আমার নিজের উপর দিয়েও ঘূর্ণিঝড় “রিমালের” প্রভাব গেছে।।
মাতৃভাষা বাংলায় প্রকাশ করো নিজেকে-
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করি ঘূর্ণিঝড় রিমালের সাথে মোকাবেলা করে সবাই ভালো আছেন। যদিও এখন পর্যন্ত ১৪ জন মানুষ মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি, এখানে মানুষের কোন হাত নেই, এটা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়া আরো খবর পেলাম যে, প্রায় দেড় কোটি মানুুষ বিদ্যুৎ হীন ও ত্রিশ লাখের মত মানুষ পানি বন্দী আছে। গ্রাম শহর বন্দর মোটামুটি ভালোই ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। যেসব এলাকায় বাঁধভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে, সে সব এলাকার মানুষ একটু কষ্টে আছে, তাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। যেহেতো ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হয়ে গেছে। সরকারি বেসরকারি সেচ্ছাসেবক দল কাজে লেগে গেছে। আশা করি দুই একদিনের মধ্যেই সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
গত কাল আমি অফিসে আসার সময় ছাতার মাধ্যমে মাতাকে বাঁচাতে পারলেও শরীরের অন্যান্য অংশকে বাঁচাতে পারি নাই। ফলে বৃষ্টির সাগর পাড়ি দিয়ে প্রচন্ড বাতাস উপেক্ষা করে অফিসে এসেছিলাম। ইচ্ছা করলে বাসায় বসে থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অফিস কামাই দিতে পারতাম। হোম মিনিষ্টার রিকুয়েষ্ট করা সত্বেও সেটা আমি করি নাই। কারন সবার আগে আমি কাজকেই প্রাধন্য দিয়ে থাকি।
গতকাল রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল,সেটা কিন্তু আর থামে নাই। অনবরত বৃষ্টি পড়তেই ছিল। দুপুর বারোটার দিকে বাসায় ফোন দিয়ে জানালাম যে, রাস্তার নোংরা পানির সাগর পাড়ি দিয়ে আজকে আর লাঞ্চের সময় বাসায় যাবো না। বরং হোটেল থেকেই লাঞ্চ করে নিবো। কিন্তুু অপর পাশ থেকে উত্তর আসলো যে,হোম মিনিষ্টার বৃষ্টির দিন হওয়ার কারনে গ্যাস না থাকা সত্বেও রাইস কুকারে কষ্ট করে খিচুড়ি রান্না করেছে। এখন বৃষ্টি থাকুক, বাতাস থাকুক, সাইক্লোন, আইলা, রিমাল, টর্নেডো-ঘূর্ণিঝড় যেটাই থাকুক না কেন, লাঞ্চের সময় বাসায় যেতেই হবে। যদি আজকে কিয়ামতও হয়ে যায় তারপরও যেন বাসায় যায়। কারন হিসাবে যুক্তি দেখিয়েছে,সে বৃষ্টির দিনে আরামের ঘুম হারাম করে, বিভিন্ন উপকরন দিয়ে অনেক কষ্ট করে খিচুড়ি রান্না করেছে। যদি হোটেলেই লাঞ্চ করবো,তবে তাকে কেন আগে জানানো হলো না....। আগে জানালে তো এত কষ্ট করে খিচুড়ি রান্না করতো না।
আমি কণ্ঠস্বরটা একটু নরম করে ভালোবেসেই বললাম রাস্তায় অনেক পানি, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি বাতাস হচ্ছে। সে তখন বললো লাঞ্চ করার জন্য পানি ভেঙ্গে হোটেলে যেতে হবে নাকি..? আমি বললাম হ্যাঁ অফিসের সামনেই অনেক পানি। সে তখন কায়দা করে বললো, যদি অফিসের সামনের ময়লা পানি ভেঙ্গে হোটেলে যেতে পারি, তাহলে ময়লা পানি ভেঙ্গে বাসায়ও যেতে পারবো। তার সাথে যক্তিতর্কে আমি হেরে গেলাম। অবশেষে দেড়টার সময় ছাতা নিয়ে পায়ের নিচ দিয়ে পেন্ট কিছুটা উপরের দিকে তুলে চার তলা থেকে নেমে অফিসের মেইন গেইটের সামনে গেলাম। গিয়ে দেখি এমা, এটা তো রাস্তা নয়, যেন বুড়িগঙ্গা নদী। জানি আপনারা বিশ্বাস করবেন না। তাই প্রমান হিসাবে ফটোগ্রাফি করে রেখেছি।
