মায়ের হাতে একদিন মার খেয়ে টিভি দেখার নেশা ভুলে গেলাম।।
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদর সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে একটি পরনো দিনের স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি ব্লগটি পড়লে সব কিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
সম্ভবত ২০০৩/০৪ সালের ঘটনা হবে। আমি তখন খুবই ছোট। তখন হয়তো স্কুলে তৃতীয় অথবা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। ঐ বয়সটায় আমি টিভি দেখার পোকা ছিলাম। আমাদের এলাকায় শুধু একটি বাড়িতে টিভি ছিল। আবার সেটা ঐ বাড়ির ভিতরের রুমে ছিল। যদি কখনো ঐ বাসায় যেতে পারতাম, তাহলে ফ্লোরে বসে টিভি দেখতাম। ঐ বাড়িতে টিভি দেখার সুযোগ না পেলে অন্য এলাকায় গিয়ে টিভি দেখতাম। অর্থাৎ যে কোন উপায়ে আমি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের বাংলা ছায়াছবি গুলো দেখার চেষ্টা করতাম। তখন সাদা কালো টিভি ছিল। জসিম,রাজ্জাক,আলমগীর নায়ক আর শাবানা,ববিতা,দিতি নায়েকা ছিল। তাদের মুভিই খুব মনযোগ সহকারে আনন্দের সাথে দেখতাম।
আমাদের গ্রামে সাপ্তাহিক বাজার হলো মঙ্গলবার আর শুক্রবার। তো এমন এক শুক্রবারে আব্বু কার যেন বিয়ের বরযাত্রী হিসাবে চলে গেছিলো। আমাকে বলে গেছিলো যদি আম্মু কোন জিনিষ পত্র বাজার থেকে এনে দিতে বলে আমি যেন সেটা এনে দেয়। আর আমি যেন বিকালে দুরে কোথাও না যায়। বাসার আশে পাশেই থাকার চেষ্টা করি। কারন যে কোন সময় যে কোন কাজ লাগতে পারে। শুক্রবারে জুম্মার নামাজ শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে আমি চলে গেলাম টিভি দেখতে। আমার বাজারে যাওয়ার কোন টেনশন নেই। নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গেলাম টিভি দেখতে। আগে শুক্রবারে বাংলা ছায়াছবি দেখাতো পাঁচ থেকে সাত মিনিট। আর বিজ্ঞাপন দেখাতো দশ মিনিট। তারপরও ছায়াছবি দেখার নেশায় বসে থাকতাম। বিজ্ঞাপন দিলে গুনতাম কয়টা দেখিয়ে তারপর মুভি দেখায়।
আমার এখনো মনে আছে,আছরের নামাজের পরে মা আমাকে খুঁজতে লাগলো। হয়তো বাজারে যেতে হবে কোন দরকারি জিনিষের জন্য। কিন্তুু আমাকে তো এলাকায় খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের সমবয়সি দুই একজন আমাকে বলেছিল যে মা আমাকে খুঁজতেছে। কিন্তুু আমার মুভি দেখার নেশা বড় নেশা ছিল। আমি মুভির আসর ছেড়ে কোন ভাবেই যেতে রাজি হচ্ছিলাম না। মা কয়েকজন ছেলেপেলের নিকট জিঙ্গেস করে জানতে পারলো যে আমি এমুক বাড়িতে আছি। মা ধীরে ধীরে এসে খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেলল। টিভিতে দেখতেছি ভিলেন নায়েকাকে ধরছে। আর বাস্তবে চেয়ে দেখি মা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পেরেছিলাম আজকে কপালে দুঃখ আছে।
