মৃত্যু। || by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ২রা ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বৃহস্পতিবার | বসন্ত-কাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



20240215_185736_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



মৃত্যু এমন এক সত্য যার সাথে প্রতিটা মানুষের সাক্ষাৎ হবে। শুধু মানুষ নয় প্রতিটা জীবের মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এক কথায় যার জন্ম আছে তার মৃত্যু অনিবার্য। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন আজকে এই টপিক নিয়ে কথা বলছি কেন?? গতকালকে আমার মামাতো বোনের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে কমিউনিটিতে তেমন কোনো কাজ করিনি শুধু একটি পাওয়ার আপ পোস্ট রেডি করা ছিল সেটাই রাতের বেলায় পোস্ট করেছি। আসলে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য তবে কিছু কিছু মৃত্যু যেন মেনে নেওয়া যায় না। দেখুন মানুষ জন্মের পরে ৫০ থেকে ৬০ বছর বেঁচে থাকার পরে মৃত্যুবরণ করে অর্থাৎ ৬০ বছরের উর্ধ্বে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় সেটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিন্তু ১৯ বছর বা ২০ বছর বয়সে যদি কেউ মারা যায় সেটা কিন্তু সহজে মেনে নেওয়া যায় না। যদিও মানুষের জন্মের ক্ষেত্রে সিরিয়াল আছে কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে সিরিয়াল নেই। সব সময়ই চাই সৃষ্টিকর্তা যেন এমন মৃত্যু কাউকে না দেয় যেটা তার পরিবার সহ্য করতে হিমশিম খাবে। ৬০ বয়সের বেশি একজন মানুষ যদি মারা যায় তাহলে তার পরিবারের মানুষ মনে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে পারে বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই মারা গিয়েছে কিন্তু এই অল্প বয়সের মৃত্যু গুলো মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়।

আমি রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে শুনতে পেলাম আমার মামাতো বোন শৈলী মারা গিয়েছে। প্রথমে এই সংবাদটা শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না মনের কাছে বলছিলাম হয়তো কোথাও কোন ভুল হচ্ছে তাই মনে মনে চিন্তা করছিলাম হয়তো একটু অসুস্থ হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি আছে এমন কিছু হতে পারে কিন্তু সেটা যে সত্যি হয়ে যাবে কখনো কল্পনা করিনি। পরবর্তীতে আরো ফোন কল পেয়ে বিষয়টা বিশ্বাস হলো কিন্তু তারপরেও ব্যাপারটা কেন যেন স্বপ্নের মত লাগছিল। আমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতো সেই ভাইয়া ডাকটা যেন কানের কাছে এসে বেজে উঠেছিল। পরবর্তী দ্বিতীয় ফোন কলের মাধ্যমে যখন সংবাদটা শুনলাম তখন কিছু সময় আমি যেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমি কি শুনেছি বা কি বলবো সেটা কিছুই যেন অনুভব করতে পারছিলাম না। বলতে গেলে পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কিছু সময় চুপ করে থাকার পরে আমি ধীরে ধীরে আম্মুর সামনে গেলাম আর কথাটা বলতেই আম্মু নিজেও চমকে উঠল। কথাটা শুনে আম্মু কান্না শুরু করে দিল তখন চিন্তা করছিলাম আসলে মানুষের জীবন কতটা মূল্যহীন মুহূর্তের মধ্যেই সব অহংকার সৌন্দর্য ভালোবাসা বিলীন হয়ে যায়। মানুষের নিঃশ্বাস বন্ধ হলেই তার জীবনটা মূল্যহীন হয়ে যায়। যাই হোক তার কিছু সময় পরে আব্বুকে ফোন দিলাম, আব্বু মামার সাথে কুষ্টিয়ায় ছিল, আব্বু বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলল।



মামাতো বোনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো বারবার মনে পড়ছিল তাকে নিজের আপন বোনের মতোই দেখেছি কারণ আমার ছোটভাই রিফাত আর শৈলীর বয়স কাছাকাছি। শৈলী কয়েক মাসের বড় আর রিফাত কয়েক মাসের ছোট কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কি নির্মম পরিহাস এই বয়সেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল। কে জানত তার পৃথিবীতে আসার মেয়াদ ১৯ বছরেই উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। কালকে রাত পর্যন্ত আমাদের পরিবারে সবাই কত হাসি খুশি ছিল কিন্তু রাত ৯ টার পর থেকেই এমন শোকের ছায়া আমাদেরকে ঘিরে ধরবে সেটা তো কেউ ধারণা করতে পারিনি। রাতের বেলায় অ্যাম্বুলেন্সে করে শৈলীকে আমাদের এলাকায় নিয়ে আসা হলো। আমার নানা বাড়ি আর আমাদের বাড়ির দূরত্ব খুব একটা দূরে নয়, একদম পাশাপাশি। রাতের বেলায় এই সংবাদটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকাটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল শুধু চারিদিক থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল।