অফিসের সামনে এই পানি দেখে লাঞ্চ করার ইচ্ছা মরে গেছে,খিদাও চলে গেছে। খিচুড়ি কেন বিরিয়ানী রান্না করলেও যেতাম না। তারপরেও কেন গেলাম...সেই কারনটা আপনারা নিজেরাই বুঝেই নেন। যায়হোক সবাই যখন পানি ভেঙ্গে যাচ্ছে আমিও যায়। সবার সাথে তাল মিলিয়ে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিতে নেমে গেলাম। চারপাঁচ মিনিট হাটার পরে দেখি বড় বড় ট্রাক,বাস রাস্তা দিয়ে আসে,আসার সময় বঙ্গপসাগরের ঢেউ নিয়ে আসে। আর সেই ঢেউয়ের পানিতে হাটুর পানি কমরে চলে যায়। তাই বিরক্ত হয়ে মেইন রাস্তা ছেড়ে গলিতে প্রবেশ করলাম। গলিতে প্রবেশ করে আরো বড় ভুল করলাম। গলিতে বৃষ্টির পানি জমে পানির উপরে অনেক ধরনের ময়লা ভাঁসে,হে হে হে😂। কি কি ময়লা ভাঁসে সেটা আপনারা অনুমান করে বুঝে নেন।
যত সামনের দিকে যায় পানির পরিমান ততই বাড়ে। কারন উপর থেকে তো পানি পড়তেই আছে। যদি বৃষ্টি বন্ধ হতো তাহলে কিছুক্ষনের মধ্যে পানি ড্রেন দিয়ে চলে যেতো। এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেনে রিক্সা বা অটো দিয়ে গেলেই হতো। তাদের জন্য বলি অফিসের সামনে এক থেকে দুইশো মানুষ রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছে। একটি রিক্সা আসলে সেটাতে দশজন উঠতে যায়। আবার বিশ টাকার ভাড়া একশো টাকা চাই। তারপরেও রিক্সা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে পানি ভেঙ্গেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
যেসব বাসা গুলো নিচু সেগুলোর ভিতরেও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছিল। আমি আমাদের বাসায় যাওয়ার পথে অনেক বাসাতে পানি প্রবেশ করতে দেখেছি। তবে সব গুলো ছবি তুলা সম্ভব হয়নি। যেখানে বাসায় যেতে আমার সাত আট মিনিট সময় লাগে,সেখানে গতকাল বাসায় যেতে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে। অনেক মানুষ আবার বৃষ্টির পানি পেয়ে ভিজে ভিজে বৃষ্টি বিলাশ করেছে। আমার বাসার সামনে তেমন কোন পানি ছিল না। কারন বাসাটা নতুন করেছে, তাই মেইন রাস্তার সাথে মিল রেখে উচুঁ করেই তৈরী করেছে। অবশেষে অনেক কষ্ট করে হোম মিনিষ্টারের আদেশে বাসায় গিয়ে পৌছালাম। ফ্রেশ হয়ে খিচুড়ি খেতে খেতে রাস্তার পানির ছবি গুলো দেখিয়েছিলাম। তবে তার কষ্টের খিচুড়ির কাছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল,বৃষ্টি,পানি,বাতাস সব কিছু মূলহীন। এখন অবশ্যই আপনাদের বুঝতে বাকি রইল না যে, কিভাবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব আমার নিজের উপর দিয়ে গেছে..😌।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
শিরোনাম | আমার নিজের উপর দিয়েও ঘূর্ণিঝড় “রিমালের” প্রভাব গেছে।। |
স্থান | শিবুমার্কেট,নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৭ /০৫ /২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
রাস্তাঘাটের এই বেহাল দশা দেখে সত্যি খারাপ লাগছে ভাইয়া। আসলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবখানে পরেছে ।রাস্তায় ঘাট থেকে শুরু করে সবকিছু খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। সব জায়গায় একই অবস্থা ভাইয়া। আর বিদ্যুতের কথা কি বলব। বিদ্যুতের অবস্থা তো আরো বেশি খারাপ।
জী আপু ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব সব জাগায় লক্ষ করা গেছে। ধন্যবাদ।
একেই তো বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা তার ওপর আপনার অফিসের বস দুটো মিলে বেশ আপনার উপর দিয়ে ভালোই ঘূর্ণিঝড় গিয়েছে। ঠিকই বলছেন এইসব দেখে খাওয়া ইচ্ছে টা আর থাকে না।আপনার পোস্ট পড়ে আমার হাসি কষ্ট দুইটাই পাচ্ছে। কারণ আপনার বসের কথার উত্তর গুলো সেই। ধন্যবাদ আপনাকে আপনাদের মাঝে কথা গুলো শেয়ার করার জন্য।
