গল্প-টাকা যদি থাকে ডান পকেটে আইন থাকে বাম পকেটে।।
হ্যালো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই,আশা করছি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে একটি মর্মান্তিক গল্প শেয়ার করবো। আশা করছি গল্পটি পড়লে আপনাদেরও ভাল লাগবে।
অবনি চাকমার বাবা মাদং চাকমা একজন দিনমজুর। মানুষের কৃষি জমিতে কাজ করে তিনি নিজের সংসার চালায়। যখন জমিতে কাজের সিজন শেষ হয়ে যায় তখন রিকশা,ভ্যান গাড়িও চালায় মাদং চাকমা। অবনি তার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। তার আর কোন ভাই কোন নেই। তার বাবা গরীব হলেও তাকে খুব ছোট থেকেই কিন্ডার গার্টেন শেষ করে বর্তমানে একটি হাইস্কুলে ভর্তি করিয়েছে। তার বাবা মা তিন বেলার জাগায় দুই বেলা খেয়ে হলেও তাদের মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। অবনিও খুব কষ্ট করেই তার পড়াশোন চালিয়ে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবনের পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের বাড়ি। তাদের বাড়ির আশে পাশে বাড়িঘর খুব কম। স্কুল,কলেজ,হাসপাতাল এসব প্রতিষ্ঠান অনেক দুরে দুরে। অবনি মনে করে যেহেতো আমাদের জন্মই পাহাড়ি এলাকায় সুতরাং আমাদের কষ্ট করে জীবনের সাথে লড়াই করেই বাচঁতে হবে। সে জন্য সে কষ্ট হলেও প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া করে। স্কুল মিস দেওয়া তার পছন্দ না। ধীরে ধীরে অবনি সপ্তম শ্রেণী পাশ করে অষ্টম শ্রেণীতে পর্দাপন করেছে। সে একদিন চিন্তা করছে ,সে তার বাবার কষ্ঠের ভাগিদার হতে চাই। কিভাবে সে তার বাবার কষ্ঠের ভাগ নিবে। সেই চিন্তা করতে লাগলো।
একদিন অবনি চাকমা তার বাবা মাদং চাকমাকে বুদ্ধি দিলো কিছু টাকা ধার করে এনে তাদের বাড়ির আশে পাশের জমিতে শাক সবজি চাষ করতে। মাদং চাকমা তাদের বাজারের সওদারের কাছে বাড়ির দলীল জমা দিয়ে কিছু টাকা ধার করে এনে বাড়ির চার পাশের জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির গাছ লাগলো। কোন কোন মাটিতে কি সবজি চাষ হবে,আর কোন কোন সবজি চাষ করলে বেশি ফলন পাবে এগুলো অবনি তার বাবা মাকে শিখিয়ে দিলো। অন্যদিকে অবনি বিকাল বেলা তার স্কুল শেষ করে কয়েকজন ছেলে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্ব নিলো। মাদং চাকমা আর তার বউ দুই জন মিলে জমিতে সবজি চাষ করে আর অবনি পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে রাখে।
কয়েক মাস পড়ে দেখা গেল জমিতে ভালোই সবজি উৎপাদন হয়েছে। মাদং চাকমা সকাল বেলা ভ্যান গাড়ি দিয়ে শাক সবজি বাজারে বিক্রয় করে। সবজি বিক্রির টাকা আর অবনির প্রাইভেট পড়ানোর টাকা এক সাথে করে সওদাগরের টাকা পরিশোধ করে বাড়ির দলীলটি ফেরত নিয়ে আসে। তারপর থেকেই মাদং চাকমার ভাগ্যের উন্নতি হতে লাগলো। মাদং চাকমার উন্নয়ন দেখে আশে পাশের আরো কয়েকজন এমন শাকসবজি চাষ শুরু করলো। আর অবনি এলাকার সব ছেলে মেয়েদের বাবা মায়ের নিকট তাদের ছেলে মেয়েকে পড়াশোনার শেখানোর দিকে গুরুত্ব দিতে বলে। আর এলাকার সব ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্ব সে একাই নিয়ে নেয়।