যখন এম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে আসা হলো আর শৈলীকে যখন বারান্দার উপরে নিয়ে রাখা হলো তখন সবার কান্না দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। তারপরে যে কি হয়েছিল আমার সঠিক মনেই নেই। তাকে যে আমি একবার দেখবো, আমার বোনটাকে যে শেষবারের মতো দেখব আমি সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম। তার চোখ বন্ধ করে থাকা চেহারাটা দেখার সাহস আমার মনে ছিল না। ভোর রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত আমি তার মুখটা তখনও দেখিনি কেননা আমার মনে সাহস হচ্ছিল না যে আমার বোনটা চিরতরে চলে গিয়েছে। শৈলী আর কখনোই আমাকে ভাইয়া বলে ডাক দিবে না। আমি যখনই খাটিয়ার কাছে যাচ্ছিলাম সবার কান্না দেখে বারবার চোখের পানি ঝরাচ্ছিলাম। দুপুরে ১টা গড়িয়ে যাওয়ার পরে যখন যখন জানাজার নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তখন শেষবারের মতো আমি আমার বোনের মুখটা দেখেছি। মুখের উপর থেকে সাদা কাপড়টা যখনই সরানো হলো আমার বোনের ফুটফুটে মুখটা দেখে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।



দুপুর দুইটার সময় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজ শেষে নানা বাড়ির বড় পুকুর পাড়ে আমার নানার যে কবর আছে তার পাশেই আমার মামাতো বোনকে কবর দেওয়া হয়। ১৩ তারিখ রাত থেকে মামি একটানা কেদেই যাচ্ছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি আমার মামাতো বোন তার জন্য আমার এত খারাপ লাগছে আর তিনি তো তার মেয়েকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে তাহলে তার কতটা খারাপ লাগছে। একটা কথা চিন্তা করে আরও বেশি খারাপ লাগছে এরকম সাদামাটা মেয়ে এই যুগে তো পাওয়াই যায় না আর আমরা এমন একটা বোন পেয়েও হারিয়ে ফেললাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই দোয়া আমার বোনটাকে যেন জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন আমিন।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


20231121_224724-01.jpeg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 4 months ago 

আপনার মামাতো বোনের মৃত্যুর কথা শুনে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। আমার নিজেরও চোখে জল চলে এসেছে আপনার মামাতো বোনের মৃত্যুর কথা শুনে। আচ্ছা ভাইয়া আপনার মামাতো বোন কিভাবে মারা গেল?? সে কি কোনরকম অসুস্থ ছিল নাকি হঠাৎ করে মারা গিয়েছে?? সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি যেন আপনার মামাতো বোন পরপারে ভালো থাকে। আপনার বোনটাকে যেন জান্নাতুল ফেরদাউস দান করে এটাই কামনা করি সব সময়।

 4 months ago 

আপনার পোস্ট পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো প্রিয়জন হারানোর বেদনা গুলো মনে উঁকি দিয়ে চোখের কোনে জল চলে আসলো।আসলে স্বাভাবিক মৃত্যু গুলোকেই মেনে নেয়া যায় না আর শৈলী ছোট ফুটফুটে একটি তরতাজা মেয়ে তার শোক কিভাবে আপনারা কাটাবেন আমার জানা নেই।প্রিয়জন হারানোর বেদনা মাঝে মাঝেই কাঁদায় এই বেদনা আমৃত্যু থেকে যায়।খুব খারাপ লাগলো ভাইয়া পোস্ট টি পড়ে।কি হয়েছিলো শৈলীর খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

 4 months ago 

আপনার মামাতো বোনের মৃত্যুর সংবাদটা পেয়ে আসলে আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে কারণ এত কম বয়সে তার হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে। আপনার মামাতো বোন কিভাবে মারা গেছে অসুস্থ ছিল নাকি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়েছে। তা জানতে ইচ্ছে করছে।আসলে প্রিয়জনদের মৃত্যু এভাবে মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু বিধির বিধান মেনে নিতে হবে। দোয়া করি আল্লাহ যাতে তাকে জান্নাতে নসিব করে।

 4 months ago 

এরকম অল্প বয়সে যদি কারো মৃত্যু হয় তা মেনে নেওয়া সত্যি একেবারে অসম্ভব। ‌‌ তেমনি আপনা মামাতো বোনের মৃত্যুর ব্যাপারটা আপনারা কেউই মেনে নিতে পারতেছেন না। সন্তানকে হারিয়ে আপনার মামি এভাবে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারতেছি। আপনার বোনের কি হয়েছিল এটা জানতে খুব ইচ্ছে করতেছে ভাই। যাইহোক আপনার বোনের জন্য অবশ্যই দোয়া করি। আপনজন যদি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে সত্যি খুব কষ্ট হয়।

 4 months ago 

আসলে মৃত্যু আমাদের সকলের নিকট আসবে এইটাই প্রকৃত সত্য। তবে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। আপনার পোস্ট পড়ে সত্যিই বেশ খারাপ লাগছে। আসলে এধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বেশ কষ্টকর। আপনার মামাতো বোনের মৃত্যুর কথা হৃদয় নাড়া দেয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু এইটুকু প্রার্থনা অপারে যেন খুব ভালো থাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 64664.97
ETH 3401.05
USDT 1.00
SBD 2.31