অসহায় সুমাইয়া (শেষ পর্ব) ||১০% লাজুক খ্যাকের জন্য by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ -২৩শে মাঘ | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | সোমবার | শীতকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



20230204_205928_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



গত পর্বে এই বাস্তব গল্পটির অর্ধেক অংশ শেয়ার করেছিলাম আর আজকে বাকিটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। সুমাইয়া যখন ১৫ বছর তখন তার ভাই তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নাই এবং বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করে। সুমাইয়া দেখতে একটু কালো ছিল যার জন্য কোন ভালো ছেলে তাকে বিয়ে করতে রাজি হল না আবার তার মা-বাবাকেও না থাকায় কোন ভালো সম্বন্ধন তার জন্য আসছিল না। মা মারা গিয়েছে আর বাবা নতুন একটি বিয়ে করে তাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। এরকম একটি মেয়েকে অবশ্য ভালো পরিবারের কেউ বিয়ে করতে চায় না কারণ বর্তমান সমাজে সবাই শুধু সুন্দরী আর ভালো পরিবারের মেয়ে খুঁজতে চায়। দীর্ঘদিন সুমাইয়ার ভাই বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে থাকে এবং সবশেষে তাদের বাড়ি থেকে সাত আট কিলোমিটার দূরে একটি ছেলের খোঁজ পায়। ছেলেটি পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। সুমাইয়ার বাড়ির লোকেরা ছেলে পক্ষের বাড়িতে যায় এবং সম্বন্ধন পাকা করে আসে। তবে এই বিয়েতে আগে থেকেই সুমাইয়ার কোন মত ছিল না কারণ সে এই ছোট্ট বয়সে এখন বিয়ে করতে রাজি নয়। তারপরেও পরিবারের অভাব এবং দুরবস্থার কারণে তাকে বিয়ে করতেই হবে। তার বড় ভাই ছেলেটির সাথে তার বিয়ের কথা পাকা করে ফেলল আর মাত্র ১৫ বছর বয়সে গোপনে সুমাইয়ার বিয়ে হয়ে গেল। স্থানীয় মাতব্বর বলল মেয়েটির এখনো বয়স বোঝেনি। তাই খুব গোপনে যেন বিয়ের কাজ সেরে ফেলা হয়। রাত্রিবেলায় সুমাইয়ার বিয়ে হল আর সুমাইয়াকে ছেলে পক্ষ তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল।



worried-girl-413690_1280.jpg

Source



এই ছোট বয়সে সুমাইয়াকে তার স্বামীর সংসার করতে হচ্ছে। ১৫ বছর বয়সে সাধারণত একটি মেয়ে স্কুলে যায় তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করবে। বাবা মায়ের কাছে বিভিন্ন আবদার করবে কিন্তু তার বিপরীতে সুমাইয়াকে একটি পরিবারের সমস্ত সাংসারিক কাজ করতে হচ্ছে। আসলে তার পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ ছিল না হয়তো মা থাকলে আজকে সুমাইয়ার পাশে থাকতো কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক আগেই সুমাইয়ার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে। সুমাইয়া এখন এতটাই অসহায় যে তার দুঃখের কথা কারো কাছে শেয়ার করবে সেই মানুষটাও নেই। এদিকে সুমাইয়ার স্বামী ট্রাক ড্রাইভার হওয়ায় ঠিকমতো বাসায় থাকে না আর তার শাশুড়ির বকবক সব সময় শুনতে হয়। মা হারা এই ছোট্ট মেয়েটির এখন কুলহারা অবস্থা। সে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সবকিছু নীরব সহ্য করার সিদ্ধান্ত নিল। তার প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মুহূর্ত অনেক কষ্টে কাটতে লাগলো। সে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করত যেন তার এই কষ্ট দূর হয়ে যায়। কিন্তু তার যেন আরো বড় বিপদ দিনের পর দিন সামনে আসতে লাগলো। সুমাইয়ার স্বামী নেশা করা শুরু করতে লাগলো। সাধারণত যারা ট্রাক ড্রাইভার তারা বেশিরভাগ নেশা করে। সুমাইয়ার স্বামী অনেক রাত করে বাড়ি আসতো আর ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সুমাইয়ার উপরে চড়া হয়ে যেত।