অবনির বাবার উন্নয়ন আর অবনির শিক্ষিত হওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারে নাই বাজারের সেই সওদাগর ও তার চামচারা। একদিন অবনি তার বাবার সাথে বাজারে গেলে সওদাগর আর তার চামচাদের কুনজর পড়ে অবনির উপরে। তারপর থেকে সওদগারের লোক সুযোগ খুজতে থাকে। একদিন সন্ধার সময় প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে সওদাগরের লোক অবিনকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। পাহাড়ের পাদদেশে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে সওদাগর আর তার চামচারা সারারাত অবনির উপর অত্যাচার চালায়। অবনি তাদের সবাইকে চিনে। সে চিৎকার করে সবাইকে বলেছিল আপনারা আমার বাবা-চাচার মত। আমি আপনাদের মেয়ের মত। আপনারা আমার সর্বনাশ করবেন না। কিন্তুু নরপিশাচরা তার কথা শুনে নাই। তারা সারারাত অবনির উপর তাদের স্বার্থ হাসিল করে। সকাল বেলা তারা বুঝতে পেরেছিল যে অবনি শিক্ষিত মেয়ে,আর সবাইকে চিনে ফেলেছে। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে সে অনেক উপরে চলে যাবে। তাই নরপিশাচরা সকালে বেলা অবনিকে হত্যা করে নিজেদের মত করে পালিয়ে যায়।
অবনির বাবা সারারাত অবনিকে না পেয়ে সকাল বেলা থানায় জিডি করে। তারপর থানা থেকে আসার সময় লোক মুখে শুনতে পায় পাহাড়ের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে কিছু লোক অবনিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে রেখে চলে গেছে। তারপর তদন্ত করে পুলিশ সওদাগর ও তার চামচাদের গ্রেফতার করে। কিন্তুু তিন মাস পরেই তারা বাজারে বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
এই হলো আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা। বান্দরবনের অবনি,কুমিল্লার তনু,ফেনীর নুসরাত,সিলেটের খাদিজা,সাগর রুনী সহ অনেক বোন রয়েছে যাদেরকে এভাবে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তাদের অপরাধী কারো বিচার হয়নি। কখনো বিচার হবে কি না তাও আমরা জানি না। সমাপ্ত।।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
আমাদের সমাজের একটি নোংরা বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আপনার আজকের পোষ্টের মাধ্যমে জনীভাই। এসব বিষয় পড়লে রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ সব একসাথে নাড়া দেয়। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই, আইনের কোন নিশ্চয়তা নেই। টাকা যার, ক্ষমতা তার...
জী আপু বিবেক কে আর ধরে রাখতে পারি নাই। তাই নোংরা বাস্তবতার চিত্রটাই তুলে ধরলাম। ধন্যবাদ।
অবনির মতো এইরকম শত শত মেয়ে বিচার পাইনি বাংলাদেশে আর ভবিষ্যতেও পাবে না। কারণ ঐ একটাই আপনি যেটা বললেন টাকা থাকলে আইন বাম পকেটে থাকে। শুনতে খারাপ লাগলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট টা এখন এটাই। বেশ শিক্ষনীয় ছিল আপনার পোস্ট টা। তার চেয়ে বেশি ছিল উপলব্দি করার।
জী ভাইয়া আমাদের দেশে টাকা আছে যার আইন পকেটে তার। ধন্যবাদ।
আমরা এমন একটা দেশে বসবাস করি,যেদেশে কোনো ন্যায়বিচার নেই। তাইতো একের পর এক ধর্ষণ, হত্যা করেই চলছে মানুষরূপী শয়তানেরা। আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের তেমন প্রয়োগ নেই। টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যায়। আর সেজন্যই অপরাধ বাড়ছে দিনদিন। অবনিদের কত সাজানো গোছানো সংসারটা একেবারে শেষ হয়ে গেল। এগুলোর শেষ কোথায় সেই উত্তর জানা নেই কারোরই। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
জী ভাইয়া আমাদের দেশে এমন নির্মম অত্যাচার আর কয়দিন থাকবে কেউ জানে না। ধন্যবাদ।
অবনীর সঙ্গে খুবই খারাপ একটা কাজ হয়েছে । এতে অবনী সঠিক বিচারটি পায়নি। আমাদের সমাজে এখনো অনেক লোক আছে যাদের অতিরিক্ত টাকা থাকার কারণে সমাজ আজকে দুর্দশা হয়ে গেছে। আপনি বলেছেন না টাকা যদি থাকে ডান পকেটে আইন থাকে বাম পকেটে। অতিরিক্ত টাকা থাকায় সমাজে অনেক খারাপ লোক এখনও বুক ফুলিয়ে সমাজে চলাফেরা করে। অনেক ধন্যবাদ ভাই এরকম একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জী ভাইয়া টাকা থাকলে আইন হাতে তুলে নিতে কোন বাধাঁ নেই। টাকা থাকলে সাত খুন মাফ। ধন্যবাদ।