কেউ বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। আমাকে বাড়িতে নিয়ে রশি দিয়ে বাধাঁ হলো। তারপর বাঁশঝাড় থেকে বেত কেটে আনলো। আমাদের দিকে বাশঁঝাড়ের কাঁচা বেতকে বলা হয়,কাঁচা জিঙ্গলা। সেই বাঁশের বেত দিয়ে এমন মার মারলো যে আমি সারাজীবনের জন্য ছায়াছবি দেখার নেশা চলে গেছে। ঐদিন রাতে খাবারও খেতে দেয়নি। হাত পা বাঁধা অবস্থায় মাটির ফ্লোরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছিলাম। মাটিতে তো শুয়ে গেছিলাম সেই মারার সময়,ঘুমটা পড়ে এসেছিল। সম্ভবত রাত বারোটার পরে বাবা বাড়িতে এসে হাত পা খুলে দিয়ে গোসল করিয়ে ঘুমাতে নিয়ে গেছিলো। পরে বাবা খাবার দিলেও আমি রাগ করে খায়নি। রাতে অবশ্য মা আর বাবা মিলে আমার সারা শরীরে মলম দিয়ে দিছিলো। একদিন মার খেয়ে আমি টিভি দেখার নাম ভুলে গেলাম। ঐ দিনের পর থেকে আর কোনদিন আমি নিজে ইচ্ছে করে বাংলা ছায়াছবি দেখিনি। এমনকি অনিচ্ছা সত্বেও দশ পনের মিনিটের বেশি দেখেনি।
এর পরে কত দিন,মাস,বছর চলে গেল। নিজের ঘরে টিভি এসেছিলো। আমি নিজে ঢাকা থেকে ২০১৭ সালে এলইডি টিভি কিনে নিয়ে গেছিলাম। কোন দিন দশমিনিটের বেশি টিভি দেখিনি। টিভি এবং বাংলা ছায়াছবির প্রতি আমার ইন্টারেষ্ট চলে গেছে। তারপর নিজের হাতে এনড্রয়েট ফোন আসার পরেও মুভি দেখি নাই। এখন মাঝে মাঝে মন চাইলে ল্যাপটপে নাটক দেখি। আর টামিল মুভির মধ্যে যে গুলো নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়, সে গুলো সময় পেলে দেখি। যেমন বাহুবলি দেখেছি,কেজিএফ দেখেছি,পুষ্পা দেখেছি। এমনই যে মুভি গুলোকে নিয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হয় সে গুলো। বাংলা মুভি সামনে আসলেই সেইদিন মায়ের হাতের মারের কথা মনে পড়ে যায়,হা হা হা।
বন্ধুরা এই হলো আমার আজকের আয়োজন। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়ার পুরনো দিনের এক স্মৃতির কথা মনে পড়লো। তাই সেটা স্মৃতির পাতায় বাংলা অক্ষরে লিখে রাখলাম। সবাই ভালো থাকবেন,সু্স্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
যাক তাহলে সত্যি মারের ওপর ঔষধ নেই। তবে এটা সত্যি আগে শুক্রবারে বাংলা ছায়াছবি দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল আবার অন্যের বাড়িতে গিয়ে দেখতে হতো।কিন্তু এখন সামনে থাকলেও দেখি না। যাইহোক সময়ের সাথে সাথে সব চেঞ্জ হয়ে যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
জী আপু এখন সামনে থাকলেও আর বাংলা ছায়াছবি দেখা হয় না। ধন্যবাদ।
টিভি দেখতে গিয়ে বেশ ভালোই মার খেয়েছেন আন্টির হাতের।আগে সত্যি গ্রামের টিভি দেখা খুব কষ্টকর ছিলো।কারণ গ্রামে কারেন্ট ছিলো না আর বিটিভিতে শুধু ছবি দেখার সুযোগ ছিলো।আমাদের বাড়িতেও একটি সাদাকালো টিভি ছিলো আর সেটি আঙ্গিনায় বের করে দিতো।বিদুৎ এসেছে ছয় সাত বছর হবে।এখন ঘরে ঘরে টিভি কিন্তুু আগের সেই টিভির সিনেমা গুলো দেখার মতো আর এনার্জি নাই।বাজার না গিয়ে মনের আনন্দে ছবি দেখতে চলল গেছেন আর তার জন্য কঠিন শান্তি।আসলে মায়েরা ভালোবাসাতে জানে তেমন শাসন ও করতে জানে।ধন্যবাদ
জী আপু আম্মুর হাতের সেই মার খেয়ে আজও বাংলা ছায়াছবি দেখি না। ধন্যবাদ।