girl-2696947_1280.jpg

Source



প্রতিদিন রাতে নেশা করে বাড়ি আসলেও সময় আগে কখনো ভালো কথা বলতো না। বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করত আবার দিনের বেলায় সুমাইয়ার শাশুড়ি তার উপরে চড়াভাবে কথা বলত সব মিলিয়ে তার দুরবস্থা যেন বেড়েই চলেছে। সে একদিন বসে চিন্তা করছিল হয়তো আজকের দিনে আমার মা বেঁচে থাকলে আমি এই কষ্টের কথাগুলো মায়ের কাছে বলতে পারতাম আর আমার মা একটা সমাধান দিতে পারতো। একদিন সুমাইয়া অতিষ্ট হয়ে তার ভাইয়ের কাছে ফোন দিল এবং তার স্বামীর ব্যবহার এবং তার শাশুড়ির ব্যবহার সবকিছু খুলে বলল। তার ভাই মাঠে কাজ করে এজন্য বলল আমার মাঠের কাজ শেষ হলেই আমি তোদের বাড়িতে আসবো এই বলে সুমাইয়াকে শান্তনা দিতে লাগলো। এদিকে সুমাইয়া তার ভাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে যে তার ভাই এসে সব বিষয়গুলো একটু ঠিক করিয়ে দিবে। একদিন সন্ধ্যাবেলায় সুমাইয়ার স্বামী সুমাইয়াকে মারধর করে আর সুমাইয়া মনের অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সে কোথায় যাবে সেটা বুঝতে পারছিল না, একদিকে তার মা বাবা কেউ নেই অন্যদিকে ভাইকে আসার কথা বলেছে কিন্তু ভাই কাজের ব্যস্ততায় আসতে পারিনি তাই সে তার ভাইয়ের বাড়িতেও গেল না। সুমাইয়া গিয়ে তার ননদের বাড়িতে আত্মগোপন করল এবং তার ননদের সাথে তার কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করলো। এদিকে সুমাইয়ার স্বামী যখন পরপর দুইদিন সুমাইয়ার কোনো খোঁজ পায়নি তখন সে সময় আর ভাইয়ের কাছে পুরোটা বিষয় খুলে বলল। আশপাশে যারা ছিল তারা সবাই সুমাইয়ার কথা বলে আফসোস করতে লাগলো যে এই ছোট্ট মেয়েটি এই বয়সে এতটা অসহায় হয়ে পড়েছে আর স্বামীর অত্যাচারে সে এখন বাড়ি ছাড়া। সৃষ্টিকর্তাই জানে সে কোথায় আছে কেমন আছে। এদিকে সুমাইয়ার ননদ সুমাইয়ার বিষয়টি গোপন রেখেছে যাতে সবাই সুমাইয়াকে নিয়ে একটু সিরিয়াস হয়।



girl-3421489_1280.jpg

Source



সুমাইয়ার স্বামী এবং সুমাইয়ার শাশুড়ি দুজনেই তাদের ভুল বুঝতে পারল এবং সুমাইয়ার জন্য আফসোস করতে থাকলো। অন্য দিকে সুমাইয়ার ভাই থানায় বিষয়টি জানিয়ে দিল। পরবর্তীতে সুমাইয়ার ননদ বিষয়টা সবাইকে জানিয়ে দেয় এবং সুমাইয়া যে একটি মা হারা মেয়ে আর তার জীবনের যে কষ্টের দিকগুলো সেটা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করল। সুমাইয়ার স্বামী বিষয়টা বুঝতে পারল এবং সুমাইয়ার শাশুড়ি সুমাইয়ার কাছে ক্ষমা চাইলো। অসহায় সুমাইয়ার জীবনে যেন আশার আলো ফুটলো। কিছুদিন পরে সুমাইয়ার ঘরে নতুন অতিথির আগমন ঘটে আর সুমাইয়ার দুর্দিনের অবসান ঘটে। সুমাইয়া এখন আর অসহায় নেই, তার এখন ছোট্ট একটি পরিবার আছে। ছোট পরিবারকে কেন্দ্র করে সুমাইয়া সুখে শান্তিতে দিন পার করতে লাগলো।

এটা আমার দেখা একটি বাস্তব গল্প যদিও সবশেষে সুমাইয়ার বর্তমান কি অবস্থায় আছে সেটা জানি না তবে আমার মনে হয় সে এখন ভালো আছে। সৃষ্টিকর্তা হয়তো মানুষকে ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়। সুমাইয়া ধৈর্যের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা যেন বাকি জীবনটা সুখের করে।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

