পালিয়ে গেল। তবে সোনা মিয়ার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। সে বুদ্ধি দিয়ে বাঘকে আক্রমণ করে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে তার মেয়ের ভালো জায়গায় বিয়ে হওয়ায় মেয়ের জামাই তাদের সংসারের হাল ধরে। ফলে তাদের সংসারে সুখ শান্তি ফিরে এসেছে আর সবাই খুব শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57800.38
ETH 3127.30
USDT 1.00
SBD 2.40