জী আপু আপনি ঠিকই বলেছেন,আমার দুইজন বস। একজন অফিসে আর একজন ঘরে,হে হে হে।
আসলে ভাইয়া ঘূর্ণি ঝড়ের প্রভাব সব জায়গায় কম বেশি পড়েছে। তবে হোম মিনিস্টারের কষ্টের কাছে যেকোন ঝড় হার মানে। যাইহোক এটা সবার ক্ষেতে হয় রান্না শেষে ফোন দিয়ে বললে তখন অনেক খারাপ লাগে। যাইহোক এই ময়লা পানির ভিতরে দিয়ে যাওয়া আসা অনেক কষ্টের। আসলে কষ্টের চেয়ে নোংরা বেশি। যাইহোক অবশেষে ঝড় থেকে রক্ষা পেয়েছেন এটাই অনেক। ধন্যবাদ আপনাকে।
জী আপু হোম মিনিষ্টারের আদেশ মানতে গিয়েই ময়লা পানির উপর দিয়ে যেতে হয়েছে। ধন্যবাদ।
প্রথমে আপনার পোস্ট পড়ে হোম মিনিস্টার কে সেটাই বুঝতে পারিনি। তবে পুরো লেখাটা পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম আসলে হোম মিনিস্টার মানে আপনি কাকে বোঝাতে চেয়েছেন। তবে আপনি তো দেখছি কাজকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্যদিকে আবার দুপুরের খাবার খেতে আসাটা হোম মিনিস্টারের কথাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দুই দিকেই দেখছি বেশ ভালোই রক্ষা করলেন। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে চারদিকের অবস্থা দেখছি বেশ খারাপ। আপনাদের এখানে তো দেখছি রাস্তায় একদমই পানিতে ভরে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে চলাফেরা বেশি কঠিন।
আপু হোম মিনিষ্টার মানে কে সেটা বুঝার জন্য ধন্যবাদ।
আমি লক্ষ্য করে দেখেছি একটুও বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরে পানি এই অবস্থা হয়ে যায়। আসলে ঢাকা শহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেক খারাপ তাই তো এমন সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। আর পানির এই অবস্থা দেখে খাওয়া-দাওয়া করার রুচি যেন অনেকটাই কমে যায়।
জী ভাই একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের এই অবস্থা তারপরও আমাদের বড়াই যায় না।
ভাই তাহলে তো জীবনটাই বেদনা হয়ে গিয়েছে আপনার। হোম মিনিস্টার এত দায়িত্ব সহকারে আপনার জন্য রান্না করেছে আর আপনি সেই রান্না ফেলে হোটেলে খাবেন। আপনি তো বলতে পারতেন সাত সমুদ্র তের নদী পার দিয়ে হোম মিনিস্টারের রান্না খেতেও আমি রাজি। কি আর করার সবই পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। যেটা মেনে নিয়ে আপনি সকল ঝড়-বৃষ্টি অপেক্ষা করে গিয়েছিলেন হাহাহা।
জী ভাইয়া অবশেষে ময়লা পানির বুড়িগঙ্গা পারি দিয়ে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ।
হা হা হা বেচারা অনেক লানতে আছে 🤣। শেষমেষ আপনাকে এতগুলো পানি দিয়ে খিচুড়ি খেতে যেতে হলো হি হি হি🙄। ভালো লাগলো দুইজনের এমন সুন্দর ভাবের আদান প্রদান। আসলে বৃষ্টির সময় পানি দিয়ে যাওয়াটা বড় বিষয় নয়। ভাবি কষ্ট করে রান্না করলো তার গুরুত্বটা আপনি বুঝলেন কষ্ট করে হলেও আপনি গেলেন ভালো লাগলো। তবে বৃষ্টির পরিমাণ তো খুবই খারাপ ছিল। আপনার উপর এত বড়সড়ো একটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো হায়! হায়!
জী আপু ঘূর্ণিঝড় রিমাল আমার উপরে কঠিন ভাবে প্রভাব ফেলেছে,হে হে হে। ধন্যবাদ।
ভাই রে ভাই! আপনি তো রীতিমতো যুদ্ধ জয় করে করে বাসায় ফিরেছেন লাঞ্চের জন্য! 😂😂 আপনার লেখা পড়ে আপনার জন্য কষ্টও হচ্ছিলো, আবার হাসিও পাচ্ছিলো ভীষণ! ৭ মিনিটের রাস্তা ৩০ মিনিটে জয় করে, খিচুড়ি খাওয়া দাওয়া করে আবার ব্যাক করেছেন কিভাবে ভাই!! তবে হোম মিনিস্টারের আদেশ বলে কথা!! 🤭