আমার কাছে ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে যে সুমাইয়ার জীবনে আর কোন কষ্ট নেই। তারও এখন একটা ছোট্ট পরিবার আছে এবং তাদেরকে নিয়ে সে সুখে বসবাস করছে। প্রথম দিকে সুমাইয়া স্বামীর উপর একটু বেশি রাগ হচ্ছিল আমার। প্রতিদিন নেশা করে সুমাইয়াকে মারধর করতো পরে তারা ভুল বুঝতে পারল। আমার কাছে এরকম গল্প গুলো পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে বাস্তবের নতুন ঘটনার সাথে পরিচয় হওয়া যায়। যদিও প্রথম দিকে ভালো লাগেনি গল্পটি পড়তে। কিন্তু শেষের দিকে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে গল্পটি পড়তে।

 2 years ago 

আমি তো ভাই নেশা করা মানুষ গুলোকে মোটেও পছন্দ করি না।

 2 years ago 

বেশ ভালো লিখেছেন 👌
এখানে আমাদের সমাজের কিছু বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। সত্যি বলতে সুমাইয়ারা ভীষণ কষ্ট সহ্য করেই এগিয়ে চলে। এতো অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্যন্ত সুখের দেখা পেয়েছে এটাই বড় বিষয়। তবে এখানে একটা বিষয় রয়েছে, অনেক মেয়ে এই সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তবে সে ননদের বাড়িতে চলে গিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।

সবমিলিয়ে ভালো লিখেছেন গল্পটি।

 2 years ago 

হ্যাঁ এখন সে সুখে আছে এই বিষয়টি ভাবতেই অনেক আনন্দ লাগছে।

 2 years ago 

সুমাইয়ার জীবনে এখন সুখ নেমে এসেছে এটা ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে। সুমাইয়াকে তার ভাই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে সে সংসারটি কোন মতে সামলাতে পারেনি। তার হাজবেন্ড তাকে প্রতিদিন রাতে মারধর এবং অত্যাচার করত এবং দিনে তার শাশুড়ি। এভাবে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল এবং তার ননদের বাড়িতে আসে সে তাকে ঠাই দেয়। সে সবকিছু গোপন করে রাখে তাইতো সুমাইয়ার হাজবেন্ড এবং শাশুড়ি তাদের ভুল বুঝতে পারে। শেষের এই বিষয়টি দেখে সত্যি ভীষণ ভালো লেগেছে। আজকের গল্পটি বেশ ভালোই লিখেছেন বলতে হয়।

 2 years ago 

আমরা সবাই সুখে থাকতে চাই বা অন্য কারো সুখ দেখলে খুশি হই।সে যেন চির জীবন সুখে থাকতে পারে।

 2 years ago 

বাস্তবতার ছোঁয়া দিয়ে আপনি আপনার গল্পটি রাঙিয়ে তুলেছেন ভাইয়া। আপনার গল্পটিতে বাস্তবাতার বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। তবে এ সমাজে সুমাইয়াদের মত মেয়েদের টিকে থাকাটা বেশ কষ্ট। সুমাইয়া যে এত কষ্ট সহ্য করে তার ননদের বাসায় যেয়ে উঠেছে এটাই অনেক বড় বিষয়। এ সময়ে অন্য কোন মেয়ে হলে তো সুসাইট করতে চাইতো।

 2 years ago 

সেটা ঠিক বলেছেন, মানুষ যখন কোন পথ খুঁজে পায় না তখন সুইসাইড করে ‌‌। তবে সুমাইয়া বুদ্ধি করে তার ননদের বাসায় গিয়েছিল।

 2 years ago 

গত পর্বটাও পড়েছিলাম সেখানে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। তবে সুমাইয়ার বিয়ের পর তার জীবনে দুর্দশা গিয়েছে, কিন্তু শেষমেষ তার একটা ভালো সময় ফিরে এসেছে। তবে কথায় আছে আজ খারাপ তো কাল ভালো হবে। আর সেই হিসেবে তার জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। যাই হোক এই গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হ্যাঁ এভাবে মানুষের জীবনে সুখের আভাস বইতে পারে।সব শেষে পরিবর্তন এসেছে এটাই বড় বিষয়।

 2 years ago 

জি একদম আমিও সেটাই মনে করি। ধন্যবাদ আপনাকে আমার মন্তব্যের বেশ সুন্দর গোছালো ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.18
JST 0.032
BTC 86629.59
ETH 3261.39
USDT 1.00
SBD 2.93